লোকেন বোসের জর্নাল: ১
আমাদের প্রাণ পথের আহত মাছিদের মতো!
[জীবনানন্দ দাশ]
"নিমতলী হাহাকার" আমাদেরকে এখনো পর্যন্ত দিয়েছে ১১৭ টি মৃতদেহ। এর সঙ্গে আরো যোগ হবে কতজন? তা এখনো অনিশ্চিত। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে এখনো অনেকেই। ধ্বংসস্তুপ থেকে আরো লাশ বের হয়ে আসার সম্ভাবনাও নাকচ করা যাচ্ছে না।
মুহূর্তে শ্মশান হয়ে গেলো গোটা নিমতলী। বিয়ের পানচিনির খুশি আনন্দ পরিণত হলো কান্নায়। গোটা দেশ আজ কাঁদছে। আকাশ ঝরছে কান্না হয়ে, অবিরত।
আজ রাষ্ট্রীয় শোক। পুড়ে কালো হওয়া লাশগুলোর স্মরণে আমরা কালো ব্যাজ ধারণ করবো, কালো পতাকা ওড়াবো, জাতীয় পতাকা নামিয়ে রাখবো আধেকখানি।
তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, দীর্ঘদিন পরে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন, যা আমরা জানতে পারবো না, জানলেও ততদিনে আমাদের মন থেকে এই শোক মুছে যাবে। ১১৭টি মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী হবে না। নিয়তি ভেবে আমরা অপেক্ষা করবো পরবর্তী দুর্ঘটনার জন্য।
এদেশে মৃত্যু এখন সবচেয়ে সহজলভ্য। ছিনতাইকারীর হাতে মারা পড়ছি আমরা, রাজছাত্রদের সন্ত্রাসের বলি হয়ে মারা পড়ছি আমরা, সড়ক দুর্ঘটনায় মরছি। আমাদের অপঘাতে মৃত্যুর উপলক্ষ্যের কোন অভাব নেই। রাষ্ট্র নিজেই প্রতিদিন রুটিন মাফিক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, যার পোষাকী নাম 'ক্রসফায়ার'! অপরিকল্পিত নগরায়নের বলি হয়ে আমরা মরে যাচ্ছি শয়ে শয়ে! "নিমতলী হাহাকার" এর দুদিন আগেই বেগুনবাড়িতে ভবন ধ্বসে মৃত্যু হলো ২৫ জনের।
এই অজস্র মৃত্যু কেড়ে নিয়েছে আমাদের শোকাবেগ। মৃতের সংখ্যা অন্তত শখানেক না হলে আমরা সেদিকে নজর দেই না আজকাল! দিলেও সাময়িক শোকাবেগ ছাড়া আর কিছুই নেই। আমাদের জীবন যাপনে আনন্দ আহ্লাদে কোনো কমতি হয় না!
কী নির্বোধ জীবন আমরা ধারণ করছি!
ঢাকা
৫ জুন, ২০১০
কী নির্বোধ জীবন আমরা ধারণ করছি!
তাইতো। আমাদের অনুভূতিগুলো মরে গেছে। এই দু'দিন আগেও ওরা কারো ভাই ছিল, বোন ছিল, মা কিংবা স্ত্রী ছিল। ছিল ঘনিষ্ঠ জন। এই আমাদের মত জীবিত মানুষ ছিল। হাসি, গান, আনন্দ, উচ্ছাস অন্য সবার মত ভালোবাসা, অভিমান, ক্রোধ, ঘৃণা ভাগাভাগি করেছিল ওদের ভেতর। ওরা ওদের যাবতীয় অনুভূতি ভাসিয়ে দিয়ে একখন্ড প্রবল প্রশ্নের মত চলে গেছে, আর আমরা জড়িয়ে পড়েছি যাবতীয় প্রত্যহিকে!
সড়ক দুর্ঘটনা এত বেশী হচ্ছে যে, আমরা আর খবর ও রাখছি না। আর কত সংখা গুনবো।
কী নির্বোধ জীবন আমরা ধারণ করছি!
লোকেনদা দেশে কথা হলো, কায়েতটুলীবাসী কয়েকজনের সাথে। তাদের ভাষ্যনুযায়ী সরকার মৃতের সংখ্যা ১১৭ বললেও কায়েতটুলীবাসী বলছেন মিনিমাম ৩০০ জনের নীচে না। অনেক দোকানপাট ছিল সেখানে অপরিসর শার্টার দেয়া, কালো ধোঁয়া দেখে অনেকেই নাকি ভিতরে ঢুকে শার্টার বন্ধ করে দিয়েছিলেন যারা আর পরে বেড়োতে পারেননি। নিহত দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও নাকি কম না।
কী নির্বোধ জীবন আমরা ধারণ করছি!
মন্তব্য করুন