৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
এদিন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের পথে মুক্তিযোদ্ধাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত হতে থাকে। এদিনে, ৪ নম্বর সেক্টর কমান্ডার লে: কর্নেল সি আর দত্ত এবং জেড ফোর্সের মেজর জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বে সিলেটের কানাইঘাট দখলের পর এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করেন। ৩ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী শমশের নগর বিমান বন্দর এবং আখাউড়া রেল স্টেশন দখল করে। ৮ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী মেহেরপুর দখল করে যশোরের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। ১১ নং সেক্টরে যৌথ বাহিনী বড় ধরনের আক্রমণ চালিয়ে পাকিদের শক্ত ঘাটি কামালপুর বিওপি দখল করে। পাকবাহিনী দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া রেল স্টেশন দখলে রাখার সর্বাত্মক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পাকিস্তান নৌ-বাহিনীর সাবমেরিন পিএনএস গাজী বিশাখাপত্তম বন্দরের কাছে আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ভারতীয় বিমান এবং নৌবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো বার বার ঢাকা, চট্টগ্রাম, চালনা প্রভৃতি এলাকায় সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। ঢাকা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি। এই ঘাঁটিতেই ছিল তাদের জঙ্গি বিমান। পাক বিমান বাহিনীতে ছিল দুই স্কোয়াড্রন (২৮টি) জঙ্গি বিমান। এক স্কোয়াড্রন চীনা মিগ-১৯ আর এক স্কোয়াড্রন মার্কিনী স্যাবার জেট। প্রথম রাতের আক্রমণেই পাকিস্তানের বিমান বহরের প্রায় অর্ধেক বিমান ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।ভারত ও বাংলাদরশ বাহিনীর মিলিত প্রত্যাঘাত, ভারতীয় বিমানবাহিনীর আক্রমণ ও নৌবাহিনীর অবরোধের মাধ্যমে পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের চরিত্র এভাবে এদিন থেকেই আমূল পরিবতির্ত হয়।
এদিকে, রণাঙ্গনে যখন যুদ্ধ চলছিল তখন আরেক যুদ্ধ চলছিল জাতিসংঘে।জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের পক্ষে মার্কিন প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে দাবি করা হয়, এ মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানকে নিজ নিজ সীমান্তের ভেতর সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
ভারতে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারও তখন চরম উত্কণ্ঠায়। ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে লিখিত এক পত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। পত্রে তারা উল্লেখ করেন, আমরা আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই যে, উভয় দেশের এই ভয়াবহ বিপদের সময় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ আপনাদের সঙ্গে রয়েছে।
পাকিদের দোসর স্বাধীনতা বিরোধীরা অবশ্য তখনো হাল ছাড়েনি। জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আবুল আলা মওদুদী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রতিটি দেশপ্রেমিক মুসলমান প্রেসিডেন্টের পেছনে রয়েছে। দুই জামাতি শুয়রের ভূমিকা:
এদিন দুপুরে ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে ভারতের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করে বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি। এখন শত্রুর প্রতি চরম ধ্বংসাত্মক প্রত্যাঘাত হানার সময় এসেছে। রাওয়ালপিণ্ডিতে একজন সরকারি মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশে যুদ্ধ চলছে। পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় চাপ মোকাবিলা করা হচ্ছে। মুখপাত্র বলেন, পাকিস্তানের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেবে বলে চীন ওয়াদা করেছে। চীনের অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চি পেং ফেই এ দিনে পাকিস্তানের ওপর ভারতীয় হামলার নিন্দা করে ইসলামাবাদকে দৃঢ় সমর্থন দেয়ার অঙ্গীকার করেন।
দোহাইঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, মূলধারা’৭১, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, একাত্তরের উত্তর রনাঙ্গন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
উইইকিপেডিয়া , ইত্তেফাক, কালেরকন্ঠ,এনওয়াইবাংলা
চলুক...
ধন্যবাদ
দারুন!
ধন্যবাদ
দারুণ। চলুক নিয়মিত।
ধন্যবাদ
সাথে আছি। চলুক।
ধন্যবাদ
পড়তেছি মানিক ভাই....
নিয়মিত চলুক
ধন্যবাদ
শুধু আমরা নই, এই লেখাগুলো পাঠ্যপুস্তকে প্রকাশ করে সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
এ তথ্যের ৩ টা সূত্র জানতে চাইছি।
ঠাকুরগাঁ মুক্ত হবার সময় এর নেত্বত্বে ছিলো ভারতীয় বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনী। ঐ সেক্টরে কোনো এমএনএ পর্যায়ের কোনো রাজনৈতিক নেতার অস্ত্র হাতে বা ফ্রন্টে কোনো রকম নেতৃত্ব ছিলো না, উনার মুলত যুক্ত ছিলেন যুব শিবির ও ক্যাম্প গুলোতে। আজিজুর রহমানের ব্যপারটা সত্য না।
৩ টা সূত্র (!) কেনু যদি তথ্যটি ভূল হয় তবে হাজারটা সূত্র কি সেটা জায়েজ করতে পারবে ?
![Aziz](http://www.bd-pratidin.com/admin/news_images/573/image_573_94899.jpg)
জানা যায়, মো. আজিজুর রহমান '৭০ সালে বৃহত্তর দিনাজপুরের আসন থেকে এমএনএ (পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য, ঠাকুরগাঁ, বালিয়াডাঙ্গি, রানিশংকৈল এবং হরিপুর থানা) নির্বাচিত হন। এরপর মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু হলে, তিনি ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। (দিনাজপুর ইনস্টিটিউটে সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য : দিনাজপুরের ইতিহাস সমগ্র। খ- নং ৫। মেহরাব আলী। পৃষ্ঠা নং : ২৭৬।) আবার সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু হলে তিনি ১৩ এপ্রিল ১৯৭১ সালে বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা মুক্তিসংগ্রাম সমন্বয় পরিষদ এর সভাপতির দায়িত্ব হাতে নেন।
'৭১ সালের আগস্ট মাসে তিনি মুজিব নগর সরকার কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের সমগ্র ৭নং সেক্টর এবং ৬নং সেক্টরের অর্ধেক অঞ্চলের জন্য লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদায় সিভিল অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজার ওই পদে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। (তথ্যসূত্র : ৩০ আগস্ট ১৯৭১ সালে জেনারেল ওসমানী স্বাক্ষরিত মুজিব নগর সরকারের জারিকৃত গোপন পরিপত্র নং : ০০০৯জি/২)।
লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদায় সিভিল অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজার হিসেবে তার সদর দফতর ছিল ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত, তরঙ্গপুরে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের ৭নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার। সে সময় তাঁর সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দিনাজপুরের তৎকালীন তরুণ সাংবাদিক বারী। বারীর বক্তব্য মতে, মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টরের প্রথম কমান্ডার মেজর নাজমুল হক ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে জলপাইগুড়িতে গাড়ি দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করলে তৎকালীন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল নুরুজ্জামান ৭ নম্বর সেক্টরের লেফটেন্যাট পদমর্যাদার সিভিল অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজার হিসেবে মো. আজিজুর রহমান এমএনের কাছে তাঁর পরিচয়পত্র তুলে ধরে তাঁর কাছে রিপোর্ট করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই অকুতোভয় নেতা মিত্র বাহিনীর অগ্রগামী বাহিনীর সঙ্গে ৪ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও মুক্ত করেন। (সূত্র: কালেরকন্ঠ ,সংবাদ )
ঠাকুরগাওয়ের একজন হিসেবে আপনি তথ্যটি ক্রসচেক করে আমাদের সঠিকটি জানিয়ে বাধিত করবেন মাহবুব সুমন ভাই ।
তথ্য সুত্র চাওয়াতে এ রকম প্রতিক্রিয়া বেশ অবাক করলো।
কোনো তথ্যের ক্রস চেক করার জন্য বেশ কয়েকটা সুত্র দরকার হয়, গভেষনার এটা একটা বৈশিষ্ঠ। এ জন্যই এটা চাওয়া।
৭১ এ উনার ভূমিকা আমার ভালোভাবেই জানা আছে। তবে ঠাকুরগাঁর মু্ক্তে উনাকে বিশেষ ভূমিকায় আপত্তি ছিলো। ফ্রন্টে উনার কোনোরকম ভুমিকা ছিলো না। ঐ সাব সেক্টরের শেখ মুজিব হত্যাকারী দলের অনয়তম ক্যাপ্টেন শাহরিয়ারের নাম আসতে পারতো। ঠাকুরগাঁও মুক্ত হবার সময় সে সময় তার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী ঠাকুরগাঁয় প্রবেশ করে। গেরিলা থেকে সম্মুখ সমরে বইয়ে এর বর্ননা পাবেন।
২০০৩ এ মুঈদুল হাসানের উদ্যোগে ড. সুকুমার বিশ্বাস ঐ সময় বৃহত্তর দিনাজপুরের অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছিলেন যার মাঝে অনেক জানা কিন্তু তথাকথিত অজানা তথ্য বের হয়ে আসে। প্রফাইক বেংগলের লিংকটা কাজ করছে না বলে সেটা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আজিজুর রহমান এমএনএ ও অন্যান্য রাজনৈতিকদের ভূমিকা অস্বীকার করছি না। তবে উনাকে হাইলাইট করাটা যুক্তিসংগত মনে হচ্ছে না। ঠাকুরগাঁ ট্রেজারী লুট করে সেই টাকা কিছু রাজনৈতিক নেতার হেফাজত দেয়া হয়। সেই টাকা মেরে দেয়া হয়। বিহারীদের মেরে সোনা দানা ও টাকা মেরে দেয়া হয় সে সময়। এর জন্য ঠাকুরগাঁর কিছু আওয়ামি নেতাকে দায়ী করা হয়। আমি কিন্তু আজিজুর রহমানের নাম বলছি না।
সুনিদিষ্টভাবে তিনটি সূত্র চাওয়ায় ওভাবে বলেছি দীর্ঘদিনের সম্পর্কের প্রেক্ষিতে । আপনি গোসসা করবেন জানলে ওভাবে বলতাম না । য হোক , আপনার কমেন্ট ও ব্যক্তিগত অনুসন্ধানের প্রেক্ষিতে আলোচ্য লাইনটি মূল পোষ্ট থেকে বাদ দেয়া হল । ভাল থাকবেন । ধন্যবাদ আবারও
পড়ছি। দারুণ উদ্যোগ মানিক ভাই
ধন্যবাদ
চলুক....
সামু এবং আমার ব্লগ ডট কম এ আমি এই সিরিজটা চালিয়েছিলাম একসময়![Smile Smile](https://www.amrabondhu.com/sites/all/modules/smileys/packs/Roving/smile.png)
ধন্যবাদ
দারুন। চলুক মানিক ভাই।
আবারো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই ।
ধন্যবাদ
সাথে আছি। চলুক।
মন্তব্য করুন