ইউজার লগইন

কৌশিক আহমেদ'এর ব্লগ

নো এ্যাডভেঞ্চার

বিশতলার ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে
কোনো এক চলন্ত বাসে নিরাপদে ল্যান্ড করে
পদ্মানদীর পাড়ে যেতে চাই

যদি বাসটা ওদিকে না যায় তবে ড্রাইভারকে গুলি মেরে
জানালা দিয়ে ফেলে নিজেই চালিয়ে যাবো পদ্মায়
আর যদি পিস্তলই না থাকে, প্রথমে এক পুলিশকে করবো ছিনতাই
আর বাসের যাত্রীরা না যেতে চাইলে ছেড়ে দেবো বিনাশর্তে

একমাত্র তুমি যদি যেতে চাও তবে এসব এ্যাডভেঞ্চারের প্রয়োজন নেই

পত্রপাঠ মাত্র উত্তর দিও

তুমি নাই বলে অক্ষর থাকে বেড়ে ওঠে গায়
আপন হতে পকেট ভরা খসড়া সময় নামে
অকপটে খেয়ে নেয় সবুজ মাঠময়
অসংখ্য নিরর্থ আচড় ভরা নকশায়

যা কিছু লেখা হয় তার ধারা বর্ণনায় সকল পাঠক
যা কিছু পঠিত হয় তার অভিসারে জগতের সকল দর্শক
যা কিছু দেখা হয় তার জন্য আবার অক্ষরেরা নামে
বেড়ে ওঠে গায়ে গায়!

কেবল একটা দেয়াল মাঝখানে নেমেছে চন্দ্রযান থেকে
মাত্র একটা ঠুনকো বিরতি
তারপর থেকে চলমান সকল বিকেল থমকে থাকে পায়ে
অক্ষরেরা মাড়িয়ে যায় পথের টাঙানো ম্যাপ

শরীরে নতুন অফিস খুলেছি

অন্যান্য অঙ্গ প্রতঙ্গের সাথে যোগাযোগের জন্য
শরীরে নতুন অফিস খুলেছি
থাকছে একটা বার্তা বিভাগ আর জরুরী অবতরণ কেন্দ্র
প্রতিদিনের সকল স্পর্শ গুলোকে চুলচেরা বিচারে
রেখে দিচ্ছি নির্দিষ্ট দেরাজে

ফোনলাইন লাগেনি এখনও
ইন্টারনেটও আসবে শীঘ্রই - একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ স্যাটেলাইট
আর ক'জন নতুন কর্মীও যোগ দেবে সহসা
যাদের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং নতুন গ্রাহকযন্ত্র
শব্দ তরঙ্গ থেকে অচিরেই পৃথক করে দেবে
প্রয়োজনীয় ভালোবাসাবাসি

বিভিন্ন মৃত শরীরে শাখা খুলবো বছর ঘুরলেই
একদম টাটকা বাণিজ্য - কবরে কবরে
চারদিকের শাখা প্রশাখায় পৌঁছে যাবে
আকাঙ্খিত সেবা - কেবল চটকদার বিজ্ঞাপনের জন্য
একজন বিনিয়োগ পার্টনার আবশ্যক

এখনই বলতে পারছি না ভালবাসিই তোমাকে

মুখের ভেতরে পাথর টুকরো - বলে ফেললেও উল্টো শুনবে তুমি
যখন সবার জন্য একটা করে নক্ষত্র কেনা হবে
তার ভূপৃষ্ঠে মুখের টুকরো ফেলে
বলবো ভালবাসি

আপনাদের তো মনে আছে যখন চিরকুটের ভেতর থেকে
এক গুচ্ছ স্বপ্ন বের হলো? মনে নেই!
তবে শুনুন গোড়া থেকে। আমাদের স্বপ্নেরা জন্মে
দমকা হাওয়ায় এক আড়ষ্ট জানলা খুলে
যার ভেতরে বৈমানিক চলচ্চিত্র পৃষ্ঠা উল্টে শোনায়
কোনো এক গ্রহের নাগরিক ইতিহাস
সেখানে দুজন ছিলো - কেবল দুটো স্তম্ভে
সটান স্বল্প দূরত্বে
তাদের পায়ের নিচে আবদ্ধ করোটি - শরীর থেকে খসে
স্বপ্নসৌধ গড়ে
আর চারদিকে ঐ নিথর শূন্যতার মাঝেও
পরিস্কার হুমকি দিয়ে যায় ধাবমান হৃদস্পন্দন
যেনো সত্যিই এগুলো স্বপ্ন নয় শেষে

এই সভ্যতায় আমাদের বিকার নেই।
প্রকার আছে বহু।
বহু সংখ্যক মানুষের বিকার থেকে
এখন বলা সম্ভব নয় ভালোবাসি

দূরত্ব এক বিষণ্ন মাইল

যাদের সামনে দূর্ঘটনা ঘটলো
তাদের মধ্যে একজন নিতান্তই পথচারী
যথারীতি তার ন্যাশনাল আইডি আছে, চাকুরী আছে, ভাড়া বাসা আছে
অফিসে যাবার বাস নম্বর জানা, রোজনামচায় একঘেয়েমী আছে
আর আছে সকল মধুর কষ্টের মত উচ্চাশার দুর্গতি

তাদের মাঝে একজন দূরবর্তী দর্শকও আছে
যিনি নিকটস্থ দর্শকদের দর্শক হয়ে দেখলেন
এক দঙ্গল মানুষের ভীত ভীত মুখ, দুর্ঘটনার চারদিকে ঘিরে
একটা সতর্ক সংবাদ পেচিয়ে পেচিয়ে উড়ে গেলো আকাশবিমানে
আর তিনি একটা বানিয়ে নিলেন দু:সংবাদ আহত অথবা নিহত

নিকটস্থদের মধ্যে প্রথম দূর্ঘটনা দেখার বিরল সৌভাগ্য অর্জন করলেন একজন
সারাজীবন ভর এটাই তার ভয়াল স্মৃতি,
আরো আছে একজন দুর্বল হৃদযন্ত্রের মালিক
তিনি বুক চেপে আশু সংকেত পাঠালেন মগজে
আর পকেট খুঁজে একটা ট্যাবলেট গুজলেন জিভের তলে
আরো আছে ট্রাফিক জমে গেলো বলে মেজাজ বিগড়ানো পাবলিক
অফিসে লেট হয়ে যাদের কপালে লাল কালির সিল পড়ে

কুকুরের জন্য আবাসিক হাসপাতালের দাবীতে নাগরিক আন্দোলন

এখন নিশ্চয়ই বলবেন আপনার সময় দুর্মূল্য
যখন মাথার উপরে সর্পিল ফেস্টুন
ছেড়ে যায় ধোয়ার বিচালি
তার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সরে আছেন নিরাপদে

যখন বলবেন মাইকের চিৎকার থেকে আপনার জানালা সাটানো
পায়ের নখর থেকে দূরবর্তী সারমেয়
আর যখন যা ইচ্ছে ধরার জন্য আপনার হাতেই আছে বিশাল থাবা
যেকোনো মৈথুনের পরেই আপনি সিজদায় নত হন

যখন দেখবেন বিকল্প বারান্দাগুলোতে অজস্র মুকুর
সব আপনার প্রিয় মানুষের নামে ফুটেছে সকালে
ওয়েব জুরে বন্দনা-সংগীত আর ভেঙে যাওয়া লিংকেও শোনা যায়
কোনো বাঞ্ছিত নাগরিকের কণ্ঠস্বর

এমন নিরুদ্বিগ্ন আপনার জগৎ সংসার যে পড়শিদের সকল কুকুরের জন্য
গড়ে তুলেছেন আবাসিক হাসপাতাল
আর এফএম সিগন্যালে মেঠো পথ সন্ধানের জন্য নাগরিক আন্দোলন
উঠেছে বিশালকায় বিলবোর্ডে ডিজিটাল

আপনার জন্য দৃষ্টি পাজল - দেখুন তো এই সংবাদে কতটা নিরেট বিনিয়োগ

রিক্যাপচারিং পাস্ট-৮

সমুদ্র খুড়ে কি মেলে বলা মুশকিল, তবে কখনও ক্যারিবিয়ান উপকূলে গেলে দেখার চেষ্টা করতে পারি। নদী খুড়ে থরেবিথরে সাজানো লৌকিক প্রকৃতি মেলে। প্রকৃতি আবার লৌকিক কিভাবে হয় সেটা আমি বুঝতে পারি নদী খুড়তে বসলেই। এ এমন এক প্রকৃতি, নদী পাড়ে, যার সাথে মেশানো গ্রাম, মানুষ - সব যেন বৃক্ষের মত, আকাশের মত, স্রোতের মত একই, শতবর্ষ ধরে। এই লোকাচার প্রকৃতিমনস্ক, এই প্রকৃতি লোকালয়েও নৈসর্গিক। আবার যখন আমি সুন্দরবন যাবো, বিগত কয়েক বৎসর যাবত যার ভাব বুদবুদ দেখা মেলে, তার কোনো ব্যাপ্তির নিদর্শন নাই, আমি অবশ্য অবশ্য নদী খুড়ে স্বপ্নিল এক বৈকালিক আসর তুলে আনবো।

যন্ত্রের ভাষা পুরোদস্তুর আয়ত্তের পরেই

যন্ত্রের ভাষা রপ্ত করার পরেই ছিলো সস্নেহে প্রশ্ন
আন্তরিকতায়, কেমন আছো জানপাখি?
এই শীতে একটু উষ্ণতায় আরো নৈকট্যের ডেরায়
রক্ষাকবচের মত মানবীয় হয়ে উঠি!

যন্ত্রের ভাষা পুরোদস্তুর আয়ত্তের পরেই
কেবল মনুষ্যত্ব জাগ্রত দেখি
আমাদের প্রজননে ফুলফলে পরিপুষ্ট
শিশুবৃক্ষগুলোর পঠন-পাঠন দ্রুত হলেই সুখি

... যন্ত্র হতে হতে এখন অযান্ত্রিক তন্ত্রমন্ত্র ভালো বুঝি
এই যে দেখো সকল প্রহসনের ম্যারাথন থেকে
কিভাবে দৃপ্ত পদক্ষেপে তোমাকেই আলাদা দেখি
আবেগে, কম্পনে, প্রাণে, প্রমাণে নিখুঁত মানবী

এখন তো আগের মতই চন্দ্রগ্রহণ লাগে

অসীমায়িত কয়েকটা সময়খন্ডের ভেতর
তোমাকে ঢুকিয়ে টিপে দেবো সুইচ
দেখবো দশ বছর আগের লাল টিপ
আর জর্জেট শাড়িতে ভেজা বেহায়া নাগরিক

তোমার কি কমে গেছে ঐসব
যারজন্য লিফটে জড়োয়া ঘন্টা
আর বাসের সিটে কনুইয়ের গোছায়
পাশাপাশি বসা সামাজিক চুনকালি!

এখন তো আগের মতই চন্দ্রগ্রহণ লাগে
অজুহাত থাকে যখন তখন বানিয়ে নেবার
আগে পড়ে গেলে আসমান থেকে সূর্য পড়ে না ছিটকে
অথবা তোমার শরীর ঘেমে অল্পতেই হয় না বর্ষা!

বাসা বদল

যখন সব কিছু - সব কিছু মানে সবই
পড়ে থাকে টুলে আর দূরে থাকে বসে
লম্বা ছায়া
দীর্ঘ হাঁটা ক্লান্তি শুয়ে পড়ে কলিং বেলে
সিড়ির ভেতরে শব্দ আগন্তুক
... খুলতে যতটা দেরী
তার চেয়েও কাছাকাছি
নিয়ে ফেলে অবসরের বাসাবাড়ি

তেমন কোনো নিকটস্থ রাতে
উদার অন্ধাকার পকেটে পুরে
খটমট উঠে যাবে জানালায়
বারান্দায় ডাকবে কেউ
পাশের বাড়ির পর্দায়
দোল খাবে মলিন আয়না
তেমন একটা বদল করা বাসায়
কাটবে অনিষ্ট প্রহর!

কন্যার মুখস্ক্রিন

সম্মুখের সকল স্ক্রিনের সারি সরিয়ে তাকে দেখতে হবে
অথবা তার ভেতর থেকে স্ক্রিন
টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল আর চশমার
কাঁচের ভেতর দিয়ে চলমান প্রতিটা ঘন্টার ভেতরে
তাঁকেই খুঁজি বলে
... এসে দাড়ায় স্ক্রিন প্রতিরোধক হয়ে
উপরে নিচে বাইরে তাকিয়ে
অপসারণ করে দেয় আর সকল মুখ

তাকে গভীরভাবে দেখতে বলে
ল্যাপটপ সরিয়ে সম্মুখের টেবিলে বসে আমার কন্যা
পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখি তার মুখ অথবা
অবিচ্ছেদ্য আরো এক নতুন স্ক্রিন

শরীরের ভেতরে রাত ঢুকে যায়

শরীরের ভেতরে রাত ঢুকে যাচ্ছে
বেছে বেছে দেয়ালের ফোকড়ে সকল হাওয়া
সামনে পেছনে হাজার ঘন্টার এক একটা প্রহর
সামলে নিচ্ছে উদোম প্রশ্নছাড়া

... এই সব দৃশ্যমান পথ আর অদৃশ্য সিগন্যাল ঘুরে
যতটা প্রত্যন্ত হৃদয়পুরে বাস্তুহারা স্বপ্ন জাগে
তার প্রতিবিম্ব ইট-প্রকোষ্ঠ নয়নাভিরাম হতে থাকলে
সোজা নিজের ভেতরে ঢুকে যায় সংকেত

জানিয়ে দিতে প্রকারন্তরে তোমায় নিবেদন
শরীরের ভেতরে রাত ঢুকে যায় প্রিয়মন

আমার কোনো মৃত্যু দিবস নাই

সেদিনই মরতে পারতাম
কিন্তু ঠিক আগে মারা গেলেন তারেক মাসুদ
কেবল তার জন্য নির্দিষ্ট রাখতে
পুরো দিবসই এড়িয়ে গেলাম

... এরপরে যেকোন একদিন বেঁছে নিতেই
স্টিভ গেলেন চলে আপেলের আসল দেশে
পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য
সেদিনও আমার মৃত্যু পেছালো

এরপরে যেদিনই মরতে যাই
কোন না কোনো মৃত্যু পূর্ণ রাখে দিনগুলি
জগজিৎ সিং পুরো মাসটাই বন্ধ করে দিলে
আমার জন্য থাকে না মৃত্যুদিবস বাকি

তোমার বন্ধু অনেক ধৈর্য্য, আমারও

রুহানি স্লেটে এবার মসনদের আলেখ্য
যতদূর বানানো যায় স্বপ্ন বুনোট - একদম টাটকা মলাটে

তার বাত্সল্যে পিঁপড়ামুখী মিছিল, দাবীদাওয়া
স্বপ্নভূক আলস্য কড়া নাড়ে
মহামান্য সম্রাট হিসাবে
সংসদের এক অভিজাত পিঁপড়া নির্বাচিত হলেন

অধিষ্ঠান জৌলুস শেষে আমাদের ফিরে যেতে হবে
অন্যের বাড়ি, দীর্ঘ মিলন-সংঘ থেকে
অনির্বাচিত সম্পর্কের জাদুঘরে

সকলে উপুড় হবেন দয়া করেন
সকলে সরল অনুগ্রহে
এই উপবৃত্ত কেবল হৃদয় সাম্রাজ্যে
যখন পেরেছেন এতকাল, তবে পারুন বাকিটা
অথবা জীবন বদলে নেয়ার সংবিধানে
নাজিল হচ্ছে ষষ্ঠদশ সংশোধনী

আমার বন্ধুর কোনো ঠিকানা নাই

সহজ করে বললে তিনি ঠিকানা তৈরীতে ভয় পান
ছেড়ে যাওয়ার ভয়ে অদ্যাপি কোনো ঋণ রাখেননি
সম্পদের উপরে ভাসমান কোনো জাহাজ হয়ে ওঠেননি
অথচ আল্লাহ যাকে দেয় তাকে নাকি উজার করে
সকল ভাড়ার ভরে দিয়ে থাকে জ্ঞানে বিজ্ঞানে কাব্যে
আমার বন্ধু তেমন ভাগ্যবর্তিকা

বলতে গেলে মা লক্ষী এসে বসে থাকেন পাশে
যদি সদয় দৃষ্টি দিয়ে আমার বন্ধু কিছু গ্রহণ করে
সরস্বতী শেখতে আসেন রোজ বিকেলে
এমনকি রাধার নতুন কিয়ার কেয়ামত
হুলস্থুল লাগিয়ে দিয়েছে কৃষ্ণালোকে
বৃন্দাবন থেকে ধেয়ে আসছে শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীরা
মথুরার দেবালোকে বুঝি লাগলো আগুণ
এমন আমার বন্ধুর গরিমা

আমার বন্ধু বলেন 'মরে যেতে পাই না ভয়
যখন তখন যেখানে সেখানে কিছু বলতেও পাই না ভয়
সোজা সাপ্টে বলে দেবো, জ্বালিয়ে দেবো'
আমার বন্ধুর ঠিকানা বিহীন আস্ফালনে
সকল ঠিকানা-দুরস্ত এনভেলাপ পথ ভুলে যায়
যেখানে সেখানে পড়ে থাকে গন্তব্যহীন