বিকালের নাস্তা: সিজলিং লাচ্ছা
সন্ধ্যা বেলা কী খাই ? কী খাই? দেখলাম আধ প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই আছে। তাহলে এটাই রান্না করা যায়। আপনি ভাবছেন যে, এইটা যদি রেসিপি পোস্ট হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আমি লাচ্ছা সেমাই রান্নার গৎবাঁধা ফর্মুলা দিতে যাচ্ছি । আরে না! মানে রেসিপিই দিচ্ছি। তবে ওই যে সব ঈদে কারো বাড়ি গেলেই এক বাটি ঘন দুধে থল থলে লাচছা সেমাই অথবা পানি পানি দুধে ভাসা ভাসা লাচ্ছা সেমাই রেসিপি না। এইটা বেশ সোজা রেসিপি। ম্যাগি নুডুলস এর মত কয়েক মিনিটে রান্না করতে পারবেন। আসেন, কথা কম, রান্নার বন্দোবস্ত বেশি!
উপকরণ:
ভূমিকা
রান্নাঘর
চুলা
আগুন
একটা ফ্রাইং প্যান, অথবা কড়াই
একটা ছোট পাতিল
পর্ব -১
লাচ্ছা সেমাই - হাফ প্যাকেট (মানে আমার কাছে এইটুকুই ছিল!)
তেল
পর্ব -২
পানি
তেজপাতা - ১টা
দারুচিনির দ্বীপ ...থুক্কু খালি দারুচিনি
এলাচ - ২টা
লং - ২/৩টা
চিনি
পর্ব -৩
কিসমিস, বাদাম
একটা সুন্দর দেখে মাঝারি আকারের সিরামিক প্লেট
আসেন, কথা কম। রান্না বেশি। এবার এপ্রন পড়ে দুই চুলায় আগুন দেন। একটাতে কড়াই বসান। অন্যটাতে ছোট পাতিল। একটা মালটিপ্রসেসিং আই মিন মালটিকুকিং চলবে এখন।
ছোট পাতিলের কাহিনী -
এটাতে ৩ কাপ পানি দেন। পর্ব ২ এ বলা মশলাগুলো ধুয়ে নিয়ে দেন। ৪-৫ টেবিল চামচ চিনি দেন। পানি ফুটতে শুরু করুক।
এবার আপনি অন্য চুলায় নজর দেন। অন্য চুলায় কড়াই কাহিনী -
২ টেবিল চামচের মত তেল দেন। অথবা ঘি দিতে পারেন। তবে আমার ঘি পছন্দ না। তাই সয়াবিন তেল। অবশ্য কয়দিন আগে আমার এক প্রফেসর বলছিলেন, আসলে এগুলো সয়াবিন না। সব পাম!
যা হোক, সয়া হোক আর পাম, আপনার তো কিছু করার নাই। আপনি ভোক্তা, ক্রেতা হিসেবে বাজারি দুনিয়ায় জন্ম নিয়ে আজন্মের পাপ করেছেন। এখন যা পান, তাই খান! হোয়াট টু ডু!!!! তাই আবার রান্নায় ফিরে আসেন।
কড়াইয়ে তেল দিয়ে, তাতে লাচছা গুলো দিয়ে দিন। চামচ দিয়ে নাড়ার সময় একটু একটু করে ভেঙ্গে দিন লাচছা গুলো। অন্য চুলায় কিন্তু পানি ফুটছে!
কড়াইয়ে লাচ্ছা নাড়তে থাকেন ভালভাবে। আগুনের আঁচ বেশি দেবেন না । চট করে লাচছা বেশি ভাজা হয়ে যাবে। লাচ্ছা নাড়তে থাকেন , অন্য চুলায় কিনতু পানি ফুটতেই আছে।
রান্নাবান্নায় কিছু ভাজাভাজি করলে গোল্ডেন ব্রাউন হলো একটা প্রত্যাশিত আদর্শ রং। লাচছা এই রং ধারণ করছে কিনা ঠিকমত দেখে নিন। আর খেয়াল আছে তো? ওই চুলায় পানি কিন্তু ফুটতেই আছে!
দুই চুলায় পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। এখন আপনিই পারেন সামাল দিতে। লাচ্ছায় রং দেখা দিলে, ওই পাতিলের পানি লাচছাতে ঢেলে দিন। এইখানে মমতা থাকলে হয়ত, জ্বাল হতে হতে ৩ কাপ থেকে ২ কাপ হয়ে আসা পানির ২৫% পানি ঢালতেন। কিন্তু আপনি তো মমতা না। আপনি পাতিলে এখন যতটুকু আছে ততটুকুই লাচছাতে ঢালবেন। তবে একটু কায়দা করতে হবে। পানির মশলাগুলো চাই না। ওগুলো পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করা হয়েছে সুগন্ধ-নির্যাস নিংড়ে নেয়ার জন্য। চামচ দিয়ে মশলা তুলে নিতে পারেন অথবা কোন ছাকনি বা ছিদ্র ছিদ্র চামচ থাকলে তা দিয়ে পানি ঢালেন কড়াইয়ে।
পানি গরম। কড়াইও গরম। বেশ একটা ছ্যান ছ্যান আওয়াজ হবে। মনে হবে আপনি সিজলিং লাচছা রান্না করছেন! এবার পোস্ট শিরোনামের মাজেজা বুঝতে পেরেছেন আশা করি।
লাচছা খুব দ্রুত পানি টেনে নেবে। আগুনের আঁচ বেশি বাড়ানোর দরকার নেই।
পুরো লাচছা পানিতে ঠিক মত মাখিয়ে নেবেন, তবে বেশি নাড়ারও দরকার নেই। পানি টেনে আসলেই চুলা থেকে কড়াই নামিয়ে নিন।
এবার একটা সুন্দর প্লেটে লাচ্ছা সেমাই ঢেলে দিন। চামচ অথবা ছুরি দিয়ে প্লেটে লাচছা পুরু করে বিছিয়ে দিন। উপরে কিসমিস, বাদাম ছড়িয়ে দিন ডেকোরেশন আর কি! এবার একটা ছুরি দিয়ে বরফির মত করে লাচছা কাটতে পারেন।
রান্না শেষ হওয়ার পর দেখি ঘরে পুরি আনা হয়েছে। সবাই পুরি খেয়ে ফেলেছে। আমার ভাগের পুরি রাখা। বাকিরা লাচছা এমনি খেলো। আমি লাচ্ছা খেলাম পুরির মধ্যে পুরে। খেতে খেতেই মনে হলো, এই লাচছা গরম গরম ছোট ছোট লুচির সাথে খেতে অমৃত মনে হবে। যা হোক, কথা কম, খাওয়া বেশি!
খেতে খেতে একটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ দিতে চাই। পানি পরিমাণ এই রান্নায় ইমপরট্যান্ট। পানি যেন দ্রুত টেনে যায়। বেশি পানি হয়ে গেলে লাচ্ছা দ্রুত বেশি গলে যাবে। লাচ্ছা ভাজাটাও কিন্তু ঠিক মত হতে হবে। এটা গরম গরম খেতে যেমন মজা। তেমনি ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে খেলেও মজা।
তো আর কী? আজকের বিকেল তো শেষ। কালকের সোনালী বিকেলে গোল্ডেন ব্রাউন সিজলিং লাচ্ছা দিয়ে নাস্তা সেরে নিতে পারেন।
বাহ্ মনে হলো টেলিভিশন চ্যানেলে রান্নার অনুষ্ঠান দেখলাম। মানে হাত এবং মুখের ব্যবহার...মারাত্মক পারফরম্যান্স। ভাবছি এইটা মুখন্ত করে টিভি রেসিপি প্রোগ্রামে চলে যাবো কি না। হাতে মেহেদি লাগিয়েছেন তো আপু?
সিরিয়াসলি বলি এবার, এই রেসিপি আমি শিগগিরই বাসায় করবো। পছন্দ হয়েছে। ধন্যবাদ।
তাড়াতাড়ি রান্নাটা প্র্যাকটিস করে টিভিতে যান । প্রোগ্রামে আমার নামটা একবার হলেও বলেন কিন্তু
মেহেদি আসলে হাতে দিতে চাইনি এবার। তবে বাসায় আমাদের টবের গাছের মেহেদি পাতা বেটে দিয়েছিলাম, ঈদ এর আগে। যদিও হাতে প্লাস্টিক গ্লাভস পড়েছিলাম, কিন্তু তাও হাত রং হয়ে গেলে!
তোমার বাসায় দাওয়াত তাইলে পাইতেছি? গোল্ডেন ব্রাউন সিজলিং লাচ্ছা কে খাওয়াবে?
আপনার মত আমিও বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুললাম -
কে? কে? কে...? ............ [আওয়াজ ইকো হচেছ!]
আইরিন খাওয়াবে এ এ এ ... [আওয়াজ ইকো হচেছ!]
ভাত খাইবার পাইনা, আবার নাস্তা!
ভাত খাওয়া কি দরকার! ফ্রাইড রাইস খাবেন! আর তিন বেলা নাস্তা খাবেন - সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা! লাইফে আর আছেই বা কী ...নাস্তা আর পানি!
লাচ্ছা তো আমার খুব পছন্দের খাবার, বান্ধবী! লুচি/ পরোটা দিয়ে খাইতে ভালু পাই। কবে খাওয়াইপা তুমার নিজের হাতে রাইন্ধা।
কিরাম আছ? বহুকাল দেখা-সাক্ষাৎ/ গল্পগুজব হয় না।:(
এহ! আইলসা! কই নিজে থেকে বলবে যে আসো সবাই, আমি তোমাদের লুচি আর লাচছা রাইন্ধা খাওয়াই! .... তা না...!
লাচ্ছা ভালো পাই না। আর আমার কিছু খাইতে মুঞ্চাইলে এত ঝামেলা করা লাগে না। বিশেষ ব্যবস্থা আছে
এই লাচ্ছাটা আমার মজা লাগে। বাসায় এইটা কেবল আমিই রান্না করি। কিন্তু আপনার বিশেষ ব্যবস্থাটা কী? আপনি ম্যাকডোনাল্ডস এ ফোন দিয়ে লাচছার হোম সার্ভিস অর্ডার দেন?
টিভি প্রোগামে এই রেসিপি নিয়ে গেলে রান্নার সময় এপ্রন পরার আগে পার্লার থেকে ঘুরে আসুন, আর হাতে, কানে, গলায় আংটি, চূড়ি, লম্বা দুল, চেইন ইত্যাদি যথেচ্ছা গয়না পরিধান করুন, জমকালো শাড়িটা বেছে নিন, নিদেন পক্ষে জামদানিটাই নিন! এবার শুরু করে দিন রান্না সিজলিং লাচ্ছা! .।.।।
পছন্দ হইছে রান্নার থেকেও পোষ্টটা! লাচ্ছার জর্দাও তো মনে হয় এম্নেই রান্না করে খালি পানির পরিমানের বেশকম হয় আর কি! আমি শিউর না যদিও
চুড়ি, দুল, শাড়ির ঝুল --- সবকটার সিজলিং সাউন্ড বাড়তি মাত্রা যোগ করবে রান্নায় !
জর্দা বললে আর মজা থাকলো না তো! আর জর্দাতে সাধারণত মশলা ডাইরেক্ট দেয় কম বেশি সবাই। মশলা সহই রান্না হয়, খাওয়া হয়।
পানির পরিমাণ এইটাতেও বুঝেশুনে দিতে হয়। এমনি সেমাই যেমন ঝরঝরা করে, এটাও তেমন। তবে লাচ্ছা সেমাইয়ের স্বাদ একটু আলাদা, এমনি সেমাই থেকে।
রান্না করে শিওর হয়ে নাও
পরিস্থিতি খুব ভালোতো সামলেছো দেখি সময় পেলে ট্রাই করবোনে কখনো
কখন সময় হবে? আমরা কি ততক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকবো?????????????????
গোল্ডেন ব্রাউন সিজলিং লাচ্ছা খেতে কেমন লাগবে জানি না তবে রেসিপি পড়তে খুব মজার হইসে। হাত এবং মুখের মারাত্মক পারফরম্যান্স।
আগেই কিন্তু ডিসক্লেইমার দিসি, মালটিপ্রসেসিং ....থুক্কু মালটি কুকিং
আম্মু এই জিনিস আজ বিকেলেও করসে। আমি আবার পড়তে পড়তে খাই।:পর্লাম:
আন্টির কাছ থেকে রেসিপিটা তাত্তাড়ি নিয়ে আমাদের আপডেট করেন ....
ইদানিং সারাক্ষণ এটা সেটা খেতে ইচ্ছা করে । এটা সেটার মাঝে প্রথম দিকেই আছে লাচ্ছা। রেসিপি দেখে পেটটা মোচড় দিল । ট্রাই করতামই করতাম , সবই আছে উপকরণ , শুধু লাচ্ছা নাই
বলেন কী! লাচ্ছা যে মানুষের এতো প্রিয় সেটা তো জানতাম না! এই জানাটা বেশ সুস্বাদু হলো ! বাঙালি পাড়ার কোন সুপার স্টোরে লাচ্ছা পাওয়া যায় না? আর না পাওয়া গেলে, দেশ থেকে লাচ্ছা রপ্তানি নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। লাচ্ছা খাওয়া আমাদের নাগরিক অধিকার।
রেসিপিতে লং দেইখা খাওনের ইচ্ছা শর্ট হৈয়া গেলু
রান্না হলো শিল্প! শিল্প যেমন আপনি আপনার মনন মত সৃষ্টি করেন তেমনি আপনি আপনার স্বাদ মতো রানতে-বানতে পারবেন। লং বাদ দেন! লং উপর রাগ করে লাচ্ছা খাওয়া বাদ রাখা কি ঠিক হবে? আপনার ভোজন রসিক পেটের কাছে প্রশ্ন!
লাচ্ছা খাওয়া বাদ রাখমু কৈ কৈলাম? আমি কৈলাম ধরেন তিনবারের বেশি চাইর্বারেরবার আর বাটি ফিলাপ করা হৈবো না
ও ভাই, আপনে কয় প্যাকেট লাচ্ছা রানসেন? !!!
আর বাটিতে খাবেন ক্যান! বরফির মত কাটার কথা আসিল! এরপর প্লেটে নিয়ে খেলে হতো না!
ও আমি তো রান্ধি নাই। আমি ভাবতেছিলাম আপনের দাওয়াত পাইলে সেরপর গিয়া বাটিত কৈরা লাচ্ছা খামু।
জনগন বড়ই চাল্লু হয়া গেছে, চামে চিকনে দাওয়াত দেওন্থিকা বাঁচতে চায়
নাচ্চা কেতে মনচাচ্চে
আচ্চা! তো আপনাকে মানা কে কচ্চে!
মন্তব্য করুন