ইউজার লগইন

রম্য লেখার প্রচেষ্টা: দাম্পত্য রঙ্গ

“আমার ‘স্ত্রী‘ হারাইয়া গেছে, খুঁজে পাইতেছি না, ভাই আপনার ঘরে ‘স্ত্রী‘ আছে? আমাকে দিবেন? দুইটা ‘ডলা‘ দিয়া ফেরত দিবো।“

দুপুরে খেয়েদেয়ে ভাত ঘুম দিচ্ছিলাম। এমন সময় কোন বেয়াক্কেল ডোর বেল টিপে ঘুমের বারটা বাজিয়ে দিলেন। দরজা খুলে দেখি তিনতলায় চলতি মাসে আসা নতুন ভাড়াটে। আমাকে দেখে ভদ্রলোক উপরের কথা গুলো দ্রুত উগরে দিলেন। প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকালাম। মনে মনে রেগে গেলাম, বলে কি হারামজাদা!
আমার রাগী চোখ দেখে ভদ্রলোক নিরীহ কন্ঠে বলেন, “ভাই বিকেলে আমার একটা পার্টি আছে। স্যুটটা এক্ষুনি ‘স্ত্রী‘ করতে হবে, কিন্তু এই সময় লন্ড্রি খোলা থাকে না, তাই আপনার কাছে আসছি। দিবেন একটু স্ত্রী‘টা?“
ভদ্রলোকের কথা এতোক্ষণে বোধগম্য হলো, তিনি ইস্তিরিকে ‘স্ত্রী‘ উচ্চারণ করাতেই যতো বিভ্রান্তি।

না, আমার ঘরে ‘স্ত্রী‘ কিংবা ‘ইস্তিরি‘ এই মুহূর্তে কোনটাই নেই, তাই ভদ্রলোককে হতাশ করতে হলো ।ঈদের পর স্ত্রী গেছেন পোলাপান নিয়েবাপের বাড়ি। আর কাপড়-চোপড় কষ্ট করে নিজেরা ইস্তিরি করার বদলে আমরা লন্ড্রীতেই দিতে অভ্যস্ত।

বিয়ে করেছি প্রায় দেড় দশক। বিয়ের পর এক চিলেকোঠায় থাক্তাম। বাসাটা তেমন ভালো ছিল না, কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালোবাসা ছিল প্রচুর। এখন আমরা ভালো বাসায় থাকি কিন্তু ভালোবাসার তীব্র অভাব। আমরা একই ছাদের নীচে আছি কিন্তু এখন আমাদের মধ্যে দূরত্ব অনেক। অথচ এক সময় আমাদের মধ্যে কি রোমান্টিক সম্পর্কই না ছিল !

মনে পড়ে বিয়ের পর এক রাতে শহরের রাস্তায় দুজনে হাঁটছি। সে রাতে আকাশে পূর্ণদশী‘র চাঁদ ছিল। চুল ওড়া বাতাস ছিল। আমরা দুজন নিবিষ্ট মনে কথা বলতে বলতে পথ চলছি। এমন সময় হঠাত মাঝ রাস্তায় উদয় হলো এক ছিনতাই কারী। হাতে লম্বা করে ধরা ছুরি। আমি বুক পেতে দিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম। আমার স্ত্রী প্রচণ্ড ভয় পেয়ে আমার পিছনে গিয়ে মুখ লুকালো। ছিনতাইকারীদের উদ্দেশ্যে আমি বিনীত কণ্ঠে বললাম, “তুই যা বলার আমাকে বল, যাকিছু নেয়ার আমার কাছ থেকে নে, কিন্তু খবরদার আমার স্ত্রী‘কে বিরক্ত করবি না।“
আমার মারমুখি ভাব দেখে ছিনতাইকারীরা আর কথা বাড়ায় না। আমার মানিব্যাগ, ঘড়ি, আংটি নিয়ে ভদ্রলোকের মতো চলে যায়।

ঠিক পনের বছর পর সেদিন একই সিচুয়েশন এসে উপস্থিত হলো। সেই রাতেও দুজনে পথ চলছিলাম। আকাশে কোন চাঁদ ছিল না। ছিল লাইট পোস্ট বিহীন অন্ধকার রাস্তা। এবার আর পাশাপাশি নয়, সে আগে আগে আর আমি তার একটু পিছনে। এমন সময় এক ছিনতাইকারী যেন মাটি ফুড়ে উদয় হয়। আমি এবার ছিনতাইকারীর উদ্ধত ছুরির সামনে বুক পেতে না দাঁড়িয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে স্ত্রীর পিছনে গিয়ে তার চওড়া দেহের আড়ালে দ্রুত গা ঢাকা দেই। ভাবখানা এই, মারলে ওরে আগে মার।
স্ত্রী ছিনতাইকারীর উদ্দেশ্যে তার স্বভাবসুলভ বাজখাঁই গলায় হুঙ্কার দিয়ে ওঠে,
“খবরদার ! অর এঁক কদমভি আগে মাত বাড়না, তুজে পাতা নেহি আমি কোন হু? আমার স্ত্রী ইদানীং রেগে গেলে ‘বান্দী‘ (বাংলা+ হিন্দী) ভাষায় কথা বলা শুরু করে, এইটা বোধহয় বেশী বেশী হিন্দি সিরিয়াল দেখার সাইড ইফেক্ট।

রণরঙ্গিনী স্ত্রী‘র মুখে এমন রণ হুঙ্কার শুনে মুহূর্তেই যেন ছিনতাইকারীর জানপাখি খাঁচা ছাড়ার উপক্রম। হঠাত চমকে উঠায় তার হাতধরা ছুরিটা রাস্তার ওপর সশব্দে ছিঁটকে পড়ে। সেই ছুরি কুড়িয়ে নিয়ে আমার স্ত্রী আরো দ্বিগুন জোরে চেঁচিয়ে উঠলো, “গাটার কা কিড়ে ! তোর পাতা নেহী হ্যায়, ম্যারা মামা খিলগাঁও থানার ওসি?“

ছিনতাইকারী এবার ভয় পেয়ে উল্টো দিকে ভোঁ দৌড়। তারপর শুরু হয় স্ত্রীর কথার তুবড়ি। আমার উদ্দেশ্যে তিনি শুরু করেন তার স্বভাব সুলভ রণ সঙ্গীত...“ভীরু, ইতর, কাপুরুষ, না-মর্দ, ডরপোক, ভিগি বিল্লি।“
আমি নিরীহ কন্ঠে জিজ্ঞেস করি, “ভিগি বিল্লি‘টা আবার কি?“
“এইটা বুঝো নাই ! না বুঝারই কথা।“ স্ত্রী‘র কণ্ঠে প্রকট তাচ্ছিল্য। “সারাদিনতো থাকো ক্রিকেট নিয়া। হিন্দী বুঝবা কিভাবে? ‘ভিগি বিল্লি‘ মানে হইলো ভিজা বিলাই।“
“ও। আচ্ছা তোমার কোন মামা যে খিলগাঁও থানার ওসি, এটাতো আগে কখনো শুনি নাই!“ স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঝাপটা দিয়ে বলে, “আজব, তুমি শুনবা কিভাবে? আমার মামা সত্যি সত্যি খিলগাঁও থানার ওসি হলে তোমার হাত-পা এতোদিন আস্তো থাক্তো“ !?
কথা শেষ করে তিনি গর্বিত ভঙ্গিতে আবার হাঁটতে শুরু করেন।

আমি আর কথা বাড়াই না, ধীরে ধীরে তার পিছনে হাঁটতে থাকি আর তার উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করি এবং তার কোন জ্ঞাতি মামা যে সত্যি সত্যি খিলগাঁও থানার ওসি না, সেই জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করি।

পোস্টটি ৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

ঈশান মাহমুদ's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বপ্নচারী মানুষ আমি,স্বপ্নডানায় ভর দিয়ে কল্পনার আকাশে উড়তে পছন্দ করি।জীবনের রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্ক কম,তাই পদে পদে হোঁচট খাই…।
একমাত্র মেয়ের প্রিয় বাবা, কিন্তু….স্ত্রীর(তিনিও একমাত্র) কাছে আদর্শ স্বামী হতে পারিনি…।আমাকে দিয়ে এজনমে কিচ্ছু হবেনা…এটা তার বদ্ধমূল ধারণা।তাই তিনি অধীর আগ্রহে পরজনমের অপেক্ষা করছেন।তবে মুখে যতই ‘অনলবর্ষী’হোন না কেন,আমার মত’ অপদার্থ’র জন্য ভেতরে ভেতরে তিনি যে প্রবল ভালোবাসা ধারণ করেন,সেটা আমি প্রতি পলে পলে টের পাই…।এজন্য তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার সীমা নেই।
মানুষের সান্নিধ্য পছন্দ করি,তবে নষ্ট মানুষের উগ্র আস্ফালন দেখে ইদানীং কষ্ট পাই।তবুও…কিছু প্রিয় মানুষ আছে,যারা আমাকে আলোকিত করে,আশ্বস্ত করে,এবং…স্বপ্ন দিয়ে যায় আগামী সকালের।
আবেগপ্রবণ তাই কবিতা লিখি,হৃদয়ের আবেগগুলো, অনুভূতিগুলো অক্ষরে সাজাই।অব্যক্ত যন্ত্রণা,মৌন অভিমান,হাসি-কান্না,প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে কথামালা গাথি…।কতটা তার কবিতা হয় কে জানে !
আড্ডা দিতে পছন্দ করি,যাকে ভালো লাগে,যার সঙ্গ ভালো লাগে-তার পেছনে সময় খরচ করি দ্বিধাহীন।এজন্য আমার বন্ধুভাগ্য ঈর্ষনীয়।
স্বপ্ন দেখি…আদিগন্ত আকাশ,অনন্ত সবুজ , ভালোবাসায় ঘেরা পৃথিবী,অকৃত্রিম অনুভব,মুঠো মুঠো আনন্দ,অতলস্পর্শী আন্তরিকতা,প্রস্ফুটিত মনুষ্যত্ব আর…নিটোল বন্ধুত্ব।তাই…’আমরা বন্ধু’র আঙ্গিনায় পা রাখা…।সব বন্ধুরা ভালো থেকো।