এই সব দিন রাত্রি
সবাই মিলে ধরে মাইর লাগানোর আগেই মাফ-টাফ চেয়ে রাখি। বিশ্বাস করেন হাজারো ঝামেলায় আউলা-ঝাউলা থাকার কারণে ব্লগ লেখার যাবতীয় প্রচেষ্টা ফেল মেরে যায়। বন্ধুদের আমি ভুলি নাই, আশাকরি বন্ধুরাও আমাদের ভুলেন নাই। গত দুই মাস যাবত অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভাঙ্গা দৌড়ের উপরে। বাংলাদেশে যখন গেলাম, মানে কোরবানীর সময়ে, তখন সবার সাথে দেখা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এক বন্ধুর গ্রামের বাড়ী মানিকগঞ্জে ঈদের পরের দিন যাওয়ার পরে মেয়ে দুইটাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গ্রাম থেকে কারও সাথে যোগাযোগের কোনো উপায়ও ছিল না। সেখান থেকে ঢাকা ফিরে ওদের মায়ের অস্থিরতায় অতীষ্ঠ হয়ে একদিন পরেই তাইওয়ানে ফিরে আসি। তবে ওরা আরেকটু বড়, শক্ত-পোক্ত হলে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য দেশে আসবো, তখন ওরা নিজেরাই ছোটাছুটি করে সবার আদর আর ভালোবাসা কুড়িয়ে নিয়ে আসবে।
তাইওয়ানে ফেরার পরের অস্ট্রেলিয়া যাবার হাঙ্গামা। সে এক বিশাল গন্ধমাদন কান্ধে নেবার মতো বিষয়। যাই হোক অনেক হুজ্জতের পরে মেলবোর্নে সাময়িক ঘাঁটি গাড়া গেল। কিন্তু ক্রিসমাসের পরেই তাইওয়ানের অফিস থেকে জরুরী ডাক আসলো, তড়িঘড়ি করে বউ-বাচ্চা অজি দেশে রেখেই চলে আসি। সেখানে সপ্তাহখানেক কাজ-কর্ম সামলানোর পরে আড়াই দিনের নোটিশে আসতে হয় আমেরিকায়। তাইওয়ান-টোকিও-লস এঞ্জেলস-ডালাস-ফ্লোরিডা। মাঝে একটা ফ্লাইট মিস হয়ে পুরা ৩৬ ঘন্টার যাত্রা। আমি এর চাইতেও লম্বা সফর আগে করেছি, কিন্তু তখন বয়স কম ছিল, জোশ বেশী ছিল, আজকাল বুড়া হাড়ে আর এসব সয় না। এখানে আসি গত ৯ তারিখে, এখনও জেট ল্যাগ সামলিয়ে উঠতে পারি নাই। তাই এই রাত আড়াইটায় ঘুম ভেঙ্গে কী করি, কী দেখি কোনও দিশা না পেয়ে ব্লগ লিখতে বসলাম।
এখন আছি ফ্লোরিডার টাম্পাতে। জনবহুল শহরে বরাবর থাকার অভ্যাসের কারণে এই জায়গাটা কেমন জানি মরা মরা লাগে। একটা উদাহরণ দেই। আজকে গেলাম বিখ্যাত ফ্লোরিডা অ্যাকুয়ারিয়াম দেখতে। কীসের কী, নামেই যত হাতি ঘোড়া মারা, ভেতরটা দেখে হতাশই হলাম। এর চাইতে সিঙ্গাপুর, হং কং বা অস্ট্রেলিয়ার যে কোনো অ্যাকুয়ারিয়াম অনেক বেশী জমজমাট, দেখার মতো জিনিষ্পাতিও অনেক বেশী। এখানে বেহুদা পয়সা নষ্ট আসলে। সেখান থেকে বের হয়ে ভাবলাম ক্যাসিনোতে গিয়ে হাল্কা-পাতলা পোকার খেলে আসি। কিন্তু রাস্তা ঘাট পুরাই ফাঁকা, হয়তো মঙ্গল বার বিকেল হবার কারণেই। ট্যাক্সি অপেক্ষায় রাস্তায় একা একা দাঁড়িয়ে কনকনে ঠাণ্ডা আর তার দোসর ভেজা উত্তুরী বাতাসে ভাজাভাজা হলাম মিনিট বিশেক। তারপরে ক্ষ্যান্ত দিয়ে ঢুকলাম পাশের সিনেমা হলে। দেখি ৭ মিনিট পরেই একটা শো, সিনেমার নাম দ্য টুরিস্ট। আমিও টুরিস্ট, মিলে গেল খাপে খাপ, ভাবছিলাম লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কিনতে কিনতে সিনেমা না শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কাউন্টার পুরা ভয় ধরানো রকমের খালি, একটা মাছিও নাই কোথাও। অনেকটা ভৌতিক সিনেমার মতো, সামনে গিয়ে উচ্চগ্রামে হাই-হ্যালো বলার পরে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো এক সেলস গার্ল, চোখে মুখে ঘুমের ছায়া। হয়তো কেউ নেই দেখে ভেতরে বসে ঝিমাচ্ছিল। যাই হোক টিকেট আর পপ কর্ন কিনে হলে ঢুকলাম । ভেতরে মানুষ তো দূরের কথা, দরজার টিকেট চেকারও নাই। ভাবছিলাম হয়তো মুভি শুরু হতে হতে লোকজন কিছুটা বাড়বে। কিন্তু জীবনে এই প্রথম বারের মতো আড়াইশ সিটের মাল্টিপ্লেক্সে একলা একলা হাত পা ছড়িয়ে সিনেমা দেখলাম। মাঝে মেজাজ খারাপ হওয়ায় একটা সিগারেটও ধরিয়ে ফেলেছিলাম, তাও কেউ পাত্তা লাগাতে আসেনি।
সিনেমাটা কেমন লাগলো তা এক কথায় বলা মুশকিল। কারণ মুভি দর্শক হিসেবে আমার মায়া-দয়া খুব কম। আড়াই মন দুধে মাত্র দুই ফোঁটা চোনা ফেলে দেয়া মুভিও আমার কাছে নেক সময় পাশ মার্ক পায় না। দ্য টুরিস্ট ছবিটার প্লট রোমান্টিক থ্রিলার ভিত্তিক, অনেকটা পুরানা ঘরানার। প্লটে ফুটাফাটা প্রচুর, তবে মচমচে চানাচুরের মতো খেয়ে ওঠা যায়, ফেলে দিতে হয় না একাবারে। ছবির মূল দূর্বলতা ক্ষেত্র বিশেষে দৃষ্টিকটূ অতীনাটকীয়তা ( আমার ব্যক্তিগত অভিমত) আর আঞ্জেলীনা জোলির বিরক্তিকর ফেইক ইংলিশ অ্যাক্সেন্ট। ভালো দিক হচ্ছে আঞ্জেলীনার মদির চোখের কটাক্ষ আর জনি ডেপের অভিনয়। যদিও এ ধরনের প্লটে হৃদয়কাড়া অভিনয়ের স্কোপ কম, তবুও জনি ডেপ সেখানেও সুযোগ খুঁজে নিয়েছেন ন্যাচারাল অ্যাক্টিকেং এর মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ দিতে। সব মিলিয়ে ছবিটিকে আমি দশে সাড়ে পাঁচ বা, টেনেটুনে ছয় দেব। রিভিউ লেখায় হাত পাকানো কেউ হয়তো ছবিটা দেখে আমাদের তাঁর মতামত জানাতে পারেন।
অনেক কথা হলো। জানি অনেকেই মেয়েদের ছবি দেখার অপেক্ষায় আছেন। আরেকবার মাফ চেয়ে রাখি এই দীর্ঘ বিরতির জন্য, আসলেই হাত-পা বাঁধা ছিল। তবে এখন থেকে আবার নিয়মিত হবার আন্তরিক চেষ্টা থাকবে। ভালো থাকুন সবাই মিলে।
ছবিগুলো সবই সাম্প্রতিক, অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিসমাসের সময়ে তোলা। বাংলাদেশের ছবিগুলো এই মূর্হুতে আমার সাথে নেই, পরের পোস্টে অবশ্যই সেগুলো নিয়ে আসবো।
আয়লার লং মার্চ, করিডোরটা ভীষণ লম্বা
আয়লা এখন যে কোনো কিছু ধরে একলাই দাঁড়িয়ে যেতে পারে
কারার ঐ লৌহ কপাট, তবুও এষার হাসি
বই তছনছ করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা খাওয়া এষা
এষার বিস্কুট কেড়ে নিয়ে আয়লার মাস্তানী
টাবে পানি নাই, তাতে কী! ফূর্তিরও কোনো বাপ-মা নাই এই বয়সে
নিজে থেকেই চেয়ারে চড়ে উত্তেজিত আয়লা
এই ছবিটা আমার ভীষণ প্রিয়, কেন জানি না
এদিকে বাবার চোখে ঘুম নাই, কত দূরে আমার মায়েরা..আমার মায়েরা।
ম্যালা দিন পর... কিরমাছেন?
ভালো আছি বস, তবে জবর ব্যস্ত। আপনেরা আছেন কেমন?
ওরররররররররররররররররেরেরেরে!!!! মামনিদের ছবি দেখে সব মাফ। তবে অনেকদিন পরে দিলেন।পোষ্ট পরে পড়ব। আগে ছবি দেখি।
আরে কমেন্ট আমি আগে দিলাম। ষড়যন্ত্র তো!

ধন্যবাদ জয়িতা। ভালো আছ আশাকরি।
হ, ম্যালাদিন পর... বাচ্চারা মনে হয় দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে... ওরা ভাল থাকুক
হ ভাই, আপনাদের দোয়ায়। তরতর করে বড় হয়ে যাচ্ছে।
যদিও অধিকাংশ ছবি আগেই দেখা তবুও অনেক ভালো লাগলো।এষা আয়লাকে দেখে।এইটার পরের পর্ব না দে্যা পর্যন্ত মাফ নাই।

উরে, আদরের দলা দু্ইটা!
মামুনভাইকে লেখার জন্য ঝাড়ি দিতে চেয়েও পারলাম না। মামণিদের ছবি থাকলে ঝাড় লওন অসম্ভব।
বাক্সে দুইটারে দেখে সেইরকম মজা পাইলাম
বাচ্চাদের জন্য অেনক আদর। অনেক দোয়া।।
ছবিগুলো খুবি কিউট
অনেক আদর
বাচ্চাগুলি এত বেশি সুইট কেন ? কমেন্ট না করে পারলাম না
অনেক আদর রইল ওদের জন্য
আম্মু দুইটা অনেক বড় হয়ে গেছে। শেষবার দেখেছিলাম দুই মাস আগে। ওদের জন্য অনেক অনেক আদর।
আপনি না কাজে গেছেন বললেন? কি কাজ পোকার খেলা, সিনেমা দেখা না এ্যকুরিয়াম দেখা?
এইসব দিনরাত্রির মধ্যে ব্লগিংটাও ঢুকিয়ে দেন। মিসড ইউ দাদা
মিঠা মিঠা বাচ্চাদের আদর আর দোয়া।
মাশাল্লাহ ভাতিজীদ্বয় তো মামুন হকের স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করছে। ভাগ্যবতী কন্যা! অনেক অনেক আদর পিচ্চিদুটোকে।
মামুন ভাই কেমন আছেন? পিচ্চি দুইটাকে খানিকটা আদর করে দিয়েন আমার হয়ে।
মন্তব্য করুন