মনের মানুষ
আজকাল আমি অনেক ব্যস্ত ধরণের ম্যাড় ম্যাড়ে দিন কাটাচ্ছি। বিষয়টা এমন দাড়িয়েছে যে, রাত দিন মিলে আমার দম ফেলার ফুরসত নেই আবার কোন কাজ আছে বলেও মনে করতে পারি না। কী অদ্ভুত যন্ত্রণা! যন্ত্রণার মাত্রাটা আরো বাড়ে যখন কেউ দেখা মাত্র বলে 'এই তোর তো কোন কাজ নেই, এই কাজ একটু করে দে'। কিন্তু কেন যেন নিজেকে খুব ব্যস্ত অনুভূত হয় আবার কাজ যে নেই এটা আমিও জানি। আর এখন অবস্থা এমন যে লোকের দেয়া কাজ করতে করতে বরং তাদের চেয়ে আমিই বেশী ব্যস্ত। আর সব মিলে নিজের উপর তো দূরে থাক, মনের অন্তঃস্থ কথাগুলো পর্যন্ত আজকাল স্পষ্ট শুনতে পাই না। হৃদয় অন্তঃপুরিকা থেকে বের হয়ে স্নায়ুকোষ বেয়ে মস্তকে পৌছার আগেই যেন বাষ্পীভূত হয় যায় সকল কথা, অজানা অনুভূতি; যোগ দেয় বাতাসের নিভূতচারী নিরবতার সাথে। এমন কেন হচ্ছে তা ভেবে পাওয়া কঠিন। তবে মনে হচ্ছে হয়ত বা ব্যস্ত সময় প্রবাহের সাথে চলতে চলতে গতিশীল মন আকস্মিক জীবনের এই মন্তরতা সইতে পারছে না। আর এই বর্তমান জীবন বড় অদ্ভুতুড়েও ঠেকছে বটে!
দিন কয়েক ধরে মাথায় সিনেমার পোকা ঢুকেছে। শাহরুখ খানের কয়েকটা পুরাতন সিনেমা দেখলাম। এই সিনেমাগুলো দেখার পর এই কথাটা অন্তত বুঝতে পারলাম যে ওল্ডকে কেন গোল্ড বলা হয়। বাংলা যে কয়টা সিনেমা দেখা হয়েছে তার মধ্যে আলাদা করে বলতে হয় শুধু মনের মানুষের কথা, কেন জানি খুব মনে ধরেছে সিনেমাটা। লালনের জীবন কাহিনী নিয়ে বানানো সিনেমা এবং সচরাচর অন্য সব সিনেমা থেকে এর নির্মাণশৈলী একদম ভিন্ন ধরণের। লালন চরিত্রে প্রসেন জিত্ চ্যার্টাজীর অভিনয়ও সন্তোষজনক। লালনের গান অনেক শোনা হয়েছে তবে তার জীবনী নিয়ে আমার ধারণা খুবই স্বল্প। একটু জানার জন্য উইকিপিডিয়ায় খুজে যা বুঝলাম লালনের প্রকৃত পরিচয় কেউই জানে না এমন কি জাত, ধর্ম পর্যন্ত। যা দেখানো হয়েছে তা ঐ ধরণা করা ধারণার উপরে ভিত্তি করেই। এই সিনেমার অন্যতম আর্কষণীয় দিক হচ্ছে লালনের গানগুলোর পরিবেশনায়। আর সেগুলো গল্পের ঘটনা প্রবাহের সাথেও অসম্ভব সাদৃশপূর্ণ। সব মিলে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে পিকে ছবি নিয়ে যে কথা বলা হচ্ছে যে তা ধর্মীয় গোড়ামীর বিরুদ্ধে তা এই মনের মানুষ সিনেমাতেও খুবই গোছালো ভাবে দেখানো হয়েছে এবং সুক্ষ্নভাবে। যদিও পিকে সিনেমা আমি এখন পর্যন্ত দেখিনি। আর সাম্প্রতিক সময় দেখা অন্যসব সিনেমাগুলোর মধ্যে বুনোহাঁস, দারুচিনি দ্বীপ, পদ্মা নদীর মাঝি, দিপু নাম্বার টু ছিল। বুনোহাঁস খুব ভালো লাগে নাই আর দিপু নাম্বার টু সেই বাচ্চা কাল থেকেই দেখে আসছি তবে দারুচিনি দ্বীপ খুবই ভালো ছিল। গানগুলো অসম্ভব ভালো লেগেছে।
বাঙালির উত্সাহ আছে, আগ্রহ নেই। কথাটা যেন দিন দিন চরম সত্য রূপ ধারণ করছে। অন্যের কথা কী বলব, নিজেই এর আর্দশ উদাহরণ। প্রবল ইচ্ছা শক্তির তোড়ে লাইব্রেরি থেকে আনা বইগুলো দিব্যি টেবিলের উপর ঘুমুচ্ছে, ফেরত দেবার ডেট পর্যন্ত পার হয়ে গেছে বহুদিন কিন্তু এখনো পড়ার খবর হল না। বরং আমার ইচ্ছা, অনুভূতি, মনের রং দিন দিন যেভাবে নিজস্বতা হারিয়ে ফেলছে বাহ্যিক অবস্থাও তার সাথে পাল্লা দিয়ে বির্বণ হতে শুরু করেছে। আজকাল কথা বলছি অল্প, নিরবতার কোলাহলে নিজেকে শামিল করছি বিস্তর। আবার রোদেলা বিকেলে ঘোরাঘুরি উদ্ভট ঝোঁকটাও মনে ধরছে কোন কারণ ছাড়াই! যদিও এটা খুব বেশী বিচিত্র বিষয় না, তবু যা ধাতে নাই তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াটা অবশ্যই আর্শ্চযজনক। যাক, পরবর্তী রূপটা যে কী হবে তা এখনো ভাবনার বাইরেই,তবে বসন্তটা যে দুর্দান্ত হবে তাতে কোন অবকাশ নেই। এখন অপেক্ষা বসন্তের...
৮ মাঘ, ১৪২১ বঙ্গাব্দ
if winter comes, can spring be far behind?
হুমম,,,, কী বলব?
মন্তব্য করুন