মগের মুল্লুকে আমি যখন ছাত্রলীগের ক্যাডার
আমি যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, সেই জগৎটাকে আমি বলি মগের মুল্লুক। এখানে নিয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই। অনিয়ম-অনৈতিকতার এ রাজ্যে কেউ নীতি দেখাতে গেলে তাকে স্রেফ গাধা বলা হয়। মগের মুল্লুকের শত বৈশিষ্ট্যের একটামাত্র বলি। এই ২০১১ সালে এসেও এখানকার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় নকল করে। বাধা দিতে গেলে শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হন। মারও খান।
তো, একদিন পরীক্ষার হলের একটি ঘটনা বলার জন্যই এই পোস্ট।
৩২৭ নম্বর রুমে আমি হল-পরিদর্শীর দায়িত্ব পালন করছিলাম। ২ ঘণ্টা শেষ। এ সময় পাশের রুমে হৈচৈ শোনা গেল। কৌতূহল মেটাতে এগিয়ে গেলাম। পাঁচ-ছয়জন নেতা গোছের ছাত্র ঐ হল-এর পরিদর্শীকে ধমকাচ্ছে। বেচারা পরিদর্শীর অপরাধ- নকল করেছে বলে এক ছাত্রের সংস্লিষ্ট উত্তরটি কেটে দিয়েছেন তিনি। বেচারা! তিনি হয়তো জানেন না, এখানে নকলের শাস্তি দিতে নেই। কারণ এখানে নকল করা কোনো অপরাধ নয়। পারলে নকল সাপ্লাই দিতে হয়। লম্বা চুল ওয়ালা এক নেতা তর্জনি উঁচিয়ে বলছে- আপনি চেনেন না আমাদের। কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন আপনি জানেন না। আপনি ওর খাতা কেটেছেন, এখন আপনি ওর খাতা লিখে দেন।...
ওই শিক্ষক ঢোক গিলছিলেন ভয়ে।
আমি ভীতুর সেরা। তবে আমার একটু ঊনপঞ্চাশ বায়ু আছে। সেটাকেই কাজে লাগালাম। তর্জনি-ওয়ালা নেতার কথা শুনে আমার কান গরম হয়ে গেল। মাথাও। এগিয়ে গিয়ে ঠিক নেতার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম- এই, আঙুল নামিয়ে তোমার পরিচয়টা দাও তো? কী আশ্চর্য, সে আঙুল নামিয়ে ফেলল ! বলল- আমি ৫ম পর্ব, ইলেকট্রিক্যাল।
ও আচ্ছা। আর কোনো পরিচয়? মানে রাজনৈতিক। যার জোরে তুমি আঙুল নাড়াচ্ছো?
আমি ছাত্রলীগের কর্মী।
খাইছে ! আমি তো মোঘলের হাতে পড়েছি। ছাত্রলীগ সারা দেশটাকেই মগের মুল্লুক বানিয়ে রেখেছে। আমরা তো সামান্য মাস্টার। ২ নং গেইট বা জিইসি মোড়ে পাকড়াও করে নির্ঘাৎ ঠ্যাং ভেঙে দেবে।
তাৎক্ষণিক একটা বুদ্ধি খাটালাম। যে বল দিয়ে ও আমাকে বোল্ড করতে চাইছে, সেটাকে নো বল বানিয়ে দিতে হবে। কলার নাড়িয়ে বললাম, তুমি ছাত্রলীগের কর্মী, আর আমি ছাত্রলীগের ক্যডার। আলাওল হল-এ শিবিরের হাতে কত মার খেয়েছি, ওরা আমাকে হল-এ থাকতে দেয়নি ( আংশিক সত্য। আমি ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলাম- এটা মিছা কথা, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য তাৎক্ষণিক আমি আর কী বলতে পারতাম ! তবে শিবির আমাকে হল-এ থাকতে দেয়নি আমি ভোরের কাগজে লিখতাম বলে )।
কথাটা বলার পর দেখলাম, নেতাদের মাথা নিচু হয়ে গেছে। আমি হালে পানি পেয়ে বললাম, সামান্য কর্মী হয়ে তুমি একজন শিক্ষককে অপমান করছ, তাও আমার মতো ক্যাডারের সামনে !
ইতিমধ্যে সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়েছে। চুলওয়ালা, তর্জনি নাড়ানো নেতাও পালাতে চাইল। আমি খপ করে তার বাহু পাকড়াও করে বললাম, তোমার ভিপিকে ডাকো। আমি তোমার কর্মীগিরি দেখাচ্ছি।
নেতা চুপচাপ। আমি ভিপিকে ফোন করে বললাম, হ্যালো তোমরা কি মগের মুল্লুক পেয়েছ নাকি?
ভিপির উত্তর- জি স্যার, না স্যার...
ততক্ষণে পালিয়েছে সবাই।
পাদটীকা ১: এ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে এদের শায়েস্তা করা যেত না। আগেই বলেছি এখানে আইন-কানুনের বালাই নেই ।
পাদটীকা ২: ভিপির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হয়। কোন্ সময় কোন্ বিপদে পড়ি। ওর ফোন নম্বরটাও তাই মুখস্থ থাকে।
আমার এগুলোর জন্য দুঃখ হয়। এইরকম এক হল শাখার রানিং সভাপতিকে চিনি, যে একটি গণমাধ্যমে কাজ করে। এরা মূলত এত বেশি হাভাতে হয়, যে অচিন্ত্যনীয়!
হলের গেস্টরুমে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলে থাপড়ানো, ক্যন্টিনে ফাও খাওয়া, মধুর কেন্টিনের সেই স্লোগানমাস্টারকে দিয়ে মাঝে মাঝে নিচে থেকে সিগারেট আনায় লোকজন। ইচ্ছা করেই।
যে যায় লংকায় সেই রাবন হয়
একবারের একটা ঘটনা বলি,
কোনো এক মহান নেত্রির ছাত্র সংঘটনের নেত্রি পুলিশের এক যুগ্ম কমিশনাররকে বলে, "ওই মিয়া বেশী লাফালাফি করলে সোজা বান্দরবন, নেন অমুক ভাই ( জনৈক মন্ত্রি ) সাথে কথা বলেন "। এরা এখন আর কাউকেই কেয়ার করে না। সে শিক্ষক হোক আর সাধারন মানুষ হোক বা সরকারী আমলাই হোক। এরকমতো নতুন কিছু না। আদি থেকেই ঘটে আসছে, আমরা সেটার সম্মুখিন হলেই অনুভব বা জানতে পারি, এই যা।
এদের কতোশত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী/ সাক্ষী যে হয়েছি, বলে শেষ করা যাবে না...
আপনার অনেক বুদ্ধি
আপনি দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রগতিশীল ছাত্রনেতৃত্ব' , 'ডিজিটাল সৈনিক' তথা 'স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি' ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বারবার অপপ্রচার চালাইতেছেন। 'সোনার ছেলেদের' চরিত্রহননের জন্য আপনাকে কঠিন নিন্দা এবং আপনার অপরিণামদর্শী কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ।
মন্তব্য করুন