ইউজার লগইন

আনন্দ-বেদনার গল্প

প্রায়ই ভাবি কত কি লিখব! কিন্তু লেখা আর হয় না। ধৈর্য্য নিয়ে লিখতে বসা হয় না, অলস সময় পার হয়ে যায় রোজ একইভাবে। একইভাবে চলা জীবনেও কত কি ঘটে! ভালোলাগার, খারাপ লাগার, কষ্টের, আনন্দের। আবার মাঝে মাঝে নানা জটিলতায় / ব্যস্ততায় পড়ে কিভাবে সকাল রাতে গড়িয়ে ভোর হয় নিজেই বুঝি না যেন। অনেকের মাঝেও একা হয়ে যাই, পর হয়ে যাই অকারণেই। কেন জানি না সবকিছুই মানতে পারি না- আর তাই কাছের বন্ধুও পর করে দেয়। বিষন্নতায় আঁকড়ে ধরে আমাকে। কোন কিছুতেই মন বসাতে পারি না।

মাকে নিয়ে ব্যস্ত সময় পার হলো অনেকদিন। যদিও ছোট একটা অপারেশন চোখে তবু মনের জোর রাখেননি বলেই হয়তো বেশ অসুস্থ হলেন। ডাক্তার, হাসপাতাল, বাসা, চিন্তা, অস্থিরতায় ডুবে থাকলাম। চার ঘন্টা পরপর চোখে ওষুধ দেয়া, খাওয়ানো, বারবার ঘুম থেকে উঠে দেখা কি করছেন মা...এসবে আমিই যেন আমার মায়ের মা হয়ে গেলাম। আরো দুবছর আগেই অপারেশন করাতে বলেছিলেন ডাক্তার কিন্তু করাতে রাজি হলেন না। বাড়ী গেলে আর ঢাকায় আসতে চান না। এবার জোর করেই করালাম । একমাস পর বাড়ীতে দিয়ে যখন ঢাকায় ফিরলাম - সেদিন আর ঘুম হলো না সারারাত। বুকের ভেতরটা শূণ্য লাগছিলো, বাসাটা যেন বিরান ভূমি। অসহ্য এক অস্থিরতায় রাত কাটলো। কোনরকম ৩ দিন থাকার পর আরো নানারকম বিষয় নিয়ে মন খারাপ হয়ে মনে হচ্ছিলো ছুটে চলে যাই মায়ের কাছে, দুনিয়া ভেঙ্গে কান্না আসছে শুধু। অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা নিয়ে আল্লাহকে ডেকে রাত পার করে পরদিনই ছুটলাম বাড়ীতে। হরতালের কাঁটায় আটকে গেলাম পুরা সপ্তাহ। এবার আমি ব্যপক খুশী হলাম। এই শহর টানছে না আমাকে। আমার ছোট্ট সবুজ গ্রাম, আমার মা-বাবা ছাড়া যেন থাকতেই পারছি না। মন পুড়ে, মন পড়ে থাকে সবুজ সেই গ্রামে, অবিরাম ঝিঝি পোকা, কোকিল ডাকতে থাকা মন কেমন করা চৈত্রের খা খা দুপুরের সেই ছোট্ট উঠানে। এবার এক ভর দুপুরে গেলাম এক দাদীর (বাবার ফুপু) বাড়ী। বাবা বাড়ীর ন্যাওটা এই দাদী আমাদের বাড়ী নাইওর এলে বাড়ী ফেরার বেলায় কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিত। সবসময় বলতো বাবা বাড়ীতে আম কুড়িয়ে খেতে নাকি সেই ছোটবেলার মেয়ের মতোই লাগে নিজেকে। বয়সের ভারে, অসুস্থতায় টুকটুকে সুন্দর সেই মানুষটা এখন ভাবেন আর বোধ হয় যাওয়া হবে না প্রিয় বাবার বাড়ীতে। তাই আমাদেরই সবাই একের পর এক যেতে থাকে উনাকে দেখতে। আমাদের বাড়ী থেকে অনেকটা দূরে এঁকেবেঁকে যাওয়া মাটির পথের দুপাশে সারি সারি গাছ আর সবুজ ধানের ক্ষেত। রাতে যখন দাদীকে অনেক কাঁদিয়ে, মনকে পাথর বানিয়ে ফিরছিলাম তখন ভরা পূর্ণিমার চাঁদ জোছনা ঢেলে দিয়েছে মাটিতে। গাছের পাতা, সবুজ ধানের চাড়া চাঁদের আলোয় মাখামাখি হয়ে ভীষণ মায়াময় করে তুলেছিলো পৃথিবীটাকে। এমন চাঁদের আলো কতকাল যে দেখিনি জানি না। দারুণ বিষন্ন, মায়াবী জোছনা অকারণেই হয়ত মনে বিষন্নতার এক গাঢ় ছায়া ফেলে গেছে। সেই বিষন্নতা, মায়ার স্পর্শ পেছনে ফেলেই আবার যন্ত্রের শহরে ফিরে এলাম। জীবনটা মায়ার এক বন্ধন, এই বন্ধনটা বেঁধে রাখে বলেই হয়ত বেঁচে থাকায় আনন্দ, বেঁচে থাকার তাগিদ।

আবজাব যাই লিখলাম এই পোষ্টটাতে মাসুম ভাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালাম। দোয়া করি শত বছর বেঁচে থাকেন, সফল, সুখী মানুষ হন। কখনও কোন কঠিন সময়ে মায়াময় ছায়া দেন তার জন্য অসীম কৃতজ্ঞতা আজীবন। Smile

bday_2.jpg

পোস্টটি ২০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


অস্থির একটা সময় চলছে তো চলছেই,
যেদিকেই তাকাই কেবলই বিষণ্ণতা।

বাবা মায়েরা একটু বয়স্ক হয়ে পড়লে
তখনই দিনে দিনে বোঝা যায়
তারা যে এতদিন একটুতেই আমাদের নিয়ে রাজ্যের
টেনশন করতে বসে যেতেন তার কারন কি।

শেষের ছবিটা চমৎকার। সবার দিন থাকুক আনন্দময়।

জ্যোতি's picture


আসলেই অস্থিরতা থেকে বের হতেই পারছি না Sad

আরাফাত শান্ত's picture


লিখলেন অবশেষে। থ্যাঙ্কস আপু। আপনার লেখা সব সময়ই দারুন হয়। এই পোস্টটা তার চেয়েও ভালো কারন মা গ্রামের বাড়ী আর দিন যাপনের বাস্তবতা সব উঠে আসছে!

জ্যোতি's picture


তুমি বললা তখনই লিখে ফেললাম। তোমাকে আর বর্ণকে বলি লিখব কিন্তু লেখা হয় না Sad তোমার মতো লিখতে পারতে চাই। Smile

নরাধম's picture


মাসুম ভাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। বেঁচে থাকুন অনেকদিন, লিখে যান অবিরত।

জয়িতা, চাচীমা'র কি অবস্থা এখন? ভাল অনুভব করছেন?

মায়াফায়া ঝেরে ফেলে দাও! ঝামেলা কম হবে। Smile

জ্যোতি's picture


নারু, আম্মা আসলে চিন্তা করছেন বেশী নিজের অসুস্থতা নিয়ে তাই বোধ হয় আরো অসুস্থ বোধ করেন। দোয়া করো।
ঠিকই বলেছ, মায়া ফায়া ঝামেলা বাধায়। তবে জীবন তো অর্ধেকের বেশী পার করে ফেলেছি ঝামেলা করেই। Smile

টুটুল's picture


মায়া শব্দটা শুনলেই একটা বিজ্ঞাপনের কথা মনে হয় Wink

শুভ জন্মদিন মাসুম ভাই... এরমি থাকেন সব সময় Smile

জ্যোতি's picture


এই মায়া --- খেলে ...... Tongue
বদ পুলাপাইন। কই থেকে কই চলে যায় !!

শওকত মাসুম's picture


হুমায়ূন আহমেদের গল্পে মায়াবতীর মেয়েদের কথা লেখা থাকে। তোমাকে দেখলে মনে হয় তিনি তোমার মতো মেয়েদের কথাই আসলে লিখতেন।

আবারও বলি, এতো ভাল লেখো, তাও কেন এতো কম লেখো?

অনেক অনেক ধন্যবাদ। জীবনে সুখী হও। এইটা তোমার প্রাপ্য।

১০

জ্যোতি's picture


একটা গান আছে না! সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে! Smile
মাসুম ভাই, ছোটবেলা থেকে এত হু. আহমেদের বই পড়েছি যে সেগুলোর রেশ থেকে গেছে মনে হয় Smile আপনাকে এত সুন্দর কমেন্টের জন্য ধইন্যা । Smile

১১

অদিতি's picture


কি যে সুন্দর একটা লেখা। ঠিক তোমারই মত। আর মাসুম ভাইয়ের জন্মদিন নাকি আজকে? তাঁকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। উনি জাস্ট একটা লেখার জন্য আমার বাসার কাছের মানুষ হয়ে গেছেন।

১২

জ্যোতি's picture


তুমি ছাড়া কেউ বলে না গো! তোমারে ভালুবাসা।
মাসুম ভাইয়ের জন্মদিন ছিলো ২৭ মার্চ। মাইকে শুভেচ্ছা জানানো হয়নি তাই দেরি করে জানালাম।
মাসুম ভাইকে অনুরোধ করব যেন কাছের মানুষদের কাছ থেকে আরো বেশী জেনে আরো অনেক অজানা কথায় লেখায় আনেন।

১৩

তানবীরা's picture


হুমায়ূন আহমেদের গল্পে মায়াবতীর মেয়েদের কথা লেখা থাকে। তোমাকে দেখলে মনে হয় তিনি তোমার মতো মেয়েদের কথাই আসলে লিখতেন।

আবারও বলি, এতো ভাল লেখো, তাও কেন এতো কম লেখো?

অনেক অনেক ধন্যবাদ। জীবনে সুখী হও। এইটা তোমার প্রাপ্য।

১৪

পজিটিভ's picture


চমৎকার অনুভুতি। মা এমনই এক জিনিষ/সম্পদ/অংগ/ভালবাসার নাম, যা সব সময় একই থাকে! নাহ, ভুল বললাম, এর মহিমা যতই দিন যায়, ততই বাড়তে থাকে!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

জ্যোতি's picture

নিজের সম্পর্কে

.