তেজস্ক্রিয়তা কি... এবং... আমাদের করণীয় কি...
[[
গত কয়েকদিন যাবৎ জাপানের পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে দূর্ঘটনার পেক্ষিতে আমাদের সামনে তেজস্ক্রিয় পদার্থ এবং এর দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা বিষয়ক কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশিত হচ্ছে...
তাই...
সকলকে প্রকৃত তথ্য জানিয়ে বলছি...
নিজে বিভ্রান্ত হবেন-না...
এবং...
অযথা বিভ্রান্তি ছড়াবেন-না...
]]
তেজস্ক্রিয়তার সংজ্ঞা...
প্রতিটি মৌলিক পদার্থের পরমাণুর ওজন এর নিউক্লিয়াস-এর মধ্যস্থ নিউট্রন ও প্রোটন-এর সমষ্টির সমান। যে-সব মৌলের পরমাণুর ওজন বেশী (সাধারণতঃ ২০০-এর উপর বা এর কাছা-কাছি) তাদের বলা হয় ভারী মৌল। এ-সব ভারী মৌলিক পদার্থের নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্ত-ভাবে অবিরত আলফা, বিটা ও গামা রশ্মি নির্গত হয়, এই প্রক্রিয়াকে-ই তেজষ্ক্রিয়তা (Radio-activity) বলে।...
তেজস্ক্রিয়তার আবিস্কার...
১৮৯০-এর দশক থেকে ১৯০০-এর দশক পর্যন্ত হেনরী বেকরেল এবং মেরি ক্যুরি ও পিঁয়ের ক্যুরি পৃথক পৃথক-ভাবে তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিষ্কার করেন।...
ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরী বেকরেল ১৮৯৬ সালে এক্স-রে নিয়ে গবেষনা করার সময় দেখতে পান, ইউরেনিয়াম ধাতুর নিউক্লিয়াস থেকে স্বতঃস্ফূর্ত-ভাবে অবিরত বিশেষ ভেদন শক্তি সম্পন্ন রশ্মি নির্গত হয়। তাঁর নামানুসারে এই রশ্মির নাম দেওয়া হয় "বেকরেল রশ্মি"
পরবর্তীকালে মাদাম কুরি ও তার স্বামী পিঁয়ারে কুরি ব্যাপক গবেষনা চালিয়ে দেখতে পান যে, খনি হতে প্রাপ্ত ইউরেনিয়াম থেকে ইউরেনিয়াম মৌল পৃথক করার পর অবশিষ্ট পদার্থ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম-এর চেয়ে-ও অধিক সক্রিয় থাকে। এর-ফলে প্রমাণিত হয়, ইউরেনিয়াম খনিজে ইউরেনিয়াম ছাড়া-ও কিছু অতি-সক্রিয় মৌল আছে; যাদের নামকরণ করা হয়ঃ পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম এবং এদের নিউক্লিয়াস থেকে "বেকরেল রশ্মি"-এর মত এক-ই ধরনের রশ্মি নির্গত হয়... যাদের এখন আমরা "তেজষ্ক্রিয় রশ্মি" নামে চিহ্নিত করি।...
তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য...
১. যে সকল মৌলের পারমানবিক সংখ্যা ৮২ (82) অপেক্ষা বেশী, সাধারণতঃ সেই সকল মৌল তেজষ্ক্রিয় হয়;
২. তেজষ্ক্রিয় পদার্থ সাধারনতঃ আলফা, বিটা ও গামা নামক তিন ধরনের তেজষ্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে পজিট্রন, নিউট্রন, নিউট্রিনো ইত্যাদিও নির্গত হয়;
৩. তেজষ্ক্রিয়তা একটি সম্পূর্ণ নিউক্লিয় ঘটনা, এর মাধ্যমে নিউক্লিয়াসের ভাঙনের ফলে একটি মৌল আরেকটি নতুন মৌলে রূপান্তরিত হয়;
৪. তেজষ্ক্রিয়তা নিউক্লিয় ঘটনা হওয়ায়, একে চাপ / তাপ / বিদ্যুৎ বা চৌম্বক ক্ষেত্রের ন্যায় বাইরের কোন সাধারণ ভৌত প্রক্রিয়া দ্বারা সক্রিয়তা রোধ বা হ্রাস-বৃদ্ধি করা যায় না। তবে অতি দ্রুতবেগে ধাবমান নিউট্রন বা সূর্যের অভ্যন্তরের মত তীব্র তাপমাত্রা বা সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময়কালীন চাপের মত চরম অবস্থায় নিউক্লিয় বিক্রিয়া ঘটান সম্ভব।...
তেজষ্ক্রিয়তার একক...
দু'টি একক দ্বারা পরিমাপ করা হয়; রেড (rad) এবং রেম (rem)...
১. রেড বলতে বোঝায় "radiation absorbed dose", যা এক একক ভর-এ মোট শক্তি-কে নির্দেশ করে;
২. রেম দ্বারা বোঝায় "roentgen equivalent man", যা মানব শরীর-কোষ দ্বারা শোষিত তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরিমাণ এবং এর ফলে ঘটা ক্ষতিগ্রস্থতা-কে নির্দেশ করে;
সাধারণতঃ কোনো বস্তুর তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ করার মূল পদ্ধতি হলোঃ প্রতি এক ঘন্টায় কত-টুকু পরিমাণ রেড বা রেম মানব শরীরে গৃহীত হচ্ছে তৎ-দ্বারা।...
আর, তেজস্ক্রিয় রশ্মির কার্যকর মাত্রার একক-কে বলা হয় মিলি-সিভার্ট; সাধারণভাবেঃ একজন মানুষ বছরে ৩ (তিন) মিলি-সিভার্ট প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন হয়।...
তেজস্ক্রিয়-পদার্থ গ্রহণের নিরাপদ-মাত্রা...
এখন-ও পর্যন্ত কোনো নিরাপদ-মাত্রা আবিস্কৃত বা স্বীকৃত হয়-নি; কারণ প্রতিটি ব্যক্তির-ই সহন-মাত্রার পার্থক্য বিদ্যমান, তবে সাধারণভাবেঃ কোনো মানুষের একবারে ১ (এক) মিলি-সিভার্ট-এর বেশি রেডিয়েশন গ্রহণ উচিত হবে-না (এ মাত্রা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত)।...
তেজস্ক্রিয়তার প্রযুক্তি-গত ব্যবহার...
বর্তমান বিশ্বে তেজস্ক্রিয়তা বিভিন্ন কর্ম-ক্ষেত্রে ব্যবহৃৎ হচ্ছে...
১. বিদ্যুৎ উৎপাদনে...
পরমাণু শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন-ই এই শক্তির সবচেয়ে বড় ও উল্লেখযোগ্য অবদান; সাধারণতঃ ফিশন প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত শক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
২. চিকিৎসা-ক্ষেত্রে...
এক্স-রে, ফ্লোরোস্কপি, সিটি স্ক্যান, মেমোগ্রাফি, বোন ডেনসিটোমিটার, এনজিওগ্রাফি প্রভৃতি পদ্ধতি; কোষ বিভাজন-গত বিভিন্ন রোগ (যেমনঃ ক্যান্সার)-এর চিকিৎসাক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
৩. পারমাণবিক চিকিৎসায়...
বিভিন্ন ধরনের রেডিও আইসোটোপ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এবং কিছু কিছু রোগের চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা হয়; বিশেষতঃ থাইরয়েড গ্রন্থির ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা নির্ণয় ও চিকিৎসায়।
৪. ওষুধ-শিল্পে...
৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে ওষুধ-পথ্য জীবাণুমুক্ত-করণ ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে, তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহার করা হয়। এইডস, ক্যান্সার, আলঝেইমার প্রভৃতি রোগের কারণ ও রোগমুক্তি-সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা-সহ জৈব-চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহৃৎ হচ্ছে।
৫. শিল্প-ক্ষেত্রে...
অতি সামান্য পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহার করে পাইপলাইনের মধ্য দিয়ে পরিচালিত তরল বা গ্যাসীয় পদার্থের গতি, ফিল্টারকরণের ক্ষেত্রে দক্ষতা, পাইপলাইনের অভ্যন্তরীণ ক্ষয়প্রাপ্তির হার; কোনো ধারক বা পাত্রের মধ্যকার তরল বা পাউডারজাতীয় পদার্থের স্তর নির্ণয়; নির্মাণ বা উৎপাদন-শিল্পে বিভিন্ন বস্তুর পুরুত্ব, ঘনত্ব ও উপাদানের সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ে; পলিমারের সঙ্গে তেজস্ক্রিয় প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করার কাজে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে।
৬. কৃষি-ক্ষেত্রে...
খাদ্যশস্যের মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে, সংরক্ষণে, পুষ্টিগুণ বর্ধিতকরণে এবং কীটপতঙ্গ দমনে তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করা হয়। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ প্রয়োগ করে শস্যের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে অধিক ফলনশীল, বৈরী আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে সক্ষম ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ প্রতিরোধক শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়ে উঠেছে।
৭. পরিবেশে...
অল্প পরিমাণে তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহার করে মাটি, পানি বা বায়ুতে বিদ্যমান প্রধান, সুক্ষ্ম বা অতি সুক্ষ্ম উপাদানগুলো নির্ণয় করা সম্ভব হওয়ায় বায়ু ও মাটির দুষণমাত্রা, মাটির উপরিভাগ বা তলদেশের পানিতে বিদ্যমান দুষণ মাত্রা অথবা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর আর্সেনিক, সিসা, ক্যাডমিয়াম বা অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি নির্ণয় করা; বাঁধ ও সেচপদ্ধতির ক্ষেত্রে নদীর পানির প্রবাহ, পানি চুইয়ে বের হয়ে যাওয়া এবং আবর্জনা বা তলানি বৃদ্ধির হার পরিমাপ করা সম্ভব হচ্ছে।
৮. পানি ব্যবস্থাপনায়...
আইসোটোপ হাইড্রোলজি পদ্ধতিতে ভুতাত্ত্বিক ও রসায়নগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভুগর্ভস্থ পানির প্রবাহ, সুনির্দিষ্টভাবে এর অবস্থান চিহ্নিতকরণ, উৎপত্তি, বয়স, পানিতে বিদ্যমান দুষণের বৈশিষ্ট্য ও প্রক্রিয়া নিরূপণ, গুণগত মান নির্ধারণ; নতুন ও নবায়নযোগ্য পানির উৎসের সন্ধান, বণ্টনপ্রক্রিয়া; গভীর ও অগভীর জলস্তরে পানি পুনর্ভরণ পদ্ধতি এবং এগুলোর মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় ও বিশ্লেষণ করায় এর ব্যবহার স্বীকৃত।
৯. মহাশুন্যে...
মনুষ্যবিহীন মহাশূন্যযানে জ্বালানির উৎস হিসেবে।
১০. ভুতাত্ত্বিক / নৃতাত্ত্বিক / প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার ক্ষেত্রে...
কার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে জীবাশ্মসংক্রান্ত নমুনা ও শিলাখন্ডের বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়, উদ্ভিদের অভ্যন্তরীণ রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে বিবর্তনবাদ সম্পর্কে ধারণা লাভ করাসহ বিভিন্ন ধরনের গবেষণায়, জাদুঘরে সংরক্ষিত চিত্রকর্ম বা অন্যান্য শিল্পকর্মের খাঁটিত্ব প্রমাণ করার ক্ষেত্রে, খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে, খনিজ পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।
১১. গৃহস্থালির কাজে...
তাপ প্রয়োগে যেসব পদার্থের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে সেগুলোর দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণের জন্য, কম্পিউটার ডিস্কের মেমোরি বাড়ানোর ক্ষেত্রে, স্মোক ডিটেকটরে, রান্নার কাজে ব্যবহূত ননস্টিক প্যানের আস্তরণটি সঠিকভাবে যুক্ত হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করার জন্য, ফটোকপি মেশিনে উৎপাদিত স্থির বিদ্যুৎ দুরীকরণে, ফটোকপি মেশিনে কাগজগুলো একত্রে আটকে দলা পাকিয়ে যাতে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে না যায় সে-জন্যে প্রভৃতি কাজে তেজস্ক্রিয় বস্তু ব্যবহার করা হয়।
১২. নিরাপত্তার ক্ষেত্রে...
নিরাপত্তা বিধানের স্ক্যানিং করার জন্য এক্স-রে মেশিন, নিউট্রন সোর্স প্রভৃতিতে।
তেজষ্ক্রিয়তা হতে সৃষ্ট-বিপদ...
প্রথমে-ই মনে রাখতে হবে যে, সকল তেজস্ত্রিয় পদার্থের প্রতিক্রিয়া সমান নয়। অতিরিক্ত মাত্রার তেজস্ক্রিয় পদার্থ শরীরে প্রবেশ করলে বা স্পর্শে এলে আমরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে পারি। এটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার কারণ হচ্ছে, তেজস্ক্রিয়তার ফলে মৌল থেকে যে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তা মানুষের সংস্পর্শে এলে শরীরের জীবিত কোষ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে; কারণ আলফা ও বিটা রশ্মি চামড়ায় পোড়ার অবস্থা সৃষ্টি করে এবং গামা রশ্মি কোষের গঠনের ওপর ক্রিয়া করে।
তেজস্ক্রিতার মাত্রার ফলে ঘটা সমস্যা-গুলোর ৪-টি ধাপ রয়েছে...
প্রথম ধাপঃ... ২৫ রেম পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা শরীরে গ্রহণ করলে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে-না, কারণ এটা সহনীয় মাত্রা;
দ্বিতীয় ধাপঃ... ২৫ রেম হতে ১০০ পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা গৃহীত হলে রক্ত এবং কোষে সামান্য কিছু প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়, তবে তা দীর্ঘ মেয়াদে ঘটে এবং মারাত্মক কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না;
তৃতীয় ধাপঃ... মাত্রা ১০০ রেম হতে ৩০০ পর্যন্ত শারীরিক কিছু উপসর্গ দেখা যাবে; যেমনঃ শারীরিক ও স্নায়বিক দূর্বলতা, বমি-বমি ভাব হওয়া, হালকা মাথা ধরা, রক্তের শ্বেত-কণিকার পরিমাণ হ্রাস পাওয়া প্রভৃতি। এ-ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে; সঠিক ও সময়োপযোগী সু-চিকিৎসার ফলে ভয়াবহ-কোনো সমস্যা সাধারণতঃ ঘটে-না;
চতুর্থ ধাপঃ... মাত্রা ৩০০ রেম-এর অধিক হলে চূড়ান্ত ক্ষতি এমন-কি মৃত্যু-ও (৪৫০ রেম-এ) ঘটতে পারে। এর লক্ষণগুলো হচ্ছেঃ চুল পড়া, চামড়া কুচকে যাওয়া, চামড়ায় কালো দাগ পড়া, কোষ-এর মারাত্মক ক্ষয় প্রভৃতি। যদি সময়োচিত চিকিৎসা না-করা হয় তাহলে এ-ধরনের রোগীরা ২ হতে ১৪ দিনের মধ্যে মৃত্যু-বরণ করেন।
বর্তমান অবস্থার পেক্ষিতে আমরা কি আসলেই বিপদ-গ্রস্থ...
প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে আসলেই আমরা বিপদ-গ্রস্থ কি-না?
এর উত্তরে বলা যায়...
১. অবস্থানগত কারণে আমরা যথেষ্ট নিরাপদ; কারণ জাপান আমাদের নিকট-প্রতিবেশী রাষ্ট্র নয় বলে সহজেই তেজস্ক্রিয়তার প্রবাহ এখানে আসবে না।...
২. বায়ুপ্রবাহের দিক-গত কারণে আমরা প্রায় পুরোপুরি-ই নিরাপদ; কারণ আমাদের দেশে আগত বায়ু বর্তমানে আসবে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হতে।...
৩. সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বা ঢেউ-এর দীর্ঘ পথ-প্ররিক্রমার সম্ভাবণায় আমাদের দেশে আসার কোনো যথার্থতা নেই বলে আমরা নিরাপদ।...
৪. প্রাকুতিকভাবে সৃষ্ট পাহাড়ী এলাকার কারণে উত্তর-পূর্ব দিক হতে সারাসরি বায়ু বা মেঘ আমাদের দেশে আসতে পারেনা বিধায় আমরা নিরাপদ।...
৫. ভূ-অবস্থানগত কারণে আমরা যথেষ্টই নিরাপদ; কারণ মধ্যবর্তী মঙ্গোলিয়া / চীন / প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিশাল এলাকা আমাদের দু'দেশের মধ্যে বিরাজ-মান।...
৬. ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া চেরনোবিল (ইউক্রেন / রাশিয়া) এবং ভূপাল (ভারতের) দূর্ঘটনায় আমরা আক্রান্ত না হওয়া দ্বারা প্রতীয়-মান হয় এক্ষেত্রে-ও আমরা সহসা আক্রান্ত হবো না।...
এবার আসুন...
তেজষ্ক্রিয়তা হতে রক্ষা পেতে...
আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানি...
সারা বিশ্বেই মানুষ প্রতিনিয়তঃ অল্প-মাত্রায় তেজস্ক্রিয় রশ্মির সম্মুখীন হচ্ছে, একে বলা হয় "প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা"; যার মূল উৎস সূর্য, প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ, বিভিন্ন মহাজাগতিক রশ্মি (যা বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে চলে আসে)। যদিও প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা অল্প মাত্রায় সর্বত্রই বিরাজ করে, তবুও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা যতই বাড়তে থাকে এর মাত্রাও ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে; অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি এটা কোনোভাবে-ই এড়াতে পারেন-না।
তবুও আমার সব-সময়ের জন্য আমাদের নিজেদের সুরক্ষায় কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারি, যার ফলে আমরা অবাঞ্চিত এবং অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির শিকার হওয়া থেকে অনেকাংশেই নিরাপত্তা পাবো। এ-লক্ষ্যে আমাদের করনীয়গুলো হলো...
১. সূর্যালোক, বিশেষতঃ দুপুর ১২-টার পরের বাহিরে বের হওয়া হতে বিরত থাকুন;
২. বৃষ্টির পানি এড়ানোর চেষ্টা করুন। বৃষ্টির সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখুন এবং যতটা সম্ভব না-ভেজার চেষ্টা করুন;
৩. খাবারে আয়োডিন ব্যবহার করুন। সাধারণতঃ আয়োডিনযুক্ত লবন খান;
৪. দিনের বেলা বাহিরে বের হলে চোখে সান-গ্লাস ব্যবহার করুন;
৫. দিনের বেলা বাহিরে বের হলে শরীরে সান-স্ক্রীনযুক্ত লোশন বা ক্রীম ব্যবহার করুন;
৬. দিনের বেলা বাহিরে বের হলে শরীর যথা-সম্ভব ঢেকে রাখুন। এক্ষেত্রে লম্বা ও ঢোলা-ঢালা এবং আজানুলম্বিত পোষাক পড়ুন।
অধিক-সচেতনদের জন্য সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা...
অনেকেই আছেন, যারা সকল পরামর্শ শোনার পরও একটু খুত-খুত করবেন; কেবলমাত্র তাদের জন্য পরামর্শঃ
আপনি যদি একান্তই বিশেষজ্ঞদের কথাতে বিশ্বাস স্থাপন করতে না-চান, তাহলে কেবলমাত্র প্রথমবার বৃষ্টি হওয়া-কালীন বাহিরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন।
তবে আবারো বলছি, ৬০০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসে এসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা বলতে গেলো ০.০০১%; কাজেই এটা ধার্তব্যরে মধ্যে গণ্য করা অপ্রয়োজনীয় এবং একান্তই আপনার অভিরূচীর বিষয়।
-----------------------------------------------------------------------------------------------
এক-জন বিশিষ্ট পরমাণু শক্তি বিশেষজ্ঞের চোখে বর্তমান জাপান সঙ্কট...
জাপানে ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্প-সুনামি আঘাত হানার পর সেখানকার বেশ কয়েকটি পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিস্ফোরণ ঘটেছে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রে বিস্ফোরণের পর তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর মাত্রা বেড়েছে। এ মাত্রা মানুষের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলার মতো। এজন্য ওই কেন্দ্রের ৩০ কিলোমিটার এলাকায় সব মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। সেখানকার সার্বিক অবস্থা জানতে সম্প্রতি লাইভ সায়েন্স এর পক্ষ থেকে আমেরিকার আর্গনই ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির প্রধান পরমাণু প্রকৌশলী টেমিপোট টাইও’এর এক সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সাক্ষাতকারটির চুম্বক অংশ এখানে আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে দেয়া হলো...
প্রশ্ন: গলনের কারণে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শীতলীকরণ ব্যবস্থা কীভাবে বিপর্যস্ত হয় ?
উত্তর: পারমাণবিক চুল্লির শক্তি আসে চেইন বিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। চুল্লি একবার বন্ধ করে দেবার পর এই বিক্রিয়াও বন্ধ হয়ে যায়। জাপানের প্ল্যান্টগুলোও এই অবস্থায়ই ছিলো। কিন্তু এই বিক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত জ্বালানি থেকে উৎপন্ন উপজাত উপাদানগুলোও অবিরাম ভাঙ্গতে থাকে। এতে তাপ তৈরি হয়। চুল্লির ভেতর ৬-৮ ভাগ তাপ এইভাবে আসে। এই তাপ কমাতে যদি শীতলীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করা না যায় তাহলে এক সময় এই তাপ বাড়তেই থাকে। ফলে, তাপে জ্বালানি গলতে থাকে। আর এভাবেই এক সময় জ্বালানি চুল্লিতে ছিদ্র তৈরি হয়।
প্রশ্ন: পারমাণবিক গলনের সময় আসলে কী ঘটে?
উত্তর: পারমাণবিক চুল্লিতে জ্বালানি হিসেবে কঠিন ইউরেনিয়াম রড ব্যবহার করা হয়। শীতলীকরণের মাধ্যমে অতিরিক্ত তাপ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এই রড গলে যায়। তখন শীতলীকরণের পানির সঙ্গে মিলে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করে। এই গ্যাস দহনে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। ফলে চুল্লির অন্যান্য উপাদানও গলতে থাকে।
প্রশ্ন: পারমাণবিক গলন কী বন্ধ করা সম্ভব?
উত্তর: এই ধরনের গলন বন্ধ করতে জাপানের মত পানি গরম করার চুল্লিগুলোতে জরুরি শীতলীকরণ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়। এর জন্য জেনারেটর ও ব্যটারির ব্যবস্থা থাকে। জাপানে ভূমিকম্পের পরপর সুনামি আঘাত হানায় সাগরের পানির তোড়ে বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্যাটারির বিদ্যুৎ মজুদও শেষ হয়ে যায়। এই ভাবে চুল্লির শীতলীকরণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। তাই শীতলীকরণ চালু করাই গলন বন্ধ করার একমাত্র উপায়। কোনভাবে আবার পর্যাপ্ত শীতলীকরণ চালু করা গেলে গলনের হার নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষতির পরিমাণ কমানো সম্ভব। জাপানের চুল্লি গুলোর কর্মীরা এ কারণেই শীতলীকরণ ব্যবস্থা চালুর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: জাপানের এই ঘটনার সঙ্গে চেরেনবিল দুর্ঘটনার পার্থক্য কতটুকু ?
উত্তর: দু’দিক দিয়ে জাপানের এই ঘটনার সঙ্গে চেরেনোবিলের পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, জাপানের চুল্লিগুলো ছিলো বন্ধ এবং প্রথমবার ভূমিকম্প আঘাত হানার সময় উপজাতের ক্ষয়ের কারণে ৬-৮ ভাগ চালু ছিলো। অন্যদিকে, দুর্ঘটনার কারণে চেরেনোবিলের চুল্লিটি বন্ধই করা যাচ্ছিলো না, সেই সঙ্গে এর শক্তি অনবরত বাড়ছিলো।
জাপানের চুল্লির গঠনও চেরেনোবিলের থেকে আলাদা। এ ধরনের গঠনের জন্য চেরেনোবিলের মত গ্যাস বের হয়ে বা চুল্লিতে ফাটল ধরে তেজস্ক্রিয় উপাদান সহজে বাইরে আসতে পারে না। একেবারেই ব্যবহার না হওয়ায় চেরেনোবিলের মত জাপানে গ্রাফাইটে আগুন ধরা সম্ভব নয়। চেরেনোবিলের ঘটনা ঘটেছিলো পারমাণবিক চুল্লির ভেতরে বিস্ফোরণের কারণেই। এর মধ্য দিয়ে সারা ইউরোপের আকাশে তেজস্ক্রিয় উপাদান ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু জাপানের চুল্লিগুলোর কনটেইনমেন্ট গঠনের জন্য সেরকম কিছু ঘটা একেবারেই সম্ভব নয়। সেখানে পানির পাম্প বন্ধ হয়ে শীতলীকরণ ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ায় পানির পাইপের মধ্যে দিয়ে ধীর গতিতে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রশ্ন: জাপানের পারমাণবিক ব্যবস্থার বড় ধরনের বিপর্যয়ের চেহারা কেমন হতে পারে ?
উত্তর: চুল্লির কনটেইনমেন্ট ব্যবস্থা কাজ না করলেই কেবল বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। আর এভাবে পরিবেশে তেজস্ক্রিয় উপাদান ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ব্যবস্থা জ্বালানি শীতল করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হলে এবং কনটেইনমেন্ট ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হলে বা ভেতরে এমন বাষ্পচাপ তৈরি হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটা সম্ভব।
_____________________________________________________
বিঃদ্রঃ...
একজন আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষক এবং ভূগোলবিদ হিসেবে ব্লগার-দের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লেখাটি এই ব্লগে প্রকাশ করা হলো...
সকল-কে ধন্যবাদ...
মাহাউব ভাই (রেসিডেন্সিয়ালে-তো আমরা এই নামেই ডাকতাম...)
এটা ঠিক যে এটি স্টিকি পোস্ট-ও ছিলো একটি ব্লগ-এ... এবং এটা অন্য ব্লগে প্রকাশিত-ও হয়েছে আগে...
তবে...
আমার কাছে মনে হয়েছে... গুরুত্ব এবং সময়োপযীতার কারনে এটা প্রকাশ করা যায়...
তাই...
এটা এখানে দিয়েছি... তবে অবশ্যই নতুন-ভাবে এবং ভিন্ন আঙ্গিকে...
আপনি ইচ্ছে করলে এটা সরিয়ে দিতে পারেন...
ধন্যবাদ...
কলেজে থাকতে আমারে সবাই সুমন নামেই চিনতো, আরো ২/১ টা না ছিলো সেইটা জনসম্মুখে বলে ইজ্জত খোয়াইতে চাইতেছি না
অনেক সুমনের ভীড়ে... আমরা এই নামেই চিনতাম!!!...
মডেল কলেজের ট্রেডিশন-ই-তো ছিলো নাম দেয়া!!!...

শুরু হইতো বাপের নাম দিয়া...
আর শ্যাষ!!!...
পড়ি নাই শুধু মাউস স্ক্রল করে গিয়েছি।
প্রথম পোষ্টই নীতিমালা ভেঙ্গে?
ভাই,
আমি ব্যাখ্যা দিয়েছি।
ইচ্ছাকৃতভাবেই কাজটা করেছি, মনে হলো এটা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টপিকস, সবার পড়া প্রয়োজন, তাই দিলাম।
ধন্যবাদ...
নীতিমালা ভঙ্গের কারনে আপনার পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হলো। পোস্টটি যথারীতি আপনার পাতায় দেখা যাবে।
ঠিক আছে ভাইয়া।
ধন্যবাদ...
মন্তব্য করুন