সুদূরের পিয়াসী'এর ব্লগ
জয় মহাপ্রভু ধুম্রশলাকার জয়
মহাপ্রভুর প্রিয় অবলম্বনদ্বয় তথা তর্জনি এবং মধ্যমার সহাবস্থান নিশ্চিত হওয়ায় , জ্বলন্ত মহাযোগী ধুম্রশলাকা মহাপ্রভুর নির্দেশিত পথানুরাগী একান্ত ভক্ত , অনুসারী , হন্টক কিংবা পলাতক বশ্যতা স্বীকারপূর্বক প্রভু কর্তৃক দীক্ষিত উপায়ে প্রভু ধুম্রশলাকার নশ্বর দেহের ক্রমাগত জ্বলন বলপূর্বক ত্বরান্বিত করিয়া তাঁহার অন্তেঃষ্টিক্রিয়া সম্পাদন করিয়া চলিয়াছে নিরন্তর । তথাপি মহাপ্রভু ধুম্রশলাকার অস্তিত্ব যেমন চির অক্ষয় , তেমনি তাঁর প্রতি অনুসারীদের পরম ভক্তিও চির অম্লান । সাকার এই মহাপ্রভুর দৃশ্যত জ্বলনে প্রাপ্ত ধুম্রজালের অদৃশ্য অন্তর্নিহিত বস্তুগত এবং ভাবগত অপার কৃপায় গুনগ্রাহীগণ অমৃতসুধা পাইলেও পাইতে পারেন , যদি তাহা তিনি হৃদয়গত বিশ্বাসে গ্রহণ করিয়া থাকেন ।
কৃতজ্ঞতায় - মহাপ্রভুর একনিষ্ঠ এক শিষ্য ।
জয় , মহাপ্রভু ধুম্রশলাকার জয় ।
এবং অপূর্ণতা
এ রাতের নির্জন আলো-আঁধারিতে পিচঢালা সুদীর্ঘ পথ
দুপাশের গাছের ভীড়ে মিলেছে অদূরে ।
অনিয়ত গাছের ফাঁক গলে অক্লান্ত দৃষ্টি ছুটে চলে
দিগন্তে , কুয়াশায় , আকাশে , মেঘে মেঘে , বিস্তীর্ন ধানশূণ্য ক্ষেতে ।
কখনো অপ্রস্তুত দৃষ্টি থেমে যায় দুপাশের সরু খালে , কালো জলে জেগে থাকা কলমিলতার ফাঁকে ফাঁকে কালচে মেঘের উড়ে চলা থরথর প্রতিচ্ছায়ায় , দৃষ্টিজুড়ে অবলীলার নিভৃত আলিঙ্গন ।
উত্তরের শিরশিরে হাওয়ায় নিবিষ্ট হন্টক জোরেসোরে চুমো খায় বেনসনের আড়ষ্ট ঠোঁটে , প্রতিটি চুমোয় ভরে ওঠা শিল্পীর হৃদয়ের সপ্নীল ক্যানভাস যতটা পূর্ণ হয় , ঠিক ততটাই থাকে অপূর্ণতা ।
তৃষ্ণা
তৃষ্ণা আরো প্রবল হয়ে ওঠে ,
পানের পর পান চলতে থাকে ,
পানের পর পান অবিরত,
কাপের পর কাপ ,
উষ্ণ হাহাকার ,
গলবিল বেয়ে পাকস্থলি ,
সব ছারখার করে ,
শীতল হয় হৃতপিন্ড ।
তবু আবার ,
প্রাণের তৃষ্ণা জাগে ,
প্রাণের তৃষ্ণা প্রবল হয় ,
প্রবল থেকে প্রবলতর হয় ,
জেগে ওঠে রক্তের মোচড় ,
বাড়তে থাকে হৃদস্পন্দন ,
নীলাভ হতাশা নির্বিঘ্নে বেয়ে চলে ,
রক্তের সাথে মিলে মিশে চলে ,
ধমনী থেকে ধমনীতে ,
হৃদয় থেকে হৃদয়ে ,
হৃতপিন্ড উষ্ণ হয়ে ওঠে ,
উষ্ণতা বাড়তে থাকে ,
বাড়তে থাকে অদৃশ্য ক্ষত ,
হৃদয়ের ক্ষত ।
পানের বস্তু সুপেয় না হতে পারে ,
তবু তৃষ্ণা জাগে ,
পানের তৃষ্ণা ,
তৃষ্ণা আরো প্রবল হয়ে ওঠে ,
পানের পর পান চলতে থাকে ।
কিন্তু প্রাণের তৃষ্ণা
প্রবল থেকে প্রবলতম হয় ,
প্রাণের তৃষ্ণা মেটেনা কোনো কালে ।
বলবো না
দেখো আজ এমন বাদল দিনে
তুমিহীন না ভিজলেও পারতাম ,
তাই বলে ভেবনা যে তোমাকে ইঙ্গিত দিয়ে বলছি ।
ইদানিং এমন আবেগ কোন তাড়িয়ে বেড়ায়না আমায়
যে দু একটা প্রশস্তি , পংক্তি লিখা প্রয়োজন ।
প্রয়োজন নেই কোন , না থাক , প্রয়োজন ছাড়াও তো কত কিছু আমাদের চাই ।
চাই যত কিছু , না পাই , তবু পেলাম না এই বলে ধরনা দিতে তো চাইনি ।
রাত তো ফুরালো কত , ঘুম নেই তা তো বলিনি , আমি একা একথা ও বলিনি ।
কেন মিছেমিছি এই ভাব ধরে থাকার প্রয়াস , এ অভিনয় মানায় না তোমায় , আমায় ।
ফিরে এসো একথা বলিনি , চলে যাও তাও বলিনি , বলিনি কিছুই আমি , বলবোনা আর কোন কিছু , কোন দিন ।
কেবল তোমার স্মৃতিটুকু ডালপালা ছড়িয়ে বুঝি , শেকড়ের গভীরে খুঁজি , পাইনি অগ্রমূল , অথচ বায়ুতে শ্বাসমূলে আছ জেগে , কেমন তীক্ষ্নতায় বিধে আছো হৃতপিন্ডে ।
এটুকু ব্যথার ভার সইবোনা তা তো বলিনি , বলবো না কোন কিছু আর কোনদিন , তবু তোমার ও হাসিটুকু বাঁচিয়ে রেখো চিরদিন ।
খুদে লিরিক
আমাকে হারিয়ে যেতে দাও
আমারি হারানো পথে ।
আমাকে ভেসে যেতে দাও
ভেঙে যাওয়া স্বপ্নরথে ।।
খুঁজোনা আমায় আকাশের নীলে ।
পাবেনা আমায় উদাস গাংচিলে ।।
ডেকোনা , আমি আর ফিরবো না
ফেলে আসা ধূসর অতীতে ।
কখনো হিসাব মেলাবো না
জীবনের কোন লাভ ক্ষতিতে ।।
ঝাপসা দুচোখ , বৃষ্টি কাঁদে ।
জড়াবোনা আর জীবনের ফাঁদে ।।
আমাকে হারিয়ে যেতে দাও
আমারি হারানো পথে ।
মিছে আশ্বাস
বসে বসে বৃষ্টিবিকেলে আজ দেখি
চৌরাস্তার মোড়ে ছোট্ট একটা মেয়ে
হাঁটছিলো ফুটপাথ ধরে
একান্ত অনিচ্ছাতে ।
বাবার হাতটা যেন প্রচন্ড হ্যান্ডকাফ ,
টেনে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েকে
রিক্সা থেকে নিরাপদ দূরত্বে , মেয়েটা পেছন ফিরে হাত বাড়িয়ে
রিক্সা দেখিয়ে বলে ,
আর কত হাঁটবো ,
রিক্সা নাওনা বাবা ।
মলিন হাসিতে বাবা বলে -
এইতো মা এসে গেছি ,
আর একটু আর একটু হাঁটো ।।
কাঁটাতার
আচ্ছা তবে ,
আমার দেয়া নামটা এবার ফিরিয়ে নিলাম ,
সত্য এবং মিথ্যার মাঝখানে
রক্তাক্ত কাঁটাতারের বেড়া
মজবুত করে গেঁথে দিলাম ।
শোনো তবে ,
অজান্তে কোনো দিনও ,
ছুঁই ছুঁই করে তবু ছুঁয়োনাকো যেন
ফারাকের এই প্রচন্ড কাঁটাতার ।
শুধু জেনো ,
ওপাশের মেকি ক্ষতের রক্তে
এপাশের আদি শুকনো ক্ষতটা
ভিজবে না কভু আর ।
তাই বলছি শোনো ,
জেনে শুনে ,
আর পেড়োতে এসো না
ফারাকের এই নিদারুন কাঁটাতার ।
তোমার বার্তা
অহেতুক ভিজে ফিরে গেল
অনাহত একাকী এ সন্ধ্যা ,
ছাদের কার্নিশে কার জমা রয়ে গেল
জলেভেজা বিরহগাঁথা ।
রিমঝিম বৃষ্টির গানে ,
অনিয়ত মেঘের গর্জনে
সদ্যজাত কতগুলো দীর্ঘশ্বাস
চাপা পড়ে গেল চিরতরে ।
একে একে নিভে গেল সবকটা
ফ্ল্যাটের আলো ।
এমনি যে কত রাত , কতগুলো বর্ষা ফুরালো ।
ভেবে ভেবে এই একাকিত্ব
এখনো যে থিঁতু হয়ে বসে ,
তোমার বার্তা কেন আজো ভেসে এলোনা
বাদল বাতাসে ।
চিরকাল
.
. .
. . . .
. . . . . .
. . . . . .
. . . . . . . . .
এই সব
নিঃসঙ্গ প্রহর কত -
একে একে স্পষ্ট হয়
গহীনের দগদগে ক্ষত ।
. . . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . .
সমুদ্র ফিরে গেলে
পারেনি নিভাতে সে আগুন ;
রাতভর বর্ষার জলে
ধুয়ে দেয় যত ,
জ্বলে উঠে সে আগুন
নিমিষে কয়েক গুন ।
. . . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . .
এই সব
নির্জন আলো আঁধারিতে
একে একে নিবে যায় বাতি -
দূরের যত ফ্ল্যাটগুলোতে ,
ল্যামপোস্টের আলোয়
জেগে ওঠে জনশূণ্য পথের বুকে
অদৃশ্য অশ্রুবিনিময় ।
. . . . . . . . . . . .
. . . . . . . . . . . . .
এত এত
বিরহী মেঘের ব্যাথা
নুয়ে পড়ে আকাশ ভেঙে ,
বৃষ্টি ছুঁয়ে যায় ব্যকুলতা ।
এই সব
চিরকাল নিঃসঙ্গতা ।
প্রত্যাবর্তন ও বিবিধ কথা
এলেম শেষে অনেক দিনের পরে । বন্ধুরা সব বন্ধু আছে ,
আমরা ও তো আমরা আছি । আমরা বন্ধু তেমনই আছি ,
যেমন ছিলেম আগে ।
(এক বা দুজন অনলাইনে ,
ডজনখানেক ভুলকি মারে
তারপরে কে ল্যাজ গুটিয়ে
ভোঁ দৌড় দিয়ে ভাগে ।
হায়রে কপাল আমরা আছি
যেমন ছিলেম আগে । ।)
অন্তর্দহন বা অশ্রুবর্ষণ
জেগে ওঠে পুরানো মোচড়
হৃতপিন্ডে অনাগত ।
বিদগ্ধ দিন শেষে বেড়ে ওঠে
হৃদয়ের আদিম ক্ষত ।
অন্তর্দহনে ছাই গহীনের
বিমূর্ত নন্দনকানন ।
অলখে আঠারো বর্ষার পদচারণ ,
অতঃপর অশ্রুবর্ষণ ।
(c) by Ekanto Ovajon
আহবান
জীবন আমায় রিক্ত কর
পূর্ণ কর সকল তোমার সাধ ।
যদি কাঁদাতেই চাও কাঁদাও
তবে মুক্ত কর অশ্রু নদীর বাঁধ ।
ব্যর্থ গ্লানি লিখে দিয়ে কপালে
কেন মিথ্যে আশায় জুড়াও বুক আমার ।
যদি চির আঁধারেই ঠাঁই দিলে
তবে রঙিন স্বপ্ন দেখিওনা তুমি আর ।
জীবন আমায় পরাজিত কর
গেয়ে যাও তবে আপনার জয়গান ।
জীবন আমায় পরিত্যাগ কর
তোমাকে জানাই সাদর আহবান ।
(c) by Ekanto Ovajon
[রচনাকাল : সম্ভবত ২০০৭ সাল ]
তবু হারিয়ে যাওয়াটাই শ্রেয়
তবু হারিয়ে যাওয়াটাই শ্রেয় - অকারণ
ক্ষণস্থায়ী পাওয়ার চিরায়ত ভ্রান্ত সমীকরণ
আরো একবার সংশোধিত হতেই পারে ,
অতীতের ব্যুহময় অন্ধকারে
অনর্থক ক্ষীণপ্রাণ জ্যোতি
চীরতরে ঘুঁচে গেলেই কী ক্ষতি ।
সীমাহীন আকাশ ছোঁবার
বৃথা আড়ম্বর নাইবা করলাম আর ।
আকাশ বীরদর্পে হেসে আবার থমকে দাঁড়ায় ,
যদিবা ছিন্নমূল ব্যথারা উর্ধ্বপানে হারাতে চায় ;
কিন্তু শূণ্য জীবন এক চরম মাধ্যাকর্ষণ -
টান দেয় রক্তাক্ত সুতোয় , বনেদী তাঁতীর মতন
বুনে চলে নিশ্ছিদ্র বাস্তবতার জালক ।
কোথায় পালাবে হে নাদান পলাতক !
হয়তো পালানোর পথটা অননুমেয়
তবু হারিয়ে যাওয়াটাই শ্রেয় ।
রুদ্র অনল
আজ এমন শর্তহীন মূঢ়তা বাসা বাঁধতে পারতো না কোনভাবেই ;
এমন করে রক্তের শীতল স্রোতে বইতো না দাসত্বের মারণ জীন , অহেতুক জড়তার প্রকাশহীন আক্ষেপ ;
এভাবে সূর্যের কাছে ধার করতে হতো না আলো কিংবা উত্তাপ -
যদি আমি অনুভুতির এক চিমটিও বারুদ মুখে জন্মাতে পারতাম , তবে আজ এসব নিগুঢ় তত্ত্বজ্ঞান , আস্তাকুঁড়ে হাতের এমন সস্তা কলকাঠি , জাদুকরের ভেলকিবাজি , অথবা স্বপ্নে ডোবানোর চোরাই কারখানা - সব কিছু ছারখার করে দিতাম মুহূর্তের ফুতকারে , সত্যের রুদ্র অনলে , দীপ্ত দহনে পবিত্র হতো সোনার স্বর্গভূমি ।
রৌদ্রস্নাত একটি দুপুর
রৌদ্রস্নানে ফুরফুরে দুপুরের আগমন , কোথাও বৃষ্টি নেই , তারপরও কাকগুলো ডানা মেলে ধরেছে ,
ছিপছিপে গড়নের গাছগুলোতে যৌবন ঠিকরে পড়ে পল্লবের দীপ্ত ভাঁজে ভাঁজে ,
কবুতরও একপায়ে খাড়া ;
সবাই প্রশান্তির আঁচ নিয়ে বৈশাখের হাওয়া মাখে গায়ে ,
পিঠ পুড়ে যদিবা অজান্তে ।
পুকুরটায় জল নেই , কাঁদা আছে , আরো আছে রোদের ঝলকানি ,
পাড় ধরে দাড়িয়েছে কলাগাছ সারি সারি অতন্ত্র প্রহরী ,
এদিকে সবুজ ক্ষেতে ধানে ধানে আলোর নাচন ,
কোথাও শব্দ নেই , নিশ্চুপ কর্মকোলাহল ,
কোথাও বৃষ্টি নেই তারপরও ভিজছে সবই ,
মৃদু প্রেমে ভিজে যায় রৌদ্রস্নাত একটি দুপুর ।