আমার মায়ের কোন ফেসবুক আইডি ছিলো না
মানুষ উত্তরাধিকার সুত্রে অনেক কিছু পায় মায়ের, কিছু শাড়ি গহনা ছাড়াও আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলাম আমার মায়ের বিছানা। মা চলে যাওয়ার পর আব্বু কোনদিন এই রুমে একা থাকেনি। তাই আমার রুম শিফট হয়ে গেছে। আম্মুর এই বিছনায় আগে আমি শুতে পারতাম না, আম্মু চিৎকার করত কারন বিছানার চাদর কুচকে ফেলার এক বড় বদ অভ্যাস ছিলো আমার। তাই একই রুমে আমার জন্য একটা সিংগেল খাট বিছানো ছিলো। টিভি যেহেতু এই রুমে তাই আরাম করে টিভি দেখার এই ব্যবস্থা। যেদিন আম্মুর ব্রেন হ্যামারেজ হলো ঠিক সেদিনও আমি পাশের সেই বিছানাতে শুয়ে ছিলাম, আম্মু ছিলো পাশের বাথরুমে। যখন টের পেয়ে ঘরে আনলাম, এবং শুইয়ে দিলাম আমার বিছানাটাতে, তার কিছুক্ষন পর সে যখন অবচেতনে বিছানাটা নষ্ট করে ফেলল, বিশ্বাস করুন আমি কিন্তু একটুও চিৎকার করি নি। তাকে আবার তার নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়েছি। সেটাও কিছুক্ষন পর নষ্ট হয়ে গেছে। সেই যে তাকে তুলে বাড়ীর বাইরে নিয়ে গেছি, আর কোনদিন স্বশরিরে ফেরেনি সেই বিছানায়। আম্মু শুনতে পাও ?? আমি এখন আর বিছানার চাদর কুচকাই না। অনেক আমগাছ আম সহ ছবি দেই আজকাল, জানিও না কোন জাতের আম এগুলো। কারন এই গাছগুলো তার লাগানো। ২০০৫ এর আমার জন্মদিনের দিন আম্মু সকালটা আমার কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিলো। আমাকে নিয়ে এসেছিলো এই বাড়িতে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলেছিলো, এই বাড়িটা তোর। ঠিকই বাড়ীর দেয়ালে দেখলাম সবুজ পাতার কারুকাজের ভেতরে গোলাপী অক্ষরে লেখা “রত্না”। রংদুটো তার খুব প্রিয় ছিলো। বাড়ির নাম ‘মুর্শিদা মন্জিল’ না ”লায়লা’স” হোম হবে এই জল্পনা কল্পনা দেখে এসেছি সেই ছোটবেলা থেকে। কিন্তু শেষমেষ রত্না নামেই আটকে গেছে। আজকে যখন সবাই মা দিবস মা দিবস বলে উচ্ছাস প্রকাশ করছে, ঠিক তখনই আমার মনে হয়, কেন জীবনের অনেকগুলো দিন মায়ের সাথে ঝগড়া করে কাটিয়েছি। কেন মনে হতো, আমার মা খারাপ, আমাকে বকা দেয়, আমাকে মারে। পৃথিবীর আর কোন মা এমন করেনা। আজ যখন তার ছোট্ট শরীরটাকে জড়িয়ে ধরে জীবনের কোন ব্রেকআপে কাঁদতে পারি না, ঠিক তখনই মনে হয়, বড় ভুল করেছি সারা জীবন। আজকাল আম্মুকে মিথ্যা বলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া হয় না। বলি না, আমি অনেক দূরে আছি, আসতে দেরি হবে। হুট হাট করে কেউ ফোন করে বলে না অফিসে, কি করিস অফিসে ? সূরেলা কন্ঠে কেউ বলে না হ্যালো। আমার মা এর ফোনের গলা খুব সুন্দর ছিলো, আমিই প্রেমে পড়ে যেতাম। মাঝে মাঝে পথভ্রষ্ট ছেলেরা ফোন করে টাংকি মারতে চাইত। আম্মু তখন বলতো, বাবা তোমার বয়সের আমার একটা মেয়ে আছে। তুমি বরং তার সাথেই কথা বল। আম্মু হাসতো আর আমাকে বলত। আমি বলতাম, ভালো তো, পরকিয়া কর। দুর দুর করে তাড়িয়ে দিত আমাকে। এখন আর কেউ বলে না, এইবার ভ্যালেন্টাইন ডে তে তুই বাইরে যাবি না। মানুষের মেয়েরা ঘরের ভেতরে থেকে ভালো ছেলের সাথে পালিয়ে যায়, আর তুই সারাদিন বাইরে থেকেও একটা প্রেম করতে পারিস না। কিসের এত বন্ধু বান্ধব, প্রেম কর – বিয়ে কর। আজ যখন সবাই মা দিবসে সুসান জি কোমেন এর সাপোর্টে নিউজফিড ভর্তি প্রোফাইল পিকচার আপলোড করে তখন আমি সেগুলোতে লাইক দেই আর ভাবি, ইশ্.. আম্মু থাকলে নিশ্চই তার একটা আইডি থাকতো। আর এত ভালো ভালো মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে নিশ্চই তাকে সহ সেলফি দিতে পারতাম।
লেখাটা ভাল লেগেছে। হৃদয়ছোঁয়া।
অ.ট.: আমার আম্মুর একটা ফেসবুক প্রোফাইল আছে এবং বিশ্বাস করেন, মা'দের ফেসবুক না থাকাটা একটা আশীর্বাদ
হা হা হা.. হয়তো.. এই জন্য অবশ্য কাস্টম বিষয়টি আছে ফেসবুকে...
মা জিনিসটা যে কি তা বুঝানোর সাধ্য নাই। আপনার আকুতি পুরোটা বুঝতে না পারলেও মায়ের থেকে দূরে থাকার সুবাদে কিছুটা বুঝতে পারছি। আপনার মা ভালো থাকুক।।
ধন্যবাদ.. আপনার মা যেন অবশ্যই ভালো থাকেন.. মায়েদের খারাপ থাকতে নেই..
চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। কিছু লিখতে পারছি না।।
মন্তব্য করুন