বাই
রমিজ উদ্দিনের বয়স খুব একটা কম হয়নি। গত সাতাশ ডিসেম্বরে আটষট্টিতে পড়েছেন। মাঝখানের কয়েক বছর বলতে গেলে নারী সঙ্গ থেকে বঞ্চিতই ছিলেন প্রায়। কিন্তু আর যেন শরীরের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিলেন না। স্ত্রী সামসুন্নাহারের বয়সও প্রায় একান্ন হতে চললো। এ বয়সে তিনি স্ত্রীর সঙ্গ বলতে নারী সঙ্গের জন্য যেন হন্যে হয়ে উঠলেন। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কয়েকবার মৃদু ঝগড়াও হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি স্ত্রীকে বোঝাতে পারেন না যে, বয়স বেশি হলেও তিনি এখনও ফুরিয়ে যাননি।
বছর পাঁচেক আগে শেষবার যখন স্ত্রী সঙ্গ করেছিলেন, পরদিন থেকে খুবই খারাপ ব্যবহার আরম্ভ করেছিলেন সামসুন্নাহার। সেই থেকে দুজনেই আলাদা বিছানায় শুতে আরম্ভ করেছিলেন। গত বছর একবার দ্বিতীয় বিয়ে করার কথা বলে ছেলেমেয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে বেশ হেনস্থা হতে হয়েছিলো তাকে। সামসুন্নাহার বড় মেয়ে শান্তার সামনেই টিপ্পনী কেটে বলে উঠেছিলেন, ‘আটষট্টিতেই তোর বাবাকে বাহাত্তুরে ধরেছে।‘
মেয়েও যেন মায়ের সহোদরের ভূমিকায় নেমে খানিকটা তরল কণ্ঠে বলেছিলো, আটষট্টি আর বাহাত্তুরে কী আর এমন পার্থক্য!
তারপর থেকেই খানিকটা নীরবতায় কাল কাটাচ্ছিলেন রমিজ উদ্দিন। কিন্তু বিগত সপ্তাহে পরপর দু রাত আকস্মিক ভাবে বীর্য স্খলনের ফলে ঘুমাতে পারেননি। শরীরে কেমন একটি অস্বস্তি চেপে বসেছিলো। মাঝ রাতে শীতল পানিকেও যেন যথেষ্ট শীতল মনে হচ্ছিলো না। ভেতর থেকে একটি দুর্নিবার চাপের ফলেই হয়তো চোখ দুটোতেও কেমন জ্বলুনি ভাব। সেই সঙ্গে মুখের চামড়া দপদপ করছিলো। দুটো দিনই বলতে গেলে নিজের রুমে গুম হয়ে বসেছিলেন।
সামসুন্নাহার যদি পঞ্চাশে ফুরিয়ে না যেতেন, কিংবা রমিজ উদ্দিন যদি পঁয়ত্রিশে অক্ষম হয়ে পড়তেন তাহলে কি সামসুন্নাহার অবশিষ্ট তেইশ বছর তার সঙ্গে সংসার করতেন? নাকি মুখ বুজে মেনে নিতেন স্বামীর অক্ষমতা বা সহ্য করতেন নীরবে নিজের শরীরের কামনা বাসনা? অথচ তারই বড় বোন কামরুন্নাহারের স্বামী বদরুদ্দিনের কিডনি অপারেশনের পর মাত্র সাত মাস অপেক্ষা করেছিলো। নানা রকম চিকিৎসাও করিয়েছে যাতে তার যৌন ক্ষমতা ফিরে আসে। শেষটায় হয়তো হাল ছেড়ে দিয়ে কামরুন বিনা নোটিশেই বিপত্নীক আফতাবের বাড়ি গিয়ে উঠেছিলো। বদরুদ্দিন খারাপ লোক হলে হয়তো কামরুনের গৃহত্যাগ নিয়ে অনেক কেচ্ছা কাহিনীর জন্ম দিতে পারতো। কিন্তু কোনো এক রহস্যময় কারণে ঝিম মেরে গিয়েছিলো বদরুদ্দিন আর তার চেয়ে আরো বেশি নীরবতাকে অবলম্বন করেছিলেন সামসুন্নাহারের পিতা-মাতা। সময়ে সেই ঘটনা সবাই ভুলে গেলেও আজকাল প্রায়ই মনের ভেতর অনেকগুলো জিজ্ঞাসা নিয়ে হাজির হচ্ছে কামরুনের ব্যাপারটা। কামরুনকে কি কেউ বলেনি নির্জীব পুরুষটিকে আঁকড়ে ধরে বাকি জীবন কাটিয়ে দেওয়া ভালো? বা একজন পুরুষ বর্তমান থাকতে ভিন্ন পুরুষের অঙ্কশায়িনী হওয়া ভীমরতি অথবা চারিত্রিক তারল্যের লক্ষণ?
রমিজ উদ্দিন প্রতিদিনই ঘণ্টা দুয়েক কারখানায় বসেন। পর পর দুদিন ঘর থেকে বের হতে না দেখে সামসুন্নাহার খানিকটা শঙ্কা নিয়ে স্বামীর সামনে এসে দাঁড়ালেন। বললেন, তোমার কি শরীর খারাপ? ডাক্তারের কাছে যাচ্ছো না কেন?
রমিজ উদ্দিন সে কথার জবাব না দিয়ে সামসুন্নাহারের হাত টেনে ধরে পাশে বসালেন। তারপর বললেন, মাথা গরম না করে মন দিয়ে আমার দুটো কথা শোনো।
সামসুন্নাহার খানিকটা অবাক হয়েই তাকালেন রমিজ উদ্দিনের মুখের দিকে। বললেন, কি বলবে বলো। আমাকে কামরুনের বাড়িতে যেতে হবে।
আচ্ছা, কামরুন আর আফতাবের কি বিয়ে হয়েছিলো? কামরুন কেন বদরুদ্দিনকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো বলতে পার?
সামসুন্নাহারের হয়তো মনে ছিলো না মাত্র দুদিন আগেই স্বামীকে হেনস্থা করেছেন। বললেন, থাকবে কোন দুঃখে? বদরুদ্দিন আর কোল বালিশে কোনো তফাৎ ছিলো নাকি? আর কামরুনের জীবনটা কি হাঁড়ি-বাসন, ঘর-ফার্নিচার? তারও তো একটা জীবন!
রমিজ উদ্দিন স্মিত মুখে বললেন, কামরুনের ওখানে কেন? পড়াতে যাবে না আজ?
দুদিনের ছুটি নিয়েছি।
তাহলে আর যেয়ে কাজ নেই। অনেকদিন তোমাকে কাছে পাই না। শরীরটা যেন পাথর হয়ে আছে। বলতে বলতে রমিজ উদ্দিন রুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিতেই সামসুন্নাহার কেমন বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন, তোমার মতলবটা কি? দিন দিন কি তুমি বুড়ো হচ্ছো নাকি আমি ছুড়ি হচ্ছি?
শরীরটা নিয়ে আর পারছি না। বড্ড জ্বালাচ্ছে!
এই বয়সে এমন বাই উঠলে ডাক্তারের কাছে যাও। বাই কমানোর ওষুধ নিয়ে এসো। বলেই তিনি উঠে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে রমিজ উদ্দিন তার একটি হাত পুনরায় চেপে ধরলেন। খানিকটা কাতর কণ্ঠে বললেন, তুমি এখনও আমার স্ত্রী। আমার শরীরের চাহিদা মিটাতে তোমাকে ছাড়া আর কাকে বলতে পারি!
সামসুন্নাহার চোখ পাকিয়ে বলে উঠলেন, ওসব পাগলামি মাথা থেকে সরাও!
রমিজ উদ্দিন হেসে বললেন, ডাক্তারের কাছে যেয়ে আমার বাই কমানোর ওষুধ আনার পরামর্শ দিলে, তার চেয়ে বরং চলো, তোমার যাতে শারীরিক সামর্থ্য বাড়ে, আমার এই সঙ্কট কালে আমাকে সুপথে রাখতে, আমার মাথা ঠিক রাখতে যাতে মাঝে মাঝে শারীরিক সঙ্গ দিতে পারো তার ব্যবস্থা করি!
তোমার মাথাটা সত্যিই গেছে, শিকল দিয়ে না বাঁধলে দেখছি আর উপায় নেই! বলে, চট করে দরজাটা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে চিৎকার করতে আরম্ভ করলেন সামসুন্নাহার, ওরে মন্টু, বাবলু, শান্তা, তোদের বাবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! এক্ষুনি তোদের মামা খালুদের আসতে বল!
(সমাপ্ত)
২৪ জুলাই ২০১১।
মহিলার সমস্যা কি? এত পেইন ক্যান?
তেমন দশায় না পড়লে কথায় বোঝানো দুষ্কর!
বস... পোস্টটা ডুয়েল হইছে...
হইলে হইসে! নিয়ম না ভাঙ্গলে নিয়ম যে আছে সেইটা বুঝি ক্যামনে?
রমিজ উদ্দিন আটযট্টি আর মহিলা একান্ন-- পার্থক্য সতের বছর---সমস্যা এখানেই।
ব্যাপার সেইটা না। আটষট্টি সক্ষম আর একান্ন অক্ষম! ঝামেলা এইটা নিয়াই।
"দরজাটা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে চিৎকার করতে আরম্ভ করলেন সামসুন্নাহার, ওরে মন্টু, বাবলু, শান্তা, তোদের বাবার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! এক্ষুনি তোদের মামা খালুদের আসতে বল!"
মহিলা মাত্রই কিছু হোক আর না হোক বাপের বাড়ীর লোকদের ডাকবে।
মহিলারা আর কার কাছে নিরাপদ? কাজেই বাপের বাড়ির মানুষই ভসসা!
ডুয়েল পোস্টিং এর কারনে পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হল। লেখকের নিজের ব্লগে পোস্টটি যথাস্থানেই পাওয়া যাবে।
এইটা কোনো ব্যাপার্না। দুই একবার নিয়ম ভঙ্গ করে নাই এমন মানুষ পাওয়া কঠিন।
আমি আমার হাসবেন্ডের ১৪ বছরের ছোট।আমার সমস্যা এর উল্টো।আরও মারাত্মক,আমি তাকে তার সমস্যার কথা বললে সে মানতে চায়না।বরং রাগ করে।অনেক দিন সহ্য করার পর আমি তাকে ডিভোরসের সিদ্ধান্ত নেই,সে ও মেনে নেয়,কিন্ত পরিবারের সকলের আপত্তি আর সন্তান দের দিক চিন্তা করে আমি আমার এই কস্টের জিবনেই থেকে যাই।আমার খুব ইচ্ছে করে একটু সুখি হতে,ইচ্ছে করে প্রান চঞ্চল একটা সক্ষম যুবকের সাথে জিবনের আনন্দ গুলো ভাগ করে নেই।কিন্ত সবার কথার বাইরে আমি যেতে পারিনি।আমাকে অসুখি রেখে আমার পরিবারের সবাই সুখি থাকুক।
আমি আমার হাসবেন্ডের ১৪ বছরের ছোট।আমার সমস্যা এর উল্টো।আরও মারাত্মক,আমি তাকে তার সমস্যার কথা বললে সে মানতে চায়না।বরং রাগ করে।অনেক দিন সহ্য করার পর আমি তাকে ডিভোরসের সিদ্ধান্ত নেই,সে ও মেনে নেয়,কিন্ত পরিবারের সকলের আপত্তি আর সন্তান দের দিক চিন্তা করে আমি আমার এই কস্টের জিবনেই থেকে যাই।আমার খুব ইচ্ছে করে একটু সুখি হতে,ইচ্ছে করে প্রান চঞ্চল একটা সক্ষম যুবকের সাথে জিবনের আনন্দ গুলো ভাগ করে নেই।কিন্ত সবার কথার বাইরে আমি যেতে পারিনি।আমাকে অসুখি রেখে আমার পরিবারের সবাই সুখি থাকুক।
এই সমস্যাটা আমার বন্ধুদের(নারী/পুরুষ) সংসারে দেখেছি। পুরুষটা মানতে চায় না বা নারীটি মানতে চায় না। তার ওপর সন্তানরা তো জেদ ধরেই যে, বাবা-মার আলাদা হওয়া যাবে না। এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, বিশ্বাসও করি, জীবনটা যার-যার। কিন্তু আমরা অনেক কিছুই মানতে বাধ্য হই। নৈতিকতা তখন জীবনে লঘু হয়ে যায়। যার জন্য দায়ী আমাদের পরিপার্শ্ব।
আমি আপনার জন্য প্রার্থনা করি সবাই যেন আপনার সমস্যাটাকে মানবীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। ভালো থাকুন।
মন্তব্য করুন