বন্ধুত্বের ভালবাসা
জ্যামে পড়ে ক্লাসে ঢুকতে আজ দেরিই হয়ে গেল,ভারচুয়ালি সো-এন-সো স্যারের ভ্রু-উচানো চাহুনি আর টিটকারি হাসিতে পিত্তি জ্বলে উঠছে, সবে শুরু ... নীলা ভাবছে আজ কপালে আরো কি খারাবি আছে মাবুদই জানে!
চায়ের আড্ডায় সবগুলো আজ মুচকিহাসি দিয়ে তাকাচ্ছে, চোখেমুখে শয়তানি!!!
- ঐ বদেরা কি হইছে রে..? কাহিনী কি??
- কি আর হবে? যা হবারতো হয়েই গেছে ..... তা অন্যজন কই? নীলাভ ছাড়া নীলা - বড়ই আকেলা!!! নাকি খাওয়ানের ভয়ে ভাগছে??
নীলা মেজাজ দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করল - "কি? হচ্ছে কি এইসব??"
লাবনী ঝাড়ি দিয়ে বলল - "ঢং করবিনা আর, নীলাভ আমাকে বলছে, তোর আর ওর কথা। এতো লুকোচুপির কি আছে? ওর ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘুরছিস আবার অবাক হবার ভান করিস? ভালোই তো!"
আকাশ থেকে পড়ার মতো অবাক হয়ে বেকুবি হাসি দিয়ে নীলার অস্ফুট উচ্চারন - "নীলাভ নিজে বলছে?" মানে কি এসবের!!
এমন কিছু হবে কখনো ভাবেনি, ওর সাথে বেশি মিশে তা ঠিক, তবে এসব চিন্তা আসেইনি .... তবে কি ও এমন ভাবতো? ওর কাজেকর্মেও বুঝা যায়নি,নাকি নীলাই বুঝেনি। নতুন রিলিজ হওয়া গান কিবা দারুন কবিতার সুন্দর কিছু লাইন এসএমএস করা , অথবা কোন ক্লাস সন্ধ্যায় পড়লে বাসে সাথে আসা (সেটাতো অন্যরাও করে), কিংবা ফাজিলটা প্রথম চিল্লায় গেলো যখন ৩/৪ দিন পর, রাতদুপুরে ফোন করে বলা - "কেমন আছিস? আহারে কতদিন কইন্যাদের কন্ঠস্বর শুনিনা রে" , (কিন্তু তাতো ও সব বন্ধু-বান্ধবীদেরকেই করেছে) এসবই কি? নাকি নীলার কোন আচরন ওকে এমনটা ভাবিয়েছে, ওর বাসায় আড্ডা মারা (তাতেও তো সবাই থাকতো, ওর মাও থাকত মাঝে মাঝে আড্ডায়), কিংবা নতুন কেনা ব্রেসলেট যখন কাউকে দিতে চাইতো না, তখন আহলাদি করে বলা - "নীলার লাভ নীলাভ দে না:... (যদিও কাজ হতোনা) ...
এসব চিন্তাতেই ঝিম মেরে বসে থেকে দিন গেল, বদটাকেও খুজেঁ পাচ্ছেনা যে সামনাসামনি জিগ্ঞাসা করবে - "কিরে তোর হইছে কি?...এসবের মানে কি?" পালালো কই ছেলেটা??
মন খারাপ করে বাসায় যাবার পথে বাসে একজুটির সিগারেট খাওয়া নিয়ে মান-অভিমান দেখে মজাই লাগলো, হাসিও, ভাবলো একই কান্ড ও নিজেও করতো, হয়ত আরো বেশিই ..... নীলাভের ব্যাগটা হাতে নিয়ে ভাবতে ভাবতে হঠাৎই খুশিতে দাতঁ বের করা হাসিতে হাসতে লাগল, বাসের মানুষজন অবাক হয়ে তাকাচ্ছে তাও হাসি থামে না।
"আমি বুঝিনা তোমায়
এই কি সেই তুমি? যার জন্য আমার এত প্রতিক্ষা,
এত আকুলতার মানুষ আমার ..... এই তুমি?
কি প্রচন্ড উন্মাদনায় ছেয়ে থাকি তোমার কাছে এলে,
অবহেলা নির্মম হেলায় রাখো আমায়
আসতে দাওনা কাছে, আবার দূরেও দাওনা যেতে,
কি বাধঁনে টেনে রাখো ....
মনআকাশে মেঘের ঘনঘটা কিবা রৌদ্রছটা
সবই বুঝো সহজিয়া অনুভবে
তবু তবুও বুঝোনা এই আমায়, সে কি চায়.....
আমি বুঝিনা তোমায়
ইদানিং আমি বুঝিনা এই আমায়ও,
তোমার কথার একটু ছোয়াঁতে
কল্পনার সবরঙের ফানুস উড়াই,
আমার উচ্ছলতা কিযে খুজেঁ পায় তুমিতে,
তোমার একঘেয়েমিতে!!!
একঘেয়ে তুমিটাকেও কেন কাছে চায় এই আমিটা?
আমি বুঝিনা, বুঝিনা - এই তোমায় আমায়"
পড়া শেষ হতেই নীলা চেচায় - "ওমা একিরে, এটা তোর লেখা?"
ছোঁ মেরে কাগজটা নিয়ে নীলাভের রাগতস্বর - "তোরে বলছি ঐ বাদামী ফাইলে নোট আর তুই এই তাক ধরছিস কেনো? সারাক্ষন যে পকপক করো, না বলে কারো কিছু ধরতে হয়না হ্যান ত্যান, এখন কই গেলো সেই সেন্স?"
থতমত খেয়ে নীলা বলে - "আমি তোর বন্ধু না? বলতে পারিস আমায়, বুঝবো"
কিছুক্ষন ভেবে নীলাভ বলে - "না বুঝবি না, আবার অভ্যেস মতো ক্যান ? ক্যান করিস না, তোর ক্যানসারের কোনই এ্যানসার নাই " ঝট করে নীলা তাকায় - "মানে?"
নীলাভ হাসতে হাসতে বলে - "মনে নাই তোর? মন্ডল স্যারের ক্লাসে?"
কিছুদিন আগে মন্ডলস্যার ক্লাসে লেকচার দিচ্ছে আর সবার সাথে প্রশ্ন করার পাশাপাশি নীলা লিখছে, কি যেন লিখতে লিখতে, খেয়াল করে নাই যে, ও স্যারকে বারবার জিজ্ঞেস করে ফেলছে - "ক্যান স্যার? ক্যান স্যার?" হঠাৎ কেমন সব চুপ হয়ে গেছে বুঝে ও মুখ তুললো, দেখে স্যার ওর ডেস্কের কাচে দাড়ানো, ভেবাচেকা খেয়ে তাকাতেই স্যার বলল - "খুবই জটিল অসুখ, ক'বছর আগে হলে বলতাম এটার নাই কোন এ্যানসার, তাই ক্যানসার।"
দু'জন হোঃ হোঃ করে হাসতে হাসতে কিছুক্ষন পর নীলা বললো - ভালোই প্রসংগ পাল্টাতে চেষ্টা করলি, কিন্তু আমি ছাড়ছি না, না বুঝলেও বল আমাকে"
কি যেন ভেবে নীলাভ শুরু করলো বলা ......
নীলাভের ঐদিনের বলা কথাগুলো মনে আসতেই আর কালকের ঘটনা মিলাতেই আজকের ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো নীলার কাছে।গাধাটা ভুলেই গেছে , ও নীলাকে বলেছে ঐসব। বাসায় গিয়ে ফোন দিয়ে সবগুলাকে জানালো - সবার দাওয়াত , নীলাভকে আনার দায়িত্ব ওদের ।
সবার সাথে নিলজ্জ হাসি দেয়া নীলাভ আসতেই নীলা আহলাদি স্বরে "জানু এদিকে আসো" ডাক দিলো। নীলাভ বোকা চেহারা করে চেয়ে থাকলো। কাছে এসে নীলা ওর দু'কান মুচড়ে দিয়ে বলল - "তোর কি জানি বলার আছেনা সবাইকে?? জলদি বল তোর প্রেমসাগরে পড়ার রহস্য। আমারে না ভালবাসো? বলো বলো ঠিক কবে, কখন থেকে? নাকি আমিই শুরু করবো বলা "
অবাক হয়ে নীলাভ বলে - "ধরছিস কেমনে? তোর মাথায় তো এতো বুদ্ধি নাই? বুজছিস কেমনে?"
নীলা হাসতে হাসতে বললো - নিজেই তুই সেদিন বললি, বলেছিলি না, ঐতিহাসিক কথাবার্তা ..."কতজনই তো মনের আশপাশে থাকে, আসে যায়, কিন্তু যে ছুঁয়ে যায়,তাকে ছাড়া আর কাউকে কি দেখানো যায়, মনটা?, মন কি এতই ফেলনা ক্ষনে ক্ষনে যারে তারে দেখাবো?... কত কষ্ট করে ওরে বুঝালাম, এখন মাকে বুঝাতে পারছিনা। মা কেন ওরে ভুল বুঝে, দোস্ত মা কেন বুঝেনা তৃনাকে ছাড়া আর কাউকে এই মনের আঙিনায় বসতে দিবোনা "
সব বন্ধুগুলা ততক্ষনে চেচাঁনো শুরু করছে - কি? হলোটা কি? নিজেরাই ঢং করবি তোরা, না কিছু বলবি? ঘটনা এই হলে নীলাভ ওমনটা বললি কেনো?
নীলাভ শয়তানি হাসি দিয়ে বলা শুরু করল - "কালকে ওর সাথে রিকসা করে যাচ্ছি, সিগারেটের জন্য জান যায় যায়, বললাম , দোস্ত একটা খাই, নাইলে দুইটান....প্লীজ। পাথ্থর-দিল বদ, জোর গলায় কয় না। ধুর! বলে অন্যদিকে ফিরে সিগারেট ধরাইয়া যেই দু'তিনটা টান দিলাম, হঠাৎ আমার ব্যাগ কেড়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়া আমারে রাস্তায় ফেলে চলে গেলো! জোস ব্যাথা পাইছি, তার চেয়ে বেশি, পাবলিক হাসছে অনেক....তাই ঠিক করলাম এটারে একটা শিক্ষা দেই"
সব্বাই আফসোস করলো - আহা, তুই আগে ঐসব না বললে একটা দারুন কাহিনী হতো ... আসলেই সিগারেট নিয়ে যা করে ও, ওরে শিক্ষা দেয়াই ঠিক হতো।
নীলাভ বললো - " অভিশাপ , অভিশাপ দিলাম, তোর এমন জামাই আসুক যার জন্য তুই মনমাতাল থাকবি, কিন্তু বেটা ঘাড়ত্যাড়া পুরা বিড়িখোর হোক, ভুরভুর করে তোর গায়ে সিগারেটের ধোয়াঁ ছাড়ব, তুই না পারবি সইতে না পারবি ছেড়ে যেতে। মজা বুঝবি তখন ..... "
(মানু'রে অনুসরন করিয়া পূর্বপ্রকাশিত লেখাটা দিলাম )
ভালো হইসে... :)
তোমার নিয়মিত লেখালেখি করা উচিত।
লেখা সুন্দর এবং সাবলিল হইছে..
লিখতে থাকো...
চমৎকার আগাইতেছিল শেষ টা যেন হঠাৎ হয়ে গেল!
আগে পড়ি নাই, ভালো লাগলো...
চালাইয়া যান বুবুজান... পাঠকের অভাব হৈবো না... সামনে বইমেলা ...
সামুতে পড়ছিলাম।অাবার পড়লাম, খুব ভালো লাগলো।
ছালু. টুটুল,জয়ি, নজরুলভাই@ধন্যবাদ পড়ার জন্য
মেসবাহভাই@কোনদিনই ওই চিন্তা মাথায় আসে না :)
রায়হানভাই@আপনার কথাটা ভাল লাগছে, একই কথাই বলছিলেন প্রথমবার পড়েও, অনুভূতি পাল্টায়নি মানে সেই মন দিয়েই পড়ছেন পুরান লেখাটা :)
চমৎকার একটা লেখা।
আগে পড়ছিলাম কি ?
চমৎকার ....... বলার অপেক্ষা রাখে না..........
আগে তবে পড়েন নাই....
এই আদ্দিকালের পোষ্ট খুজিঁয়া পড়িবার জন্যে ধইন্যাবাদান্তে শুভেচ্ছা!!
মন্তব্য করুন