অস্ত্র
মগের বেটি কিক বক্সিং শিখছে। এই অসিলায় তার সাথে হেবি ফাইট হল। ফাইটটা কথার( যে ফাইটে প্রেমিকরা সবসময় হারে)। তো, অস্ত্র, আত্নরক্ষা, ইত্যাদি বিষয়ে আমার হেরে যাওয়া আর্গুমেন্টগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্যই এ লেখা।
My father never raised his hand to any one of his children, except in self-defense.
Fred Allen
কুকুরায়ন:
অনেককাল আগে পড়া একটা কবিতা মনে আসছে।খুব হালকা করে। ডগলাস ডান বা কারো। কবিতার ভেতর একটা ছোট গল্প ছিল যা আমার স্মৃতির দূর্বলতাকে কাঁচকলা দেখিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে আছে। এক লোক কোন এক দ্বীপে বেড়াতে এসেছে। সারাদিন বেড়িয়ে সন্ধায় তার ভিলায় এসে দেখে, তার দরজায় কে যেন একটা কুকুর রেখে গেছে। নিহত। তবে হত্যার আর্মি-কুশল পদ্ধতিকে স্বেচ্ছায় পরিহার করে এমনভাবে মারা হয়েছে যাতে হত্যা নয়, নির্যাতনই যে অভিষ্ট ছিল তা সর্বত্র পরিব্যক্ত হয়ে আছে। তাকে কি কেউ ভয় দেখাচ্ছে? লোকটা ভাবে। নাকি কেউ সতর্ক করতে চাইছে? হ্যাঁ, তারও একবার মনে হয়েছিল, নিরাপত্তার জন্য তার একটা কুকুর কেনা দরকার। লোকটা দ্বীপ থেকে আসার আগে মৃত কুকুরের নখগুলো কেটে নিজের সাথে নিয়ে আসে।
তার শেষ সিদ্ধান্তটা, আমার মতে, খুব ভাইটাল। নিরাপত্তার জন্য কুকুর না কিনে নিজেই কুকুর হতে চাওয়ার এই ইচ্ছা কৌতুহলোদ্দীপক। একইসাথে, যে নখ কুকুরটাকেই বাঁচাতে পারেনি, তাকে দিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নিশ্চই অসহায় মানুষের ভুল বাছাই। মানুষ নিরাপত্তার নামে অস্ত্র কেনে, আত্নরক্ষার নামে নিজেকেই অস্ত্র করে তোলে। আর আমরা খুব ভাল করে জানি, অস্ত্রের শত্রুর জন্য খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়না। সমীক্ষায় দেখা গেছে, আত্নরক্ষার জন্য যারা বন্দুক কেনে, অপরিচিত কাউকে মারার চেয়ে ছয়গুন বেশি সম্ভাবনা আছে তার পরিচিত কাউকে গুলি করার। তাই, কোন এক সকালে যদি ঘাড়ের ডানপাশে তীব্র ব্যাথা নিয়ে জেগে উঠি তবে বুঝতে ভুল হবেনা, আমি 'কারো' জন্য অনিরাপদ ছিলাম।
অ্যাকাডেমিক কারনে একটা সময় ইতিহাস পড়তে হত। বইয়ের পৃষ্ঠাজুড়ে শুধু রক্ত আর লাসশুমারী। দুপুরে ভাত খেতে পারতাম না। ইতিহাসজুড়ে সবাই দেখি কেবল 'বর্বর', 'অসভ্য' খুঁজছে। বন্দুকের দু'পাশেই আমি মানুষ দেখি, তারা কেন একে অন্যকে বর্বর ভাবছে জানি না। অথবা জানি। অবিশ্বাস আর সন্দেহ তাদের চোখকে ঝাপসা করে দিয়ে গেছে।
আমি বাহির ছেড়ে ঘরে আসি। ড্রয়িংরুম ছেড়ে বেডরুমে ঢুকি। আমার বন্ধু আমাকে বলে, টেবিলের উপর মানিব্যাগ রাখিস না, বুয়া নিয়ে যাবে। আমাকে আর কত ভেতরে ঢুকতে হবে নিরাপদ হবার জন্য! আমি ত জানি, অবিশ্বাস এমন সাপ লক্ষীন্দরের বেডরুমেও যার অনায়াস যাতায়াত।
শরীর:
দার্শনিক রুশোর মতে, শিশুরা প্রথমে তাদের শরীরের সাথে এক্সটার্নাল ওয়ার্ল্ডের পার্থক্য করতে পারে না। কিন্তু এ শিশুই যখন একটা গরম লোহায় হাত দেয়, ব্যাথার একটা তীব্র নদী তার শরীরময় প্রবাহিত হয়। যন্ত্রনার একটা ধারালো অনুভুতি ছুরির মত তার শরীরকে চারপাশের বস্তু দৃশ্য থেকে কেটে বের করে আনে। তাকে বলে, এই ফুল তুমি না, এই নদী তুমি না। এই বিচ্ছেদ মানুষ মনে রাখে; মনে রাখে চারপাশে তার জন্য ব্যাথার আয়োজন। তাই বাইরের জগতের সাথে তার সম্পর্ক প্রধানত সন্দেহের, ঘৃনার।
নারীর পৃথিবী:
আমি মনে হয় কবরের মত। তাই কারো জীবনের অতীত ঘটনার প্রতি আমার কোন কৌতুহল না থাকলেও আমার বান্ধবীরা তাদের কাউকে-না-বলতে-পারা কথাগুলো আমার বুকে কবর দিয়ে গেছে। আমি অন্যের গোপন কাহিনীগুলো পাহারা দেই। এই পৃথিবীতে একটা মেয়ে বড় হতে হতে যে 'ঘটনা'গুলোর মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তার সীমা নেই। অসংখ্য, কুৎসিত সব ঘটনা। আমার বয়স বাড়ে; আমার রক্তমাংস খেয়ে ঘটনাগুলোও বাড়ে। আমিই এগুলো ভুলতে পারিনা, যাদের জীবনে ঘটেছে তাদের ভুলতে বলি কিভাবে!
কিন্তু তোমাকে বলি, ও মগের বেটি! একটা লোক বাসে তোমার গায়ে হাত দিয়েছে এটা কি এতই গুরুত্বপূর্ণ! প্রেমিকের চুমোর চেয়েও তীব্র!! আজ যখন তুমি কিক বক্সিং শিখছ, তার জন্য তোমার শরীরকে প্রস্তুত করছ, তুমি আসলে তাকেই জিতিয়ে দিচ্ছ। কারন, তুমি তার খেলাই খেলছ! কুৎসিত মানুষের জন্য আমাদের সময়, মনোযোগ, প্রস্তুতি কোনটাই নাই। সে তার খেলা খেলুক। অনিচ্ছুক নারী দেহে হাত দিয়ে যে 'পেয়েছি' ভাবে, ওই ছাগলদের জন্য আমার এমনকি করুণাও হয় না। জীবনই তাদের সবচয়ে বড় শাস্তি। ঘিলু থাকলে বুঝবে।
আমরা আমাদের খেলা খেলব। সমস্ত গীতবিতান ভরে। কভার টু কভার।
দানবায়ন:
এই প্যারাটা লিখতে ইচ্ছা করছে না।
কনফেসন:
ছোট বেলায় শুনেছি, সবার মাঝে অসাধারন কিছু আছে। আমি আমার অসাধারনত্ব খুঁজতে গিয়ে টাসকি খেয়ে গেছি। আমি এত ফ্ল্যাট, ম্যাড়মেড়ে। আমার সাধারনত্ব আমাকে প্রবলভাবে আহত করেছে। আমার গ্রাম্য, রোধমাখা, উৎকেন্দ্রক, সৌন্দর্যভূক আত্নাকে ঠাঁই দেবার জন্য গোলাপের অভিশাপদ্স্ট এই ফেলনা মর্তশরীরকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না(কবি এখানে বলতে চাচ্ছেন, তার চেহারা সুন্দর ছিল না)।। অন্য অনেকগুন যা মানুষকে আকর্ষনীয় করে তাও কই। কিন্তু দেখলাম বিদ্যার অনেক দাম, এটা দিয়ে আমি নিয়ন্ত্রন করতে পারি, কতৃত্ব করতে পারি। আমি বিদ্যাকে আমার অস্ত্র বানিয়েছি- আমার শেষ প্রসাধন। অনেককাল পর আমি এ ভুল ধরতে পারি।আমি অস্ত্র নামিয়ে নিয়েছি।বন্ধুরা, যদি দেখা হয়, নিরস্ত্র হয়ে আসব।
শুনেছি হাদীসেও নাকি অকারণ সন্দেহ করতে মানা করা হয়েছে বা এইরকম কিছু ... যাহোক...
অস্ত্রের ব্যাপারে আমি অবশ্য রামায়ণ না যেন মহাভারতের ঐ সন্যাসীর আর সাপের গল্পের শিক্ষা টাই নিসি- ইউ ক্যান অলওয়েঝ রিটালিয়েট . তয় বেটার আগে এটাক করলে .
মহাভারতের এপ্রোচ একটু আলাদা।অর্জুন যখন যুদ্ধ করতে অসম্মতি জানায় তার আত্নীয়দের বিরুদ্ধে, পুরাকালের ডিক চেনি, কৃষ্ণ, তার বিখ্যাত ওয়ার্ক উইথ ডিটাচমেন্টের তত্ত্ব নাজিল করেন।বলেন, তুমি যুদ্ধ কর, কিন্তু এটার সাথে ইমোসানালি ইনভলভ্ড হয়ো না। আমরা দেবতা না, আমরা হই।
হুম। ভালো হইসে।
সেটাই। দারুণ একটা লাইন।
প্রেমিকের চুমুর সাথে বাসে একটা লোকের গায়ে হাত দেওয়ার তুলনাই করা যায় না। প্রেমিকের চুমু ভালোলাগার শিহরণ জাগায়, এই ভালো লাগাকে নারী আপন মনে আদরে ভালোবাসায় পুষে রাখে। আর একটা লোকের ইংগিতবাহী দৃষ্টি অথবা গায়ে স্পর্শ শুধু ঘৃণ্য না, অসহ্য, যা নারী ধুয়ে মুছে ফেলতে চায়। মনে পড়লে ঘিন্নায় শরীর-মন জ্বালা করে।
ঠিক, তুলনা হয় না, অনুভূতিতে।কিন্তু, তার মাথায় কে কতটা স্হান নিচ্ছে সে দিক থেকে হয়। একজন মানুর কথা ভাবুন যার কেউ প্রচন্ড ক্ষতি করেছে। এরপর সে বাকি জীবন কাটালো কিভাবে ওই লোককে খুন করা যায়, ডিটেইল, ইভেন্ট বাই ইভেন্ট।তার মাথায় তার প্রেমিক/া কই?
ইশ...
ক্যান যে এত কম লিখেন
আপনার লেখা অনেক অনেক ভালো লাগে, লেখার বিষয়বস্তু অনন্য হয়। আরো বেশি করে লিখুন।
চিন্তা জাগানিয়া
ভালো লেগেছে।
আরেকটু নিয়মিত হোন!
বাহ! একটা সাধারন কথা এত অসাধারন করে লেখেন কিভাবে? আর যখন লেখেন-ই তাহলে এত কম লেখেন কেন?
হাহা...লিখব...
মন্তব্য করুন