চলে এসো ... এক বরষায়
মাজেদা খালা দু’তিন ধরে ক্রমাগত ফোন দিয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কেঁদে চলেছেন। প্রতিবার ফোনে ঝাড়া দুই মিনিট কান্নার মাঝে ৩০ সেকেন্ড পর পর একটু বিরতি দিয়ে হিমুকে বলছেন, তুই ভাল আছিস তো? হিমুর মনে হচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলো টক টাইম নয়, ক্রাইং টাইমের উপর কলরেট অফার করছে। দিনের যে কোন সময় কল করে ২ মিনিট কাঁদলে কলরেট সর্বনিম্ন। শুধু মাজেদা খালাই নয়, খালাতো ভাই বাদলও ফোন দিয়ে চুপচাপ ধরে থাকল। তারপর বলল, আজ হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছি। বলেই ফোনটা টুস করে কেটে দিল। হিমুর মনে হল বাদল ফোন কেটে দিয়ে কাঁদছে। তাহলে কি বাদল অন্য কোন কলরেট অফার নিয়েছে!
কোন প্যাকেজে টকটাইম কী হিসেবে সেটা জানা হয়নি হিমুর। এখন পর্যন্ত রূপাই তার মোবাইলের ব্যালান্স ভরে দিয়েছে। হিমু দেখেছে ব্যালান্স থাকতে থাকতে কোনবারই তার রূপাকে কল করা হয় না। আর যখন রূপাকে কল করে, কল করা মাত্রই ব্যালান্স শেষ হয়ে যায়। রূপা কলব্যাক করে না তবে মোবাইলে ব্যাল্যান্স ভরে দেয়ার কাজটা রূপা নিজেই করে দেয়। রূপা অবশ্য জানে ব্যাল্যান্স শেষ না হওয়া অব্দি হিমুর কল আসবে না।
- হ্যালো...রূপা।
- এবার তোমার ফোনের ব্যাল্যান্স বেশ চলল তাহলে!
- তিন দিন আগে শেষ হয়েছিল। মাজেদা খালা ১০০০ টাকা ভরে দিলেন। হিমু জানে রূপা ইদানীং ইচ্ছে করে এমনভাবে ব্যাল্যান্স ভরে দিচ্ছে যেন সপ্তাহখানেকের মধ্যেই হিমুকে রূপার খোঁজ করতে হয়।
- তাহলে তো আজ অনেকক্ষণ কথা বলবে আমার সাথে, তাই না?
- তা মনে হয় হচ্ছে না।
- মানে?
- মানে হল, তুমি যে ব্যাল্যান্স ভরে দাও, সেটাতে ইন্টারন্যাশনাল কল করা হয় না। এবার একটা ইন্টারন্যাশনাল কল করেছি। মনে হচ্ছে ব্যাল্যান্স প্রায় শেষ।
- তোমাকে ইন্টারন্যাশনাল কলের জন্য ব্যাল্যান্স ভরে দিতে পারছি না বলে আমি দু:খিত। রূপা ঠাণ্ডা গলায় বলল।
- রূপা, আমার মনে হচ্ছে তুমি আজ নীল শাড়ি পড়েছো। কিন্তু টিপ পড়তে ভুলে গেছ।
রূপা যেদিনই নীল শাড়ি পড়ে হিমু সেদিনই ধরে ফেলে। প্রথম প্রথম বিষয়টা ঝড়ে বক মারার মত মনে হলেও রূপা খেয়াল করেছে হিমুর নীল শাড়ি জোতিষ্যশাস্ত্র অব্যর্থ।
- কদম ফুল খোঁপাতে দিলে তোমাকে আরো ভাল লাগত। কিন্তু তুমি কদম ফুল খুঁজে পাবে না।
- কেন পাব না?
- কারণ তরুণ-যুবা-মধ্যবয়সী সকলেই গাছ থেকে কদম ফুল পেড়ে কোন এক লেখকের সমাধিতে দিয়ে আসছে। মাজেদা খালা বাদলকে দিয়ে দুইশটা কদম ফুল যোগাড় করেছিলেন। তুমিও গিয়েছিলে?
- না। যাইনি। কারণ লেখকদের মৃত্যু নেই হিমু। সমাধিতে লেখককে খুঁজে পাওয়া যায় না। লেখকদের কেবল জন্ম হয়। তারপর তারা প্রকৃতিতে মিশে যায়। জোছনায়, কদমে, বৃষ্টিতে...
- রূপা, আজ বৃষ্টি হবে ...
ফোনের লাইন কেটে গেল। রূপা কলব্যাক করবে না জানে হিমু। কিন্তু নীল শাড়িতে আজ একবার রূপাকে দেখতেই হবে। পকেটে ১০০০ টাকার নোট আছে। ১০০০ টাকার নোট নিয়ে বাসে উঠলে কনডাকটর বিরক্ত হয়। কড়কড়ে নোটটা ভাঙাতে ইচ্ছে করল না হিমু। ঠিক করল হেঁটেই যাবে রূপাদের বাড়ির সামনে।
রূপাই সত্যি সত্যিই টিপ পড়তে ভুলে গিয়েছিল। আয়নায় দেখে একটা বড় গোল নীল টিপ পড়ল কপাল জুড়ে। তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। আকাশে মেঘ নেই। কিন্তু রূপা জানে হিমুর কথা মত আজ ঠিকই বৃষ্টি হবে। বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে হিমু রূপাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াবে। হাতে থাকবে কদম ফুল। রূপার মন চাইছে লোকজন পুরো শহরের কদম গাছ থেকে ফুল পেড়ে নিলেও আজ হিমু একটা কদম ফুল হাতে নিয়ে জুবুথুবু হয়ে রূপার সামনে দাঁড়াক।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর আমি একটি গদ্য রচনা করেছিলাম। গদ্যটা আরও কয়েক বছর পড়ার মতো থাকবে। তাই হুমায়ূনের মৃত্যুবার্ষিকীতে গদ্যটি স্মরণ করছি। একই সঙ্গে পড়ার আহবান জানাই
সাহিত্যিকের মৃত্যু এবং আমাদের গদগদে আবেগ
বস্তুত যেদিন পাঠকের মৃত্যু হবে, সেদিনই সাহিত্য-সাহিত্যিক প্রকৃত অর্থে সমাধিস্থ হবে। আবেগ আসলে বহতা। থামানো মুশকিলই একটু। তবে কেউ মগজ খাটানো লিখছেন, কেউ আবেগ বইয়ে লিখছেন। যদিও আবেগ মস্তিষ্ক থেকেই সৃষ্ট।
আমি হুমায়ুন আহমেদ ছেড়েছি বহু বছর। আমি হুমায়ুন আহমেদে ডুবে ছিলাম বহু বছর।
আহা
আপনার প্রোপিকে আপনি যে বইটা নাকমুখ গুঁজে পড়তেসেন আজ বহু বছর যাবৎ, সেটার লেখক কে আজ আপনার বলতেই হবে!
ফেসবুকেই পড়ছিলাম
ফেসবুক লেখার জন্য মার্ক জুকারবার্গকে কি আমরা গল্পকার বলব? না ঔপন্যাসিক?
এক বছর হয়ে গেল
আপনাকে দিনপঞ্জিকা গুনতে কে বলেছে! আপনি কি গণকবাবা?
আহ ! এই মেয়েটার চকমকে দাঁতের ঝকমকে হাসির মত লেখাটা....
'কতদিন দেখিনি তোমায়....'
মন্তব্য করুন