'এক টিকেটে দুই ছবি' অথবা একটি চায়নিজ সিনেমার রিভিউ
এইট নাইন পার করে টেনে উঠার সময়টা ছিল এক সন্ধিকাল। প্যান্টের পকেটে তখন লজেন্সের বদলে গোটা মানিব্যাগ চলে এসেছে, কারো পকেটে প্লাস্টিকের ডলারওয়ালা চাবির রিং, কারো কারো পকেটে টিপ দেয়া চাকু। খাতার ভিতর ব্রুসলি, রেম্বো, আমির খানদের ভিউকার্ড । ওয়াসিম অঞ্জু জসিম শাবানা তেমন আর টানেনা । গ্রামে কোথাও ভিসিআর ভিসিপি চললে সবার আগে উপস্থিত হই । ভিসিআরে কেবল হিন্দি ছবিই চলত । একদিন আমরা খবর পাই শ্রীমঙ্গলের বিডিআর হলে 'এক টিকেট দুই ছবি' চলে; সেখানে নাকি ইংলিশ ছবি দেখান হয়।
এক শুক্রবারে আমি আর বাল্যবন্ধু অঞ্জন বিডিআর হলের উদ্দেশ্যে বাসে চড়ি । সে এক সাঙ্ঘাতিক মিশন । বিডিআর হলের গেট পাওয়ার কিছু আগে বাস থেকে নামতে হয় তারপর কিছুদুর হেঁটে যাওয়া । প্রথম শো ১২টায় । আমরা বাস থেকে নেমেই দ্রুত হাঁটতে থাকি । হলের সামনে বড় দু্ইটা পোস্টার জোড়া লাগানো, তার উপরে স্টিকার সাঁটা 'এক টিকেটে দুই ছবি' । ১ম পোস্টারে নানচাক্কু হাতে চাইনিজ নায়ক দাঁড়ায়া আছে, তার পিছে পুতুলের মতো সুন্দর চাইনিজ নায়িকা । ২য় পোস্টারের কথা না বলি । পোস্টার বেশিক্ষন দেখার টাইম নাই কারণ 'বই' শুরু হয়ে গেছে । কাউন্টার থেকে রিয়ার স্টলের দুইটা টিকেট কিনে আমরা হলে ঢুকে পড়ি ।
পয়লা সিনেমাটাই চায়নিজ । নাম সঠিক মনে নাই, 'দ্য চায়নিজ কোবরা' বা এইরকম কিছু হবে । দুর্ধর্ষ ফাইটিংপূর্ণ ছবি । কিছু লোক বোটে করে একটা জায়গায় এসে মাল আনলোড করতেছে, আরেকদল এসে সেই মালগুলি নিয়ে যাচ্ছে । তারপর দুই দলের লিডারের মিটিং, খাওয়া দাওয়া ও কিছুক্ষণ হাসি মস্কারি চলল। তারপর একটা হোটেলের টেবিলে বসে দুইজন লোক কথা বলতে থাকল ।
আমি অঞ্জনরে গুতা মেরে জিগাইলাম, দোস্তো নায়ক কই। অঞ্জন কিছু বলার আগেই নায়ক এসে টেবিলে বসা দুইজনরে ইয়া ইয়া ঢিসা ঢিসা করে মেরে ভর্তা বানিয়ে ফেলল । বুঝলাম চাইনিজ নায়ক কথা বলে কম, কাজ বেশি । সে বাইর হওয়ামাত্র মাইর শুরু হয়, মারদাঙ্গা ছাড়া এই নায়কের আর কোন কাম দেখলাম না।
এইভাবে কয়েক রাউন্ড খুচরা মাইর চলার পর শুরু হইল পাইকারি মাইর । কে কারে মারে ঠিক নাই । পর্দা জুড়ে খালি ইয়া ইয়া ঢিসা ঢিসা ঠাস ঠুস ধ্রাম ধ্রিম আওয়াজ । একের পর এক লাশ পড়তেছে তো পড়তেছে ।
সবাই মারা যাওয়ার পর বেঁচে থাকল কেবল নায়ক আর ভিলেন; শেষ দৃশ্যে তারা মুখামুখি। ভিলেন পিস্তল বের করে গুলি করে কিন্তু গুলি লাগে না । গুলি শেষ হলে শরীরের নানান জায়গা থেকে চাকু বের করে ছুড়ে মারতে থাকে । নায়ক নানচাক্কু বের করে দক্ষতার সাথে সেগুলি আটকায় ফেলে। এরপর ভিলেন তার জামা খুলে ফেলে হাত ঘুরিয়ে অঙ্গিভঙ্গি করে । তাদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ ফাইট চলে । কয়টা দেয়াল ভাঙে, কতগুলি কাঁচ ভাঙে, কয়শ মণ সবজি আর ফলমুল নষ্ট হয় তার কোন হিসাব নাই । একসময় ভিলেন মারা যায় কিন্তু মরে না, একচোখ মেলে আবার উঠে দাঁড়ায় । এইভাবে অন্তত পাঁচবার মরার পর সে মারা যায় । আমি সভয়ে অঞ্জনরে জিগাই, দোস্তো নায়িকা কই, নায়িকারে তো দেখলাম না । অঞ্জন ঝাড়ি মেরে বলে, মানুষের জান বাঁচেনা আবার নায়িকা খুঁজে । ভেবে দেখলাম অঞ্জনের কথাই ঠিক । যেই মারামারিটা হয়ে গেল তাতে নায়িকার বেঁচে থাকার কথা না !
(২য় পর্বে সমাপ্য)
দারুণ
পরের কিস্তির অপেক্ষায়।
আপনাকে অনেকদিন পর দেখে ভালো লাগলো খুব!
আপনাকে পেয়ে্ও ভাল লাগছে । নিয়মিত হব ভাবতেছি ।
অনেক দিন পর ব্লগে। যদিও ফেবুতে নিয়মিত পাই। সামুর দিনগুলির কথা মনে পড়ে। নিয়মিত পেলে আমরা নিশ্চই খুশী হবো
মন্তব্য করুন