ইউজার লগইন

সুন্দরবন ভ্রমন ২০১৩ (পর্ব ৪)

সকালের নাস্তা খেয়ে উঠতে না উঠতেই সবাইকে ট্রলারে চাপিয়ে আবারো বেড়িয়ে পড়া হলো কটকা বীচের উদ্দেশ্যে। কাদা, শ্বাসমূল এড়িয়ে চলার জন্যে কাঠের ব্রিজ তৈরী করা, কিছুদূর যেতেই কয়েকটা দেখা মিলে বনবিভাগের তৈরী করা কিছু কটেজ, লাল-শাপলায় পরিপূর্ন পুকুর। কয়েকগ্রুপে ভাগ হয়ে কেউ কটেজের দিকে, কেউ বাঘের আশায়, কেউ বীচের দিকে আগাতে থাকলাম। হাল্কা গাছের সারি পেরিয়ে গেলে গোলপাতা আর আরো নানান গাছেরসারির মাঝে দেখা মেলে সার সার হরিণের দল। চারদিনের ট্যুরে যত হরিণ দেখেছি এখানকার হরিণের পাল দেখতে বেশি আকর্ষনীয় লেগেছে। চঞ্চল নয় অপেক্ষাকৃত শান্ত, ছোটবড় অবাক হয়ে চেয়ে থাকা প্রানীগুলোর সৌন্দর্য্যতা মুগ্ধতা এনে দিবে যে কাউকেই নিঃসন্দেহে।

1_4.jpg

নিজের রুম থেকে বনের গাছগুলো যখন দেখতাম লাগতো গাছের পাতাগুলো যেন আশ্চর্য নিপুনতায় যত্নের সাথে ছাটাঁ! মাইল কে মাইল গাছের সারি একই মাপের, দেখতে দেখতে একঘেয়ে লাগে না মোটেই! হরিণ পাতা খায়, তাই তার নাগালের সব পাতা একহারা ভাবে খেয়ে ফেলা। এই পাতা খাওয়া নিয়ে এক ঘটনা। বনের মাঝে হরিণের দল একটু দূরে দূরে, সাথের ফটোগ্রাফারদের একদল আরো কাছে থেকে ছবি তোলার জন্যে গাছের পাতা ছিড়েঁ দিতে লাগলো যেন হরিণ কাছে আসে, কিন্তু গাইডদের দল বিরক্ত এতে, রীতিমতো বলতে লাগলো, হরিণ কি গরুছাগল নাকি যে তু তু করলেই পাতা খেতে আসবে! দু’পক্ষের হালকা বাদানুবাদের পর একগ্রুপ গাইডদের সাথে আরো সামনে এগিয়ে গেলাম বাঘ সংক্রান্ত গাজাঁখুরি গল্প শুনতে শুনতে, সাত-আটজনের এক গ্রুপ রয়ে গেলেন গাছের আড়ালে ক্যামেরা তাক করে শিকারের আশায়! ওদের অপেক্ষা বৃথা যায়নি, গাইডদের মুখ দেখার মতো হয়েছিল, দূর থেকে যখন দেখা গেল, পাতা খেতে ঠিকই হরিণের দল হাজির! এতো লোকজনের হুল্লোড় কমতেই আর খাবারের হাতছানিতেই হরিণ এসেছিল, ফটোগ্রাফারদের মন ভরেছে নির্ঘাত। আমি পাইনি হরিণের ভাল ছবি, আর আর কবে আসা হবে আর এই ভেবে ছবি তোলার চেয়ে দেখতে থাকাতেই ভাল লাগছিল বেশি।

2_3.jpg

গোলপাতা তো গোলাকার নয় তবে কেন এমন বলা হয়? সেই পুরানো প্রশ্ন আরো নানান কিছু নিয়েই গল্প করতে করতেই পথ চলা। গোলপাতা দেখতে নারকেল পাতার মত। একদম গোড়া থেকে বের হয়, ঠিক নারকেল গাছের পাতার মত তবে একটু বেশি চ্যাপ্টা।

4_3.jpg

কড়া রোদে হেটে হেটে গাছের সারি পেরিয়ে বীচের দিকে যতই এগুতে থাকলাম আবার সিডরের চিহ্ন চারপাশ জুড়ে দেখা যেতে লাগলো।

3_2.jpg

খটখটা বালুকাময় জায়গা জুড়ে এক আধভাঙ্গা ব্রিজ চলে গেছে বনের দিকে। সেদিক না গিয়ে বীচের দিকেই চললাম। নতুন করে হওয়া গাছের সারির মাঝ দিয়ে চলে গেছে ছায়াঘেরা একটা পথ, তপ্ত রোদের মাঝ দিয়ে এতদূর হেটেঁ আসার ক্লান্তি যেন ভুলিয়ে দেয় পথটা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সবগ্রুপ এক হতে থাকলো ট্রলারের উঠবে বলে। এখানে এসে কিছু কিছু মানুষজনের দেখা মিললো, পরিবার পরিজন নিয়ে থাকা। মধু কেনাবেচা চলছে এখানে, কেউ কেউ ঠিক চেখে দেখতে লাগলেন “গজারি মধু”। ট্যুর শুরু সময়েই বলে দেয়া হয়েছিল সুন্দরবন থেকে যেন কেউ মধু না কিনে, ঠকার সমূহ সম্ভবনা থাকে তাতে,তাও ক’জন কিনে নিলেন মধু।

1479311_10152059524719019_1254505718_n.jpg
এটা অন্যকার যেন তোলা ছবি

লঞ্চ চলছে নিজের তালেই, নিস্তরঙ্গ ভাবে নয় যদিও। দুলুনি আছে তবে খুব বেশি নয়, যেটুকুন তা উপভোগ্যই। চারপাশ দেখতে দেখতে খাবার খেয়ে আড্ডা দিতে দিতে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে গড়ালো বেলা। রাতের খাবার খেয়ে চাদরমুড়ি দিয়ে জাকিয়ে বসে আড্ডা দেবার সময়ে হুট করেই ডাক পড়লো কে কে রাতে বেরুবে বাঘ দেখতে! দিনের তুলনায় কম হলেও হুড়মুড় করে ট্রলার ঠিকই ভরে উঠলো। এতো রাতে ট্রলারে করে ঘুরে বেড়াচ্ছি, ব্যাপারটা যেন ভাবনারও অতীত আমার মতো ঘরকুনোর জন্যে! সাথের মানুষগুলোর ভরসাতেই বেরিয়ে পড়া।

শক্তিশালি টর্চের আলোতে আশাপাশ আলোকিত করতে করতে গাইড বারবার বলছিলেন পাড়ে খেয়াল রাখেন বাঘ পানি খেতে আসতেই পারে। এতো রাতেও গাছ থেকে উড়ে যাওয়া বকের মতোন বড় পাখি, লাল জ্বলজ্বলে চোখের হরিণ দেখলাম। রাতের আধাঁরে হরিণের চোখ লাল দেখা যায়। হঠাৎ কে যেন বলে উঠলো, “ওই যে হলুদ কি যেন দেখা যায়, বাঘ নাকি!” সাথে সাথে হুশহাস বন্ধ, টর্চ সব ঘুরে গেল সেদিকে। যতই কাছে যাওয়া হচ্ছে বাড়ছে সবার হৃৎস্পন্দন, এই কি দেখা মিলতে যাচ্ছে রয়েল বেঙ্গলের! এতো উত্তেজনার মূহুর্তে মোটামুটি কাছে যেতেই রাগে সবার গা জ্বলা শুরু করলো! কোন বেহদ্দ চিপসের প্যাকেট ফেলেছে পানিতে আর তা কিনা ভেসে গিয়ে গাছে জড়িয়ে আছে এমনভাবে আলো পড়তেই চকচক করছিলো হলদেটে ভাবের বাঘের মতোই!!

পোস্টটি ১৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সাঈদ's picture


সুপার ডুপার

জেবীন's picture


Cool

আরাফাত শান্ত's picture


Smile

জেবীন's picture


থ্যাঙ্কু পড়ে জানান দেবার জন্যে

অনন্ত দিগন্ত's picture


এক নিঃশ্বাসের পড়ে ফেললাম ৪টি পর্ব ... সুন্দরবন আসলেই একটি অনন্য সুন্দর মন ভাল করে দেয়ার মত জায়গা ... ভ্রমনের শুরু থেকে, ফিরে আসার পরে আর আপনাদের ছবিগুলো দেখে এতদিন মনে মনে বলেছি -- এমন নিরাপত্তা বলয়ের মাঝে থেকে ফটোশ্যুট করতে গেলে কি আর জঙ্গলের আসল আনন্দ পাওয়া যায় ? ...

ওখানে যেতে হবে পুরোদস্তুর যুদ্ধের সাজে ,গুলি ভর্তি ব্যাগ ঘাড়ে আর বন্দুক হাতে করে আঙ্গুলে গোনা কয়েকজন, সতর্ক চোখের চাহুনির মাঝে ছোট নৌকাতে বসে নিঃশব্দে বেয়ে মূল নদী থেকে ঢুকে যেতে হবে গভীর থেকে গভীরতর গোলপাতার এরিয়া গুলোতে, নদীতে মাত্র কিছু দুরেই দেখা যাবে ভেসে যাওয়া "কামোট" অথবা গোল পাতার ঝোপের বাইরেই পাওয়া যাবে টাটকা বাঘের পায়ের ছাপ ... তার ভিতরে নিজের হাত ঢুকিয়ে অনুমান করতে হবে বাঘটা ঠিক কত বড় আর কতটা ওজনের ছিলো ... কালে ভদ্রে বানরের দেখা পাওয়া গেলেও এভাবে হরিণ খুব একটা সামনে পাওয়া যায়না ঐ সব জায়গা গুলোতে ... আরো কত কি ...

কিন্তু সিরিজ টা পড়তে পড়তে নিজের সেই সব স্মৃতিগুলো যেন অন্যভাবে ফেরত আসছে ... অন্যরকম একটা ভাল লাগা কাজ করছে নিজের খুব আপন করে নেয়া জায়গাটিকে আপনাদের চোখে এমন সুন্দরভাবে দেখতে ...

অনেক অনেক শুভকামনা ... আর অপেক্ষায় থাকলাম পরের পর্বগুলোর জন্য ....

জেবীন's picture


বাঘের পায়ের ছাপ নিয়ে যা কান্ড! Smile বানর করমজলেই যা কিছু দেখেছি, হরিনের পাল দেখেছি বিস্তর!

ফটোশুটের চিন্তায় কিন্তু অনেকেই গেছেন। তবে দলে সববয়েসি থাকায় কিছুটা অসুবিধা হয়েছে তো বটেই, আবার গ্রুপে কিছু আজিব কিসিমের মানুষের দেখা মিলেই যায়, যারা যা মানা করা হয় তাই করে ফেলেন যা বিরক্তিউদ্রেগ করে ফেলে। সেসব নিয়ে কথায় যেতে চাই না এরচেয়ে দারুন সময়টা কাটিয়েছি তাই মনে রাখতে চাই।

ধন্যবাদ নিজের অভিজ্ঞতার কথা এমনি করে শেয়ার করলেন বলে।

তুহিন's picture


আপা ফাটাফাটি হয়েছে.........ভুলেই গিয়েছিলাম, আরোও একবার সুনদরবব থেকে ঘুরে এলাম.......থ্যাংস এগেইন

জেবীন's picture


Smile ভালো লাগলো মন্তব্য পেয়ে

জ্যোতি's picture


সবগুলো পর্ব পড়েই মনে হলো দারুণ এক ভ্রমণকাহিনী। লিখে ফেলছো এই ভালো। কখনো নিজেরও পড়তে ভালো লাগবে। আর ছবিগুলাও দারুণ।
তোমাদের লঞ্চটা খুবই পছন্দ হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে স্বপ্নের মত একটা ট্যুর Smile

১০

জেবীন's picture


হ্যা, নিজেরেই মজা লাগবে অনেকদিন পর পড়তে গেলে।
ভালো হয়েছে আসলেই ট্যুরটা (আরে আমি গেছি দেখতে হবে না! চোখ টিপি )

১১

তানবীরা's picture


সবগুলো পর্ব পড়েই মনে হলো দারুণ এক ভ্রমণকাহিনী। লিখে ফেলছো এই ভালো। কখনো নিজেরও পড়তে ভালো লাগবে। আর ছবিগুলাও দারুণ

তোমাদের লঞ্চটা খুবই পছন্দ হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে স্বপ্নের মত একটা ট্যুর Big smile

১২

জেবীন's picture


আপ্নে মিয়া পুরাই খ্রাপ! কখনো সাঈদ্ভাই'রে কখনো জইতা'রে কপি করেন! Crazy

১৩

তানবীরা's picture


কি করমু, ওরা আগে কইয়া ফেলায় যে Sad(

১৪

টোকাই's picture


খুব ভালো লাগলো। যেতে পারলে হয়ত আরো বেশি ভালো লাগত।
সুন্দর বর্ণনা আর ছবির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.