ইউজার লগইন

হাসান আদনান'এর ব্লগ

দ্বিজ

দ্বিজ

হাসান সাহেবের ভুরু সামান্য কুঁচকে আছে - সচরাচর এমন হয়না - তিনি আদ্যন্ত সংযত মানুষ - বিরক্তি বা রাগ সহজে প্রকাশ করেন না - কিন্তু আজকের বিকেলটা ভিন্ন - সামনের সোফায় আসীন যুবক তাকে অস্বস্তিকর বিরক্তিতে ফেলে দিয়েছে - যদিও যুবককে তিনি নিজেই আসতে বলেছিলেন.

ঘটনার সুত্রপাত তার কনিষ্ঠা কন্যাকে নিয়ে - এই মেয়েটি তার বড় আদরের - পুরো নাম তানিয়া ইসলাম - পিতৃস্নেহে সেই নাম তার কাছে কখন যেন তানি হয়ে গেছে - ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ে - মেধা জেদ আর সৌন্দর্য তিনটি জিনিসই মেয়েটির মধ্যে প্রবলভাবে আছে - যদিও কখনো প্রকাশ করেন না - তবু বোঝা যায় - এই মেয়েকে নিয়ে হাসান সাহেবের মনের গভীরে গোপন এক ধরনের অহংকার আছে.

আমার দেশের জন্য আমি তাই খবরটি শেয়ার দিলাম - আপনি কি না দিয়ে থাকতে পারবেন ?

দেশ অনেক দিয়েছে - দিয়েছে আমাকে - দিয়েছে আপনাকে - প্রতিদানে কখনো কিছু চায়নি সে - আজ চাচ্ছে দেশ - চাচ্ছে আমার আপনার নিরাসক্ত আঙ্গুলগুলোতে একটু সাড়া পড়ুক - চাচ্ছে আমরা যেন মাউসের আদুরে পিঠে আলতো একখানা ক্লিক করি - এক খানা জাতীয় দাবীতে যোগ করি আন্তর্জাতিক মাত্রা - ক্ষুদ্র এই দেশের প্রাণের দাবীটি হোক বিবিসির ইতিহাসে সর্বকালের সেরা দাবী - ভেঙ্গে দিক পূর্বাপর সকল রেকর্ড - আমার দেশের জন্য আমি তাই খবরটি শেয়ার দিলাম - আপনি কি না দিয়ে থাকতে পারবেন ?

Click on the following link and share.
BBC News - Huge Bangladesh rally seeks death penalty for war crimes
http://www.bbc.co.uk/news/world-asia-21383632
Hundreds of thousands rally in Bangladesh to demand the death penalty for a political leader convicted of war crimes from the 1971 independence war.

ওয়ানস আপন আ টাইম দেয়ার লিভড আ কিং কলড আপ্পু রাজা

ওয়ানস আপন আ টাইম দেয়ার লিভড আ কিং কলড আপ্পু রাজা

দু:খিত শিশির - ভালবাসার বিনিময় মূল্য নিশ্চিত জেন পৃথিবীতে নয় - আশা যদি করতেই চাও - তবে প্রার্থনা কর প্রাপ্তি যেন পরকালে হয়.

দু:খিত শিশির - ভালবাসার বিনিময় মূল্য নিশ্চিত জেন পৃথিবীতে নয় - আশা যদি করতেই চাও - তবে প্রার্থনা কর প্রাপ্তি যেন পরকালে হয়.

প্রিয় ল্যাপটপটা বেকায়দা ভঙ্গিতে ফ্লোরে পড়ে আছে - ডালাটা প্রায় বিচ্ছিন্ন - বোঝা যায় - অক্ষম আক্রোশের প্রথম ঝড়টা তার উপর দিয়েই গেছে - দেয়াল জোড়া ডেকোরেশন গ্লাসে চির ধরেছে - ভারী কিছুর আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট - বুকশেলফের সমস্ত বই মেঝেতে লুটাচ্ছে - দামী গীটারটাকে ভেঙ্গে দু' টুকরো করা হয়েছে - দরজায় দাঁড়িয়ে ক্ষতির পরিমাণ মাপছি - ব্যাকুল চোখ খুঁজছে পছন্দের মানুষটিকে - ওই তো আছে - প্রমাণ সদৃশ খাটের এক কোনায় বাঁকাচোরা ভঙ্গিতে পড়ে আছে ছেলেটি - আমার একসময়কার ভীষণ স্নেহের পাত্র - শিশির - আমার প্রাক্তন ছাত্র
.
বিত্তবান মানুষদের প্রতি আমার এক ধরনের অকারণ ঘৃণা আছে - এই শ্রেণী থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকতেই আমার ভালো লাগে - শিশিরদের পরিবারটি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল - মফস্বল ছেড়ে তখন মাত্র রাজধানীতে পা রেখেছি - ন্যুনতম বেতনে একখানা চাকরি করি - আর্থিক টানা পোড়নে ভীষণ বিব্রত - কাজেই সহায়ক উপার্জনের পথ হিসেবে বেছে নিলাম গৃহশিক্ষকের দায়িত্ব.

একটি প্রার্থনা

শুনতে কি পাও তুমি - দাসানুদাস ডাকছে তোমায় - শুনতে কি পাও - মলিন জায়নামাজে দেখো - স্থিত এই দেহ - ভালবাসা বিনয় - আকাংখা আর ভয় - কাঁদছে হৃদয় - শুনতে কি পাও - উদ্ধত শির - আজ সিজদায় নত - শরীর কেঁপে ওঠে - অনির্বচনীয় আবেগ যত - কিছুই কি তোমার হয়না গোচর ?

কঠোর দৃষ্টি কখন যে কোমল হলো - আমারও হয়নি ঠার - কন্ঠে বাস্প -অশ্রু অজস্র - কোথায় অহংকার? সর্বদ্রষ্টা প্রভু আমার - কিছুই কি দেখো না তুমি - এই যে দেখো কাঁপছে হাত - হাতের রেখায় তাই পুরনো মোনাজাত - সব কাজ ঠেলছি দুরে - ভুলছি দেখো আজ সব অজুহাত.

দেখা দাও প্রভু - আজ দেখা দাও আগের মত - জানালায় নড়ে ওঠা পর্দার ভাঁজে - যেভাবে অলৌকিক চাঁদের আলো সাজে - সেভাবেই নাহয় দেখা দাও - অবুঝ বান্দা তোমার - করজোড়ে তোমায় দিচ্ছে দাওয়াত - দীনহীন গৃহ তার - মিম্বর নেই - আতর গোলাপ সুগন্ধির বালাই নেই - আছে এক জীর্ণ জায়নামাজ - যুক্তি বোঝে না বান্দা তোমার - আঁধার ঘরে তাই আজ অভিমানী মোনাজাত তার.

একজন গ্ল্যাডিয়েটর

একজন গ্ল্যাডিয়েটর

বিরক্তিকর অথচ অবশ্য প্রয়োজনীয় অ্যালার্মটা বাজতে শুরু করেছে - অনাকাঙ্খিত শব্দ তরঙ্গ চিরে দিচ্ছে ঘরের নিস্তব্ধ আবহ - মানুষটার সুপ্ত স্নায়ুতে সাড়া পড়তে থাকে - মস্তিস্ক শরীরকে জানান দেয় - এবার জাগতে হবে - ধীরে ধীরে মানুষটা চোখ মেলে - এ যেন প্রাণান্ত আয়াস - শরীরের প্রতিটি কণিকা যেন অতিরিক্ত পাঁচটি মিনিট সুখনিদ্রার জন্য আকুল হয়ে থাকে - কিন্তু না - সেটা সম্ভব নয় - যদিও ঘর এখনো অন্ধকার - জানালার শার্সিতে লালচে আভাস দিনের আগমনী বার্তা ঘোষণা করছে.

পাশে শুয়ে থাকা সঙ্গিনীর ঘুম এখনো ভাঙ্গেনি - ঘুমে অচেতন প্রাণপ্রিয় শিশুপুত্র ও - মানুষটা এক মুহূর্ত যেন থমকে যায় - কি এক নির্মোঘ মোহে তাকিয়ে রয় ভালবাসার মানুষগুলোর দিকে - বুক চিরে বেরোয় অকারণ দীর্ঘ নি:শ্বাস - অত:পর গা ঝাড়া দিয়ে আলস্য কাটায় - স্নায়ু এখন তার পূর্ণ সজাগ এবং প্রস্তুত - প্রস্তুত লড়াইমুখর একটি নতুন দিনের জন্য - রাতে বিছানায় ঘুমিয়েছিল একজন বাবা - একজন স্বামী - জেগে উঠেছে একজন লড়াকু যোদ্ধা - একজন গ্ল্যাডিয়েটর.

ম্যান বিহাইন্ড দা গ্লাস বার

এই মিলে তিনবার গোনা হলো - না - কোনো ভুল নেই- দশ হাজার টাকা কম পড়ছে - এই শীতের সন্ধ্যায়ও মাসুমের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম - মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে - তার ভাগ্যটা এত খারাপ কেন - এত সতর্ক থাকে- তবু ... আজকে কাস্টমারের চাপটা বেশি ছিল - অনেকগুলো বড় পেমেন্ট হয়েছে - কোথাও একটা ভুল হয়ে গেছে - কিন্তু শোধরাবার সুযোগ কি আছে?

দু'বছর হলো এই চাকরিতে ঢুকেছে মাসুম - ব্যাঙ্কের চাকরি - ক্যাশ অফিসার - কাজের চাপটা বেশি - সেটা সমস্যা না - কিন্তু সার্বক্ষণিক ঝুঁকিটা বড় পীড়াদায়ক- সামান্য অসতর্কতার দণ্ডি দিতে হয় গুনে গুনে - উপরন্তু আছে ম্যানেজারের গালাগালি - না - মাসুম অসতর্ক নয় - কাজের সময় সাধ্যমত সাবধানতা অবলম্বন করে - কাজেও সে দক্ষ - তবু নিয়তির মার তো এড়ানো যায় না.

মাসুম পেমেন্টে বসে - তার দায়িত্বটাও বেশি - রিসিভের ছেলেটি একেবারেই নতুন - মাসুম তাকে চোখে চোখে রাখে - পাছে বেচারা বিপদে পড়ে - কিন্তু আজকের বেচারা যে সে নিজেই.

শুনবেন সেই সব গল্প ?

আড্ডা চলছে - পুরনো দুজন কলিগ বেড়াতে এসেছেন - হারানো সময়ের ভালোলাগা অনেক কথা উঠে আসতে শুরু করেছে - পরিবেশটা বেশ উপভোগ করছি - হুট করেই একজন জিজ্ঞেস করলেন - একটা চাকরি দিতে পারেন ? - আমি কিছুটা অবাক হয়েই তাকালাম - কাউকে চাকরি দেবার মত অবস্থানে আমি এখনো পৌঁছাইনি - আমার বন্ধুদের কেউ হয়ত পারবে এই ভেবে জিজ্ঞেস করলাম - কার জন্য ? ভদ্রলোক চুপ করে গেলেন - কিছুটা যেন দ্বিধাগ্রস্ত - আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম - চাকরিটা কার প্রয়োজন ? ভদ্রলোক নিরুত্তর - পরিবেশটা ও কেমন যেন একটু গুমোট হয়ে গেল - অস্বস্তি কাটাতেই প্রসঙ্গ বদলে ফেললাম - অল্পক্ষণেই আরষ্টতা কাটিয়ে আমরা আবার গল্পে মেতে উঠলাম.
'বুঝলেন - একটা মেয়ে আছে - ভালো মেয়ে' - ভদ্রলোক নিজে থেকেই বলছেন আবার - 'একটা চাকরির খুব দরকার ওর'.
আপনার কোনো আত্মীয়া নাকি ? জিজ্ঞাসা আমার.
না - চিনি আর কি.
বুঝলাম - থলের বেড়াল বেরোতে শুরু করেছে . কাছের কেউ?
না - পরিচিত - মানে- মেয়েটা একটু অন্য ধরনের পেশায় আছে.

ঈদের বার্তা

ধর্ম আটকে গেছে পুঁথির সাধু ভাষায় - হৃদয়গুলো পড়েছে ঢাকা পোশাকি আদিখ্যেতায় - সুউচ্চ মিনার আছে - আছে শোভিত মিম্বর আর দুর্লভ টাইলস - মখমলি জায়নামাজে আছে প্রার্থনারত মাথা - তবুও অপারগ ওই বিধাতা - ভুল ফ্রিকোয়েন্সিতে আহবান - চতুষ্পদের প্রমাণ আকারে অদৃষ্টকে সন্ধান - জানি - সব প্রহসন - নিরেট অতিশায়ন - তবুও তো এসেছে ঈদ - তাই বাত্যয় খুঁজি - চেনা অচেনা হৃদয়ের কাছে - ঈদের বার্তা বলি.

আরেকটি কার্যনির্বাহী কমিটি

'আমরা একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি' - বক্তা সুদর্শন এক যুবা - এই মুহুর্তে আমার সামনে উপবিষ্ট - বয়স বিশের কাছাকাছি - হাল ফ্যাশনের দামী পোশাকে তাকে বেশ মানিয়েছে - যুবক একা নয় - সাথে সমবয়সী আরেক যুবা আর তিন সুদর্শনা - পরিধেয় পোশাক সাক্ষ্য দেয় প্রত্যেকেই অবস্থাপন্ন ঘরের সন্তান - জিজ্ঞাসু চোখে ছেলেটির দিকে তাকালাম পরবর্তী ভাষ্য শোনার জন্য - 'আমাদের একটা সংগঠন আছে - নাম '.......' - আমরা সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটিতে আপনাকে চাচ্ছি .'

মোটামুটি থতমত খেয়ে গেলাম - ক্ষীণ সন্দেহ হলো - এরা বোধহয় ঠিকানা ভুল করে আমার কাছে চলে এসেছে - আমি পেশায় সুদের কারবারী - ছাপোষা চাকরিজীবি - সাপ্তাহিক এই ছুটির দিনটিতে দেরী করে ঘুম থেকে উঠেছি - পেটে এখনো কিছু পড়েনি - মাথার চুল উসকো খুসকো - পরনের ট্রাউজার মলিন - কুচকানো - টি শার্টের অবস্থাও তথৈবচ - বালতিতে সারা সপ্তাহের ময়লা কাপড় ভিজিয়ে রেখেছি - এখনো ধোয়া হয়নি - দুপুরের আহার সংস্থান নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন - এই সময় বিনা মেঘে বজ্রপাত - দলটির আগমন - আর তাদের এই অদ্ভুত প্রস্তাব.

সন্তানের অপেক্ষায় তারা এভাবেই জেগে থাকেন - চেনা অচেনা কত ব্যালকনিতে - এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকেন তারা - উদ্বিগ্ন - উন্মুখ - স্নেহাকুল

সিলেট থেকে ঢাকা - সরলরৈখিক দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার - সড়কপথে ভ্রমণের হিসেবে বোধহয় আরো ৪০ কিলোমিটার যোগ হবে - দূরত্ব যেমনই হোক প্রতি সপ্তাহান্তে আমাকে যেতে হয় - যেতে হবে - ওখানে এক ভদ্রমহিলা নিয়ত অপেক্ষা করেন - তার ছেলে আসবে - দুটো দিন - অন্তত দুটো দিন তার কাছে থাকবে.

এই সপ্তাহে পারছি না যেতে - মা জানেন - তবু বোধহয় অপেক্ষা করবেন - অপেক্ষা তার অস্তিত্বে - অপেক্ষা তার অবচেতন মনে - বড় অদ্ভুত মায়েদের মন.

ভাই - কেমুন আছেন ?

ইন্টারকম বেজে ওঠে - রিসেপশন থেকে জানানো হচ্ছে - পার্শ্বেল এসেছে - নিচে নেমে দেখি - বিশাল এক ঝুড়িভর্তি আম - সূদুর রাজশাহী থেকে এসেছে - প্রেরকের নাম 'হাসান' - লিফট বেয়ে উপরে উঠছি - সহ-আরোহীদের নানাবিধ প্রশ্ন - রাজশাহীর আম ? কত কেজি ? ফজলি ? প্রাইস কত ? - প্রথম তিনটির উত্তর দিতে পারলাম - চতুর্থ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই - কখনো জানা থাকে না - গত কযেক বছর ধরে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে - আম আসে -লিচু আসে - প্রেরক দাম জানায় না - আমরাও মুল্য পরিশোধের সুযোগ পাইনা - বড় বিব্রত লাগে - নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয় - আবার কিছুটা প্রশান্তিও যেন পাই - ভালবাসা আসলেও যুক্তি মানে না.

হাসান'কে ফোন দিলাম - 'আবার আম পাঠিয়েছ - এবার অন্তত দামটা নাও' - ওপাশ থেকে অভিমানী প্রত্যুত্তর- 'কি বুলছেন ভাই - আপনাদের সাথে কি আমার টেকার সম্পর্ক - চাচা বাইচ্যে নাই বুলে কি আমাক পর কইরে দিলেন ? ' - এই প্রশ্নের উত্তর হয় না - রাজধানীর কংক্রিটের দালানে বসে এক মফস্স্বলী যুবকের সারল্যমাখা অভিমানের মূল্যায়ন আমার মত নাগরিক কীট কিভাবে করবে বলুন?

এবার নাহয় তাকে আমরা বিদায় বলি

সীমাহীন খ্যাতি - নিরেট শ্রদ্ধা - অপরিমেয় ভালবাসা আর গগনস্পর্শী জনপ্রিয়তা - সবকিছু পেছনে ফেলে মানুষটা এখন হিমঘরে - প্রাণহীন দেহ নিশ্চয় এখন অনেকটা আরষ্ট - স্বপ্নভুক চোখদুটো বন্ধ হয়ে গেছে - ঠোঁট দুটো ভাষাহীন - হৃদস্পন্দন থেমে গেছে অনেক আগে - প্রখর মস্তিস্ক এখন শুধুই শূন্যতার ধারক - পচননিরোধক কে আশ্রয় করে যে মানুষটি এভাবে শুয়ে আছেন - তাকে নাহয় এবার আমরা বিদায় বলি.

নিশ্চয় তিনি অসাধারণ ছিলেন - ছিলেন নিপুণ এক লেখক - সাহিত্যের এক অপরাজেয় সম্রাট - কিন্তু এখন তিনি মারা গেছেন - আর সব নশ্বর মানুষের মতই - এটাই সত্য - পৃথিবীকে যতটুকু দেবার ছিল - বোধ করি - তিনি দিয়েছেন তারচেয়ে বেশি - দু' হাত ভরে কুড়িয়েছেন ও অনেক - কিন্তু এখন তার কলম থেমে গেছে - হয়ত তিনি অজস্র সফল স্ক্রিপ্টের জনক - কিন্তু সর্বদ্রষ্টার স্ক্রিপ্টে তিনিও নগণ্য একটি চরিত্র মাত্র.- মেনে নিতে কষ্ট হয় - তবু নিয়তি এটাই.

কে বলে - কাল রাতে জোছনা ছিল না ?

রজনীর শুরু - ঘড়ির কাঁটা মাত্র ১১' র ঘর পার হযেছে - হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক যুবক তখন মগবাজার চৌরাস্তার কাছে - অদ্ভুতুড়ে তার জীবনদর্শন - জগতের অপার রহস্য তাকে নিয়ত আচ্ছন্ন করে রাখে - আধ্যাতিকতার প্রশ্নে দীর্ঘদিন থেকেই সে বিতর্কিত - আজকের রাতটা কেমন যেন - যুবকের প্রবল ইনটুইশন আজ কাজ করছে না - তার জানা নেই - কিছুক্ষণের মাঝেই পৃথিবীর গভীরতম রহস্য তাকে গ্রাস করবে - এগারোটা বিশ - হুট করেই যেন যুবকের চারপাশ বায়ুশুন্য হয়ে গেল - অত:পর তীব্র অসহনীয় শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসা - ভিতরে এক বোধ - এই তাহলে মৃত্যু - এত যন্ত্রণার মাঝেও আকাশের দিকে তাকাতে তার ভুল হয়নি - খুঁজছে সে চাঁদ - খুঁজছে জোছনা - নেই - আজ বুঝি অমাবস্যা - মৃত্যু তাহলে আঁধারের ঘাতক - ক্ষতি নেই - যার হৃদয় ভর্তি জোছনা - পঞ্জিকায় নয় - প্রতিটি রাতেই যে তার পূর্ণিমা.

এই নদী বড় মায়াবতী

পদ্মাপাড়ের ছেলে আমি - গায়ে এখনো লাল মাটির গন্ধ লেগে আছে - তামাটে গাত্রবর্ণ এখনো সেই ভীষণ খরতপ্ত বরেন্দ্র সূর্যের গল্প বলে - আমের মুকুলকে এখনো প্রিয় ফুল মানি - কৃষ্ণচূড়াকে এখনো সৌন্দর্যের রাণী বলি - জীবিকার তাগিদে কিভাবে যেন চলে এসেছি সুরমার কোলে - কিন্তু মন পড়ে রয় ওই পদ্মার তটে - লোকমুখে শুনি - পদ্মা শুকিয়ে গেছে - নদী নাকি আগের মত জাগে না - প্রমত্তা রমণী বুঝি বৈধব্য আশ্রয় করেছে - হবে বা - কলির যুগ - কালের ধর্ম - নদীও হয়ত হারাতেই চলেছে - কিন্তু ওই নদীর ধার ঘেঁষে যারা বড় হলাম - তাদের কাছে কি পদ্মার মৃত্যু আছে - এই যে দেখো - যেই না চোখ বন্ধ করেছি - বুকের মাঝে উথাল পাতাল - নদী আমায় ভাসিয়ে নিচ্ছে - এই তো যেন দাড়িয়ে আছি টি বাঁধের 'পরে - জুতো জোড়া খুলেছি মাত্র - পা দুটো যাচ্ছে ভিজে - এ যেন ঠিক আমার মায়ের মত - ছেলের গায়ের গন্ধ চেনে - হাত বারাবার লহমা আগেই ভালবাসায় কাছে টানে - এই নদী বড় মায়াবতী - যত দুরে যাই - যতই নিজেকে যুক্তির চাদরে মোড়াই - তবু নদীর মায়া কাটে না - বাস ট্রেনের ধোঁয়ায় কতবার পুড়েছে দেহ - বাস্তব অবাস্তব দু :স্বপ্নের যাতাকলে কতবার হারিয়েছে মন - তবু নদী শুধু ডাকে আয় আয় - পোড়া এই দে