অন্ধকারে নিমজ্জন অতঃপর......
পূর্বসুরিদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক ৫ মিনিটঃপিশাচদের প্রতি ঘৃণার প্রতীক ৫ মিনিট
বেশ কিছুদিন ধরে বাড়িতে আছি, তাই নিয়মিত অনলাইনে আসতে পারিনা, ফেসবুকেও বসিনা অনেকদিন ধরে। সেদিন ফেসবুকে লগইন করতেই দেখতে পেলাম একটা ইভেন্টের ইনভাইটেশন-"গোয়িং ব্ল্যাক আউটঃবার্থ থ্রু জেনোসাইড (অন্ধকারে নিমজ্জনঃঅতঃপর একটি রক্তস্নাত জন্ম"।)
ইনভাইটটা পেয়েই মনটা ভরে গেল। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে আমরা নতুন প্রজন্ম আর কিছু না হোক অন্ততঃপক্ষে আমাদের পূর্বসুরিদের প্রতি এই বার্তাটুকু তো দিতে পারছি যে-'আমরা তোমাদের ভুলিনি, ভুলব না, ভুলতে পারি না, পারব না। তোমাদের রক্ত দিয়ে পিশাচেরা হোলি খেলায় মেতেছিল যে রাতে সেই দুঃস্বপ্নের রাত আমরা কখনোই ভুলিনি। আমরা এটাও ভুলিনি যে ঐ কালোরাত্রির ৪২ বছর পরও পাকিস্তান আমাদের কাছে একবারের জন্যও ক্ষমা চায়নি।"
ইভেন্টের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছিল দেশ ও দেশের বাইরে প্রতিটি বাঙ্গালী। ইভেন্টের কর্মসূচি অনুযায়ী ২৫'শে মার্চ রাত ১১.৫৫ থেকে ২৬'শে মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত ৫ মিনিটের জন্য সমগ্র বাংলা নিমজ্জিত হয়ে যায় অন্ধকারে। ব্ল্যাকআউটে(অফলাইনে) চলে যায় প্রায় প্রতিটি বাংলা ব্লগ, অনেক ফেইসবুক পেইজ এবং অনলাইন রেডিও। এছাড়াও এ ৫ মিনিটের জন্য অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা চলে যান অফলাইনে, কালো হয়ে যায় তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার। এ ৫ মিনিটের জন্য সারা বাংলা একসাথে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে শ্রদ্ধা জানায় পূর্বসুরিদের প্রতি যাঁরা অসহায়ভাবে পিশাচদের হাতে খুন হয়েছিলেন ৪২ বছর আগের সেই কালরাতে।
এ ৫ মিনিট সমগ্র বাংলার প্রতিটি মানুষের মত আমিও অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে অনুভব করার চেষ্টা করেছিলাম ৪২ বছর আগে আমার পূর্বসুরিরা এই রাতে কতটা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন পিশাচদের থাবার সামনে। মাত্র ৫ মিনিট অন্ধকারে থাকতেই আমার গা শিরশির করে উঠেছে ভয়ে; অথচ '৭১এর সেই কালরাতে সব বাঙ্গালী সারারাত ডুবে ছিলেন এর চেয়ে হাজারগুণ ভয়ংকর অন্ধকারে একদল রক্তলোলুপ পিশাচদের মাঝে নিজের জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে। ৫টা মিনিট কায়মনোবাক্যে পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করেছি তিনি যেন ৪২ বছর আগের শহীদদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দেন, ৫ মিনিট পরম করুণাময়ের কাছে পিশাচ পাক হানাদার বাহিনীর বিচার চেয়েছি। ৫ মিনিট নীরবে কয়েক ফোঁটা ভালবাসার অশ্রু ফেলে শহীদদের সম্মান জানিয়েছি, শ্রদ্ধা জানিয়েছি। এই ৫ মিনিট সারা বিশ্বকে মনে করিয়ে দিয়েছে সেই গণহত্যার কথা যা আমরা কোন বাঙ্গালি আজও ভুলিনি, কোনদিন ভুলবও না। এ ৫ মিনিট সারা বিশ্বকে মনে করিয়ে দিয়েছে সেই নির্মমতম জেনোসাইডের কথা যার জন্য পাকিস্তান আজও আমাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি।
এই ৫ মিনিট শুধুমাত্র একটি সংখ্যাই নয়, সংখ্যাতত্ত্বের সীমা ছাড়িয়ে এ ৫ মিনিট বিস্তৃত হয়েছে বহুদূর পর্যন্ত। এ ৫মিনিট আজ পরিণত হয়েছে একটি জাতীয় প্রতীকে। ৫ মিনিট পরিণত হয়েছে শহীদ পূর্বসুরিদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার প্রতীকে। ৫ মিনিট পরিণত হয়েছে পাকিস্তানী পিশাচদের প্রতি আমাদের মনের সবটুকু বিষ ঢেলে তৈরি করা ঘৃণার প্রতীকে। এ পাঁচ মিনিট পরিণত হয়েছে নির্মম গণহত্যার ৪২ বছর পরও ক্ষমা না চাওয়ার মত হীনমন্যতার প্রতি সমগ্র বাঙ্গালীর ধিক্কার জানানোর প্রতীকে।
ডুয়াল পোস্ট < http://projonmoblog.com/maruf59/9072.html>
পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে লেখকের নিজের পাতায় রাখা হইলো! লেখকের প্রতি অনুরোধ রইলো, ব্লগ নীতিমালা মেনে পোস্ট করার জন্য!
মন্তব্য করুন