উদ্ভট বাংলাদেশ
পত্রিকা পড়া বাদ দিয়েছি বহুদিন, যদিও বা কখনো পড়ি তাহলে তার পরিধি খেলার পাতাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। পত্রিকা খুললেই আমরা যে একখন্ড নরকে বাস করছি তার চিত্রগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। হত্যা, র্ধষণ, মিথ্যা, অনাচার-অত্যাচার, নিপীড়ন, বিবেকহীনতা, ভন্ডামীর যেন এক মুক্ত রাজ্য এই দেশ। সারা পত্রিকা খুঁজে ভালো সংবাদ পাওয়া যায় হতে গোনা। দিনকে দিন আমরা একটা লক্ষ্যহীন, ভন্ড আর মানসিক ভারসাম্যহীন জাতিতে পরিণত হচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশ জুড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহগুলোই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কোন কাজই যে ঠিকঠাক হচ্ছে কিংবা হবে এবং তার উপরে কেউ ভরসা করে কিংবা করবে এমন একজনও হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রীয় কর্তাব্যক্তিদের কর্ম পরিকল্পনার অসংগতি, অসারতা, সীমাহীন র্দুনীতি, অসাদুপনার পরিমাণ সহ্য সীমাও পার হয়ে গেছে বহু আগে। এখন সবার সামনেই সবকিছু ঘটছে, সবাই সবকিছু দেখছে কিন্তু সবাই কেবল নির্বাক। কেউ মুখ বন্ধ করে আছেন, কারো মুখ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা আর বলতে হয় না। তাহলে 'আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ যে কী' এর পিছনে কেবল প্রশ্নবোধক চিহ্নই বসবে। দেশে একের পর এক মানুষ হত্যা চলছেই কিন্তু তাদের কর্মকান্ড অভিন্ন। মামলা হচ্ছে, তদন্ত চলছে, কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সর্বশেষ শুদ্ধস্বরের প্রকাশকসহ আরো দুইজনের উপর চাপাতি হামলা, আর তার ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই একই কায়দায় জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন খুন। ভাবতেও ধাঁধা লাগে, একজন জ্যান্ত মানুষকে দু চার মিনিটের ব্যবধানে মৃত বানানো হচ্ছে। উনার সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ের জানা শোনা নাই তবে তিনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ছিলেন। সবাই বলছে খুব ভালো মানুষ ছিলেন, খুনের কারণ ত দূরে থাক কারো সাথে ঝগড়া পর্যন্ত ছিল না। শুধু বই প্রকাশের কারণেই প্রাণ নিয়ে নিল, আবার শুনলাম সময় প্রকাশনীর প্রকাশকও হুমকি পেয়েছেন। কোথায় যাচ্ছে দেশ? একদিন এদেশে কেউ থাকবে না এভাবে চলতে থাকলে।
আর থেকেই বা কী হবে, এই দেশ ত অরাজকতার দেশ। যে যত বেশি অরাজকতা করতে পারে তারই এখানে কদর, সম্মান নাম অদৃশ্য ঘৃণা, অধিপত্যের সাম্রাজ্য। দেশের মানুষেরও এখন এসব সয়ে গেছে, মানুষ এখন এসবকে তাদের উপর অভিশাপ মনে করে। প্রতিবাদ ত দূরে থাক, মানুষ এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতেও ভয় পায়। কেউ যদি বলতেই চায়, তার চারপাশ থেকে শতজন আসে মুখবন্ধ বন্ধ করতে। কেউ চায় না একজনের পরে আরো একজন মরে যাক। ভাবতেও লজ্জা লাগে এই দেশই নাকি ফজলুল হক, সোহরাওর্য়াদী, শেখ মুজিবের মত আপোষহীন নেতার দেশ; আমরা তার উওরসূরি। দেশ শুধু যেন এক অন্ধকার টানেলের দিকেই ছুটছে; ন্যায়নীতি, জবাবদিহিতার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা না থাকলে যা স্বাভাবত হয়। উদাহরণও সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনা। এই দেশেই অদম্য ফাউন্ডেশনের কয়েক জনকে কারণ ছাড়াই জেলে পুরা হয়, এমপির বন্ধুকের গুলিতে শিশু গুলিবদ্ধ হয়, দলীয় সংগঠনের মানুষরূপী জন্তুদের হাত থেকে ত গর্ভের শিশুও মুক্তি পায় না, আঘাতে মায়ের পেঠের সন্তান নষ্ট হয়ে যায় আর মহিলা তার সন্তান ধারণ ক্ষমতাও হারায়। কিছুই বলার নেই, এগুলোই বাস্তব চিত্র। কয়েক মাসের ব্যবধানে দেশের নানাস্থানে শিশু নির্যাতনের শিশু মরেছে, কয়েক দিন আগে এক মহিলাকে ওড়না টান দিয়ে রাস্তায় ফেলে মেরেছে বড় লোকের ছেলে বলে খ্যাত কীটগুলো, গুলশানে বড়লোকের ভাতিজা গাড়ি চালিয়া শিশু হত্যা করে। আবার ফেসবুকে আপডেট দেয় গোয়িং টু পুলিশ স্টেশন উইথ ডেড! কী বলার আছে? আমি বা আমার মত সাধারণরা কী এই দেশের কেউ? আমাদের জীবনের কোন দাম কী এই দেশে আছে?
সবাই বড় মুখ করে বলে 'বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদয়িক দেশ।' আমার হাসি পায়, বিশ্বাস হয় না। অসাম্প্রদায়িকতার মোড়কে দেশে কেবল সাম্প্রদায়িকতারই চর্চা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, ছড়ানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক ঈর্ষা। বিগত কয়েক সপ্তাহে ভাঙা শত শত প্রতিমা আর শিয়াদের মিছিলের উপর হামলা তার সাক্ষী। শিয়াদের উপর এবারই প্রথম হামলা হয়েছে, ঈর্ষার পরিমাণ কমছে না বাড়ছে তা এই থেকেই প্রতিয়মান। কেউ কেউ আবার আইএস'এর গন্ধ পাচ্ছে আবার কেউ তার বিরুদ্ধে। তবে ঘটনা যাই হোক, দেশের ভিতর যে রোগ জীবানু গুটি বাঁধতে শুরু করেছে তা সত্য। এখনো হাতে যথেষ্ট পরিমাণে সময় আছে, এখন প্রতিকার না করলে পরে প্রতিরোধ করাটা সাধ্যের বাইরে চলে যেতে পারে। আর তার পরিণাম যে ভয়াবহ হবে তাতে অন্তত কারো সন্দেহ নাই। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জনসাধারণের এক হওয়া, বুদ্ধিজীবি নামক বুদ্ধি প্রতিবন্ধিদের একটু হলেও শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়া, দেশের শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক আর সুশীল নামক প্রজাতিদের পা চাটা মানসিকতা ত্যাগ করা। না হয় একদিন উনারা নিজেদের অস্তিত্বও আর খুঁজে পাবেন না।
এত কিছুর পরেও দেশটা উদ্ভট উটের পিটেই চলছে, তো উটের অবস্থা পরির্বতন না হলে সবকিছুই বৃথা। আশাকরি, এই উদ্ভট উট সদৃশ আমাদের দেশীয় সরকার এখন অন্তত একটু নড়েচড়ে বসবে। অবশ্য আশায় গুড়েবালি দিতে এদেশের মানুষের জুড়ি নেই!
‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদয়িক দেশ’ – আমার মনে হয় এটাই এই শতাব্দীর সেরা জোকস
উপমহাদেশের দেশগুলোর জন্মই যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে , সেখানে ভারত - বাংলাদেশের মত দেশগুলো যখন নিজেদের অসাম্প্রদায়িক বলে ঘোষণা দেয় তখন আমার খুব হাসি পায়। আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কিংবা হামলাগুলোর পরে এইসব কথা র্বাতার প্রতি রাগ, ঘৃণা কিংবা হাস্যরসটা আরো বাড়ে। সত্যিই শতাব্দীর সেরা জোকস্ !!
মন্তব্য করুন