শোনা কথায় বইমেলা: ফেব্রুয়ারি ৮
বইমেলাতে যাদের বই প্রকাশিত হয়, তাঁরা অন্যের বই কয়টা কিনেন?
প্রশ্নটা ভাবাচ্ছে কয়েকদিন ধরে। কারণ, প্রতি বছর বইমেলাতে প্রচুর বই বের হয়। প্রচুর বই মানে প্রচুর লেখক। বই বিক্রি হয় না বলে একটা অভিযোগ আমাদের সাধারণ ক্রেতাদের প্রতি প্রকাশকরা করে থাকেন। যারা বই লিখেন, তাদের সংখ্যাটা যদি বেশি হয়, তাহলেও, আমার ধারণা, প্রচুর বই বিক্রি হওয়ার কথা। বড় লেখকরা প্রায়শই উঠতি লেখকদের পরামর্শ দেন বই লেখার আগে বেশি বেশি বই পড়তে। আমরা অবশ্য যতো না কিনে বই পড়ি, তার চেয়ে বেশি বই পড়ি ধারদেনা করে। এর বড় কারণ হচ্ছে টাকার অভাব। কিন্তু তারপরও দশটা বইয়ের মধ্যে একটা বই তো কিনে পড়াই যায়। সেই কাজটা আমরা কয়জনে করি? এই ব্যাপারে একটা জরিপ চালানো যেতে পারে। ভাবছি, আগামী বছর একটা ছোটখাটো জরিপ চালাবো এটাকে কেন্দ্র করে।
বইমেলা নিয়ে এই সিরিজটা লিখতে লিখতেই বই সম্পর্কে বেশ কিছু আইডিয়া মাথায় এসেছে। আগামী পর্বগুলোতে সেগুলো শেয়ার করবো একটু একটু করে। কিন্তু একটা বিষয় ভেবে পাচ্ছি না- অনেকেই নানা ব্লগ বা ফেসবুকে নানান আইডিয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত লিখে যাচ্ছেন। কারও কারও আইডিয়া তো এতো চমৎকার যে, মনে হয়, ক্ষমতা থাকলে এখনি বাস্তবায়ন করে ফেলতাম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা এসব আইডিয়া বা নতুন কিছু বাস্তবায়ন করতে পারেন, সেই বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষের কাছে এসব আইডিয়া কতোটুকু পৌঁছায়। কর্তৃপক্ষ কি জানেন, বইমেলা নিয়ে কে কী ভাবছে? মেলা উদ্বোধনের দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেসব বক্তব্য দিয়েছেন মেলা বিষয়ে, একাডেমী কর্তৃপক্ষ হয়তো সেগুলো গুরুত্ব দিয়ে ভাববেন। এছাড়া অন্য অতিথিদের কিংবা প্রতিদিন যেসব অতিথি এসে একাডেমীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন, কর্তৃপক্ষ হয়তো তাঁদের কথাকেও গুরুত্ব দিবেন। কিন্তু এর বাইরে হাজারো মানুষ যে একাডেমীর দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে ভাবছেন, ভাবছেন মেলা নিয়ে, বই প্রকাশ নিয়ে, প্রকাশকদের নিয়ে, বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে- মেলা কর্তৃপক্ষের কি উচিত নয় এসব ভাবনাগুলোকে এক জায়গায় জড়ো করা?
মেলা কর্তৃপক্ষের আরও কিছু বিষয় ভাবা জরুরি। প্রথমত, মেলা প্রাঙ্গনে কতোগুলো টেলিভিশন ক্যামেরা থাকবে সেটা ঠিক করে দেয়া। মেলায় যেদিকেই তাকাই সেদিকেই একের পর এক ক্যামেরা দেখি। তাও পুরো সময় জুড়ে। এতো ক্যামেরার কী দরকার? কতোটুকু দরকার? যেদিন কম মানুষ থাকে, সেদিন না হয় এদের অত্যাচার মেনে নেয়া যায়, কিন্তু যেদিন বেশি মানুষ হয়, সেদিন তো এদের দাপটে হাঁটাই যায় না। কেউ লাইভ শো করে, কেউবা রেকর্ড করেই যায় একটানা- এর কতোটুকু প্রচার করে কে জানে! সবচেয়ে বড় ব্যাপারে, এরা যখন উপস্থাপনা করে, তখন প্রচুর জায়গা নেয়। মেলায় এমনিতেই জায়গা কম, এর উপর যদি ক্যামেরা ও উপস্থাপকরা এতো জায়গা নিতে থাকে, তাহলে মানুষজন যাবে কোথায়? মেলা কর্তৃপক্ষের এদিকটা ভাবা জরুরি।
দ্বিতীয়ত, মেলার ভিতরে ব্যাংক বা কাগজের দোকান ইত্যাদির বিষয়ে। সন্দেহ নেই, এই সময়ে স্পন্সরশিপ একাডেমীর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু তাই বলে এদেরকে আস্ত একটি স্টল বরাদ্দ দিতে হয়? বরাদ্দ দিতে হয় কাগজ বিক্রেতাদের?
তৃতীয়ত, মেলা শুরুর কয়েকদিন পরও দেখা যায় অনেকগুলো স্টল তখনও বই নিয়ে বসে নি। কিংবা বসলেও কিছুক্ষণ খুলে তারপর বন্ধ করে ফেলে। মেলায় এই ধরনের স্টল রাখার যৌক্তিকতা কী?
বইমেলা নিয়ে কর্তৃপক্ষের প্রচুর ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, যার ভাবার কথা (একাডেমী কর্তৃপক্ষ) তার ভাবার সময় নেই। আর যার ভাবলেও কিছু করার ক্ষমতা নেই (আমার মতো আমপাবলিক), তারা ভেবে ভেবে কুল পায় না।
আমপাবলিকের ক্ষমতার কোন বিকল্প নাই তা তো নিজ চোখেই দেখলেন।
টিভি ক্যামেরা বিরাট যন্ত্রণাদায়ক। আপনার মনে আছে গত বছর টিভি ক্যামেরার যন্ত্রণায় আমরা বসে গল্পও করতে পারতাম না ঠিকমতো?
আমপাবলিকের ক্ষমতা নাই বলতে আসলে বুঝিয়েছি দৈনন্দিন রুটিন কাজগুলোর ক্ষেত্রে আমপাবলিকের বেশি কিছু করার সুযোগ নাই। একাডেমী কর্তৃপক্ষকে রাখাই হয়েছে এসব কাজ করার জন্য। আমপাবলিককে যদি বারবার তাদেরকে তাদের কাজ সম্পর্কে মনে করিয়ে দিতে হয়, তাহলে তো মুশকিল!
আগেরবার টিভি ক্যামেরা তো ওই জায়গায় বসেছিল আপনাদের টিভিতে দেখানোর জন্য।
টেলিভিশনের এই উপস্থিতি অনেকের কাছে আনন্দের। আমি অনেক লোককে দেখছি যারা যেখানেই ক্যামেরা সেইখানেই থাকে!
তাও অবশ্য ঠিক। অনেক পাবলিক ক্যামেরা দেখলেই পাগল হয়ে যায়।
কালকে আমার মাথায় একটা প্রশ্ন আসলো, এবার কি বই ব্যবসায়ীদের মন-মেজাজ ভালো না খারাপ?
এরপরের পর্বে এই বিষয়টার উপ্রে একটু লাইটিং কইরেন তো উস্তাদ।
বাহ্! কী দারুণ মিল! এটা আমারও মাথায় এসেছিল। ভাবছিলাম দুয়েকটা প্যারা হয়তো লিখবো এটা নিয়ে। আজকে পত্রিকায় দেখলাম, আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি বলছেন, বেচাবিক্রি কম হলেও তিনি অখুশি নন। কারণ শাহবাগের আন্দোলন আর বইমেলার কনসেপ্ট ভিন্ন কিছু নয়। ...আর এই কথাটাই বলার চেষ্টা করছি কয়দিন ধরে।
শেষ লাইনটা কার উদ্দেশ্যে লিখলেন? আপনার উস্তাদের নাম কী?
ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া আপনাকে মানতেই হবে। যখন টিভি চ্যানেল-এর লাইসেন্স দেয়া হয় তখন এটি অনুমেয় যে তারা অনুষ্ঠান প্রচার করবেই। আর বইমেলা একটা বড় ইভেন্ট হিসেবে তাদের পদচারণায় মুখর হবেই।
ভাবিয়া করিও কাজ...।
বাঙালি বই কেনে নাকি? পড়েও না কেনেও না। জরিপ করে রেজাল্ট কি পাবেন আগাম বলতে পারি। সেই যে বললেন না, ৩০০ কপি না ৫০০ কপি ছাপিয়ে বিক্রি করতে পারেন ৩২ কপি ! শুদ্ধস্বরের টুটুল ভাই বই-এর স্টক লটের কথা বলছিলেন। আমি জানি না উনি কীভাবে টিকে আছেন ! আমার দুই পরিচিত গতপরসু বইমেলা নিয়ে কথাবার্তা চালাচ্ছিলো, চুপচাপ তাদের কথা শুনতে হলো কারণ বলার মতো ভাষা ছিলো না। এদের একজন মেলায় আসেনা কারণ উন্মাদের স্টিকার কিনতে পারবেনা। আরেকজন বলে, হুমায়ূন আহমেদ নাই মেলায় যেয়ে কী হবে!
সেটা অবশ্য ঠিক। মেলা কর্তৃপক্ষ সম্ভবত টেলিভিশনের এই উৎপাতের কথা ভাবতে পারেননি আগে। এখন এটা এমনই সহ্যের বাইরে গেছে যে, এটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা দরকার।
আর বই বিক্রির ব্যাপারে কী বলবো! যা বলার আপনি বলে দিয়েছেন।
শুনলাম এবার নাকি বিক্রি এখন পর্যন্ত ভাল
চৌধুরী সাহেব, নিজের বইয়ের বিক্রি দিয়ে বইমেলার বিক্রি হিসাব করবেন না!
উন্মাদ নাই
আর কাগজের দোকান দিয়ে বসে আছে।
মেজাজ খারাপ করা ব্যাপার!
হ, কাগজের দোকান, ব্যাংকের দোকান সব আছে- উন্মাদ নাই।
মন্তব্য করুন