আবদুল হক'এর ব্লগ
অবশেষ
অনেক অনেক হলো চাওয়া,
পাওয়াও কি হয় নি কিছুই?
আর কত!
সমস্ত কৃতার্থ-ব্যর্থ কামনার যুঁই
ছড়িয়ে দিয়েছি প্রিয় পরানের শবে –
মুষল বর্ষণ নামো, এসো খ্যাপা হাওয়া
অবশেষে ভাসাও এ অবশেষ তবে
তার ক্ষত
দাহস্মর, যাপিত কালের ক্লিশে দাগ
মুছে যাক অন্তিম উৎসবে।
অনেক অনেক রাত জেগে আছি নিভৃত একাকী
অর্থহীন, উদাসীন, বৃথা –
সময়ের বৃক্ষ ছেড়ে জীবনের পাখি
অন্ধকারে ঢেউ তুলে শূন্যে কবে উড়ে চলে গেছে
দেখেছি তা।
ভুল? না তো, কেউ কি কোথাও আছ বেঁচে?
কেউ কি আমাকে খোঁজো ঘুমঘোরে
হ্রস্ব-দীর্ঘ নিঃশ্বাসের শব্দের ভেতরে?
নাই, কেউ নাই।
ঘুমের সময় হলো, যাই।
দৈনিকের রেশমাকথা
আজকের সকল দৈনিক পত্রিকাই সাভার বিপর্যয় নিয়ে সম্পাদকীয় লিখেছে। তাতে ধ্বংসস্তূপের নিচে ১৭ দিন চাপা পড়ে থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া রেশমার কথা ঠাঁই পেয়েছে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে। ঘটনা একই, তবে একেকটি পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি ও উপস্থাপনা একেক রকম। কেউ বলছে এটা আল্লাহর কুদরত। কেউ অলৌকিক ঘটনা। কেউ আবার অতি সতর্কতার সঙ্গে ‘আল্লাহ’ শব্দটি উচ্চারণের বিপদ এড়িয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে!
চিকিৎসকের অধিক
আমার চিকিৎসক গুলজার আহমেদ পেশাগত শল্যচিকিৎসক হলেও তিনি রোগী দেখেন পেশাগতির চেয়ে অনেক নিবিড়ভাবে। একবার তাকিয়ে আর দুবার প্রশ্ন করেই দুষ্পাঠ্য অক্ষরে খসখস করে ব্যবস্থাপত্র লিখতে শুরু করেন না। রোগীকে যেন তিনি রোগী হিসেবে দেখেন না, ভাবেন একজন ‘মানুষ’ বিপদে পড়ে তাঁর কাছে এসেছে সাহায্যের জন্যে। তাই নিছক টাকার চিন্তা মাথায় থাকে না। তিনি পরম মমতা নিয়েই মানুষকে সাহায্য করেন। সেজন্যেই আমি তাঁকে বলেছি: ইউ আর অ্যা ডক্টর অ্যান্ড মোর দ্যান অ্যা ডক্টর।
রামু সহিংসতা : সাম্প্রদায়িক না রাজনৈতিক
সম্প্রতি কক্সবাজারের রামু এবং চট্টগ্রামের পটিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী অন্যান্য এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সঙ্ঘটিত নাশকতার ঘটনা দেশ জুড়ে দুঃখ ও শঙ্কা ছড়িয়ে দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এটা ‘পরিকল্পিত’। হতে পারে। প্রশ্ন হলো কার পরিকল্পনা, কী পরিকল্পনা? সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। বলেছেন, এ তাণ্ডবের লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করা। শুনে আমরা হতভম্ব এবং কেউ কেউ বিনোদিত হয়েছি। মনে হচ্ছে ঘটনা পরিকল্পিত হোক আর না-হোক, মন্ত্রীর এই ‘বাণী’ যে পরিকল্পিত, তাতে সন্দেহ নেই। কেননা এটা মেনে নিলে ধরে নিতে হবে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের মূল উদ্যোক্তা ফেইসবুকে আপত্তিকর ছবি আপলোডকারী ওই বৌদ্ধ যুবক উত্তম বড়ুয়া। সে কেন যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে চাইবে? তাহলে ধরা যাক সে নয়, চেয়েছে অন্য কেউ। কোনো বিরোধী দল? না। কারণ ফেইসবুকে বাজে ছবি দিয়ে আদালতের বিচার বানচাল করা যায়, এমন ছেলেমানুষি ধারণা কোনো রাজনীতিক পোষণ করবেন বলে মনে হয় না। কে তাহলে এ সাম্প্রদায়িক আক্রমণের পরিকল্পক?
ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ২
ধর্মচর্চায় চরমপন্থা যুগ যুগ ধরে কেবলই সঙ্কট, অনৈক্য ও বিপর্যয় তৈরি করে আসছে। ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচরণের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষণ ও যুক্তি-বুদ্ধি-বিবেকের দেয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে ব্যক্তিগত প্রবৃত্তির পছন্দের দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিমতের অন্ধ অনুসরণ এবং গৌণ, সূক্ষ্ম ও খুঁটিনাটি বিষয়ে অনড় অবস্থান গ্রহণ, চুলচেরা বিশ্লেষণ ও বাড়াবাড়ির ফলে মুসলিমদের মধ্যে দিনদিন দল বাড়ছে, কিন্তু বল বাড়ছে না। ভুলশুদ্ধির প্রশ্ন একবার স্থগিত রেখে যদি আমরা শিয়া, খারিজী, জাহমিয়া, কাদারিয়া, জাবারিয়া প্রভৃতি সম্প্রদায়গুলির বিশ্বাসের কেবল অবস্থান ও চারিত্র নিরীক্ষণ করি, তাহলে প্রকটভাবে চোখে পড়বে তাদের চরম অবস্থা ও প্রান্তিক অবস্থান। এদের দলিল-প্রমাণের বিশাল স্তূপ যতোই ঘাঁটাঘাটি করা হয়, ততোই ক্রমশ তর্কের তলে তলিয়ে যাওয়া যায় – কিন্তু মানুষের জন্যে শান্তির যে একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে ইসলাম এসেছে, ওসব তর্কের ভিড়ে সেই উদ্দেশ্যটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। আধুনিক সময়ে চিন্তার জগতে নতুন আলো এসে পড়েছে, শুদ্ধতাবিচারের বহু নতুন উপকরণ ও মানদণ্ড আমরা হাতে পেয়েছি, ফলে দু’-একটি বাদে পুরনো দিনের গুরুতর ভ্রান
ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয়
১.
আমরা মাটির মানুষ। প্রকৃত ও রূপক, দুই অর্থেই কথাটি সত্য। মাটির পৃথিবীতে, মাটি থেকে আমাদের জন্ম, শেষ শয্যাও মাটিতেই। অনন্ত মহাকালের একটি বিন্দুতে বিজলির মতো আমাদের জীবন, ক্ষণিক। বাঁশি বাজলেই খেলা শেষ। এ সকলেই জানি। কিন্তু মনে রাখি না। মনে রাখি না বলেই অন্যকে ধাক্কা দিই। ধাক্কা দিয়ে কাউকে খাদে ফেলে দিতে পারলে ভাবি, জয়ী হলাম। ভুল। বাইরে এ জয়টা যখন পাই, তখন দেখি না যে আমাদের ভেতরের মানুষটা কী লজ্জাজনকভাবে হেরে গেলো। মানুষ দেহে প্রাণী, হৃদয়ে মানুষ। সেই হৃদয়ে আঘাত করলে মনুষ্যত্বের মৃত্যু ঘটে।
হৃদয়-মন সবারই আছে। কিন্তু সব মানুষ হৃদয়বান ও মননশীল নয়। কারণ হৃদয় থাকলেই হৃদয়বান এবং মন থাকলেই মননশীল হওয়া যায় না। হৃদয়বান হতে চাই বিকশিত হৃদয় আর মননশীল মানুষ হতে লাগে জাগ্রত মন। আত্মার জাগৃতি ও মননশীলতার উদ্বোধনের ফলে সাধারণ মানুষ পরিণত হন মহত্তম মানুষে। এ বিকাশ ও জাগৃতি, নানা কারণে, সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে ঘটে না। এতে পরিমাণগত তারতম্য যেমন আছে, তেমনি আছে বিষয়গত বৈচিত্র। এ সবকিছু, সমস্ত ঊনতা-পূর্ণতা-তারতম্য-বৈচিত্র সমন্বিত হয়েই গড়ে উঠেছে মানুষের সমাজ।