কথার মাঝের কথা
আজকাল আমার কথা কেউই বুঝতে পারছে না। আমি বেশি দুর্ভেদ্য হয়ে গেছি , না বাকি সবাই তা বোঝা দুস্কর। ধরুন আমি মজা করে কোন কথা বললাম, কিন্তু অপরপক্ষ সেটাকে ইনসাল্ট হিসেবে ধরে নিলো। আবার আমি কথার পিঠে উত্তর দেয়ার জন্য কোন সহজ কথা বললাম, সেটার মিনিং ও উল্টা করে ফেলছে লোকজন। এবং গায়ে টেনে নিচ্ছে। বিষয়টা শুধু কেবল একজন মানুষ কেন্দ্রিক ঘটছে তা কিন্তু না। অলমোস্ট সবার সাথেই কম বেশি ঘটে যাচ্ছে। পর পর ঘটনায় এটাই প্রমান হয়, আমার কথাই হয় না। কিন্তু এই কথাই ছিল এক জীবনে আমার সব সম্বল। আমার কথাই আমাকে সবার থেকে আলাদা করতো ছোট বেলা থেকেই। সে অনুযায়ী প্রায়োরিটি ও পেয়েছি সব সময়। সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে আমার কথার ধার কমেছে, একটা সময় এসেছিল, 2005 সাল, নিজেকে বড্ড একা লাগতে লাগলো। কারণ সবার উচ্ছলতা আমাকে আরও নিজের দিকে ঢুকিয়ে নিয়ে গেল। ক্রমশই একা হতে লাগলাম। প্রায় তিন বছরের ও বেশি সময় লেগেছিল, সেই অবস্থা থেকে ফিরতে। তারপর আস্তে আস্তে কর্ম ব্যাস্ততায় নিজের কথা হয় কিনা সেটা ভাবার অবকাশ হয়নি আর। তবে একটু একটু করে জীবনের চাৰ্ম হারাচ্ছিলাম এটা টের পেয়েছি বার বার। নিজের স্ট্রং পারসোনালিটি র বর্ম টা পরেই ছিলাম। ( খুব কাছ থেকে কেউ না দেখলে, সবাই ভেবেই নেয় আমি বেশ টাফ মানুষ, শুধু কাছের জানা মানুষগুলো তার উল্টাটা জানে। ) আজকাল সেই পারসোনালিটি ধরে রাখার বিষয়টাও হারিয়ে গেছে। কিছু কিছু মানুষের কাছে বড্ড বেশি নিজেকে খেলো করে দেই। মনে মনে ভাবি, কি আর আছে জীবনে আমার পাওয়ার ? সময় তো শেষ .. নিজেকে অবাঞ্চিত লাগা বিষয়টা কমে গিয়েছিল অনেকদিন। আবার নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে অনুভূতি টা। মনে মনে একটা শক্তি অর্জনের সময় চলে এসেছে। জীবনের একমাত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময় এগিয়ে এসেছে। যখন পুরো পৃথিবীর কাছে নিজের প্রয়োজন হারিয়ে যায় , তখন আস্তে আস্তে নিজের ভেতর ঢুকে যেতে হয়। তারপর এক সময় শুকিয়ে যেতে যেতে বাতাসে মিলিয়ে যেতে হয়। আপনাকে সান্তনা দেয়ার জন্য অনেকেই বলবে, আমরা আছি না ?? কিন্তু এত বছরের জীবনের সত্য সেটাই বলে, কেউ কথা রাখে না, সময়ের প্রয়োজনে সেই প্রয়োজনটা হারিয়ে যায়। তারপর এক সময় ভুলে যায়, কোন এক বিকেলে বা হঠাৎ গভীর রাতে স্মৃতি হিসেবে হানা দেয়। আর আমার মত ভুলে যাওয়া মানুষ হলে সেই ক্ষুদ্র স্মৃতি টাও থাকবে না। কালের গভীরে হারিয়ে যেতে হবে, যেমনভাবে আর সবাইকে যেতে হয়।
মন্তব্য করুন