নারীর শরীর
I am not the wheatfield.
Nor the virgin land.
—Adrienne Rich
কিছুদিন আগে সেন্টমার্টিন বেড়াতে গিয়েছিলাম। যে কটেজটাতে উঠেছি সেটা সমুদ্রের খুব কাছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যায়। মনে হয় শরীরের উপর ঢেউ গড়িয়ে পড়ছে।
কটেজের কর্মচারীগুলোও বেশ ভাল। তার উপর, তারা দিনে কর্মচারী, আর রাতে গায়ক হয়ে যায়। এক রাতে তাদের গান শুনছি। চইংগা গান। একপর্যায়ে তারা একটা বার্মিজ গান ধরল। ভাষাটা ফলো করা যায়। বার্মা থেকে আসা এক যুবকের বাংলাদেশে আত্নীয়র বাসায় বেড়াতে আসা এবং তার তালতো বোনের 'বুকেপিঠে' (শব্দটা একেবারে আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে) তিনমাস কাটানোর ত্বপ্তিদায়ক অভিজ্ঞতা নিয়ে গানটা লেখা।
গানটির লিরিকে প্রকাশ পায়, যুবকটি ঢাকা এয়ারপোর্ট (নাফ নদী নৌকায় পার না হয়ে প্লেন দিয়ে আসল, খেয়াল করেন) থেকে বেরোলেই বাংলাদেশের 'দুষ্টু' মেয়েরা তাকে ছেঁকে ধরে। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশে 'আসল' পুরুষের বড় অভাব। কিন্তু তাকে তো এখানে পড়ে থাকলেই চলবে না, তার তালতো বোনের প্রতিও তার কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। তাই সে এখানে কিছু সময় কাটিয়েই তার তালতো বোনের কাস্টডিতে চলে যায়।
একজন বার্মিজ যুবকের সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসিতে বাংলাদেশ মানে 'আসল' পুরুষের প্রতীক্ষারত যৌন-অতৃপ্ত নারীদের সারি, ঠিক যেমনটা আমাদের কাছে কামরুপ-কামাখ্যা, যাদুবিদ্যা পারদর্শী নগ্ন নারীদের দল।
অভিযাত্রীদের কাছে অজানা যেকোনো জায়গাই virgin land. নিচের ছবিটি উপনৈবেশিক আমলের আফ্রিকার পেইনটিং।
একজন উপনিবেশকারী একটা নতুন দেশকে কিভাবে দেখে তা এখানে স্পষ্ট। ছবিতে উপনিবেশকারীর 'দন্ডায়মান' ভংগীর বিপরীতে নগ্ন মহিলাটির শুয়ে থাকা আহ্বানের ইংগিত আসলে উপনৈবেশিক মানসিকতা প্রকাশ করে দেয়। ছবিতে কোন পুরুষ নাই (আসল, নকল যাই হোক)। অন্যদিকে, অহল্যা একটি হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র। অহল্যা মানে যে জমিতে হল(লাঙ্গল) চালনা করা হয়নি।
পুরুষের যৌনধারাপাতে লিঙ্গ ও লাঙ্গল একই, নারী ও ভূমি উভয়ই চাষযোগ্য। তাই, পুরুষের রাজ্যজয়ের বাসনা ও নারীর শরীর দখলে কোন পার্থ্ক্য নেই। যেকোন ইম্পেরিয়াল জার্নিই সেক্সুয়াল জার্নি। যেকোন সম্রাজ্য নারীর শরীরের উপর দাড়িয়ে থাকে।
ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ
ভাল্লাগছে
মন্তব্য করুন