বর্ণচোরা
সেদিন ক্লাস শেষ করে ফিরছিলাম বাসায়। সাথে দুই কাজিন আবির আর অভ্র। সকালে তাড়া থাকায় নাস্তা করে বের হওয়া হয়নি। দুপুরেও খাইনি ক্লাসের চাপে। ওদের জানান দিলাম আমার প্যাটে ইদুঁর দৌড় চলছে। দুইজনই বলল তাদেরও একই অবস্থা।
বাস ধরার আগে কিছু খাওয়ার জন্যে ঢুকলাম দোকানে। একটা ফ্যামেলী মিলের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছি। সেখানে ঢুকল একজন কৃষ্ণাঙ্গী আর এক শ্বেতাঙ্গী। তারা কারো জন্যে হয়ত অপেক্ষা করছিলো। আমরা তিন ভাইই জীবিত মানে অবিবাহিত আর কি। তাই স্বভাবসুলভ চোখাচোখি হচ্ছিল। এমন সময় খাবার তৈরী জানান দিলো মোষের মত চেহারার কাউন্টারে থাকা লোকটা।
এরপরে যা হয়, স্বভাবতই খাবারের উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। এতো দিন ধরে বাইরে থেকেও ছুরি, কাটা চামচ ইত্যাদির অভ্যাস আমাদের কারোই হয়নি। হাত দিয়েই গোগ্রাসে খাই। এদের খাওয়া দেখলে আমার হাসি পায়। মুরগী খাবে ব্যাটারা হাড় চিবোবে না। আমাদের তো আর সেই অভ্যাস নাই। মাংস খাওয়া শেষ করে হাড় নিয়ে পড়লাম। এমন সময় আমি সেই দুই তরুনীর দিকে তাকালাম। আমাদের হাড় খাওয়া দেখে দেখলাম হাসাহাসি করছে আর ফিসফিস করে কি জানি বলাবলি করছে।
মনেমনে লজ্জিত হলাম। ভাইদের বললাম “ দেখ কেমন করে হাসে!!!” আবির বলল “ মাইর দে” বললেই তো আর “মাইর” দেওয়া যায় না। অভ্র পুরা খাস ঢাকাইয়ায় বলল “ আপনে খান না, টেকা দিয়া কিনছেন, এতো কিছু দেখনের কি আছে? খাইয়া লান।” তবু লজ্জা লাগছিলো। কেমন জানি আনকালচারড লাগছিলো। মনে হচ্ছিল বলছে “ দেখ গরীব এশিয়ান গুলা কেমন করে কুকুরের মত হাড় চিবোচ্ছে। ” যা ওরা বেশির ভাগ সময় বলে, না লেখার মত গালি গালাজ সহ। তারপরও হাড় চিবুনো বাদ দিলাম না। আরে ভাই খাচ্ছিই তো আর তো কিছু করছি না। তবে কেন হাসবে?
সে যাক, এই দোকানে সব সময় খাই আমরা তাই আমাদের আগে টাকা দেওয়া আগে না। সাধারনত খেয়ে পরেই দেই। আমার পকেটে ক্যাশ ছিলো টাকা বের করে অভ্রকে দিলাম। সে বিল দিয়ে ফিরছে, কৃষ্ণাঙ্গী আর শ্বেতাঙ্গী তার পথরোধ করল। কিছু কথপোকথনও হল। কিন্তু অভ্র মুখ দেখে বুঝলাম সুখকর কোন আলাপ হচ্ছে না।
আমরা দুইজন বড় দেখে, সে বিড়বিড় করে গাল বকছিলো। জিজ্ঞেস করলাম “কিরে কি বলল তোরে?” খুব বিরক্তভাবে সে বলল “ ভাই আর কইয়েন না, কয় “Do you have a spare pound?” হাসলাম। বিড়বিড় করে গাল বকলাম । আবির বলল “ কুত্তার বাচ্চাগুলা আমাদের ফকির বলে আবার আমাদের কাছে ভিক্ষা চায়। খাবার ভিক্ষা চায়, টাকা ভিক্ষা চায়, সিগারেট ভিক্ষা চায়। আর আমাদের বলে ফকির।”
আমি বললাম “বন্ধু, দেখ এটাই তো বাস্তবতা। তোর দিকে আঙ্গুল তোলার লোকের অভাবনেই। তুই অসামঞ্জস্যপূর্ন একটা কিছু কর তোকে নিয়ে কথা মানুষ বলবেই। কিন্তু নিজের হীনতা, দীনতা, মানষিক দারিদ্র্য জীবনে দেখবে না। নীতি, সততা, অনেকেই দেখে কখনই নিজের মানষিক দৈনতা কেউ দেখে না, তুইও না আমিও না। আর এলিট সমাজ কখনোই তো নিজেদের ভুল দেখে না।এরা অর্থনৈতিক এলিট। এদের কাছে আমাদের কাজগুলিই চোখে পরে এরা কি করে চোখে পরে না। মেনে নে। ”
বের হয়ে এসে। বাস স্ট্যান্ডের দিকে যেতে যেতে সিগারেট ধরিয়ে ধূসর আকাশের দিকে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে আনমনে হাসলাম, হায়রে দুনিয়া মানুষের মন, আবহাওয়া সব কিছুই ক্ষণে ক্ষণে বদলায়।
পাদটীকাঃ নতুন এলাম আপনাদের মাঝে আশা করি সবাই বরন করে নিবেন।
পইড়া আরাম পাইলাম.. সুপাঠ্য...
ধন্যবাদ লেখককে...
যারা দেশ ছেড়ে অনেক দুরে... তাদের কষ্ট আনন্দ হাসি... বিরহ ... জানার আগ্রহ সব সময় থাকে... দেশে বসে ভাবি চাকচিক্যময় বৈদেশ... শুধু আয়েশী জীবন... কিন্তু পেছনের দিকটা সবসময় চাপা পরে যায়...
লিখতে থাকুন... নিজের বাড়িতে কি কেউ স্বাগত জানায়? তবুও জানালাম... স্বাগতম আপনার নতুন জায়গায় ...
কিন্তু আমার কেউ স্বাগতম বলে নাই :(
আমি কিন্তু স্বাগত জানাতে বলিনি । বলেছি আপনাদের মাঝে বরন করে নিতে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
লেখা ভালো লেগেছে। লেখা চলুক।
ধন্যবাদ ।
লেখা ভালো লেগেছে। লেখা চলুক।
ধন্যবাদ মলিকিউল
আগে পড়িনাই, আজ পড়লাম। ভালো লাগলো।
মন্তব্য করুন