জীবিকা অথবা জীবন- ৮
সকালের দিকে হঠাৎ করেই বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রহমান সাহেব। তাদের ডাক্তার বন্ধু শৈলেশ বর্মন এসে খানিকটা রাগারাগি করলে রহমান সাহেব বন্ধুর হাত ধরে বললেন, দোস্ত তুই আগে আমার কথাটা হোন!
ডাক্তার সরোষে রহমান সাহেবের হাত সরিয়ে দিয়ে বললেন, তরে কইছিলাম দুধ-ডিম আর এইসবের তৈরী হাবিজাবি কিছু না খাইতে। এক ঠ্যাং কবরে গিয়া রইছে অখনও নোলা সামলাইতে পারছ না! কই নাই তর নোলা তরে একদিন শেষ করবো!
খানিকটা বিষন্ন হাসি হেসে রহমান সাহেব বললেন, দোস্ত দশ বছর ধইরা তো একই কথা কইতাছস, অখনও তো মরলাম না!
তাইলে মর! আমি যাই!
না দোস্ত, আমারে অষুধ দিয়া যা। কাইলকা সকালের আগেই আমারে যেমনে হউক সুস্থ হইতে হইবো।
এবার ডাক্তার শৈলেশ বর্মনের মুখে কেমন তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো। বললেন, কাইলকা শহিদ মিনার যাইবা। ফুল দিবা। তারপরে তোমার দেশ উদ্ধার হইয়া গেল! অথচ পোলা মাইয়াগুলারে বানাইছস আম্রিকান-জার্মান!
দোস্ত এখন ভাবতাছি এইটাই আমার মস্ত একটা ভুল আছিলো। ভাবছিলাম, নিজে তো ডিগ্রি লইতে পারলাম না। জীবনভর কেরানিগীরি করলাম। বাবায় যদি এই বাড়িটা না কিনতো আর লঞ্চ দুইটা না থাকতো তাইলে কি আমার পোলা মাইয়ারা মানুষ হইতো?
কেন? তুমি কি উল্লুক আছিলা?
রহমান সাহেব ক্লিষ্ট হাসি হাসতে হাসতে বলেন, আবার চিপা দিছে। তুই বয়, আমি আইতাছি!
রহমান সাহেব ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে শৈলেশ বর্মন সালমা বেগমকে বললেন, সত্যি কইরা ক তো সালমা, তর পুডিং খাওনের শখ হইলো কেন?
সালমা বেগম বললেন, আমার কি আর এমনে এমনে শখ হইছে? আপনের দোস্ত কইলো কতদিন ধইরা পুডিং বানাও না। আণ্ডারও অভাব নাই। খোদা না করে যদি দুই একদিনের মইধ্যে মরি তাইলে আমার আত্মাটা মুরগির খোঁয়াড়ে আইসা বাসা বানাইবো।
আর তুমি পইট্যা গেলা। পুডিং বানাইলা। ফটকাটারে খাওয়াইলা আর বিধবা হওনের ডরে আমারে বাইন্ধা আনলা।
এমন কথা কইলে কি মন মানে? বলে সালমা বেগম যেন উত্তরের প্রত্যাশায় চেয়ে থাকেন শৈলেশ বর্মনের মুখের দিকে।
নাহ! মন মানে না। তুই বুদ্ধু আছিলি বইল্যাই তরে পটাইয়া বিয়া করতে পারছিলো। সংসারী হইতে পারছিলো। নাইলে এর কপালে বউ জুটনের কথা আছিলো না। অন্তত হেই সম্ভাবনা আছিলো না।
সালমা বেগম সে কথার ধারেকাছে না গিয়ে বললেন, আজকের মইধ্যে ঠিক হইবো তো?
আর কিছু না খাইলে পেটের ভিতরে যা আছে, বাইর হইয়া গেলেই ঠিক হইয়া যাইবো। ডরাইস না! একটা স্যালাইন দিয়া সারাদিন রেস্টের ব্যবস্থা কইরা যামু।
ডাক্তারের কথা শুনে সালমা বেগমের মুখটা বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, আপনের লাইগা পুডিং নিয়া আসি?
তখনই রহমান সাহেব ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, দোস্ত হ্যাবভি টেস্ট হইছে! আমি তো একলাই দুই জামবাটি পুরাইয়া খাইছি!
খুব ভালা করছস! আইজ সারাদিন আর কিছু খাইতে পারবি না। স্যালাইন নিতে হইবো।
স্যালাইনের কথা শুনতেই রহমান সাহেবের মুখটা যেন অর্ধেক হয়ে গেল। তারপর বললেন, কাইলকা সকালের দিকে বাইর হইতে পারমু তো?
একবার না গেলে হয় কি? প্রত্যেক বছর যাইতে হইবো এমন তো কথা নাই!
কথা নাই মানে? যেন আকাশ থেকে পড়েই নির্বাক হয়ে গেলেন রহমান সাহেব।
শৈলেশ বর্মন ব্যাগ খুলে স্যালাইনের একটি কাচের বোতল বের করে বললেন, বোবা হইয়া গেলি নাকি?
তুই কথাটা কইলি কি? সেই প্রথমবার থাইক্যা আমি যাইতাসি, মরার আগ পর্যন্ত যামু যেমনে পারি। মিছিলে থাকতে পারছিলাম আর তাগরে মনে কইরা সম্মান করতে যামু না?
তর সামর্থ না থাকলে যাবি কেমনে?
দরকার হইলে ঠেলাগাড়িতে শুইয়া শুইয়া যামু। তারপরই তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন শৈলেশ বর্মনকে, তর বাগানে ফুল আছে না? রাইতে যামু, নাইলে মনু মিয়ারে পাঠামু। কয়টা ফুল দিয়া দিবি!
তখনই মনু মিয়া দরজার বাইরে থেকে বলে উঠলো, আমরার গাছোই ফুল আছে রাইজ্যের!
কস কি? গাছতো সব মইরা গেছিলো দেখছিলাম! সালমা বেগম বিস্ময় গোপন করতে পারেন না।
মনু মিয়া দাঁত বের করে হাসিমুখে জানায়, আমি পরতিদিন পানি দিছি। হাস-গোবর দিয়া গোড়া নিড়াইয়া দিছি। অহন কত সোন্দর ফুল অইছে!
তখনই ব্যস্ত হয়ে রহমান সাহেব বলে উঠলেন, চল তো শৈলেশ দেইখ্যা আসি!
না। তুই যা! আমি নাস্তা কইরা আই নাই!
রহমান সাহেব বেরোতে বোরোতে শুনতে পেলেন, শৈলেশ বর্মন বলছেন, সালমা, জলদি যা দিদি! জামবাটি পুরাইয়া নিয়া আয়!
মোরগ-মুরগির খোঁয়াড়টার পাশে বেশ কিছুটা জায়গা বাগানের জন্য রাখা হয়েছিলো। এখানটায় ঠিক মত আলোবাতাস চলাচল করতে পারে বলে সালমা বেগম নিজে পছন্দ করে প্রথমবার ফুলগাছ লাগিয়েছিলেন। তারপর অনেক বছরই চর্চাটা ধরে রেখেছিলেন। কিন্তু এবারই সালমা বেগম কেমন যেন হেলে পড়া সূর্যের মতই খানিকটা নিস্তেজ হয়ে গেছেন। বেশ কিছু ফুলগাছ তাজা দেখালেও কেবল গন্ধরাজ আর জবাফুলই আছে। তবুও রহমান সাহেব বেশ খুশি হয়ে উঠলেন। মনু মিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, দারুণ কাম করছস! তরে এই মাসে ভালা একটা বখশিখ দিমু!
রহমান সাহেব দ্রুত ঘরে ফিরেই বিছানায় শুয়ে পড়ে শৈলেশ বর্মনকে বললেন, তুই পরে সারাদিন লাগাইয়া খাইস। আগে আমারে স্যালাইন লাগা!
শৈলেশ বর্মন আয়েশ করে চামুচে নিয়ে পুডিং খেতে খেতে মিটমিট করে হাসছিলেন আর মাথা ঘুরিয়ে রহমান সাহেবের দিকে তাকাচ্ছিলেন। কিন্তু রহমান সাহেবের অস্থিরতা যেন তাকে মোটেও স্পর্শ করছে না।
(চলবে)
জমজমাট
পুডিং আমারও প্রিয় খাবার।
বয়স ৫০ হওনের আগেই যত পারেন খাইয়া লন!
রহমান সাহেব অস্থির না হইলে কি হইবো, এর পর কাহিনি কোন দিকে গড়াবে সেই চিন্তায় পাঠক অিস্থর। পরবতী অংশের অপেক্ষায়।
কাহিনী কোনদিকে যায় আমিই তো জানি না। তাড়াতাড়ি দিতে চেষ্টা করবো।
খাবার না-থাকার কষ্ট, খাবার থাকলেও তা না-খেতে পারার কষ্ট, আবার অতিরিক্ত খাওয়ার কষ্ট -- সব কিছুতেই শুধু কষ্ট ।
পড়তেছি। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
শুক্রিয়া!
কী সংলাপ! চলুক জুলিদা!
সব নাম সংক্ষেপ করলে সুবিধা হয় না কইলাম। এই যেমন নুশেরা। এই নামটারে সংক্ষেপ করতে গেলে কি কি হইতে পারে চলেন দেখি। > নুশ>নুশে>নুশু>নুশি প্রত্যেকটাতেই কেমন পুষিবিলাই পুষিবিলাই ভাব আছে। তাইলে কি আপ্নেরে নুশিদি বলা যায়?
আপনার গল্প বরাবরই ভালো পাই। এইটাও চমৎকার হইছে।
এই বাক্যাটা ঠিক বুঝলামনা।
রহমান সাহেবের ছেলেমেয়েরা আমেরিকা বা জার্মানিতে থাকে । এই জন্যে বলা ।
ঈশান মাহমুদের বুঝ হইসে আশা করি।
পড়তেছি । এইটা বই আকারে বের করবেননা?
বই বার করতে আমি বেহুঁশ পরায়। পাবলিশারের কাছে ছুটাছুটি প্রুফদেখা দরকষাকষির পর যত কম খরচে যত কম সংখ্যায় ছাপানো যায় সেই দায়িত্বটা আপনে নিলে রাজি আছি। অবশ্য গোটা দশেক ছাপলেই চলবে। আপনারা আটজনে আটটা আর আমরা মিয়াবিবি বাকি দুইটা।
হা হা হা, ক্লিয়ার!
আপনার মঙ্গল কামনা করছি।
চলুক।
এই চুপ চুপ! মাইক বাজাইয়া দোয়া করলে দোয়ার আছর কম হয়!
চলুক
উক্কে!
জুলিয়ান ভাই, মাইন্ড খাইয়েন না।
আপনার আপেক্ষা আর সইছিল না।
আমি একটা পর্ব (হা হা হা) লিখে ফেললাম।
http://www.amrabondhu.com/udraji/2447
মন্তব্য করুন