৩ ডিসেম্বর '৭১
বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম নতুন মাত্রা পায়। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। মিত্রবাহিনীর সাথে সম্মিলিতভাবে সম্মুখযুদ্ধে এগিয়ে যায় বীর বাঙ্গালী। এদিনেই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সার্থক হামলায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও চট্টগ্রামের ফুয়েল পাম্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় একের পর এক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করে পাকিস্তানি সেনাদের ফাঁদে পড়া ইঁদুরের মতো কোণঠাসা করে তোলে।
কুমিল্লায় মেজর আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী মিয়াবাজারে পাকসেনাদের ওপর হামলা চালায়। ভারতীয় আর্টিলারি বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা মিয়াবাজার দখল করে নেন। আখাউড়ার আজমপুর স্টেশনে দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দিনভর যুদ্ধ চালিয়ে যায়। সিলেটের ভানুগাছায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। নোয়াখালীতে সুবেদার মেজর লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সোনাইমুড়ি মুক্ত করে। এরপর তারা চৌমুহনীতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়।
মেজর জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী মাইজদীতে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। রংপুরের পলাশবাড়ীতে ১২ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। সাতক্ষীরা থেকে পিছু হটে দৌলতপুরের দিকে যায় পাকবাহিনী।
পাকিস্তান এয়ারলাইন্স পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে সব ফ্লাইট বাতিল করে। সামরিক কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি ও নিষ্প্রদীপ ব্যবস্থা পালনের নির্দেশ দেয়। এদিন ১১নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী কামালপুর বিওপি আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
এদিকে বিকেলে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কালকাতার এক বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে ভারতের বিমানবাহিনীর স্থাপনা ও রাডার স্টেশনগুলোতে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। পাকিদের এ আক্রমন অপারেশন চেঙ্গিস খান নামে পরিচিত । টাইম ম্যাগাজিন জানাচ্ছে, নয়াদিল্লীতে সহসা অন্ধকার নেমে এলো। সন্ধ্যা ৬টায় ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোতে সাংবাদিকরা একত্র হয়েছিলেন বাংলাদেশের যুদ্ধের খবর সংগ্রহের নিয়মিত কাজে। তখন বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, এটা ব্ল্যাক আউটের মহড়া নয়, আসল ঘটনা। এইমাত্র আমরা জানলাম, পাকিস্তানি বিমানবাহিনী অমৃতসর, পাঠানকোট ও শ্রীনগরে হামলা করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতা সফরকালে ব্রিগেড প্যারেড ময়দানের সভা সংক্ষেপ করে সন্ধ্যায় হঠাৎ দিল্লী রওয়ানা হন। রাতে জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে তিনি বলেন, পাকিস্তান আজ ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছে। ভারতকে এ যুদ্ধ মোকাবিলা করতে হবে। পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে।পরদিন লোকসভার অধিবেশনে ইন্দিরা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বিষয়ে বক্তব্য দেন। এভাবে এ দিনেই পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয় ।
এদিকে পাকিস্তানের ভারত আক্রমণের জের ধরে এ দিনে গঠন হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড। ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনী সম্মিলিতভাবে পূর্ব সীমান্তে অভিযান শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের পাক অবস্থানকে ঘিরে ফেলার প্রচেষ্টায় সীমান্তের ৭টি এলাকা দিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণ পরিচালনা করে। পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানের চার ডিভিশন সৈন্য ভারতের সাত ডিভিশন সৈন্য ও মুক্তিযোদ্ধার মুখোমুখি হয়।
এদিনে জামায়াতের গু আজম করাচীতে বলেনঃ
এদিন জুমার নামাজের পর ভারতীয় হামলার প্রতিবাদে একটি মিছিল চট্টগ্রাম শহর প্রদক্ষিণ করে লালদীঘি ময়দানে জড়ো হয়। জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আল-মাদানীর সভাপতিত্বে এ সভায় বক্তব্য রাখেন কনভেনশন লীগ প্রধান ফজলুল কাদের চৌধুরী, পিডিপির মাহমুদুন্নবী চৌধুরী, ছাত্রনেতা আবু তাহের প্রমুখ।
(দোহাইঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, মূলধারা’৭১, বিবিসি নিউজ আর্কাইভ,ইত্তেফাক, উইইকিপেডিয়া )
++++++++++++++++ প্রতিদিন চলুক। বিজয়ের দিন পর্যন্ত।
বাবার ডায়েরিতে ১৯৭১ থেকে...
ডিসেম্বর ৩, ১৯৭১
পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নাকি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সাথে সাথে আগ্রা ও কানপুরে আক্রমন শুরু করিয়াছেন। ঐদিন রাত্রে ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে। শুরু হয়েছে ত্রিমুখী যুদ্ধের সূচনা।
:star:
ধন্যবাদ
একাত্তরের এই সময়ে চুড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার ইতিহাস...
মানিক ভাইকে আর ধন্যবাদ দিলাম না... আমার কাছে মনে হয় এ আমার রক্তের ঋণ...
হ
অপারেশন চেঙ্গিস খান এই ঘটনাটা জানা ছিল না ।
সকাল থেকেই মাথায় ঘুরছিল, এই দিনে ৭১ সালে যেন কি হয়েছিল, মনে করতে পারছিলাম না।
পোষ্ট পড়ে মনে আসলো, ভারতে আক্রমন চালায় পাকিস্তান।
3 December barguna hanadar mukto hoy. Aj barguna mukto dibos
ধন্যবাদ
৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ । প্যারিসের অর্লি বিমানবন্দরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের একটি বোয়িংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন জাঁ ক্যুয়ে নামে এক ফরাসি যুবক। না, টাকা-পয়সা কিছু দাবি করেননি। অবিলম্বে ২০ টন মেডিকেল সামগ্রী ও রিলিফ প্লেনটিতে তোলা না হলে এটি বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। আর সেগুলোর গন্তব্য হবে পূর্ব পাকিস্তান। স্বাধীনতার জন্য লড়তে থাকা বাংলাদেশে। দুনিয়া কাঁপানো শ্বাসরুদ্ধকর এই ঘটনাটির জানতে পড়ুন পিয়াল ভাইয়ের স্যালুট জাঁ ক্যুয়ে!
মিষ্টার লুই'র নামটা ভুলে গেছিলাম । অনেক অনেক ধ্ন্যবাদ মানিক ভাই !
জানলাম অনেক কিছু, সেই সাথে মাইজদী, চৌমুহানী অংশের মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী পড়ে বেশি ভাল লাগলো। ধন্যবাদ মানিক ভাই।
ধন্যবাদ
স্যালুট জাঁ ক্যুয়ে!
প্রতিদিন চলুক। অজানা অনেক কিছুই জানা হোক।
ইচ্ছা আছে
এরপর? এর পর কী হলো?
৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
আনন্দ ভাই, কোথায় ডুব মেরে থাকেন ? প্রতিদিন দেখতে চাই ! আমিতো এখন আর খুব একটা লিখতে পারিনা হাতের কারণে । এক আঙগুলে লেখার কসররছি । দোয়া করুন ।
পড়ছি দোস্ত, সাথে আছি
প্রতিদিনই দেশকে জানি... দেশের মানুষকে জানি...
মন্তব্য করুন