ইউজার লগইন
ছোটগল্প
অসমাপ্ত সমাপ্তি
"যতদিন ছোট থাকবে,মন ততদিন পবিত্র থাকবে।বড় হতে শুরু করলেই মন অপবিত্র হতে শুরু করবে।"
"কিন্তু আমিতো জাহান্নামে যেতে চাই,তাহলে এত পবিত্রতা দিয়ে কী হবে?"
"জাহান্নামে তো তুমি যাবেই,সেটা তোমার জন্য হোক বা আমার জন্যই হোক।মন পবিত্র রাখবে জান্নাতে যাওয়ার জন্য না,চারপাশের পরিবেশের সৌন্দর্য অনুভব করার জন্য।তা না হলে জাহান্নামে গিয়েও বিরক্ত লাগবে।"
খুনী !
কোন কোন রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে একটি ছায়া কেঁপে ওঠে। বারান্দার গ্রীলে কপাল ঠেকিয়ে কান্নাকে দেয় সযতন ছোঁয়া। কখনোবা উদাস চোখে চেয়ে থাকে আকাশের দিকে। কখনো জ্যোৎস্না থাকে কখনোবা অমাবশ্যার ভ্রুকুটি। কোন কোন রাত বাতাসহীন দমবন্ধ প্রহর। আবার কখনো সারা ঘরে বাতাসের কোলাহল।
যেবার হিমালয়ে গেলাম। বরফের রাজ্যে। সেখানেও ছায়াময়ী! আমার পাশাপাশি চলছে পা-হীন পদক্ষেপে।মৃদু বাতাসে উড়ছে চুল। জড়াচ্ছে বরফের কুচি। ক্লান্তিতে চোখ বুজে এলে স্বপ্নচূড়ায় ও-ই পৌঁছে দেয় আমাকে -বলেছিল এক অচেনা শেরপা।
আজ প্রখর রোদের নীচে লেকের পাড়ে তাকে দেখলাম। অন্যমনস্ক, নি:সঙ্গ এবং স্বাধীন। বাতাস নেই তাই চুলও সংযত-সদালাপি। আমরা পরস্পরকে আড়চোখে দেখলাম। পানিতে একটানা ঘাই মেরে যাচ্ছে কোন বিরহী মাছ। ডুব সাঁতারে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছে কয়েকটি বালক। তারপর জেগে ওঠা ঘুর্ণিতে হঠাৎ উড়ে গেল মেয়েটি। যেভাবে প্রতি রাতেই হারিয়ে যায় তার ছায়ারূপ।
ডাক্তার বলেছিল চিকিৎসায় সেরে যাবে। আমিও জেনে গেছি যাবতীয় অসুখের একমাত্র পথ্য এই মানবী। আমি তার খুনী হব কোন সাহসে !
একটি উপচানো এসট্রে আর দুটি নির্ঘুম চোখ
গুমোট আবহাওয়া। কাল অফিস নেই। সবাই যার যার মতো উল্লাসে ব্যাস্ত। সুমিত বসে আছে সেই পুবের জানালাটি ধরে। ঘরের আলো নেভানো, তবে কম্পিউটার অন।
কম্পিউটারে অনবরত বেজে চলছে সেই গানটি, যে গানে সুমিতের প্রতিটি অলস দিনের সৃষ্টি হয়।
"সাচ এ লোনলি ডে,
এন্ড ইটস মাইন,
দ্যা লোনলিয়েস্ট ডে ইন মাই লাইফ।"
সুমিত আপন মনে একের পর এক সিগারেট ধরাচ্ছে আর মুগ্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে গানটি। গানটির আসলেই একটা অনন্য মাদকতা আছে, যা শ্রোতাকে ভাবনার জগতে নিয়ে যেতে পারে। এই গানের সাথে সুমিতের এমন অন্তরঙ্গ সম্পর্ক প্রায় বছর খানিকের।
সুমিত হঠাৎ করে কম্পিউটারের সামনে এসে বসলো। বসেই চালিয়ে দিলো,
"আই হ্যাভ এ প্রবলেম,
দ্যাট আই কেননট এক্সপ্লেইন......"
আর এই সমস্যার সাথেই সুমিতের দৈনন্দিন পথচলা। রোবটিক জীবন জাপন চলতে থাকে কোনো এক অজানাকে উদ্দেশ্য করে।
হয়তো কোনো এক শুভ্র সকালে কোনো এক অপরিচিতা সামনে এসে দাঁড়াবে।
পিশাচের কান্না কিংবা মূষিকের
“চৌধুরী সাহেব,আমাকে চিনতে পেরেছেন?”
“না,কে তুমি?”
“জ্বী আমি রমেশ চন্দ্র পাল।‘রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার’ এর কর্মচারী ছিলাম”
“ও”
“চৌধুরী সাহেব মনে হয় চিনতে পারেননি।একবার মেজর সাহেবকে নিয়ে দোকানে মিষ্টি খেতে এসেছিলেন।দোকানে সেদিন কেউ ছিল না।মেজর সাহেব আমাকে কারিগর ভেবে দশ টাকা বখশিশ দিয়েছিলেন”
“কিন্তু তোর কথাবার্তা এত সুন্দর হল কিভাবে?তুই না বিশ্রি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতি?তোর পোশাক-আশাকেও তো দেখি ভদ্র ভদ্র ভাব...”
“স্বর্গে আছি কিনা,এখানে সবাই ভদ্র।ব্রহ্মার পায়ের তলা থেকে জন্ম নিয়েছিলাম বতে,কিন্তু স্বর্গ দেবতা আমাদের মাথায় তুলে রেখেছেন।”
“ও”
“চৌধুরী সাহেব”
“হুম”
“আমার মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে অনেক অত্যাচার করেছেন,তাই না?জন্মের পর ওর মা মারা গিয়েছিল,মেয়েটাকে আমি কখনও কোন কষ্ট দেইনি।বেচারি স্নান করছিল তখন,ওকে কাপড়টা বদলানোর সুযোগ দিলেন না আপনারা...আচ্ছা,আপনারও তো একটা মেয়ে আছে।ওর সাথে যদি কেউ...”
“কি বলিস এসব?তোকে আমি...”
“ওসব পার্থিব কথা,আমি যে এখন জগতের ঊর্ধ্বে সেটা আপনি ভুলে যাচ্ছেন।আমাকে স্পর্শ করার ক্ষমতাও আপনার নেই।”
“...!!”
“চৌধুরী সাহেব”
“হুম”
বেলা অবেলা
খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল রঞ্জুর। পাশ থেকে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো মাত্র সাড়ে পাঁচটা বাজে। সেলিম ও পাভেল তখনও ঘুমাচ্ছে। আজ কয়েক রাত ধরে ঠিকমত ঘুম হচ্ছে না ওর। মায়ের কথা খুব মনে পড়ে আজকাল! প্রায় প্রতিদিনই মা’র সাথে কথা হয় তবুও মায়ের মুখটা দেখতে না পাওয়ার অতৃপ্তি যেন থেকেই যায়। আরো কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে অবশেষে উঠে পড়ল। হাত মুখ ধুয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল, উদ্দেশ্য কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা।
তোমার 'ঈদের' অপেক্ষায় থাকে কিছু মানুষ....তুমি কি জানো বন্ধু??
বেতনের টাকা হাতে পেয়েই উৎ্ফুল্ল শা্হেদ পা বাড়ালো শপিংয়ের জন্য।
বাসা থেকে বের হয়ে তিন রাস্তার মাথায় এসে দাড়ালো।
রিকসার কোনো খবর নেই।
অনেক্ষন অপেক্ষার পর দূরে একটা রিকসা দেখে ইশারা করলো।
কাছে আসতেই দেখল বয়স্ক চালক।
শাহেদ বললো: চাচা আপনি পারবেননা। লাগবেনা চলে যান।
বৃদ্ধ চালক খুব মন খারাপ করে বললো: বাজান আমি বুড়া দেইখা আপনারা যদি আমার রিকশায় কেউ না উঠেন তাইলে আমি প্যাট চালামু ক্যমনে
কথাটা শাহেদের অন্তরে গিয়ে লাগলো………………. ইফতারির সময় ও ঘনিয়ে আসছে।ভাড়া ঠিক না করেই উঠে পড়লো শাহেদ।
চলতে শুরু করল……..রিকশার চাকা ঘুরছে, সাথে সাথে শাহেদের মাথায় ও বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা ঘুরপাক খাচেছ। কার জন্য কী কেনা যায়। বরাবরের চেয়ে একটু আলাদা হতে হবে এবার। ঈদের শপিং - একটু চমক থাকা চাই। ইত্যাদি ইত্যাদি ………..
রিকশা এগিয়ে চললো
গোধূলির আলো ছড়িয়ে ধীরে ধীরে আকাশের আডালে চলে যাচেছ দিনের সূর্য।আগত সন্ধ্যার মগ্নতায় নীরব হবে যাচেছ দিগন্ত বিস্তারী প্রকৃতি।
আমন্ত্রণ
ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইমরান।পূর্ণিমার রাতেও আকাশের সেই তারা দুটো’কে এক নজর দেখার জন্য উদ্বিগ্ন ও।পৃথিবী থেকে মৃত্যুর অজানা,অচেনা,রহস্যময় জগতের অস্তিত্ব অনুভব করা যে যায়না এ সত্যটা কোনভাবেই বোঝাতে পারেনা নিজেকে।“ওই যে পাশাপাশি দুটো তারা দেখছ,ওরা তোমার বাবা আর মা”,ছয় বছর বয়সে চাচার মুখ থেকে শোনা কথাটি আজও অবিশ্বাস করতে পারেনা ইমরান।আজ ওর বাবা-মা’র বিবাহ বার্ষিকী।গভীর রাতে তাঁদের মিলনক্ষণে তারারা হয়তো নিজেদের বিসর্জন দিয়ে আলোকসজ্জার আয়োজন করেছে।আলোকিত আকাশের উজ্জ্বল তারাটাই হয়তো তাঁদের মিলনস্থল।ভাবতে ভাবতে চোখে পানি এসে গেল ইমরানের।দু আঙ্গুলের মাঝের লাল আলোটা নিভে যাবার উপক্রম।ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠল।ইয়েস বাটনে চাপ দিয়ে ফোনটা কানে রাখল ইমরান।ওপাশ থেকে অসম্ভব মিষ্টি একটা কণ্ঠ ভেসে আসল,
“কেমন আছ?”
পাঁচ বছর বয়সে রোড এক্সিডেন্ট এ ইমরান বাবা-মা কে হারিয়েছে।তারপর ওর লালন পালনের দায়িত্ব নেন চাচা।তিন বছর পর তিনিও চলে যান।চাচীর নিষ্ঠুর ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে একদিন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।আপন জনের ভালবাসা পাওয়ার সুযোগই মেলেনি ওর।
দুইটা ট্যাকা
হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি খেয়ে গাড়িটা থেমে গেল।এই নতুন ড্রাইভারটা যে কিভাবে গাড়ি চালায়!! গাড়ির প্রতি তার বিন্দুমাত্র যত্ন নেই,ছোটলোকের জাত।আজকে বড় মামা সামনে বসা না থাকলে কিছু একটা বলেই ফেলত মৌ।আর একটু হলেই তার নতুন আই ফোনটা হাত থেকে পরে যেত। মেজাজটা গরম হয়ে আছে,তার সাথে মনে হয় শরীরটাও।এতক্ষণ এসির বাতাসে শীত শীত লাগছিল, এখন গরম লাগতে শুরু করেছে।জানালার গ্লাসটা হালকা নামিয়ে বাইরে তাকাল মৌ।দুপুর গড়িয়ে বিকালের সূর্যটা পশ্চিম আকাশে উঁকি দিচ্ছে।সূর্যের তীব্রতা নেই,অথচ বাইরে গরম বাতাস বইছে। এরই মধ্যে লোকজন ব্যস্ত ভঙ্গিতে চলাফেরা করছে।তাদের চেহারায় কিছুটা ক্লান্তি থাকলেও বিন্দুমাত্র অস্বস্তিবোধ নেই।মৌ জানালাটা বেশিক্ষণ খোলা রাখতে পারলনা, বাহির থেকে যেটুকু বাতাস আসছে তাতেই তার অস্বস্তি লাগছে।বাইরের মানুষগুলো যে কিভাবে আছে এর মধ্যে!!
ফাদারহুড
মাসুম, মধ্যবয়সী একজন মানুষ। বিয়ে করেছিলেন মাস ছয়েক। বিয়ের আগের অগোছালো একজন মানুষ। জীবনজাপনে কোনো জীবনবোধ ছিলো না। প্রতিটি রাতের শুরু হতো নেশা দিয়ে। মদ, গাজা আর সিগারেটে কেটে যেতো প্রতিটি একাকিত্বের রাত।
একটি কাঠের চেয়ার; ঠায় দাড়িয়ে আছে অপরিষ্কার বারান্দায়। ধুলো জমে যার রং ই পাল্টে গিয়েছে। মাসুম ইফতার শেষে বারান্দায় দাড়িয়ে বিড়ি ফুকছে। কিছুটা অন্যমনস্ক ভংগিতে তাকিয়ে আছে ধুলোপরা ওই চেয়ারের দিকে। হঠাৎ ক্রিংক্রিং শব্দে মোবাইল বেজে উঠলো। বউ কল দিয়েছে বোধহয়!!!
পারেও মেয়েটা। অসীম ধৈর্য নিয়ে সর্বদা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিয়ের পরে এই মেয়েটা জীবনবোধই পাল্টিয়ে দিয়েছে।আজ বিকালে তো তার ডাক্তারের কাছে যাবার কথা। এই কলটা কি সেই আপডেট জানাবার জন্য নাকি গতানুগতিক? এই ভাবতে ভাবতে কলটি রিসিভ করলো মাসুম।
অস্ফুট স্বরে বললোঃ হ্যালো।
ওপাশ থেকে হাসির রিনিরিন শব্দে বললোঃ আসবা কবে?
কেন?
নাহ, এমনি। তোমার সাথে কথা আছে।
বলো।
না, মানে ডাক্তার বলছে সুখবর আছে।
প্রচন্ড মুডি মানুষটি হো হো করে হেসে বললোঃ তাই তো বলি বউ এত্তো লজ্জা পায় কেন?
দূর আকাশের তারা
ল্যাব এইড হসপিটালের আইসিইউ’র সামনে অনেক মানুষের জটলা। ছোট শিশুদের একটা দল কাঁচের জানালার বাইরে থেকে ভিতরটা দেখছে। রুমের ডান দিকের কর্নারের বেডে শুয়ে আছে আট বছরের শিশু রোদেলা। নিথর হয়ে পড়ে আছে, চোখে পলক পড়ছে না। ছোট শিশু, ব্যাথায় মুখমন্ডল নীল হয়ে আছে। শিশুদের দলটির একজন একজন করে দেখছে আর চোখ মুছতে মুছতে ফিরে আসছে। সবাই রোদেলার ক্লাসের বন্ধু। একটু দূরে সিঁড়ির কাছে অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে অহনা। চোখ দুটো ফোলা, দেখেই বুঝা যায় দু’চোখ সারাক্ষণই অশ্রুর বন্যায় ভাসছে। তাকে সান্তনা দিচ্ছে সবাই। কিছুই বলছে না অহনা, নির্বাক; ফ্যাল ফ্যাল করে শুধু তাকিয়ে থাকা ছাড়া মুখে যেন কোন ভাষা নেই। আজ এক সপ্তাহ হল রোদেলা ল্যাব এইডের আইসিইউ’তে পড়ে আছে। একের পর এক লোকজন আসছে আর চোখ মুছতে মুছতে ফিরে যাচ্ছে। ব্যাপারটা সবার কাছেই অপ্রত্যাশিত, কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না মাত্র কয়েক দিনে অবস্থা এতোটা খারাপ হতে পারে।
বিচ্ছিন্ন শতদল, বিক্ষিপ্ত জলরাশি
ক্রিং ক্রিং
-ইপি আপু?
কই তুমি?
-গ্যারেজে। গানজা খাই।
ওয়াক! সারাদিন যখনই ফোন করি তখনই কেন তুমি গ্যারেজে গানজা খাও?
-কারণ আপনি ফোন করে এটা শুনলে একটু ধমকান তাই।
কেন? ধমকানোর লোক কই গেছে?
-ওর কি আর ধমকানোর টাইম আছে? উন্নতির ট্রেন ছুটে যাবে তো।
তো তোমার কি উন্নতি করতে ইচ্ছা করে না?
-করে। সেই জন্যই তো ক্ষুধার্ত আর বোকা থাকি।
কিন্তু সেইটা তো শুধু এক্সট্রা অর্ডিনারী মেরিটওলা'দের জন্য। তোর মতো বলদ কি খালি কি ক্ষুধার্ত আর বোকা থাকলে চলে?
-কিন্তু আমার ইনটিউশন যে আমাকে সেরকমই থাকতে বলে।
ইনটিউশন না রে গাধা। অলস মন। ও সবসময়ই মানুষকে আলসেমী করার বুদ্ধি দেয়। ওর কথা শুনলে জীবনে উন্নতি করতে পারবি না।
-আচ্ছা না পারলে অসুবিধা নাই। আপনের কি অবস্থা? এত সকালে ফোন দিলেন যে?
এমনি ফোন করলাম। তোকে ফোন করতে আবার কারণ লাগবে নাকি রে পাগলা?
-তা অবশ্য লাগবে না। চলেন আজকের কড়কড়ে রোদে সারাদিন বেড়াই।
লং ডিস্টেন্স রিলেশনশীপ
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। স্নিগ্ধর মনটা আজ খুবই খারাপ। তার ভালোবাসার মানুষটি তার থেকে অনেক দূরে থাকে। তাদের সময়ের ব্যাবধান ১২ ঘন্টার ; স্নিগ্ধর দেশে যখন রাত নামে তখন মিনির দেশে করকরে রোদ।
মিনি অনেক ভালো একটা মেয়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতপরিবর্তনশীল দেশে থেকেও যে তৃতীয় বিশ্বের একটি ছেলের জন্য অপেক্ষা করে। তার সকল ভাবনা জুড়েই স্নিগ্ধর বিচরণ। এমনকি স্বপ্নও আসে স্নিগ্ধর স্নিগ্ধতা নিয়ে।
তাদের মাঝে যোগাযোগের একটাই মাধ্যম , সেটা হলো ভার্চুয়াল জিনিস। হয় ফোনে তাদের ভাবনার বিনিময় ঘটে নয়তো চ্যাটিং এর মাধ্যমে আবেগের আদানপ্রদান ঘটে। তবুও হাজার মাইল দূরের দুটি মানুষ কিসের যেনো একটা বাধনে বাধা।
স্নিগ্ধ জানালায় বসে আছে। দেশে এখন চার নম্বর বিপদ সংকেত চলছে। সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারনে সারাদেশে বৃষ্টি নামছে। স্নিগ্ধ স্বাভাবিক একটি ছেলে। আর তাই আজকের আবহাওয়া তার মাঝে রোমান্টিক একটা আবহের সৃষ্টি করেছে; মাঝে মাঝে এটি মিনির শূণ্যতাকে প্রকট করে তুলছে|
শেষ বেলার গল্প
ওল্ডহোমের উপর ভিত্তি করে অনেক গল্প, নাটক ও গান হয়েছে। এটিও খুব সাধারণ একটি গল্প। কাছের একজন মানুষের একাডেমিক কাজের অংশ হিসেবে খুবই স্বল্প পরিসরে ওল্ডহোমের উপর একটি মুভি তৈরির জন্য একটি গল্প প্রয়োজন ছিল, তার অনুরোধেই এই প্রচেষ্টা। আমাকে বলা হয়েছিল পজেটিভ ফিনিসিং হতে হবে তবে ড্রামাটিক কোন কারণে নয়, স্বাভাবিক নিয়মেই। আমি চেষ্টা করেছি সেভাবেই লিখতে, সবার সাথে শেয়ার করার জন্য আজ ব্লগে দিলাম।
আকাশটা যেন ভেঙ্গে পড়েছে আজ। পূব আকাশ কালো করে সেই যে একটানা শুরু হয়েছে আর থামাথামি নেই। দুপুরের পর থেকে তৈরি হয়ে বসে আছে রওশন আরা। আজ সে তার নতুন বাসায় যাবে। নতুন একটা ঠিকানা পেতে যাচ্ছে সে, যেখানে তাকে অভ্যর্থনা করার জন্য অপেক্ষা করে আছে অনেক মানুষ! আজ থেকে সে আর একা নয়, সে হবে অনেকের একজন! একাটা বিশাল পরিবারের একজন! একা একা থাকতে কি কারো ভাল লাগে! কথা বলার, গল্প করার কেউ নেই। সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকতে থাকতে দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিল সে। আজ থেকে তার সাথে কথা বলার জন্য থাকবে কত লোক! সব তারই বয়সী। কত সুখ দুঃখের গল্প করতে পারবে, আনন্দ বেদনা সেয়ার করতে পারবে! এর চেয়ে বেশী আর কি চাই!
বাবা
আজ কিছুতেই ভলো নেই ত্রিনয়নী। কদিন ধরেই মেঘলা আকাশ। মাঝে মাঝে সূর্যটাকে রুদ্রমূর্তিতে দেখা গেলেও একটা সময় ঝিমিয়ে পড়ে। এটা হওয়াটাও স্বাভাবিক। ঝড়-বৃষ্টি হবে তা ঠিক আছে। কিন্তু তারপরেও এই সব যেন তার কখনও খুব ভালো লাগে না। আবার যে খুব একটা খারাপও লাগে তাও না। কিছু একটা করতে মন চাচ্ছে। ত্রির্শোব্ধ এই রমনীর কোন কিছুই ভালো লাগছে না। অনেক কিছুই মিলে। মন চাচ্ছে একটি ছায়া শীতল হাতের স্পর্শ পেতে। ছোটবেলায় যেমন করে মা আদর করে দিতো। তুলতুলে নরম হাতের স্পর্শে নিদ্রাদেবীর কোলে চলে যেত ত্রিনয়নী। কিন্তু আজ মায়ের হাতের স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করছে না। মনে হচ্ছে বাবার আদর পেতে। বাবার আদর!
ইসকুল – সারমর্ম ও শব্দার্থ শিক্ষা
সফেদ পোষাকে সাজিয়া, নুরানী ভাবগাম্ভীর্য লইয়া জনৈক ভুঁইফোড় শফী হুজুর ও তার যোগ্য চেলা বাবুনগরী গাধায় চাপিয়া ” ব্লগ দিয়া ইন্টারনেট চালানো ”র প্রতিবাদে জিহাদ করিতে চট্টগ্রাম নগরে স্থাপিত নাস্তিক মন্চের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হইলেন । পথিমধ্যেই হুজুর মোবাইল তরঙ্গে ওহী ( মেসেজ ) প্রাপ্ত হইয়া ব্যাপক ক্ষমতা অর্জন করিলেন এবং গাধা পরিত্যাগ করিয়া ঘোড়ার সওয়ারী হইয়া ব্যাপক লম্ফঝম্ফ করিতে লাগিলেন । ওহী প্রাপ্ত শফী ও বাবুনগরী অর্থ, ক্ষমতা ও আশ্বাসে আস্বাদিত হইয়া জীবনের মোড় ঘুরাইতে অর্থাৎ টার্ন লওয়াইবার স্বপ্ন দেখিতে লাগিলেন ।
স্বপ্নে বিভোর ভন্ডহুজুর শফি বোরাকে চাপিয়া তাহার স্বপ্নরাজ্যের ইতিউতি ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলেন । স্বপ্নের সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহনের পরিকল্পনা করত , ঘোরে আচ্ছন্ন শফি কাফেলা যোগে পাইক পেয়াদা সমেত শাপলা চত্বরের উদ্দেশ্যে টার্ন লইলেন । কিন্তু ঘোরের মধ্যে যাত্রার কারনে পথভুল করিয়া হুজুর লালবাগ আসিয়া উপস্থিত হইলেন ।