ইউজার লগইন

মারুফ প্রতীক'এর ব্লগ

দ্বৈধ

তখন মাঘ মাসের শুরুর দিক। তারিখটা ঠিক মনে নেই। আমাদের গ্রামের বাড়িতে প্রচণ্ড শীত পড়েছে। চারদিক কুয়াশায় ঢেকে আছে। দুদিন হলো সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছেনা। দাদাজান সেদিন ফজরের ওয়াক্তে ঘুম থেকে উঠে ভোর হয়নি ভেবে আবার শুয়ে পড়লেন। দাদাজানের আবার ঘড়ি ব্যবহার করার অভ্যাস নেই, ঘরের ভেতর ঘড়ি থাকলে নাকি তার মনে হয় ঘড়ির কাঁটার সাথে আজরাইল তাঁর চারপাশে ঘুরছে। এই সমস্যা তাঁর শুরু হয়েছে দুই বছর আগে। তখন তিনি জণ্ডিসে ভুগছেন। সারাদিন কিছু খেতে পারেননা, সন্ধ্যা হলেই তাঁর মেজবানী খাবারের প্রয়োজন হয়। আর তিনি দশ বারোজনের খাবার একাই খেয়ে ফেলেন। ডাক্তাররা মানা করার পরও দাদাজানের এই খাওয়া দাওয়া বন্ধ করা গেলনা। এর কারণটাও কেউ উদ্ধার করতে পারলনা অবশেষে বাড়িতে ওঝা ডেকে আনা হল। ওঝা সারা বাড়ি ঝাড় ফুঁক করে বললেন, মাগরিবের ওয়াক্ত শুরুর আগে বাড়িতে খারাপ জ্বিনের আনাগোনা শুরু হয়। তারা বাড়ির অসুস্থ মানুষের ওপর ভর করে। তারপর পেট

ডেভ১০১, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক সেমিস্টার, ট্রেইনিং বনাম লার্নিং

ধরুন আপনাকে ২০ জন বাংলা মিডিয়াম এবং ১০ জন ইংলিশ মিডিয়াম, মোট ৩০ জন ছাত্রছাত্রী দেয়া হল। তাদের গড় বয়স ২০ বছর অর্থাৎ যথেষ্টই ম্যাচিউর। আপনার দায়িত্ব বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে এদের কিছু অংশ ‘শেখানো’। আপনাকে বেঁধে দেয়া সময় ত্রিশ দিন। আপনি(আমি) নিজের সুবিধার্থে বেছে নিলেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১। প্রথমে আপনি যে কাজটা করতে পারেন তা হল একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা, যেহেতু আপনার হাতে সময় কম এবং শেখানোর বিষয়টা অনেক বিস্তৃত। বলা বাহুল্য আপনার ৩০ জন ছাত্রছাত্রীর ২৭ জন অর্থাৎ ৯০% নিজের দেশ, রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে ‘ব কলম’ এবং ৭০% ‘ক অক্ষর গো-মাংস’। প্রথম ২৭ জনের ৩ জন অর্থাৎ মোট পরিমাণের ১০% মুখস্ত বিদ্যায় অতি মাত্রায় পারদর্শী এবং আরও ৩ জন সত্যিকার অর্থেই মেধাবী। বাকি থাকে ৭০% অর্থাৎ ২১ জন, যাদের সিংহভাগ মাঝারি লেভেলের স্টুডেন্ট আর বাকিরা হালকা থেকে তীব্র মাপের ফাঁকিবাজ। এদের ৮৫% আবার বই পড়ায় বিন্দুমাত্রও আগ্রহী না

তুমি এলেনা

তুমি এলেনা
তোমার জন্য আমি অপেক্ষার প্রহর গুণে চলছি,
ভালোবাসার পসরা সাজিয়ে গাঁথছি নকশি কাঁথার বুনন,
আমার চোখের জলে হাসছে সুতোয় আঁকা জলকন্যা।
তুমি এলেনা
তোমার পথ ভিজে পথ ভিজে আছে শিশিরের কান্নায়,
রোজ রাতে জেগে থাকে বাগানের চারাগাছগুলি,
ওদের কান্নার শব্দে আমার চোখের পাতা মেলেনা,
তুমি এলেনা।
তোমার জন্য নিষ্ঠুর আকাশ আর আবির মাখেনা,
বিমুগ্ধ বাতাস কনকনে জল নিয়ে ফিরে আসে
মলিন সন্নাসী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রাধাচূড়ার মাতৃগর্ভ।
তবু তুমি এলেনা
তোমার অপেক্ষায় বিনিদ্র রজনী কাটছেনা আমার,
তোমার স্পর্শ ফিরে আসছেনা বরফশীতল হয়ে,
চিবুক গড়িয়েও ঝরছেনা এক বিন্দু নোনা জল।
একটু একটু করে শুধু চির ধরছে ধমনী, শিরা, উপশিরায়।
তুমি আসবেও না, জানি।
হাঁটবে না আমার পাথরে গড়া হাত ধরে,
তোমার ছোঁয়ায়ও আর থামবেনা আমার চুলের উড্ডয়ন,
নিঃশব্দ চুম্বনে কাটবেনা কোন পুর্ণিমা,

হুংকার ভুলে গেছি, কান্নাই সম্বল!

তোমার মন্দিরে আর হয়তো ফিরবনা।
স্নানের নামে পবিত্র জল আর ঘোলা করবনা,
ঘন নিঃশ্বাসে ও বাতাস আর ভারি হবেনা,
আমার গন্ধেও আর কুকুরগুলো ছুটে আসবেনা,
ওদের ঝাঁপাঝাঁপিতে তোমার বাগানও শ্রী হারাবেনা।
পূজোর থালায় উচ্ছিষ্ট বলেও আর কিছু থাকবেনা,
ধ্বংস হবেনা তোমার কষ্টার্জিত প্রসাদ।
তোমার ছায়াই যে তোমার মন্দির, আমি জানি।
ঢেকে রাখো তাকে পরম আদরে, ফুলের চাদরে!
কিংবা যদি একে মসজিদ বলেই বড়াই করো,
মুড়ে ফেল জমজমের পানিতে আর রঙ্গিন কাফনে,
সুগন্ধ তবু ছড়াবে ওই এক আগরবাতিটাই।
এক ফালি আকাশ ঢেকে মোমের আলো ছড়াতে পারো,
পারবে কি একটু সুগন্ধ ছড়াতে?
পারবেনা জানি, শুধুই হা হুতাশ করবে!
ভালোবাসি বলেই আজও তোমায় আঁকড়ে রেখেছি।
কী দিয়েছ আমায়, এক নামটুকু ছাড়া?
দুর্ভিক্ষে আজও ভাটা পড়েনি, তবু বেঁচে আছি!
মেলেনি মুক্ত সহবাসের সুযোগ, তবু বেঁচে আছি!
আমার হুংকার আজ কন্নায় বিলিন, তবু বেঁচে আছি!

পার্ট ওয়ান!!

"মামুন, এই মামুন!"
মামুনের কোন সাড়া শব্দ নেই। মামানি আবার ডাক দেয়,
"ওই নবাবজাদা! তুমি কি বাপের রাজত্ব পাইছো এইখানে। এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাও!"
মামানি মামুনের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘরের দরজা বন্ধ। এই ঘরের দরজা তিনি কোনদিন বন্ধ দেখেননি, আজ প্রথম দেখছেন। এতেই তার মনে সন্দেহ জাগছে। এই মাঘ মাসের তীব্র শীতের মধ্যেও তিনি এতক্ষণ হল এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মত শিশির পড়ছে। গত সপ্তাহেই ইন্ডিয়া থেকে আনা গায়ের শালটা ভিজে একাকার। তারপরও তিনি মামুনের ঘরের সামনে থেকে নড়ছেন না। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তিনি বিরক্ত হয়ে দরজায় ধাক্কা দেয়া শুরু করলেন। মামুন তবু দরজা খুলছেনা। এই শীতে এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না, তিনি ঘরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যাওয়ার আগে মামুনের ঘরের দরজার কাছে মুখ লাগিয়ে হুমকি দিয়ে আসলেন,

স্পর্শের বাইরে

সেদিন রাস্তার ধারে গুঁড়ের জিলাপী দেখে রোমেল ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল। গুঁড়ের জিলাপী ওনার খুব প্রিয় একটা জিনিস। ঢাকা শহরের কোথায় কোথায় ভালো গুঁড়ের জিলাপী পাওয়া যায়, রোমেল ভাইয়ের তা মুখস্ত। উনি যে কতবার আমাকে নিয়ে সেসব জায়গায় নিয়ে গেছেন তার হিসেব নেই। এই জিনিস যে আমার খারাপ লাগে, তা কিন্তু না। সমস্যা হল গুঁড়ের জিলাপীর দোকানে রোমেল ভাই যান হেঁটে হেঁটে। আর তাঁর সাথে আমাকেও হাঁটতে হয়, যেটা আমার সবচেয়ে অপ্রিয় কাজ। শুধু যে ঢাকার ভেতরেই ‘গুঁড়ের জিলাপী অভিযান’ চলে, তা না। ঢাকার বাইরে বেশ কিছু জায়গায় আমরা গিয়েছি জিলাপী খেতে। সেই যাত্রাগুলো আরো ভয়ংকর। ঢাকায় অলি-গলি এমনিতেই বেশি, রোমেল ভাইয়ের জিলাপীর দোকানগুলো আবার এসব গলির শাখা-প্রশাখার ভেতর, যেখানে কোনভাবেই রিক্সা ঢোকা সম্ভব না। অবশ্য সম্ভব হলেও কোন লাভ হত না!

অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যপট অতঃপর মায়াময় গোধূলি

সেদিন স্কুল থেকে বের হয়ে দেখি বড় মামা দাঁড়িয়ে। উনি থাকেন চিটাগাং। সকালে যখন স্কুলে আসলাম তখনও উনি ছিলেন না। এর আগেও তো ঢাকায় আসার কোন খবর দেননি। বন্ধুদের কাছে সারপ্রাইজ নামে একটা শব্দ শুনেছি। কেউ হঠাৎ করে না জানিয়ে বেড়াতে আসলে বা উপহার দিলে তাকে সারপ্রাইজ বলে। আমি কোনদিন কোন সারপ্রাইজ পাইনি, কাউকে না জানিয়ে বড় মামার বেড়াতে আসাটাই হয়তো আমার জীবনের প্রথম সারপ্রাইজ। আমি দৌড়ে মামার কাছে যেতে ধরে হোঁচট খেলাম, কিন্তু পরলাম না। মামা খপ করে ধরে আমাকে কোলে তুলে নিলেন, আমি যখন আরো ছোট, তখন মামা আমাকে এভাবে কোলে তুলে আকাশে ছুড়ে দিতেন। আমি তখন আনন্দ ধরে রাখতে পারতাম না। প্রাণচঞ্চল হাসির সাথে হাত পা ছোড়াছুড়ি করতাম। তারপর মামা আবার ক্রিকেট বলের মত আমাকে ধরে ফেলতেন। তবে মামার সেই হাস্যোজ্জ্বল মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে আছে, চোখ লাল হয়ে আছে। মামা আমাকে কোলে নিয়ে মৃদু হাসি দিলেন, যা ঠিক হাসি মনে হল না।

মা

“তোমার কি মনে হয়, আত্মহত্যা করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?”
মৃত্তিকার পেছন থেকে অচেনা নারী কণ্ঠ। একজন মধ্যবয়স্কা দাঁড়িয়ে। পরনে সবুজ শাড়ি, চুল উষ্কশুষ্ক, চোখের নীচে কালি পড়া, ঠোঁটে অম্লান মৃদু হাসি।
“এছাড়া তো আমার আর কোন পথ নেই”, কোনদিকে না তাকিয়েই উত্তর দিল মৃত্তিকা।
“কী আর এমন হয়েছে তোমার?”, নারীকণ্ঠের ব্যঙ্গাত্বক জিজ্ঞাসা।
“এর চেয়ে খারাপই বা কী হতে পারে?”
“তুমি অবহেলিত?”
“যাকে জীবনে সবচেয়ে বেশি ভালবেসেছিলাম তার কাছেই।”
“এই মানুষটিই কি তোমাকে ছোট থেকে বড় করেছে? ভালোবাসতে শেখার উপযোগী করে তুলেছে?”
“ভালোবাসতে শিখেছি বলেই সে এসেছে।”
“সেটাই স্বাভাবিক। ভালোবাসতে জানলেই তারা কাছে আসে। সম্পদের পাহাড়ই তাদের একমাত্র কাম্য।”
“সম্পদের তো ওর অভাব ছিল না!”
“এ জগতে হায়, সেই বেশি চায়, যার আছে ভুড়ি ভুড়ি,
রাজার হস্ত করে, সমস্ত কাঙ্গালের ধন চুরি।
আমরা কাঙ্গালের চেয়ে কম কিসে?”
“তুমিও কি আমার মত...”
“তুমি নির্যাতিত?”
“আগে কখনও ছিলাম না।”
“এই নির্যাতন নিশ্চয়ই ওই স্বার্থপর মানুষটির দ্বারা!”
“ও স্বার্থপর না। ও ভালোবাসতে জানে, তবু বাসেনা।”
“এটাই কি তোমার ওপর নির্যাতন?”

বাতাসে ককটেলের গন্ধ

কুড়ি পেড়িয়েছি সেই যুগল বৎসর হল,
শতাব্দীর সঙ্গীত বোদ্ধারা তখন একত্র আমার মাটিতে ।
হয়তো আমি খুঁজে ফিরছি অন্য কোন পথ,
তবু সে পথ আমার বেঁকে এসে পরে এই উঠোনে ।
বিনিদ্র রজনী আর সুরের মূর্ছনা,
হেঁটে চলছি আমি এক অন্য পথের পথিক ।
বিদ্রোহী মন চায় একলা ছুটে যাই
উৎসবের অন্তরালে,দূষিত ফুসফুসের স্পর্শে,
পারিনা,আমি পারিনা,
শত চেষ্টায়ও আমি ব্যর্থ,হয়তো সুপ্ত ইচ্ছায় !
খ্রিস্টাব্দে সময়টা তখন স্থিমিত সূর্য,
আমি ব্যস্ত অপরিচিত আঙ্গিনার মুগ্ধতায়,
হঠাৎ শুনি শ্রবণরুদ্ধ এক ধ্বনি ।
না,এ কোন ধ্বনি না,এ তো অশ্রাব্য অপসংস্কৃতি
যেখানে সঙ্গীত অপমানিত,বাকরুদ্ধ সংস্কৃতি,
এরই মাঝে ভেসে আসে,নাস্তিকতা রোগাক্রান্ত ।
তবে কি বন্ধু তুমি দেখোনা ?
তোমার ধর্মবাদীরা আজ ককটেল আক্রান্ত ।
আর তথাকথিত নাস্তিকরাই সেখানে অসহিংস ।
আমি তো এক নির্জন পথের বিদীর্ন পথিক
ফুসফুসটা বিশুদ্ধ না হলেও তো চলছে,
নিঃশ্বাসের সাথে তবে আজ এই কিসের গন্ধ পাই ?
এ কি সপ্তম আসমান পেড়োতে পারেনি ?
তুমি এখনও নিশ্চুপ,এ কি করে সম্ভব ?
আমার শুদ্ধ মাটির সুগন্ধ যে ক্রমেই দুর্গন্ধময় হচ্ছে,
বাতাসের অক্সিজেন ভারি হয়ে আসছে

হু ইজ দ্য বাস্টার্ড

"উকিল সাব,স্লামালিকুম"
আশরাফ সাহেব দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিলেন।রাত দুপুরে অচেনা কন্ঠের সালাম তাঁর জন্য নতুন কিছুনা।হয়ত নতুন কোন নাইট গার্ড।তিনি হাঁটতে হাঁটতেই সালামের উত্তর দিলেন।অচেনা কন্ঠ বলে উঠল,"উকিল সাব কি ব্যস্ত?এই রাইত দুপুরে আবার কিসের ব্যস্ততা?"
আশরাফ সাহেব লক্ষ্য করলেন কেউ তাঁর পিছে পিছে আসছে।এত রাতে এই রাস্তায় আর কারো থাকার কথা না।তাছাড়া কোন নাইট গার্ড ডিউটি ছেড়ে তাঁর পিছে আসবেনা।তিনি ভয়ে ভয়ে দাঁড়ালেন।পিছু নেয়া লোকটি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালো।আশরাফ সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।লোকটি এবার বলল,
"উকিল সাব মনেহয় আমারে চিনতে পারেন নাই"
"না,কে তুমি?" আশরাফ সাহেব ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলেন।
"আমি কসাই কাদের।দাড়ি-গোঁফ বড় হয়ে গেছে,তাই হয়তো চিনতে পারেন নাই"
আশরাফ সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।তিন বছর আগে জোড়া খুনের মামলায় কসাই কাদেরের ফাঁসির আদেশ হয়েছে,তিনি নিজে বাদী পক্ষের উকিল ছিলেন।তাঁর মুখ থেকে কোন শব্দ বের হল না।কসাই কাদের তার কোন অপেক্ষা না করে বলতে লাগল,
"উকিল সাব,ভয় পাইবেন না।আমি আপনারে মারতে আসি নাই।আমি দোষ করছি,শাস্তি হয়েছে।আপনি আমার শাস্তি দেয়ার ওসিলা মাত্র"

তবুও আঁখিজলে হলুদ স্বপ্ন

শুনেছি কেউ কারো পিছু নিলে ভিকটিম বিষয়টি বুঝতে পারে এবং বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে।কেউ কোনদিন আমার পিছু নিয়েছিল কিনা মনে করতে পারছিনা,তবে এই মুহূর্তে যে কেউ আমার পিছু নিয়েছে সেটা বুঝতে পারছি।লোকটা বেশ লম্বা,পেছনে না ঘুরেও সেটা বোঝা যাচ্ছে।এখন পড়ন্ত দুপুর,সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়তে শুরু করেছে,আর আমি হাঁটছি পূর্ব দিকে।আমাকে ফলো করা লোকটা নিজেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও একটু পর পর আমার পাশে তার ছায়া এসে পড়ছে।পরক্ষণেই সীমাহীন ব্যস্ততায় ছায়াটি নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে।

একটি পাঞ্জাবীর আত্মকাহিনী

‘জন্মই যার আজন্ম পাপ’
কথাটা কে বলেছেন জানিনা,তবে এই কথা আমার প্রায়ই মনে হয় যখন পকেটে রান্নাঘর থেকে চুরি করা দিয়াশলাই কিংবা সিগারেটের প্যাকেটের আশ্রয় হয় খুবই যত্ন সহকারে।সেটা লাইটারের স্থান হলে তো বেশ ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়।অবশ্য এগুলো শারীরিক চাপ।মানসিক চাপ টা এর চেয়ে অনেক বেশী ভয়ংকর।পূজার দিনে আমাকে উদ্দেশ্য করে অনেক কথাই বলা হয় যখন আমার মালিক মুসলিম।আবার ঈদের দিন একই ঘটনা ঘটে সত্ত্বাধিকারী সনাতন ধর্মাবলম্বী বলে।অথচ জন্মের সময়ত কেউ আমার ধর্ম বিবেচনা করেনি।আমার জন্মদানে অবদান তো সবারই আছে।যিনি ডিজাইন করেছেন তিনি হয়ত খ্রিস্টান,শরীরটা যিনি তৈরী করেছেন তিনি মুসলিম, আবার আমার আকার দানকারী হিন্দু।আমি জানিনা কে কোন ধর্মের,তবে সবাই আমার জন্মদাতা-জন্মদাত্রী।

একজন অনন্ত জলিল

সেদিন কি বার ছিল মনে নেই।যেটাই হোক,ভার্সিটি বন্ধ।ঘুম থেকে উঠলাম দুপুর ১২টার দিকে,তাও সুমিতের ফোন পেয়ে।এই ছেলেটা এতই এক্সাইটেড ছিল যে তার কথাগুলো ভুলতে পারিনি।প্রথমবার ফোন রিসিভ করিনি,দ্বিতীয়বারে রিসিভ করে বললাম,“হ্যালোওওও”।ওপাশ থেকে সুমিত বলল,“কিরে ঘুম থেকে উঠিসনি?”বুঝলাম, অনেক বেজে গেছে।“হুম,উঠবনা মানে!ওয়াশরুমে ছিলাম।”“আমি ভাবলাম উঠছিস কিনা!আমিতো চলে আসছি,তুই তাড়াতাড়ি আয়।"
হাতিরঝিল হওয়াতে কার কি সুবিধা হয়েছে জানিনা,আমার কিন্তু বেশ সুবিধা হয়েছে। অনেক রাস্তাই ছোট হয়ে গেছে।এই যেমন সেদিন ওরা ১২টার কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে বসে ছিল,আর আমি ঘুম থেকেই উঠলাম ১২টায়।

ওহ!বেশি বকবক করে যাচ্ছি,আসল কথায় আসি।সেদিন বসুন্ধরা সিটিতে জমায়েত হওয়ার উদ্দেশ্য মুভি দেখা(স্টার সিনেপ্লেক্সে বাংলা চলচ্চিত্র দেখলেও ভাব নিয়ে সেটাকে মুভি বলতে হয়,তাই আমিও একটু ভাব নিলাম)।মুভি/চলচ্চিত্র/ছবির নাম “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা-WHAT IS LOVE”,উদ্যোক্তা মৌমিতা।বোঝাই যাচ্ছে,অনন্ত জলিলের ছবি,এক্সাইটমেণ্ট একটু বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক।বলা বাহুল্য,অনন্ত’র কোন ছবি আমি এর আগে হলে গিয়ে দেখিনি।

এমন যদি হত

ঊনিশ তলার উপর থেকে কোন কিছুই স্পষ্ট দেখা সম্ভব না, অথচ আমি ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। রিক্সা থেকে নেমে রাস্তা পার হচ্ছে,ওর এক হাতে সিগারেট আর অন্য হাতে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগের বেল্টটা ধরা।আজ ও হলুদ টি-শার্ট টা পরে এসেছে,সাথে ওই সবুজ প্যান্টটাও।এই পোশাকে অনিকে দেখলেই তো হাসি পায়।সেদিন লাইব্রেরী রুমে পড়ছিলাম আমি,অনি,রোমেল আর নিশা।এদের মধ্যে পড়ার মত পড়ছিল শুধু নিশাই।বাকি তিনজন ছিলাম হুমায়ূন আহমেদের টি-মাস্টার হয়ে।এই নামটা আমার দেয়া না,নিশার দেয়া।প্রায় প্রতিদিনই আমরা একসাথে পড়তে বসি,নিশা পড়ে আর আমরা যথারীতি ফাইজলামি করি যার ফলস্বরূপ আমাদের এই নাম দেয়া হয়েছে।জীবনে কিছু করতে না পারলেও হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর তিনটা চরিত্র তো হতে পেরেছি!
ওইদিন অনি বেশ ফানি মুডে ছিল আর বলির বাখড়া ছিলাম আমি।টপিক টা না হয় বাদই দিলাম!সেদিন ও কেন এত এক্সাইটেড ছিল সেটা বোঝা যাচ্ছিলনা।হঠাৎ রোমেল বলে উঠল, “অনি তোমার ঘাড়ে কিসের দাগ?”বলা বাহুল্য রোমেল ছেলেটা কথাবার্তা কম বলে,নীরবে উপভোগ করাটাই বোধ হয় ওর নীতি।সবাই ওকে তুই করে বললেও রোমেল সবাইকে ‘তুমি’ সম্বোধন করে।

অসমাপ্ত সমাপ্তি

"যতদিন ছোট থাকবে,মন ততদিন পবিত্র থাকবে।বড় হতে শুরু করলেই মন অপবিত্র হতে শুরু করবে।"
"কিন্তু আমিতো জাহান্নামে যেতে চাই,তাহলে এত পবিত্রতা দিয়ে কী হবে?"
"জাহান্নামে তো তুমি যাবেই,সেটা তোমার জন্য হোক বা আমার জন্যই হোক।মন পবিত্র রাখবে জান্নাতে যাওয়ার জন্য না,চারপাশের পরিবেশের সৌন্দর্য অনুভব করার জন্য।তা না হলে জাহান্নামে গিয়েও বিরক্ত লাগবে।"