শোনা কথায় বইমেলা: ফেব্রুয়ারি ৯
বইমেলা উপলক্ষ্যে সম্ভবত বছর চারেক আগে একটি ওয়েব সাইট প্রকাশিত হয় বেসরকারি উদ্যোগে। সাইটটি তৈরি করেছিলেন আমারই এক পরিচিতজন। এর আগে শুধু বইমেলা নিয়ে কোনো ওয়েব সাইট আমার নজরে আসেনি। ফলে তার তৈরি করা ওয়েব সাইটটি নিয়ে অনেকটাই উচ্ছ্বসিত ছিলাম। তাদের একটা স্টলও বসেছিল মেলা প্রাঙ্গনে- আরও নির্দিষ্ট করে বললে লিটলম্যাগ চত্বরে। সেখানে নতুন আসা বইয়ের নামধাম তোলা হতো। সার্চ করার অপশনও ছিল। সাইটটিতে বইয়ের ক্যাটালগ তৈরি করা হতো ইংরেজিতে, তবে বাংলায় ইমেজ আকারে বইয়ের নাম ও লেখকের নাম থাকতো। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাইট নির্মাতাকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম যার একটি হচ্ছে পুরো সাইটটাকে বাংলায় করা আর বইয়ের পরিচিতি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা। শুধু বইয়ের নাম, লেখকের নাম, দাম, ক্যাটাগরি আর প্রচ্ছদ থাকলেই বইয়ের পরিচিতি জানা হয় না। বইটা কী বিষয়ে, সেখানে কী আছে ইত্যাদি বিষয়ও জানা দরকার। প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্পেস বা সময়ের সংকট থাকে, সেখানে না হয় এসব কারণে এতো তথ্য দেয়া সম্ভব হয় না; কিন্তু ওয়েব সাইটে তো আর সেই ঝামেলা নেই!
সেই ওয়েব সাইটটির নাম মনে নেই; কিন্তু পরে অনেকবার সার্চ করে কিংবা নানাভাবে খোঁজ করেও সাইটটির সন্ধান পাইনি। বইমেলাতেও এদের স্টল দেখিনি আর পরে! তাঁর সাথে যোগাযোগ এমনিতেই ক্ষীণ, বইমেলার কারণে দেখা হতো; ফোন নম্বর না থাকার কারণে যোগাযোগ একেবারেই নেই। থাকলে বুঝা যেত তারা ওই সাইটের কতোটুকু কী করেছে। তবে ধারণা করি, সাইটটি সম্ভবত এখন আর কার্যকর নেই। এখানে প্রচুর উদ্যম নিয়ে মানুষজন নতুন নতুন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে যার অধিকাংশই পরবর্তী সময়ে আর টিকে থাকে না। এক্ষেত্রেও সেটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
তবে গত দুই বছরে এ ধরনের ওয়েব সাইটের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বইমেলা সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি সাইট দেখেছি। ব্লগার একরামুল হক শামীমও দেখলাম এরকম একটা ওয়েব সাইট তৈরি করেছে। ভালো উদ্যোগ। বইমেলার পরিসর ও প্রভাব যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, এ ধরনের একাধিক সাইট তৈরি করাই যায়। ব্যবসায়িক চিন্তা থেকে হিসেব করলে অবশ্য এসব ওয়েব সাইট ভালোভাবে চলার কথা না; কিন্তু মানুষজন ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনার বাইরে গিয়েই এই কাজগুলো করে থাকে বলে আমার ধারণা।
যেহেতু থাকছি ঢাকার বাইরে, সুতরাং বইমেলা সম্পর্কে জানার জন্য সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হতে পারে ভেবে কিছু কিছু ওয়েব সাইটে সার্চ দিলাম। বলা ভালো যে, সবগুলো ওয়েব সাইটই হতাশ করেছে। যেটা উপরেই লিখেছিলাম- নামধাম ছাড়াও বইয়ের আরও অনেক কিছু জানার আছে। মানুষ শুধু বইয়ের নাম বা লেখকের নাম দেখেই আজকাল বই কিনে না, অনেক প্রয়োজনীয় বই কিনতে হয় বইয়ের বিষয়বস্তু দেখার পর। সেদিক দিয়ে বইমেলা-সংক্রান্ত যেসব ওয়েব সাইট আছে, তার কোনোটিই আমার সেই চাহিদা মেটাতে পারেনি। দুয়েকটা বই দেখেছি (নাম উল্লেখ করাটা সঙ্গত হবে না) যেগুলোর নাম থেকে বইটি কীসের ওপর (গল্প না কবিতা নাকি প্রবন্ধ) তাও ঠাহর করা যায় না। কোথাও কোথাও অসাবধানবশত ট্যাগ বা ক্যাটাগরি দেয়া নেই, ফলে প্রচ্ছদ দেখা সেটা কবিতা নাকি গল্পের বই তা বুঝা মুশকিল!
কারিগরি জ্ঞান থাকলে একটা ওয়েব সাইট যে কেউ বানাতে পারে। বইমেলা নিয়ে বানানো ওয়েব সাইটের ব্যবসায়িক মূল্য আপাতদৃষ্টিতে না থাকতে পারে, কিন্তু চাইলে সেটিকেও ব্যবসায়িক উদ্যেগ নিয়ে তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে একজন ওয়েব সাইট তৈরিকারকের নিজস্ব চিন্তাভাবনার ছাপ যেমন থাকতে হবে, তেমনি পাঠক কী চান সেটিও জানা থাকতে হবে। না হলে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু ভিজিটর ছাড়া সেই সাইটগুলোতে পরবর্তী সময়ে আর পাঠক পাওয়া যাবে না। এসব ক্ষেত্রে উপস্থাপনা শৈলীর বিষয়টি ভাবা যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ সহজ ও সরলভাবে সম্পূর্ণ তথ্য পাঠককে জানানো।
কারিগরি জ্ঞান থাকলেই যদি সবকিছু জানা যেত, তাহলে ওয়েব সাইট তৈরিকারক ছাড়া এই পেশায় অন্য কারো রোজগারের কোনো সম্ভাবনা থাকতো না। কিন্তু বাস্তবতা বলে, এ পেশায় অনেক ধরনের মানুষজনই করে খাচ্ছে। একই ধরনের একটি ওয়েব সাইটকে কীভাবে অন্যদের চেয়ে আলাদাভাবে উপস্থাপন করা যায়, সফল হওয়ার জন্য সেটি জানা থাকা জরুরি। সামাজিক যোগাযোগ ওয়েব সাইট হিসেবে অরকুট কিংবা মাইস্পেস থাকার পরও কীভাবে ফেসবুকের উত্থান ঘটলো, কিংবা ফেসবুক থাকার পরও গুগল কেন তাদের পণ্য গুগল প্লাস নিয়ে এলো কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কয়েকটি প্লাটফর্ম তৈরি করেও মাইক্রোসফট কেন সফল হতে পারছে না- বিষয়গুলো কি ওয়েব সাইট তৈরিকারকে একটুও ভাবায় না। যদি প্রতিষ্ঠিত ওয়েব সাইটে নতুন বইয়ের তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে নতুন একটি ওয়েব সাইটে ভিজিটর যাবে কেন? যাবে, যদি নতুন সাইটটি ভিন্নভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়। ফেসবুক লিংক থেকে যখন দেখলাম যে, ব্লগার শামীম একটি ওয়েব সাইটের সাথে যুক্ত আছেন, তখনই তাঁর কাছ থেকে বাড়তি কিছু প্রত্যাশা করি। কিন্তু সেই অর্থে তাঁর ওয়েব সাইটটিকে ভিন্ন কিছু মনে হয়নি। এই লেখাটি দেখলে শামীম হয়তো কিছুটা মনোক্ষুণ্ন হতে পারেন, কিন্তু মনে হলো পাঠকের প্রত্যাশাগুলো তাঁর জানা থাকা দরকার।
তবে ঠিক বইমেলা নয়, কিন্তু বইয়ের কেনাবেচা করে এমন একটি জনপ্রিয় ওয়েব সাইট আছে- রকমারি ডট কম। বই বিষয়ে এ ধরনের সার্ভিস বাংলাদেশে সম্ভবত এটাই প্রথম এবং তাঁরা মোটামুটি শুরু থেকেই প্রফেশনাল ভঙ্গিতে এই সেবাটি দিয়ে যাচ্ছে। ফলে স্বল্পসময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে তারা। ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের ওয়েব সাইটে যাওয়া হয়নি কিন্তু জানুয়ারি মাসে কিছু বই কেনার জন্য সেখানে ঢুকেছিলাম। শিক্ষা-গবেষণা বিষয়ে বাংলাদেশে কী কী বই আছে সেটা জানাই ছিল মূল উদ্দেশ্যে। নির্দিষ্ট কোনো ক্যাটাগরিতে সেটি না পেয়ে সার্চ দিয়ে কয়েকটা বইয়ের খোঁজ পাওয়া গেল- লেখকের নাম সে অর্থে জানা নেই। ধারণা করি, কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বইগুলো লিখে থাকবেন। সামাজিক গবেষণা সম্পর্কিতও কিছু বই পাওয়া গেল সেখানে। দু-তিনটি বই কেনার ইচ্ছে ছিল কিন্তু কোনগুলো কিনবো সেটি ঠিক করতে পারছিলাম না। দেখা গেল, যেটা কিনলাম সেটা আমার কাজে লাগলো না। এই চিন্তা থেকেই রকমারি ডট কমকে বিষয়টা জানিয়ে একটা ইমেইল করেছিলাম যে, তারা যদি নিদেনপক্ষে বইয়ের অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে সূচিপত্রটা তুলে দেয়, তাহলে বাছাই করতে সুবিধা হয়। কাজটা কঠিন, কিংবা বলা ভালো সময়সাপেক্ষ; কিন্তু এটা করাটা জরুরি। ভেবেছিলাম রকমারি কর্তৃপক্ষ ইমেইলের উত্তরে কিছু একটা জানাবে কিন্তু মাসখানেক পরেও তাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের উত্তর না পেয়ে হতাশ হয়েছি। এ ধরনের প্রফেশনাল/কমার্শিয়াল ওয়েব সাইট যারা চালান, তাদের কাছ থেকে কিছুটা প্রফেশনালিজম আশা করা যায় বা উচিত। বইমেলার অনেক বই এখন আর সরাসরি কেনা সম্ভব নয়, রকমারিই ভরসা। কিন্তু তারা যদি গ্রাহকের ইমেইলের উত্তর দেয়ার ন্যূনতম ভদ্রতাটুকু না দেখায়, তখন গ্রাহকের মনে নতুন কোনো সার্ভিস খোঁজার ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে উঠে।
বইমেলা-সংক্রান্ত সব সেবায় প্রফেশনালিজম আসুক।
চমৎকার লেখা। বই এর পরিচিতি, সুচীপত্র অনলাইনে থাকলে, ট্যাগিং থাকলে বই বাছাইয়ে ক্রেতার অনেক সুবিধা হবে। ব্যাবসায়িক দৃস্টিকোনেও এটা জরুরি পদক্ষেপ। আপনার সবগুলি পর্বই মনোযোগের দাবীদার। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
মনোযোগের সঙ্গে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
বইমেলা-সংক্রান্ত সব সেবায় প্রফেশনালিজম আসুক।
আপনি তো দেখি নকলবাজ কমেন্টার! পোস্ট থেকে নকল করে করে কমেন্ট দিচ্ছেন।
বুঝছি, আপনি পড়ালেখা জানেন না, তাই টিপসই দিয়েছেন।
বাংলা একাডেমী নিজেই নানান আমলাতান্ত্রিক কাজ কামে ব্যাস্ত। সেই খানে বই মেলাও এমন যে কোনো কিছুরই আপনার মতো সুবিবেচনা প্রসুত চিন্তা ভাবনার কোনো বালাই নাই!
দিনশেষে বিষয়টা ভাবলে খারাপ লাগে।
বই সংক্রান্ত সব সেবায় প্রফেশনালিজম আসুক।
আপনাকে মাসুম ভাইয়ের রোগে ধরেছে।
রকমারি মেইলের উত্তর দিয়েছে? রকমারিক মনয় লুক ভালু।

আমি কানা, নাকি কানী! যা হোক.... বই তো খুব কিনি না তবু কেউ যখন বই নিয়ে আলোচনা করে তখন বই এর নাম মনে রেখে খুঁজি। ওয়েবসাইট ঘাটা হয়ই না
শামীম পোস্ট পড়লো কিনা জানিনা। না দেখলে ওর ওয়ালে পেষ্ট করতে হবে যাতে শামীম আরো তত্যবহুল, আকষর্ণীয় করে ওয়েবসাইট সাজায়।
রকমারী আমার ইমেইলের উত্তর দেয় নি।
শামীম ভাই পোস্ট পড়েছেন কিনা জানি না, তবে তাঁর ওয়েব সাইট থেকে আমার প্রত্যাশা অনেক।
রকমারি ছাড়া আর কোনো সাইট বই নিয়ে এত বেশি তথ্য আমাকে দেয়নি। আমি এখন কোনো বই এর আধা নাম জানলেও সেটি লিখে রকমারিতে সার্চ দেই, এবং নির্ভুল তথ্যটি পেয়ে যাই। প্রস্ততিকালীন সময়ে, প্রথমদিকে সবাইর সমস্যা থাকে, পেশাদারিত্বতো চট করে হয় না, দীর্ঘ পথে হাঁটতে হয়, কিন্তু এরইমাঝে তারা যেটুকু দেখিয়েছে সেটি অসাধারণ। তাদের প্রথম বছর-পূর্তি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, তারা জানিয়েছে একবছরে তারা প্রায় এক কোটি টাকার বই বিক্রি করেছে। বাংলাদেশে বই বিপননের যে বেহাল দশা সেখানে এভাবে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বই বিক্রি দারুণ ঘটনা।
অবশ্যই, এই ব্যবসার প্রতি তাদের ডেডিকেশন নিয়ে সন্দেহ নেই, কিন্তু গ্রাহক বা ক্রেতার কাছ থেকে যদি কোনো পরামর্শ যায়, তাহলে সেটার উত্তর দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।
লেখাটা খুবই ভাল লেগেছে। বইমেলায় গেলাম - চানাচুর মুড়ি খেলাম পোষ্ট প্রতিবছরই পড়ি। সে হিসাবে এই পোষ্টটা একদমই আলাদা এবং বিভিন্ন চারপাশের জিনিসগুলো তুলে আনছে, বৈচিত্র্যময়
মন্তব্য করুন