ইউজার লগইন
ছোটগল্প
অসুখ
এক.
ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে এসে জানালার
কার্নিশে বসলো দাঁড়কাকটা, কিছুক্ষণ
এদিক ওদিক চেয়ে দেখলো, তারপর গা-
টা একটু ঝাড়া দিয়ে, ঠোঁট দিয়ে গায়ের
চকচকে পালকগুলো ঠিকঠাক করায় মন
দিলো।
জানালার লালচে খয়েরি শিকগুলোর
ফাঁক দিয়ে এতোক্ষণ কাকটাকেই
দেখছিলো অতীন- কিছুক্ষণ বাসার
সামনের রাস্তাটার ওপাশের কাঁঠাল
গাছটায় বসে ছিলো কাকটা, এখন
একটা চিল এর তাড়া খেয়ে বসেছে এই
জানালার নীচের কার্নিশটায়।
অতীন অবাক হয়ে দেখলো কাকটার
গা একদম ভিজে চুবচুব হয়ে আছে- আজব
ব্যাপার তো! বৃষ্টি হলো নাকি? ইশ!
কতদিন বৃষ্টিতে বাসার
ছাদে দৌড়াদৌড়ি করা হয়না!
হু, আস্তে আস্তে দীর্ঘশ্বাস
ছাড়লো অতীন। শুধু কি বৃষ্টি? ওর
তো বাসার বাইরে যাওয়াই নিষেধ।
অতীন ক্লাশ সেভেনে পড়ে। দুই মাস পর
ফাইনাল এক্সাম অথচ স্কুলেই
যাওয়া হয়না কতদিন হয়ে গেলো। ডক্টর
আঙ্কেল তো খালি বলে রেস্ট নিতে। মা-
কে বন্ধুদের সাথে খেলতে যাওয়ার
কথা বলতেই এমনভাবে তাকায়, মনে হয়
না জানি কী অপরাধ
করে ফেলছে খেলতে চেয়ে! উফফ, এক
কার্টুন দেখে আর পিসি গেমস
খেলে কয়দিনই বা ভালো লাগে।
আয়নায় চোখ পড়তেই একটু
চমকে গেলো অতীন, ওর নিজের কাছেই
কোন একদিন..
ছোট্ট চায়ের টং-টায় ঢুকেই
এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক
করতে গিয়ে আরো উস্কুখুশ্কু
করে দিলো ইভান।
ভয়ংকর গরম পড়েছে আজ, বাসায় ফিরেই
লম্বা একটা গোসল দিতে হবে।
টানা তিনটা টিউসন পড়িয়ে আর কিছুই
ভালো লাগছেনা। তাও একটা ভালো খবর
হলো আজ মাসের ৭
তারিখে এসে পকেটটা একটু
ভারী হয়েছে। এই কটা টাকার জন্য
বলতে গেলে গায়ের রক্ত
পানি করে খাটা হচ্ছে। গত মাস
থেকে নাইট সিফটে একটা কল
সেন্টারেও ঢুকেছে। রিটায়ার্ড বাবার
পেনসন আর এই কটা টাকায়
মা যে কিভাবে সংসার চালায় আল্লাহই
জানেন।
ইভান ছাত্র খুব একটা খারাপ ছিলোনা।
ঢাকা ভার্সিটি থেকে এম বি এ করেও
যে ভালো একটা চাকরি পাওয়া যাবেনা সেটা কে-
ই বা জানতো? দেশটার যে কী হচ্ছে,
আজকাল 'লাইনঘাট'
ভালো না থাকলে কিছুতেই কিছু হয়না।
অবশ্য, বাসায় ফিরে তার অপেক্ষায়
বসে থাকা মা আর ক্লাস
নাইনে পড়ুয়া পড়ুয়া ছোটবোন যুথীর
দিকে চাইলেই মন ভালো হয়ে যায়
ইভানের।
যুথীর জন্য এক জোড়া রূপার কানের দুল
কিনতে হবে। অদ্ভূত লক্ষ্মী একটা বোন,
ইভান ভাবে, এত্ত দিনের শখ কিন্তু
কখনোই মুখ ফুটে চায়নি। ঐদিন কথায়
কথায় মা-কে বলে ফেলেছে, মনের ভুলে।
কাঁচুলি
দূর মসজিদ থেকে সুমুধুর কন্ঠে ভোরের আযান প্রকৃতিতে প্রবাহমান বাতাসের মত ছড়িয়ে পড়ল। কি সুমুধুর সে আযান--‘আস্সালাতো খাইরুন মিনান নাউম...।’ পদ্মার বুকে জেগে উঠা দোয়াল্লীর চরের প্রকৃতিতে কেমন জানি নিরবতা ভাঙ্গতে শুরু করল। দূর থেকে আযানের ধ্বনি ধীরে ধীরে এ গাঁয়ে এসে বাতাসের সাথে মিশে যায়। গ্রামটির নাম স্বর্ণগ্রাম। হ্যাঁ স্বর্ণগ্রাম। এ গাঁয়ে এক কালে সোনা ফলত। সোনার ফসলে মুখরিত হত এ গাঁয়ের সহজ সরল জীবন যাত্রার। মাটির মত মায়াশীল মায়েরা মেয়ের নাম তাই হয়তো রাখতো স্বর্ণলতা, সবুজী, সোনাবিবি ইত্যাদি। ফসলের নামে নাম রাখত ছেলেদের--শৈষশ্যা, ধনিয়া, নীলা ইত্যাদি। আজ আর সেই দিন নেই। আউশ ধানের চালের সাথে মিশে গেছে ইরি ধানের চাল । খাঁটি সরিষা আজ আর পাওয়া যায় না। মানুষেরা আজ ছন্নছাড়া, ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত । দু’বেলা জোটে না দু’মুঠো ভাত। দরিদ্র চাষী হাড় ভাঙ্গা খাঁটুনী আর দেহের ঘাম দিয়ে সোনালী ফসল ফলায়। তবুও জীবনের বিড়ম্বনা।
রেবেকা আপুর পালিয়ে যাওয়া ও আমাদের গল্প
আমি তখন স্কুল এ পড়ি । আমরা যেই বাসায় থাকতাম তার পাশের রুম টাই ছিল রেবেকা আপুদের ।
আমি ক্লাস ৫ম শ্রেণীতে পড়ি । রেবেকা আপু ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। আমাকে বেশ আদর করে প্রায় সবাই smile
খাওয়া দাওয়া ও উনাদের সাথে করেছি অনেক দিন।আমি দাবা খেলতে পারতাম না কিন্তু আমাকে শিখিয়েছে আপু
প্রায় সময় আমি আপুর সাথেই থাকতাম smile আপু আমাকে পড়াত এবং ভাল কিছু রাঁধলেই আমাকে ডেকে খাওাত...
একদিন পাশের রুম এর এক মামা আমাকে চকলেট কিনে দিয়ে বলল এই চিঠিটা রেবেকা কে দিয়ে আসবি কেউ জাতে না যানে।
আমিও চকলেট পেয়ে খুভ খুশি যেই বেটা কোন দিন একটা চুইংগাম কিনে দেয়না আজ সে আমাকে চকলেট কিনে সিছে তাও আবার মিমি!
আমি সাথে সাথে কাজ টা করে দিলাম এবং বলেছিল আমাকে ৫টাকা দিবে Tongue আমি ত মহা খুশি ।
আপু পড়া শেষে কাগজটা ছিঁড়ে টুকর টুকর করে ফেলল এবং মুখে দিয়ে চিবিয়ে ফেলল আর একটু মুছকি হাসি দিল।
আমি বুজতে ছিলাম না কি করব !!!
আপু কিরে কেউ কি দেখেছে তুইযে চিঠি আনছিস ?
আমি ভেবে বললাম না আপু কেউ দেখেনি সুদু মামা দেখছে ।
আরে সেত দেখবেই সে দিছে না...আমি হুম...
বৃষ্টি ভেজা দিঘি ।
অনেকক্ষণ ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে আজ । ভার্সিটির ক্লাসের তিনতলার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ছেলেটি । তার নাম রানা , যতদুর চোখ যায় বৃষ্টি ভেজা এক বিশাল অরণ্য । সবুজ গাছের সাথে লতাগুল্ম একে অন্যের সাথে জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে । উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি ভেজা এক কার্পেট বিছানো । রানা একটু অভাক হয়ে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
রানা খুব সাদাসিদে একটা ছেলে।সে কলেজ শেষ করে এখন ভার্সিটিতে পরছে । মানুষের সাথে তার মেলা মেশা তেমন একটা বেশি নয় । আর মেয়েদের সাথেতো প্রায় নেই বললেও চলে ।।রানা দেখতে এমনিতে খারাপ নয় ।ওর চেহারাতে কেমন একটা সাম্য ভাব রয়েছে । দেখে যেকোন মেয়েরই ভাল লাগার কথা ।
ছোটগল্প : অযৌক্তিক অসহজ
বাজে কথা। খুব বাজে কথা। একটা মেয়ে তোকে ভালোবাসবে আর তুই তাকে প্রতিদিন ঘুরাবি, এটা খুবই বাজে কথা।
-না দোস্ত। নওরীণ আসলে আমাকে ওইভাবে ভালোবাসে তা বলা যাবে না। কিন্তু নওরীণকে আমি দেখসি, ওর মধ্যে একটা ব্যপার আছে। ধর অনেকদিন না দেখা হলে নওরীণ নিজেই দেখা করার একটা সুযোগ বের করে। আসে এবং আমাকে গভীরভাবে খেয়াল করতে থাকে। যেন আমি কেমন আছি, কি করছি, কি ভাবছি সব সে অনুমানেই বের করে ফেলবে। ওর চোখে আমি এক ধরনের গবেষণা চালানোর লক্ষণ খুঁজে পাই। সে আমাকে নিয়ে কি যেন একটা গবেষণা করছে। আমি জাস্ট এই জন্য ট্রাই করি ওকে সময় কম দেবার। কিন্তু ওর আছে বিপুল পরিমাণ এনার্জি। যতই ঘুরাই ততই ঘুরে-ফিরে ঠিক সামনে এসে হাজির হয়। আর কথা বলতে থাকে ক্রমাগত। বিষয়টাকে তুই কি বলবি দোস্ত?
বিষয়টা ভয়ংকর। সূপর্ণখা টাইপ মেয়ে। চুপচাপ কেটে পড়। এ ধরনের মেয়ের আশপাশে যাওয়াও বিপজ্জনক। প্রেমিকা হিসেবে অজেয় কিন্তু আঁচড়ানোর সময় আঁচড়ে কলিজায় দাগ ফেলে দিয়ে আসবে। সময় থাকতে পালা।
শরতের সরোদ
শরতের সরোদ
-শাশ্বত স্বপন
‘তুমি যাবে ভাই-যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়...।’
ভরা যৌবনের জলতরঙ্গে শরতের কোন এক পড়ন্ত ভাদ্র বেলায় কবি জসিম উদ্দিনের নিমন্ত্রণের ডাকে সারা দিয়ে আমার হাত ধরে উপমা বলেছিল, শুনেছি তোমার গ্রামকে বড় ভালবাস তুমি; ছবির মত ছায়া সুনিবিড় তোমার গ্রাম; এ দেশের গ্রাম দেখা হয়নি আমার কোনদিন; দেখিনি ধান-পাট-শষ্যে ক্ষেত; দেখিনি ডোবা-নালা-খাল-বিল-বাওর-হাওর-নদী-সাগর; দেখিনি প্রকৃতির পাহাড়-ঝরণা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী আর রহস্যময় পাহাড় ঘেরা অপার সৌন্দর্যের পাহাড়ি ভুমি। আমায় তুমি নিয়ে চল সখা, তোমার যেখানে খুশী-তোমার চোখে দেখব আমি শরতের শাশ্বত রুপ।
অন্ধকারের আলো
মেয়েটি দরজা খুলতেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম ! এ কাকে দেখছি আমি ! আমার মুখের দিকে চোখ পড়তেই যেন নিজেকে লুকাতে রুমের ভিতরের দিকে দৌড়ে পালালো ও। আমিও কিছুটা ইতস্থত বোধ করছিলাম, রুমের ভিতরে ঢুকবো কি ঢুকবো না ভেবে কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশেষে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ও তখনও আমার দিকে পিছন ফিরে নিজেকে লুকাতে ব্যস্ত।
আমারও তখন একই অবস্থা। আমরা কেউই ভাবিনি এই পরিবেশে এভাবে আমাদের দেখা হবে ! অনেকক্ষণ পর আমিই মুখ খুললাম। কেমন আছ পরী! পরী আড়ষ্ট ভঙ্গিতে আমার দিকে ঘুরে নীচে তাকিয়ে ছিল, লজ্জা ও সংকোচে আমার দিকে তাকাতে পারছিল না। আমি দেখতে পেলাম ওর চোখ দুটো ভেজা ! অনেকক্ষণ পর ও বলল- আমি তো ভাই কচুরিপানা, স্রোতের তোড়ে এখানে ভেসে এসেছি, আপনাকে এখানে দেখব ভাবি নাই !
আষাঢ়ে
(ক) রহমত মাষ্টার
আষাঢ় মাস। দুদিনের টানা বৃষ্টি সব কিছুকেই যেন থমকে দিয়েছে।
রহমত মাষ্টারের মেজাজ খিচড়ে আছে ভীষন অসময়ে ঘুম ভাঙার জন্য। রাত প্রায় ৩ টা। ঘুম ভাঙার কারন যে পেটে মোচড় তা আর বুঝতে বাকী নাই তার। বাইরে ভীষন বৃষ্টি। গ্রামের এই এককোনে তার টিনের ঘরখানায় সে একা থাকে। বউটা মেয়েটাকে নিয়ে গেছে বাপের বাড়ী, বেড়াতে। টিনের চালে বৃষ্টির টিপ টিপ শব্দ তাকে আবারও সন্ত্রস্ত করে তুললো। পেটের মোচড় নিবৃত করতে চাইলে তাকে ঘর থেকে অন্তত ১০০ গজ হেটে ঝোপ আর বিশাল বাঁশ ঝাড় এড়িযে পুকুরের পাড় ঘেঁষে বাস্তু ভিটার শেষ সিমানায় ছোট ঘরটাতে যেতে হবে। চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছে না সে যেন কোনভাবেই হোক সকাল পর্যন্ত চেপে রাখা যায়। অন্য স্মৃতি কিছু এদিক সেদিক হাতরে ভুলে যেতে চাইছে ব্যাথাতুর মোচড়টাকে। কিন্তু খুব একটা সুবিধা হচ্ছে না। ঘুরে ফিরে ঘরের খুব কাছে সুন্দর একটা ছোট ঘর নির্মান ও তা ব্যবহারে সুখের কথাই বার বার ভেসে উঠছে।
খরার পরে বৃষ্টি (শেষ পর্ব)
দুপুরের কাঠফাঁটা রোদে আবার রাস্তায় নামে অমিয়। শান্তিনগর মোড়ের দিকে হাটতে থাকে, রাস্তায় প্রচুর যানজট। বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি, রিকশা, ভ্যানে রাস্তা গিজ গিজ করছে। যানজটে মানুযের জীবনযাত্রা দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠছে। প্রচণ্ড গরমে অস্থির। এর মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকা ! বেঁচে থাকার তাগিদে ছুটে চলে শহরের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। বড় বড় অফিসের ব্যাস্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া দিন মজুর পর্যন্ত। সবাই ছুটছে জীবিকার প্রয়োজনে !
শান্তিনগর মোড়ে এসে অমিয় ভাবতে থাকে কোথায় যাওয়া যায় ? ঠিক এই মুহূর্তে ওর কোন কাজ নেই। কাজ না থাকাও একটা সমস্যা। ফাঁকা বাসায় একা একা সময়ও কাটবে না, ভাবতে ভাবতে একটা রিকশায় উঠে পড়ে।
-রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করে- কই যাইবেন ?
-মতিঝিলের দিকে চলেন।
রিকশা ধীরে ধীরে এগুতে থাকে মতিঝিলের দিকে। রিকশাওয়ালা লোকটা বেশ বয়স্ক। রুগ্ন শরীর, বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। প্রচন্ড গরমে দরদর করে ঘামছে।
-চাচা, আপনার বাড়িতে কে কে আছে ?
-আমি আর আমার স্ত্রী।
-ছেলেমেয়ে নাই?
-তিনডা পোলা আছে, তারা যার যার সংসার নিয়া আছে।
-আপনারে দেখে না?
খরার পরে বৃষ্টি (পর্ব-১)
উৎসর্গ –অনিমেষ রহমানকে, আমাদের নাগরিক জীবনের চারপাশের জটিল চাল চিত্র সাবলীল ভাবে উঠে আসে যার লেখনিতে।
সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। অমিয় বাসা থেকে বের হয়ে অনেকক্ষণ রিকশার জন্যে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তায় দু-একটা রিকশা দেখা গেলেও একটাও যেতে রাজি হচ্ছে না। আজকাল রিকশাওয়ালাদের যে কি হয়েছ! কোথাও যেতে চায়না। বৃষ্টি না থাকলে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটেই যাওয়া যেত, কিন্তু এই বৃষ্টিতে হেঁটে গেলে ভিজতে হবে। রাস্তায় কয়েক জায়গায় পানি জমে আছে। প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর অবশেষে একটা রিকশা পাওয়া গেল।
বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখে লোকে লকারণ্য। বাস, ট্যাক্সি বা সিএনজি কিছুই নেই। মেজাজটা আরও খারাপ গেল। এমনিতেই সারাদিনই শহর জুড়ে যানজট লেগে থাকে, তার ওপর আজ বৃষ্টি হওয়াতে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। দিন দিন আমাদের শহরটা যেন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে !
দুই ঘণ্টা যুদ্ধ করে অমিয় অফিসে পৌছাল।
একটা ছাতা ঠিকানাবিহিন ( প্রেমের প্রচ্ছদ মন রঙ্গে আঁকা)
আজকাল ভীড় একদম সহ্য হয় না । সহ্য হয় না মাঝ রাতে চাঁদের সৌন্দর্য্য । তাই আজকাল আর রাত জাগি না। রাত মানেই এখন যেন সরল অংকের ফলাফল শুধুই ঘুম । মাঝে মাঝে শুধু একটা গান শুনি তাও আবার খুব হাল্কা ভলিউমে " আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে" আগে অবশ্য রাতে বিরহ বেহালা শুনতাম আর অপেক্ষা থাকতাম । অপেক্ষায় থাকতম, অনেক অপেক্ষা করতাম ওর জন্য । মনের ভিতর বাস করা একটা মেয়ের জন্য । অবশ্য আপনরা জানেন না সে কথা, বলতে, বলতে একটু লজ্জা হচ্ছে । তার নামটা হচ্ছে সূর্য্য মুখী সুকণ্যা । আসলেই এস যেন আমার স্বপ্নের কন্যা । সে প্রায়ই আসে, প্রায়ই আসে খুব গোপনে ।
বকুল ফুলের মালা
পৌনে চারটে বাজে। মাত্র পৌনে দু'ঘণ্টাতেই দিব্যর ভাত-ঘুমটা ভেঙে গেল। মেজাজটা খিঁচড়ে আছে। কফির জন্য জল গরম দিয়ে ফ্রেশ হতে গেল। ফ্রেশ হয়ে ফিরে কড়া একটা ব্ল্যাক কফি নিয়ে বসলো। কফিতে আর চুমুক দেওয়া হয় না। কফির পোড়া গন্ধে নাকটা একটু ডুবিয়েই বাইরের দিকে চোখ দেয়। আকাশে অনেক মেঘ। বিষণ্ণ আকাশ দেখে দিব্যর মনটাও বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আগের কথা মনে পড়ে যায়। বুকটা হু হু করে ওঠে, আর চোখের কোণাটা ভেজা কিনা তা আর আঁধার ঘরে বোঝা যায় না।
স্বপ্ন মৃত্যু
গত কয়দিন ধরে ঝুম বৃষ্টি পড়ছে । খাওয়ার টেবিলে একফালি সরষে ইলিশ দেখতে মন চাইছিল আবিদ সাহেবের। হায় আফসোস মাসের শেষ প্রান্ত । আধমরা মাছি মারা কেরানির চাকুরী তাও আবার বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে । এখানে শুধু কাজের চাপ, ফাইলপত্র কাগজ কলম লক্ষ কিংবা কোটি টাকা এক মিছেমিছি হিসেব রাখা । এত টাকা প্রতি দিন সর্তকতার সাথে গুনতে হয়, জমা করতে হয় মালিক পক্ষের ব্যাংকে । একটা আহ ! একটা নোট যদি হত তাহলেই হয়ত খাওয়ার টেবিলে একফালি সরর্ষে ইলিশ এর দেখা মিলত। কি আর করা । আবিদ সাহেব ইদানিং প্রেমে পড়েছেন, তাই মাঝে মধ্যে দু'একটান চরুট খেতে ইচ্ছে করে, সেখানেও এক মহা ফ্যাসাদ ৩ টাকার সিগেরেট খেতে হলে সরকারকে দিতে হয় সাথে আরও ৫ টাকা । এ যেন বিষম খাওয়ার মতই । তাই একটা চুরুট কিনে তা নিভেয়ে রেখে আবার জ্বালিয়ে খান উনি, যদিও স্বাদ আর প্রথমবারের মত থাকে না, তবুও তরুর কথা মনে এলেই চুরুটা ফতুয়ার পকেট থেকে বের করে টানেন ।
গল্প: নোঙরের সঙ্গে উঠে গিয়েছিলো একটি পাঁজরের হাড়
ক্রিং ক্রিং...
-হ্যালো।
একবার রিং বাজতেই যে মিভ ফোনটা রিসিভ করবে, আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। একটু না, বলা ভালো বেশ খানিকটাই হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। আসলে ও যে ফোন ধরবে, সেটাই তো আমি আশা করি নি। কত দিন-মাস-সপ্তাহ ধরে ও আমার কল রিসিভ করে না! তবুও কেন যে সেদিন রাত ৪টা ৫০মিনিটে আনমনে মোবাইল টিপতে টিপতে ওর নাম্বারটাই আমি লিখেছিলাম, জানি না।
লিখে আবার সেটাকে ডায়ালেও পাঠিয়ে দিলাম। আর চটজলদি কলটা চলে গেলো ওর কাছে। অথচ তার আগে বহুদিন একইভাবে ওর নাম্বার লিখেছি আর কেটে দিয়েছি। একবার, দুইবার, একটানা একঘন্টা, দুইঘন্টা; সেসব অর্থহীন কীর্তিকলাপের কোনো হিসেব নেই।