ইউজার লগইন

১০ ডিসেম্বর ১৯৭১

চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকা ছাড়া অধিকাংশ দেশের অধিকাংশ জেলা শত্রুমুক্ত। ঢাকায় পরিকল্পিত চূড়ানত্ম হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে যৌথবাহিনী। এদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গী বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্র স্তব্ধ করে দেয়, বোমা-রকেট ছুড়ে বিধ্বস্থ করে দেয় ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর। মিত্র বাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে। কয়েকটা জাহাজভর্তি পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে। সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করেছে। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রু বাহিনীকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। যৌথ বাহিনী এই তিন শহর ছাড়া রংপুর ও দিনাজপুর জেলা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত করে। রাতে পাকিস্তানি বাহিনী জামালপুর গ্যারিসন ছেড়ে ঢাকার দিকে পালানোর সময় শহরের অদূরে যৌথ বাহিনীর মুখোমুখি হয়। এ যুদ্ধে প্রায় এক হাজার ৫০০ পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। বাকিরা আত্মসমর্পণ করে।

এদিন ৫৭ নম্বর ডিভিশন গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল মিত্রবাহিনী কীভাবে রাজধানী ঢাকার মুক্তিযুদ্ধে নদীর বাধা অতিক্রম করবে। ভোররাত থেকে ভৈরববাজারের ৩/৪ মাইল দৰিণে হেলিকপ্টার করে নামানো হলো ৫৭ নং ডিভিশনের সৈন্য। সারাদিন ধরে মেঘনা অতিক্রমের সেই অভিযান চলে। প্রথম বাহিনীটা ওপারে নেমেই ঘাঁটি গেড়ে বসল। কিছুটা উত্তরে ভৈরববাজারের কাছেই তখন পাকিসত্মানী সৈন্যদের বড় একটা মজুদ। ব্রিজটার একটা অংশ ভেঙে দিয়ে নদীর পশ্চিম পারে ওঁৎ পেতে বসে আসে। আকাশে সূর্য উঠতেই তারা দেখতে পেল হেলিকপ্টার। নদীর পার হচ্ছে, কিন্তু দেশেও তারা ঘাঁটি ছাড়তে সাহস পেল না। ভাবল ওটা বোধহয় মিত্রবাহিনীর একটি ধাপ্পা। ওদিকে ছুটে গেলেই আশুগঞ্জ থেকে মূল মিত্রবাহিনীটা ভৈরবাজার-ঢাকার রাস্তা ধরবে। সত্যিই কিন্তু পাকবাহিনীকে ভুল বোঝানোর জন্য মিত্রবাহিনী একটা বড় কলাম তখন এমন ভাবসাব দেখাচ্ছিল যে, তারা আশুগঞ্জ দিয়েই মেঘনা পার হবে। পাকবাহিনী এভাবে ভুল বোঝায় মিত্রবাহিনীর সুবিধা হলো একরকম বিনা বাধায় মেঘনা পাওয়া গেল। হেলিকপ্টারে পার হলো কিছু সৈন্য। অনেকে আবার পার হলো স্টিমার ও লঞ্চে করে। কিছু পার হলো দেশী নৌকাতে করে। ট্যাঙ্কগুলো নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল প্রথমে। কিন্তু সেই সমস্যাও দূর হলো এক অভাবনীয় উপায়ে। রাশিয়ান ট্যাঙ্ক সাঁতরাতে পারে ঠিকই, কিন্তু একনাগাড়ে আধঘণ্টার বেশি সাঁতরালেই ট্যাঙ্ক গরম হয়ে যায়। অথচ মেঘনা পার হতে আধঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে। তখন ঠিক হলো ট্যাঙ্কগুলো যতটা সম্ভব নিজেরাই সাঁতরে এগুবে। এরপর নৌকাতে দড়ি বেঁধে ট্যাঙ্কগুলো টেনে নদীর ওপারে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু এতে স্থানীয় মানুষের সাহায্য লাগবে। মিত্রবাহিনী অবাক হয়ে দেখল বাংলাদেশের কিছু রাজাকার ছাড়া সব মানুষই স্বাধীনতা চায়। সাহায্য চাওয়া মাত্রই ছুটে আসল হাজারো সাধারণ মানুষ। শত শত নৌকা নিয়ে এলো তারা। সে সব নৌকা বার বার মেঘনা পারাপার করল। বেশ কয়েক মাইল হেঁটে তারপর তারা পেঁৗছেছিল ভৈরববাজার-ঢাকার মূল সড়কে এবং পরদিনই তারা রায়পুরা দখল করে নিল। ওদিকে তখন উত্তরের বাহিনীটাও দ্রুত এগিয়ে আসছে। ময়মনসিংহের কাছে তারা দাঁড়াল। খবর ছিল যে, ময়মনসিংহে পাকবাহিনীর একটা ব্রিগেড রয়েছে, কিন্তু সে ব্রিগেডকে অনেক আগেই যে ভৈরববাজারের দিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তা মিত্রবাহিনী জানত না। তাই মিত্রবাহিনী ময়মনসিংহে বড় লড়াই করার জন্য সেদিনটা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে শম্ভুগঞ্জে অপেক্ষা করল।

যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কায় লে. জেনারেল নিয়াজি পালানোর পাঁয়তারা করে। তার এই গোপন অভিসন্ধি বিবিসি ফাঁস করে দেয়। নিয়াজি স্বীয় দুর্বলতা ঢাকার জন্য আজ ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে দম্ভভরে বলেন,

কোথায় বিদেশি সাংবাদিকরা, আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনো আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না।

পরাজয় নিশ্চিত, তবুও আত্মসমর্পণের আগে বাঙালীর নিশ্চিত স্বাধীনতা কেড়ে নিতে তখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিধ্বসত্ম পাক শাসকরা। পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাক হানাদার ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করে। দিবাগত রাতে আলবদর বাহিনীর গুপ্তঘাতক দল দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দিন হোসেন ও পিপিআইর চিফ রিপোর্টার সৈয়দ নাজমুল হককে তাঁদের বাসভবন থেকে অপহরণ করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নয়াদিলস্নীতে এক বিশাল জনসভায় ভাষণদানকালে বলেন,

যুদ্ধবিরতিসংক্রান্ত জাতিসংঘের আহ্বান ভারত প্রত্যাখ্যান করেনি বা গ্রহণও করেনি। প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।' তিনি বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয় শুধু তখনই সম্ভব হবে যখন বাংলাদেশ সরকার কায়েম হবে এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত এক কোটি শরণার্থী তাদের বাস্তুভিটায় ফিরে যেতে পারবে।

এদিকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একটি যৌথ সামরিক কমান্ড গঠন ও রণকৌশল গ্রহণ করার বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাৰরিত হয়। বাংলাদেশের পৰে চুক্তিতে সই করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরম্নল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। ভারতের পৰে সই করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

এদিন গভর্নর মালিকের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মুখ্য সচিব পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসার মুজাফফর হোসেন ক্যান্টনমেন্টে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে ‘আত্মসমর্পণের’ আবেদন হস্তান্তর করেন। এতে অবশ্য কৌশলে আত্মসমর্পণ শব্দটি বাদ দিয়ে অস্ত্রসংবরণ কথাটি ব্যবহার করা হয়। এই আবেদনে আরো লেখা ছিল ,

যেহেতু সংকটের উদ্ভব হয়েছে রাজনৈতিক কারণে, তাই রাজনৈতিক সমাধান দ্বারা এর নিরসন হতে হবে। আমি তাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দ্বারা অধিকারপ্রাপ্ত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ঢাকায় সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানাই। আমি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাই।

এই আবেদন ঢাকায় জাতিসংঘের প্রতিনিধি পল মার্ক হেনরির হাতে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি মহলে বার্তাটি মালিক-ফরমান আলী বার্তা হিসেবে পরিচিতি পায়। পরদিন তা আবার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। বস্তুত রাও ফরমান আলীর প্রস্তাবের সংবাদ ওয়াশিংটনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার এই প্রস্তাব রদ করার পরামর্শসহ ইয়াহিয়াকে জানান যে, পাকিস্তানী বাহিনীকে সাহায্য করার জন্য সপ্তম নৌবহর ইতিমধ্যেই বঙ্গোপসাগরের দিকে রওনা হয়েছে। এর ফলে ইয়াহিয়ার মত পরিবর্তিত হয়। অন্যদিকে নিক্সনের পূর্ববর্তী সতর্কবাণীর জবাবে ৯ই ডিসেম্বরে ব্রেজনেভ নিক্সনকে জানান যে, উপমহাদেশের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন পূর্বাঞ্চল থেকে পাকিস্তানী সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য ইয়াহিয়াকে সম্মত করানো।রণাঙ্গনের বাস্তব চাপে ১০ই ডিসেম্বরে পাকিস্তান নিজেই যখন ‘সম্মানজনক’ভাবে সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য উদ্যোগী হয়ে ওঠে, তখন সেই উদ্যোগকে সমর্থন না করে মার্কিন সরকার বরং তা রদ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। অধিকন্তু ভারতকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত করানোর তাগিদ দিয়ে ৯ ও ১০ই ডিসেম্বরে নিক্সন ব্রেজনেভকে দু’ দফা বার্তা পাঠান। ১০ই ডিসেম্বরে ভারতীয় বাহিনীর মেঘনা অতিক্রমের সংবাদ লাভের পর যে কোন মূল্যে এই অগ্রাভিযান রোধ করে সপ্তম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী করার মত সময় লাভের উদ্দেশ্যে, ভারতীয় সৈন্য ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার শর্ত ছাড়াই, যে যেখানে আছে সেই ভিত্তিতে ‘নিশ্চল যুদ্ধবিরতি’ (standstill cease-fire) কার্যকর করার ব্যাপারে ভারতকে সম্মত করানোর জন্য ব্রেজনেভের উপর চাপের মাত্রা বাড়ানো হয় এবং তাকে জানানো হয় যে, ভারত যদি এর পরেও সম্মত না হয় তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।নিক্সন প্রদর্শিত এই ভীতি জোরদার করার উদ্দেশ্যে কিসিঞ্জার নিজেও ওয়াশিংটনস্থ সোভিয়েট প্রতিনিধি ভোরেন্টসভকে ‘ভারতীয় আক্রমণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সাহায্য করার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার-সংক্রান্ত’ ১৯৬২ সালের স্মারকলিপি পড়ে শোনান এবং এই অঙ্গীকার রক্ষার জন্য মার্কিন সরকারের সংকল্প ব্যক্ত করেন।ঐ দিন সন্ধ্যায় কিসিঞ্জার নিউইয়র্কে হুয়াং হুয়ার সঙ্গে সমগ্র পরিস্থিতি আলোচনা করেন এবং বিশেষ করে ‘পশ্চিম পাকিস্তানের সশস্ত্রবাহিনী ধ্বংসের জন্য ভারতীয় পরিকল্পনা’ সম্পর্কে সিআইএ কর্তৃক সংগৃহীত ‘নির্ভরযোগ্য তথ্যের’ উল্লেখ করেন।সম্ভবত এই আলোচনার ফলে তিব্বত ও সিংকিয়াং-এর মত ভূখণ্ডের জন্য ‘ভারত-সোভিয়েট আঁতাত’ কোন তাৎপর্য বহন করে কি না সে সম্পর্কে হুয়াং হুয়ার সন্দেহ গভীরতর হয় এবং হুয়াং হুয়া উপমহাদেশের সংঘর্ষে চীনের সামরিক দায়িত্ব সম্পর্কে যে আবেগপূর্ণ মন্তব্য করেন তা কিসিঞ্জার ‘বিলম্ব হলেও চীনের সামরিক হস্তক্ষেপের আভাস’ হিসাবে গণ্য করেন।২৮২ ফলে উৎসাহিত কিসিঞ্জার একই দিনে অর্থাৎ ১০ই ডিসেম্বরে তৃতীয় বারের মত হুঁশিয়ারিসহ সোভিয়েট ইউনিয়নকে জানিয়ে দেন যে, ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করানোর ব্যাপারে শীঘ্রি কোন সন্তোষজনক উত্তর যদি সোভিয়েট ইউনিয়ন না দিতে পারে, তবে যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর প্রেরণসহ ‘শক্ত ব্যবস্থা’ গ্রহণ করবে।

এদিকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনী ঢাকা ঘেরাও করে পাকবাহিনীকে আত্মসমর্পন করার জন্যে আহবান করে। গভর্ণর হাউজে (বর্তমান বঙ্গভবন) বোমা ফেলার কারণে গভর্ণর মালেকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের পদলেহী সরকারও ইতিমধ্যে পদত্যাগ করে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল (বর্তমান হোটেল শেরাটন) আশ্রয় নেয়। সময় থাকতে শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে আকাশ থেকে অনবরত লিফলেট ফেলা হতে থাকে।

এদিনে দুঃখজনক একটি ঘটনা ঘটে । Ruhul খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামে রূপসা নদীতে নৌবাহিনীর জাহাজ পলাশ নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর ভারতীয় বিমান বাহিনীর সাথে এক 'ভুল বোঝাবুঝির যুদ্ধে' গোলার আঘাতে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ' রুহুল আমিন৷ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারত সরকার বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে দুইটি টাগবোট উপহার দেয়। এগুলোকে কোলকাতার গার্ডেনরীচ নৌ ওয়ার্কসপে দুইটি বাফার গান ও মাইন পড লাগিয়ে গানবোটে রূপান্তরিত করা হয়। গানবোট দুটির নামকরণ করা হয় ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। রুহুল আমিন নিয়োগ পান ‘পলাশের’ ইঞ্জিন রুম আর্টিফিশার হিসেবে। ৬ই ডিসেম্বর মংলা বন্দরে পাকিস্তানী নৌ ঘাটি পি. এন. এস. তিতুমীর দখলের উদ্দেশ্যে ‘পদ্মা’, ‘পলাশ’ ও মিত্র বাহিনীর গানবোট ‘পানভেল’ ভারতের হলদিয়া নৌ ঘাটি থেকে রওনা হয়। ৮ই ডিসেম্বর সুন্দরবনের আড়াই বানকিতে বিএসএফের পেট্রোল ক্রাফট ‘চিত্রাঙ্গদা’ তাদের বহরে যোগ দেয়। ৯ই ডিসেম্বর কোন বাধা ছাড়াই তারা হিরণ পয়েন্টে প্রবেশ করেন। পরদিন ১০ই ডিসেম্বর ভোর ৪টায় তারা মংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সকাল ৭টায় কোন বাধা ছাড়াই তারা মংলায় পৌছান। পেট্রোল ক্রাফট চিত্রাঙ্গদা মংলাতেই অবস্থান নেয় এবং পানভেল, পদ্মা ও পলাশ সামনে অগ্রসর হওয়া আরম্ভ করে। দুপুর ১২টায় তারা খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি পৌঁছান। এমন সময় তাদের অনেক উপরে তিনটি জঙ্গি বিমান দেখা যায়। পদ্মা-পলাশ থেকে বিমানের উপর গুলিবর্ষণ করার অনুমতি চাইলে বহরের কমান্ডার বিমানগুলো ভারতীয় বলে জানান। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে বিমানগুলো পদ্মা ও পলাশের উপর গুলি ও ও বোমাবর্ষণ শুরু করে। পলাশের কমান্ডার সবাইকে গানবোট ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু রুহুল আমিন পলাশেই অবস্থান নেন এবং আপ্রান চেষ্টা চালান গানবোটকে সচল রাখতে। হঠাৎ একটি গোলা পলাশের ইঞ্জিন রুমে আঘাত করে এবং তা ধ্বংস হয়ে যায়। শেষ মুহুর্তে রুহুল আমিন নদীতে লাফিয়ে পড়েন এবং আহত অবস্থায় কোনক্রমে পাড়ে উঠতে সক্ষম হন। দুর্ভাগ্যক্রমে পাড়ে অবস্থানরত পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকাররা তাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করে। তাঁর বিকৃত মৃতদেহ বেশকিছুদিন সেখানে পড়ে ছিলো অযত্নে, অবহেলায় Sad
Grave
দোহাইঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, মূলধারা’৭১, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর,উইইকিপেডিয়া ,মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জনকন্ঠ,কালেরকন্ঠ ইত্যাদি।

পোস্টটি ১৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

লীনা দিলরুবা's picture


তারিখ গুনে কীভাবে বিজয়ের দিন উপস্থিত হয়েছি তার সাথে এমন ডিটেইল-ও পাচ্ছি। গ্রেট কাজ মানিক ভাই। চলুক...

নুরুজ্জামান মানিক's picture


ধন্যবাদ

টুটুল's picture


ধন্যবাদ মানিক ভাই...

নুরুজ্জামান মানিক's picture


ধন্যবাদ

কালিক's picture


পড়ছি আর শিহরিত হচ্ছি।

নুরুজ্জামান মানিক's picture


আমিও

রাফি's picture


মানিক ভাইরে অনেক থ্যানকস এই সিরিজটার জন্য। ওয়েট করে থাকি এইটার জন্য।

ছবিটা বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের না মনে হয়। বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের। একবার দেইখেন।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছবি:
 birshrestha ruhul amin

সব বীরশ্রেষ্ঠের ছবিঃ
birshrestha

নুরুজ্জামান মানিক's picture


ঠিক করা হলো । ধন্যবাদ

তানবীরা's picture


বীরশ্রেষ্ঠদের ছেলে মেয়েরা, পরিবার পরিজনরা কোথায় কিভাবে আছে, কেউ কি তার খোঁজ রাখে বা জানে?

১০

মিতুল's picture


আজ ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা।

১১

নুরুজ্জামান মানিক's picture


ধন্যবাদ

১২

গৌতম's picture


মানিক ভাই, ২ তারিখেরটা মিস গেছে কোনোভাবে। ওটাও লিখে ফেলুন। তারপর সবগুলো মিলে একটা ইবুক প্রকাশ করুন।

মানিক ভাইয়ের লেখাগুলো নিয়ে ইবুক প্রকাশের ব্যাপারে উদ্যোগী হতে এবির প্রতিও অনুরোধ রইলো।

১৩

রাসেল আশরাফ's picture


সহমত গৌতম দার প্রস্তাবের সাথে।

১৪

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম's picture


সিরিজের জন্য অনেক ধন্যবাদ মানিক ভাই। আপনার অনুমতি পেলে সিরিজের লেখাগুলো আইসিএসএফ-এর মিডিয়া আর্কাইভে তুলে রাখতে চাই। আশা করি অনুমতি পাবো। ধন্যবাদ।

১৫

নুরুজ্জামান মানিক's picture


অবশ্যই

১৬

টুটুল's picture


ইবুকের বিষয়টা মাথায় আছে... তবে মানিক ভাই যদি অনুমতি প্রদান করে।

১৭

নুরুজ্জামান মানিক's picture


অনুমতি দিলাম

১৮

নুরুজ্জামান মানিক's picture


ইবুকের নাম : '১৯৭১ : ডিসেম্বরের দিনগুলো' -আহমাদ মোস্তফা কামাল

১৯

টুটুল's picture


ধন্যবাদ বস...

২০

গ্রিফিন's picture


বাংলাদেশ

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

নুরুজ্জামান মানিক's picture

নিজের সম্পর্কে

ঢাবি হতে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর । আগ্রহের বিষয় কবিতা-দর্শন-বিজ্ঞান । ১৯৯০'র দশকের শুরু থেকে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেনীর জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ,পাক্ষিক ও মাসিক সাময়িকী সমুহে প্রবন্ধ-উপসম্পাদকীয় নিবন্ধ-প্রতিবেদন-ফিচার লিখছি । ব্লগিং করি-
http://www.amrabondhu.com/user/manik
http://www.sachalayatan.com/user/manik061624
http://mukto-mona.com/banga_blog/?author=23
http://www.somewhereinblog.net/blog/nuruzzamanmanik
http://nmanik.amarblog.com/
http://www.nagorikblog.com/blog/109
http://prothom-aloblog.com/users/base/nuruzzamanmanik
http://www.mukto-mona.com/Articles/n_manik/index.htm
http://www.satrong.org/Nuruzzaman%20Manik.htm