চাঁদবেনে'এর ব্লগ
নারীর শরীর
I am not the wheatfield.
Nor the virgin land.
—Adrienne Rich
কিছুদিন আগে সেন্টমার্টিন বেড়াতে গিয়েছিলাম। যে কটেজটাতে উঠেছি সেটা সমুদ্রের খুব কাছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যায়। মনে হয় শরীরের উপর ঢেউ গড়িয়ে পড়ছে।
ইজ্জতের মুল্য ও দাম
কোন এক দেশের সর্বোচ্চ পাহাড়ের নিচে একটা ছিমছাম গ্রাম আছে- নাম দার্জিলিং পাড়া। আট-দশটা পরিবার নিয়ে পাহাড়টাকে মাথায় করে গ্রামটা দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রমনকালে, এখানে আমরা একবার বিশ্রাম নেয়ার জন্য দাঁড়াই, এবং একটুপর একটা বাড়ির পাশের পেয়ারা গাছে হামলা চালাই। যত পারি খেয়ে এবং যত পারি নিয়ে যখন দাম চুকাতে যাব, তখন খুব বিপদে পড়লাম। গাছের মালিক টাকা নেবেনা। কারন, তারা পেয়ারা বিক্রী করে না। তো তারা কি বিক্রী করে? খোঁজ নিয়ে জানলাম তারা খুব টক কি জানি একটা ফল বিক্রী করে। একটা ফল মুখে দিয়ে দেখলাম: জন্মের টক।
ভাবলাম লোকটাকে একটু মার্কেট ইকোনমি বুঝাই। বললাম, "বুঝলেন দাদা, যার চাহিদা আছে, তা বিক্রী করুন। যেটার চাহিদা নাই, তা বিক্রী করা টাফ।"
-কে শোনে কার কথা, ঐ লোক টাকা নিলোই না।
-তার ধারনা সব কিছু বিক্রী করা যায় না।
গ্রামের পাব্লিকতো! এখনো লাভ-লসের হিসাব বোঝে নাই, মানলাম। কিন্তু আমাদের শহুরে প্রতুলকুমারও যদি একই কথা বলে, কেমনডা লাগে! ওনি গান ধরেন: "আলু বেচ, ছোলা বেচ, বেচ বাকেরখানি, বেচোনা বেচোনা বন্ধু তোমার চোখের পানি।" ইত্যাদি, ইত্যাদি।
এখানে সময়
এখানে সময়
থেমে থাকে না
বয়েও চলে না
এখানে ঘাসগুলো
ধ্বংসাবশেষ থেকে দূরে
বিশ্রাম পায়
আমি আসি
বা যাই
কিছুই
পাল্টায় না
মরুভূমির
অদৃশ্য দেবতার
মহাকাল
বদলে না
আমি
অচরিতার্থ
আকাঙ্ক্ষা
আমি তোমার নামের
ধ্বনিগুলো
উচ্চারণ করেছি
আমি তোমার
চোখের আলো
অনুভব করেছি
আমি তোমার মুখের
গ্রহণ
চিনেছি
স্বস্তিহীন
আমি বানাই
ফাঁসির মঞ্চ
যার দেয়ালগুলো
আমাদের পায়ের নিচে
ভেঙ্গে পড়ে
আমি ভাষাকে
ফেলে এসেছি
আর হেঁটে এসেছি
যুগোত্তরে
এমনকি আমার
পদশব্দের ছন্দও
আমি রেখে এসেছি
এমনকি আমার নৈঃশব্দের
শব্দও
উচ্ছন্নে গেছে
এমনকি নিজের কাছে
ফিরে এলেও
দূরেই থাকি
-সিলভিয়া সুপারভিল
ডায়েরি
দু'একটা দিন বাপের মত
দু'একটা দিন মায়ের
দু'একটা দিন স্বামীর মত
দু'একটা দিন জা-য়ের।
কিছুটাক্ষন চাল ও চুলা
বৃষ অথবা মীন
এভাবেইতো দুপুর গড়ায়
পাশ ফিরে শোয় দিন।
পাশ ফিরে শোয় দিন ও বছর
ঘুমায় জীবনখানি
পাশ ফিরে রয় গোপন অসুখ
পাশ ফেরে হাতছানি।
বীজ পড়ে রয় বীজগণিতে
ফলের চিন্তা লুটায়
সুখ পড়ে রয় ট্রাফিক জ্যামে
দুঃখ ফেরে নটায়।
আমার প্রতি তোমার যে টান
তোমার প্রতি আমার
একটা বিড়াল সে উষ্ণতায়
গড়ে যৌথ খামার।
আমার যত নরম ছিল,
কোমল ছিল, আলো
ঢেকে দিলাম আজকে সবই
-প্রসাধনই ভাল।
হাত ঢেকেছি, মুখ ঢেকেছি
শোক ঢেকেছি শাকে
বুকের ভেতর রোদ ঢুকেছে
তবুও কোন ফাঁকে।
সে রোদ আমার তরল আগুন
সে রোদ আমার টু-জি
সে রোদ দিয়ে, পাঠক, আমি
তোমার মুখকে খুঁজি.....
নদী
অমোঘপুরের ছাত্র আমি
বিধির পদ্য বোধে লিখি
জলের শব্দ নকল করে
পাখির মত গাইতে শিখি
এইতো সেদিন একটা পরী
ভিষণ রাগে, জোরসে হাঁকে
"সাহস কত! আমার পাখা
চুরিয়ে এনে নদী আঁকে!"
আঁকা বলে হেলা করলে
শোন, এও নাচতে জানে
ঢেউও আছে, স্রোতও আছে
বেলাল্লা হয় ঝড়তুফানে।
আমার কাছে নদীই সব
ঝর্ণা হয়ে সাগরে আসা
জীবননদী, সময়নদী
নদী আমার মাতৃভাষা।
গতপরশু নদীর ভাষায়
চা চাইতেই এক দোকানি
বল্লো," আমি নদীভাঙ্গা,
নদীর ভাষা আমিও জানি"।
নদীর ভাষা কঠিন অতি
ভোকাবিউলারি শেখা লাগে
সিনটেক্সের এর শক্ত বাঁধে
না বলা সব ইচ্ছা জাগে।
আমিতো ভাই নদীপাগল
জীবন গেল নদীসুখে
বুড়িগঙ্গায় ঢেউ উঠলেই
আঁছড়ে পড়ে আমার বুকে।
তাইতো আমি নদী পড়ি
নদী শিখি, নদী থাকি
পরীর পাখা চুরি করে
হারিয়ে যাওয়া নদী আঁকি।
চাঁদবেনে যায় সওদা সমেত
বেহুলা লাশ ও লাস্য নিয়ে
মারমেইড গায়, " জীবন হল
জলের সাথে জলের বিয়ে।"
চেহারা
আমি আগে টের পাই নাই পৃথিবীতে কত ধরনের চেহারা আছে।পৃথিবীতে অনেক মানুষ, কিন্তু চেহারা তারচে বেশি, কারন, সবারই কয়েকটা করে আছে।
রাইনে মারিয়া রিলকে
নোটবুকস অব মাল্টা লরিজ ব্রিজ
পৃথিবীর প্রতি ভালবাসা
জীবন নদীর মত। বিভিন্নভাবেই। নদী শুরুতে নদী থাকেনা; অন্তেও নয়। জীবনও এরকমই মাতৃঝর্ণায় শুরু হওয়া এক আকষ্মিক প্রবাহের নাম যা অনিবার্যভাবেই অকরুণ মৃত্যুসাগরে বিলীন হয়ে যায়। হ্যাঁ, আমাদের জীবন আমাদের নদীগুলোর মতই। নির্দৃষ্ট্যভাবে বললে ১৭০ টন ফর্নেস অয়েল বুকে নিয়ে শোকের মত বয়ে চলা কর্ণফুলী নদীর মত। বিবর্তনবাদ বলে, জলই জীবনদাত্রী। সে হিসেবে আমরাও নদী থেকে উঠে এসেছি। খুব অল্পকাল আগে। এখনো শরীর থেকে শুকিয়ে যায়নি জলের রেখা। আর এরই মধ্যেই আমরা পৃথিবীকে হত্যায় উদ্যত হয়েছি। আমরা মনে হয় অভিষপ্ত, একিলিসের মত। ব্রিসেইস একিলিসকে বলেছিল, Killing is your only talent is your curse. হ্যাঁ, হত্যাই আমাদের একমাত্র প্রতিভা, আমাদের অভিষাপও।
কর্মফল
আমি পুরনো রাজাদের মত একদিন
ঠিক ঠিক বাঘের সন্ধানে চলে যাব
নিজের ছায়ার সাথে খুব রাতে
ব্যক্তিগত খেলা ছিল, ঢলাঢলি
কুশল জিজ্ঞাসার মত সম্পর্ক ছিল
আমার নিজের সাথে। ঘুমের
মধ্যে কে যেন কেটে নিয়ে গেছে
আঙ্গুলের নখ। আপাত করুণায় ভরেছে
মন, আপাত লালিত্যে ক্ষয়ে যাচ্ছে
বাসনার ধার। বৃত্তিহীন। ফলত ঊষার
মত থেমে আছি, যেন এ-ই চিরদিন
যেকোন প্রত্যুষে আমি ঠিক ঠিক পেয়ে
যাব বাঘের পায়ের ছাপ। আমার
যে কোন শর খুঁজে পাবে নিশানা
নিয়তি কর্মফল
অস্ত্র
মগের বেটি কিক বক্সিং শিখছে। এই অসিলায় তার সাথে হেবি ফাইট হল। ফাইটটা কথার( যে ফাইটে প্রেমিকরা সবসময় হারে)। তো, অস্ত্র, আত্নরক্ষা, ইত্যাদি বিষয়ে আমার হেরে যাওয়া আর্গুমেন্টগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্যই এ লেখা।
My father never raised his hand to any one of his children, except in self-defense.
Fred Allen
কুকুরায়ন:
প্রেমিকের ভালমন্দ
(আমার প্রতিটি লেখার মত এটিও প্রাত্যহিক জীবনের কথোপকথনের ফলে তৈরী।আমার এক বন্ধূর 'আমার প্রেমিক ভাল না' টাইপের অভিযোগ থেকেই আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবি।)
মানুষ ভাংগা চেয়ারেরই প্রেমে পড়ে।
প্রেমের ইনিশিয়াল ইমপেক্ট মারাত্নক, মানুষ সরাসরি ভেংগে পড়ে। তবে ধকল কাটিয়ে উঠার পর মানুষের মনে হয় আসলে সে ভাংগা চেয়ারেরই প্রেমে পড়েছে। তিন পা নিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় এমন চেয়ার। সারফেসে পেরেক ওঠা, 'বসলে-নড়াচড়া-বারণ' এমন চেয়ার।
সমস্যা আপনার মধ্যে:
অনুবাদ
পরবর্তীতে
কৃশতার সাথে ঠান্ডা পানির খুব বেশী দুরত্ব নেই।
অভিদ
কারো আকড়ে ধরার মত কিছু এখানে বাকি নেই।
দিনগুলো দীর্ঘ্য আর কোমল, এবং মেয়েটির
নিজস্বতার টুকরোগুলো অব্যক্তভাবে এরমাঝে অহেতু
ভেসে বেড়ায়।সে প্রায় বৃষ্টি-সদৃশ,
প্রতিটা ফোটা ঠান্ডা তার চেয়ে, স্বচ্ছ।
তাদের চেহারা তার মত হয়ে যায়, যারা
তার পরিদর্শনে আসে, তার আকাঙ্খা তাদের নিজেদের।
যখন সে টের পায় তার ভেতর উষ্ণ
শিশুদের সন্তরন অথবা প্রেমিকদের
তার চামড়ার ছায়াতলে, সে সবাইকে
বয়ে নেয় তার গভীরতম গন্তব্যে। তারা চলে যায়
রুপালী অশ্রু মেখে। উজ্জ্বল রাতে সে
চাঁদটাকে পরে নরম গয়নার মত আর
সেই পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে যা তার মতই স্থির, নিরব।
সামান্য স্পর্শে তার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠে।
ছড়া
ঘর বেঁধেছ নিশ্কলংকপুরে
মন বেঁধেছ বেহদ্দ সাতপাকে
সূর্য্যমামা তোমায় দেখতে গেলে
তার ভাগিনা কাছেপিঠেই থাকে
উঠোন ছিল শর্ত দিয়ে ঘেরা
শর্ত ছিল উপবৃত্তাকার
উপবৃত্তে মজেছে যে তীর
তাকে ফেরায় সাধ্য আছে কার?
আমি থাকি নিস্তরঙ্গপুরে
জীবন থাকে সেমিডাবল খাটে
প্রতিশ্রুত জোৎস্না আসবে বলে
সময় আমার প্রতিক্ষাতে কাটে
মধ্যখানে শর্ত ছিল, আছে
জল ছূয়েছে তোমার চোখের মনি
সে জল আমার ভাগ্যলিপি লেখে:
" উপবৃত্তে তীরের বৈতরনী"
পিতৃত্বের মূল্য
পুরুষ বন্ধ্যা প্রাণী(barren animal)- এ অভিযোগের বয়স অনেক।এ বন্ধ্যাত্ব ছোট্ট একটি কণাকে প্রাণ করে তুলতে না পারার, প্রাণকে লালন করতে না পারার। কলকাতার কবি জয়া মিত্র এই অভিযোগের সচ্ছল কাব্যভাষা দিয়েছেন। কবিতাটা খুব প্রিয় বিধায় পুরটাই কোট করছি। পড়ুন:
ওড টু অ্যালিস ওয়াকার
ইভ, তুমি কালো মেয়ে
তাই আদি সরীসৃপ
আদিম রহস্যবার্তা
বলে গেছে তোরই কানে কানে
বলে কি যাদুবিদ্যা বলে
তীব্রতম রূপোল্লাস গোপনে সঙ্চয় করে
গর্ভে ধরতে পারে শুধু তোমার শরীর
গভীর যোনীর মধ্যে
যে রৌদ্র চুঁইয়ে পড়ে
তাকে তুমি পরমরহস্য বলে
প্রাণকণা করে তোল
পুরুষ, সে কতদূরে
কেবল ইন্দ্রিয়সুখ সম্বল করে
অভাগ্য দাঁড়িয়ে থাকে
তোমার রাজ্যের বাইরে দীনহীন
হাতে হাতে মূল্য চুকিয়ে নিয়ে
একা
আমি ডেকে বলছি তোমাকে
ইভ, আদিম জননী নও
জায়া কিংবা ভার্যা নও
জন্ম সাম্রাজ্যের রহস্য ঐশ্বর্যমূলে
অধীশ্বরী তুমি
বন্ধুদের প্রতি খোলাচিঠি
এই লেখাটার একটা ইনট্রো দেয়া দরকার। লেখাটা খুবই ব্যাক্তিগত। কিন্তু যে জমানা পড়েছে, প্রাইভেট স্পেস বলে কিছু নেই।আমার চিটাগাং এর কিছু বন্ধু গোপনে গোপনে প্রেম করে এই খবরের প্রতিক্রিয়া হিসাবে এটা তাদের উদ্দশ্যে লেখা। কিন্তু বন্ধু বাফড়া বললো যে রেফারেন্চ না থাকলেও এটা পড়া যেতে পারে। তার কথায় বিশ্বাস করেই এটা পোস্ট করা...
বন্ধুদের প্রতি খোলাচিঠি
যাইবি দক্ষিনে, বলিবি পশ্চিমে, রহিবি পুরবমুখে
গোপন পিরিতি গোপনে রাখিবি তবে ত রহিবি সুখে
গোপন পিরিতি গোপনে রাখিবি সাধিবি মনের কাজ
সাপের মুখেতে ভেকেরে নাচাবি তবে তো রসিকরাজ