ইউজার লগইন
ছোটগল্প
নীল পাহাড়
১.
সাপটা ছোবল দিতে আধসেকেন্ড দেরী করাতেই সাবুর ভোজালির কোপে মরলো। সবুজ লতা সাপটা ঝুলে ছিল ঝাকড়া শ্যাওড়া গাছ থেকে। ঝুলন্ত অবস্থাতেই ছোবল তুলেছিল। ভয়ংকর বিষধর এই সাপ।
সাবুর মেজাজটা তিনদিন থেকে চোতরা পাতার মতো চুলবুল করছে। তিন বাটি নাপ্পি খেয়েও ভুলতে পারছে না নীলা ম্রুর সেই রুদ্রমূর্তি।
বারিধারা - (ছোট গল্পের অপচেষ্টা)
ভোরের আলো ফুটবার আগে থেকেই বৃষ্টি টা আরম্ভ হয়েছে। জানালা দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ঢুকতেই অয়নের ঘুম ভাঙ্গে। এর আগে মেঘ ডাকার শব্দে কয়েকবার ঘুম ভেঙ্গেছিল তাঁর । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ছিটা বাতাসের সাথে সাথে জানালা দিয়ে ঢুকছে। মাথার কাছের জানালার গ্রীলের ফাঁক গলে সেই বৃষ্টির ফোঁটা এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে বিছানার চাদর , বালিশ , অয়নের ঘুম কাতুরে মুখ।
মেঘেদের জ্যামে আটকে গিয়েছিল সূর্যের আলোর পথ। ঝির ঝির করে বৃষ্টি প্রথমে আলপনা আঁকে গাছের ধূলা মাখা পাতায়, আলপনা আঁকে জানালার কাঁচে, কংক্রীটের শুকনো দেয়ালে। বেলা বাড়ে , সাথে সাথে বাড়ে আকাশে মেঘের ব্যস্ততা , বাড়ে বৃষ্টির ঝংকার। এক সময় বৃষ্টির হুংকারে স্তব্ধ হয়ে যায় অন্য সব জাগতিক শব্দ।
অনেকক্ষন বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে উঠে বসে অয়ন, মা'র ডাকে।
এই ঘোর বর্ষায়ও মা'র বিরাম নেই - উঠতে উঠতে ভাবে অয়ন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ টা বেজে ৩০।
শ্যাওলা
দুইজন চুপচাপ বসে আছে। পার্কের এদিকটায় অন্য লোকজন একটু কম আসে। জোড়াদের ভারি পছন্দ। নিরিবিলি। শান্তি করে বসা যায়।এখানে জায়গা পাওয়াটা ভারি ভাগ্য। মাঝে মাঝে অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকতে হয়।
দুই জন চুপচাপ বসে। মাথার উপর ঝাপড়া গাছের ছায়া। ডালের উপর বসে একটা কাক ডাকছে অনেক্ষন ধরে। ছেলেটা উদাসীন। মেয়েটা সাবধান ।কাক যদি ইয়ে করে দেয়, তো ভারি বিপদ। কাছে পিঠে কোথাও পানিও নেই।
দুইজন চুপচাপ।একজন বলল-‘শুধু প্রেম করলে কেমন হয়? ডেট না, সেক্স না, বিয়ে না…কক্ষনো দেখা করতে হবে না…ফোন, এসএমএস, ই মেইল না…শুধু আমরা দুজন জানবো আমাদের ভেতর অনেক প্রেম…একজন আরেকজনের জন্য বেঁচে আছি…কেমন হয়?’
ছেলেটা কিছু বলে না। ছেলেটা কিছু ভাবেও না।বসে বসে বেঞ্চের শ্যাওলা নখ দিয়ে খোটে।আর মেয়েটার কথা শোনে শুধু। মেয়েটা বলে যায়-‘তাহলে আমাদের কেউ সন্দেহ করবে না…তোমার কথা আমি কোনদিন কাউকে বলবো না…তুমিও বোলনা…’
বৃষ্টি ও অন্যান্য..
তাড়াহুড়া করে চা'য়ের কাপে চুমুক দিতেই ঠোট পুঁড়ে গেল অনীতার।মেজাজ এমনিতেই খারাপ,আরো খারাপ হয়ে যায়।
মেজাজের দোষ দিয়ে অবশ্য লাভ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছে অনীতা,আজ ছিল তৃতীয় সেমিস্টারের শেষ দিন।আগেই ঠিক করা ছিল,আজ ক্লাস শেষে তিনটা'র ট্রেনে বাড়ি যাবে।ছুটির দিনগুলি হলে বসে বসে পড়াশোনা করে নষ্ট করার কোন মানে হয়না!ট্রেনের টিকেট-ও আগেই কাটা।
ক্লাসগুলো ভালোই মজা করে কাটছিলো,সবার মাঝেই ছুটির আগাম ফূর্তি।শেষ ক্লাসে এসে শুধুশুধুই ঝাড়ি খেতে হল,তা-ও আবার অনীতার সবচেয়ে প্রিয় স্যারের কাছে।কারন কী,অনীতার পাশের সিটের মেয়েটা কি যেন জানতে চাইছিল বারবার।হায় রে বিচার!
যাই হোক,ক্লাস শেষে হলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বের হতেই।নিমিশেই শরতের আকাশ মেঘে মেঘে অন্ধকার।শাহবাগ পর্যন্ত আসতেই,বৃষ্টিতে একেবারে কুকুর বিড়াল অবস্থা।কেমন যে লাগে।
একজন শেলীর গল্প
প্রতিদিনের মত নয় আজকের দিনটা । সকাল থেকে মেঘলা আকাশ। বর্ষার মাঝামাঝি সময়। গুঁড়ি গুড়ি বৃষ্টি হছে । সেই সকাল থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পায়ে ঝিম ধরে গেছে । শুভ আসবে বলেছিল সকাল আটটায় , এখন বেলা একটা বেজে গেছে । কখন আসবে তার কোন পাত্তা নাই।
সিদ্ধান্ত টা কি তাহলে ভুল ছিল। হবে হয়ত , জীবনের সব সিদ্ধান্ত কি নির্ভুল হয়? মনের মাঝে কেমন যেন লাগছে , কিন্তু সমস্যা টা বুঝা যাছে না । শ্রাবনের এই দিনে ও কেমন আসস্তি লাগছে। মনে হছে কি যেন ভুল করে ফেলেছি।
আজ কোন মুখ নিয়ে বাড়ী ফিরবে ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে বার বার । শুভ যদি আজ না আসে তাহলে যে কি হবে । না তা আর ভাবতে ইচ্ছে হয় না । শুভ তো এমন ছেলে নয় , যে কথা দিয়ে কথা রাখবে না । শুভর মোবাইলে এই নিয়ে হাজার বার হল কল করেছে । কি কারনে যেন বার বার বন্ধ বলছে ।
বেলা শেষে একদিন..[অণু গল্প]
বাসাটা কেমন যেন অচেনা লাগছে আজ,নিহা'র কাছে..
কেন জানি মনে হচ্ছে,কোথাও কেউ নেই..একদম-ই যে কেউ নেই,তা অবশ্য বলা যায়না।
বারান্দায় ইজিচেয়ারে বাবা শুয়ে আছে আর রান্নাঘরে মা বোধহয় চা বানাচ্ছে বাবার জন্য।
নিহার নিজের-ই জানা ছিলনা,ও যে এত শক্ত ধাতের মেয়ে।এই কয়েকদিন যে কী একটা দৌড়াদৌড়ি গেল..ভাইয়া তো দুবাই,ছুটি পায়নি বলে আসতেই পারলো না।সবকিছু বলতে গেলে নিহাকেই দেখতে হয়েছে।বিকেল পর্যন্ত ঘরভর্তি চেনা-অচেনা যত লোকজন।আর সন্ধ্যার আলো আধারিতে এসেই যেন আজ নিঝুম অন্ধকার..
হাসিমুখেই ছিল নিহা,পুরোটা দিন।কিন্তু সবকিছুর শেষে আর সামলাতে পারেনি নিজেকে,ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছে..
নিজের ঘরটা-ও খুব অচেনা লাগছে আজ।ফিটফাট বিছানা,গোছানো আলনা..কিছুই যেন নিহার সাথে যায়না।এলোমেলো করে দিতে মন চায় সবকিছু..
জাহিদ সাহেবের একদিন
সকালে অফিসে এসে যে কাজটা জাহিদ করেন , সেটা হল এক কাপ কড়া লিকারের চা পান করেন। এটা ধীরে ধীরে জাহিদ সাহেবের প্রাত্যহিক জীবনের অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে । সেই যে কবে দেশ থেকে এসেছেন সেটা ভালমতো রোমন্থন না করলে মনে পড়তে চায় না । তখন তার বয়স ২৪ কি পঁচিশ ছিল। ইদানিংকার যোগে বয়সের হিসাব মেলানো কত সহজ । অথচ তাদের সময় তো এতশত সিস্টেম ছিল না ।কে কোথায় কখন জন্ম গ্রহন করেছে তার হিসাব রাখাটা তার বাবা মা যেমন জরুরী মনে করেনি । অন্য সবাই ও তেমন জরুরী মনে করত না ।
তিন বেলা
" সকাল বেলা "
মা দাওনা কিছু টাকা।
আমার কাছেতো টাকা নাইরে বাপ।
দূর। তোমরা যে কি !কত করে বললাম আমারে কিছু টাকা দেও। তা যখন দিলে না । আমি স্কুলে যাই।
রাহেলার খুব খারাপ লাগে । একমাত্র ছেলে কিছু টাকা চেয়েছে কোথায় যেন খেলতে যেতে বন্ধুদের সাথে। তাও দিতে পারে নি । কি করবে রাহেলা । অভাবের সংসার তার উপর দ্রব্য মুল্যের বৃদ্ধি । তাদের মত মধ্যেবিত্ত পরিবারকে বর্তমান সমাজে চলতে গেলে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়। একদিকে ছেলের লেখা পড়ার খরচ , অন্যদিকে সংসার।
নিছক প্রেমের গল্প
ভালোবাসার অর্থ কি?
জানি না তো!
প্রেমর অর্থ কি?
জানি না তো!
অনুভূতি কাকে বলে?
জানি না তো!
যখন কেউ তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে; তখন তোমার ভেতরটা কি নাড়া দেয়?
কই, না তো!
ধূর! তোমার এই ‘না তো’ দুটি শব্দ ছাড়া আর কিছু নেই?
হা হা হা। না নেই।
আচ্ছা তোমার সাথে কি সারা জীবন আমার এসএমএসে কথা বলতে হবে?
তাও তো জানি না।
তুমি কি কোনদিন আমার হাত ধরবে না?
হাত ধরবো কেন?
ওমা! আমি তোমাকে ভালোবাসি যে!
ভালোবাসলেই হাত ধরতে হয়?
অবশ্যই! হাত ধরে চুপ করে আমরা দু’জন চোখ বন্ধ করে রাখবো।
তারপর?
তারপর আর কি। ভালোবাসার আবেগটাকে ভাগাভাগি করে নেবো।
তুমি এতো স্বপ্ন কীভাবে দেখো?
স্বপ্ন ছাড়া কি মানুষ হয়? কেন তুমি স্বপ্ন দেখো না?
স্বপ্ন কীভাবে দেখে?
তার মানে কি হলো? ফাজলামি করো?
হা হা হা।
এই হাসি আর কতদিন? দুই মাস কিন্তু পার হয়ে যাচ্ছে।
নতুন ঘর চাই (ছোটদের গল্প)
চার বছরের তুলতুলে ছোট্ট শিশু মৌ'মনি দৌড়ে তার আব্বার ঘরে গিয়ে কানে কানে নালিশ করছে,
‘আব্বু দাদীমা খুব চেঁচামেছি শুরু করেছে আবারও। দাদীমা আপনাকে, আপনার আব্বাকে, আপনার আব্বার ছেলেদের সহ আপনার দাদাকেও খুব গালমন্দ করে চলছে। আমাকে ছাড়া ঘরের সকলকে নাকি বের করে দেবে।‘
কেন মা'মনি? তোমার দাদীমনিকে তুমি কি তোমার নূতন দালান বাড়ির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছ?
না আব্বু আমি বলিনি। আম্মুর মুখে শুনেছে।তাই হয়ত মনে পড়ে গেল। চার বছর বয়সী বোরহান সাহেবের' শিশু কন্যা মৌ'মনির কথা শুনে মেয়েকে কুলে তুলে কাঁধে করে নিয়ে মৌ'মনির দাদীমা, মানে বোরহান সাহেবের 'মা' এর কাছে এল। মায়ের ইজিচেয়ারের পাশে বসে বোরহান সাহেব মিনতি করল বলতে শুরু করল, ''মা আপনি আবারও উত্তেজিত হয়ে গেলেন।আমরা এখনো আপনার অনুমতির অপেক্ষায় বসে আছি।’’
সুরত আলীর যাপিত জীবন
অনেক দিন অন্ধকারে থাকতে থাকতে সুরত আলী অনেকটা মাকড়সা টাইপের হয়ে গেছে। ছোট্ট ঘরের মধ্যেই নিজের জাল বিছিয়ে থাকে। গতি মন্থর। এক জায়গায় স্থাণুর মত বসে থাকে। খুব সামান্যই পিলপিল করে এ কোনায় ও কোণায় হাঁটে। মানুষ আর মাকড়সার মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে হলে বলতে হবে,সুরত আলী অন্ধকারে থাকতে থাকতে চোখ দুটো ঠিক আলো সহ্য করতে পারে না।
দিনকাল ভালো না, বাইরের আতণ্ক সুরত আলীকে খুব ছোট করে ফেলেছে। মাকড়সার মত সরু পেট। কাঠি কাঠি হাত পা। চেহারায় লাবণ্যহীন খসখসে ভাব। চেহারাটা মাকড়সার মতই বিশ্রী।
অর্থ অর্জন
আপা দেশে এসেছে অনেকদিন পর। সাথে ভাগ্নেটা। বেশ পাজি। কথাবার্তা শুনতে চায় না। নিজের মতই সব কিছু করে। নিজের মতই সব কিছু পেতে চায়। সবকিছুই তাকে সেইভাবে দিতে হবে, যেভাবে সে চায়। বিদেশ থেকে আসা একটা চার বছরের ছেলে যে এমন জিদ ধরে চলবে, ভেবে পায় না তানিশা। সবে এইচএসসি শেষ করেছে সে। হাতে যথেষ্ট সময়। তাই সব আবদার তার উপরই। কী আর করা আপার ছেলে যে!
বৃষ্টি ও বিহংঙ্গ
মুরাদের সাথে আমার ঝগড়াটা শুরু হলো খুব তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে। এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। এর থেকে অনেক তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমি ইচ্ছে করেই ওর সাথে ঝগড়া করেছি। কিন্তু আমাদের ঝগড়ার একটা অলিখিত নিয়ম হলো, প্রতিটি ঝগড়ায় আমাকেই জিততে হবে। বাবা মার একমাত্র মেয়ে হিসেবে এটা আমার কাছে কখনই অস্বাভাবিক মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে এটাইতো স্বাভাবিক। ছেলেটা মুখ বুজেই আমার আমার সব জেদ গুলোকে মেনেনিত। এটা যে সব সময় আমার ভাল লাগতো তা কিন্তু নয়। খুব সহজেই আত্মসমর্পণ করলে কি যুদ্ধ জয়ের তৃপ্তিটা পাওয়া যায়! সেদিন বুঝিনি আমার এই খেলা খুব ধীরে ধীরে ওর মনটা বিষিয়ে তুলছে। আর বুঝবই বা কি করে, তখন আমার সব ভাবনা, সব কিছুই আমাকে ঘিরে। আমি কি চাই এটাই বড় কথা। কিন্তু সময়ের নিজস্ব একটা বিচার ব্যবস্থা আছে। আর সেটার কাঠগড়ায় না দাঁড়ানো পর্যন্ত আমাদের উপলব্ধিটা করতে পারিনা।
বাই
রমিজ উদ্দিনের বয়স খুব একটা কম হয়নি। গত সাতাশ ডিসেম্বরে আটষট্টিতে পড়েছেন। মাঝখানের কয়েক বছর বলতে গেলে নারী সঙ্গ থেকে বঞ্চিতই ছিলেন প্রায়। কিন্তু আর যেন শরীরের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলেন না। স্ত্রী সামসুন্নাহারের বয়সও প্রায় একান্ন হতে চললো। এ বয়সে তিনি স্ত্রীর সঙ্গ বলতে নারী সঙ্গের জন্য যেন হন্যে হয়ে উঠলেন। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কয়েকবার মৃদু ঝগড়াও হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি স্ত্রীকে বোঝাতে পারেন না যে, বয়স বেশি হলেও তিনি এখনও ফুরিয়ে যাননি।