আমরা যখন নাস্তিক
প্রশ্নঃনাস্তিক অর্থ কি?
উত্তরঃAtheist.
উত্তর ভুল,নাস্তিক অর্থ Blogger
বিভ্রান্ত??সেটাই স্বাভাবিক।
ঘটনা কয়েকমাস আগের।তখন হেফাজতের ব্যাপক তৎপড়তা চলছে।সেদিন সকালে এক বন্ধু ফোন করে বলল তার খুব জরুরী দরকার,খুব দ্রুত দেখা করতে হবে।আমি ভাল মানুষের মত ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে বাসা থেকে বের হলাম।ওইদিন কিসের ছুটি ছিল জানিনা,বের হওয়ার সময় দেখলাম আম্মু স্কুলে যায়নি।আমাকে নাস্তা করে যেতে বলল,আমি না খেয়েই চলে গেলাম।বন্ধুর বাড়ির কাছাকাছি যেতে ১০ মিনিটের মত লাগল।পাশের চায়ের দোকানে চায়ের দোকানে বসে ওকে ফোন দিলাম।আজব!!কোন সাড়া নাই,কয়েকবার ট্রাই করলাম,লাভ হল না।নাস্তা না করেই বের হয়ে আসলাম,এখন দেখি পেট মোচড় দেয়া শুরু করছে।আম্মুর কথা শুনে বের হলেই হত,এখন আবার এই কুলাঙ্গার ফোনটাও ধরছে না।কি আর করা,একটা সিগারেট ধরিয়ে চায়ের দোকানেরই একটা বেঞ্চে বসলাম।একটু পর লক্ষ্য করলাম সামনে বসে নূরানী চেহারার অল্পবয়স্ক চারটা ছেলে বসে নিম্নস্বরে কথা বলছে।অনিচ্ছা থাকলেও তাদের কথা আমার কানে আসল।শুনলাম তারা একটু পর পর 'Blogger' শব্দটা ব্যবহার করছে।আমার ক্ষীণ সন্দেহ হল তারা Blogger শব্দের মানে না জেনেই কথা বলছে।তাছাড়া খোঁচাখুঁচির বদ অভ্যাস থাকায় তাদেরকে একটু টেস্ট করার ইচ্ছা হল।
ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বললাম,"ভাই,Blogger মানে জানেন??"
তাদের মধ্যে নেতা টাইপের একজন পরম উৎসাহে বলল,"জানিতো,জানব না কেন??"
আমি বললাম,"এই বিষয়ে আমার আইডিয়া কম,আমাকে একটু বলবেন Blogger মানে??"
উপস্থিত সবাই প্রায় একসাথে বলে উঠল, "Blogger মানে নাস্তিক।।"
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের সংকুচিত রূপ আমার জানা আছে,কিন্তু হাসি-কান্নার সন্ধিক্ষণের সংকুচিত রূপটা আমার জানা নাই।তখন আমি এই অসংজ্ঞায়িত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম।এই অবস্থা থেকে আমাকে উদ্ধার করে আমার বন্ধু।
পরে জানতে পারি ওই ছেলেগুলো কয়েকদিন আগে তাদের দাখিল পরীক্ষা শেষ করেছে।আর এই Blogger বিষয়ক শিক্ষা তাদের 'ওস্তাদজি'র।
তো্মার কাজ হোক বা না হোক বন্ধু,খালি পেটে একটা ভালো অভিজ্ঞতা ঠিকই হল।
"পুনশ্চ"
দাখিল(এসএসসি সমমান)পাশ কয়েকজন মাদ্রাসা ছাত্রের কাছে Blogger শব্দের এমন অর্থ শুনে বেশ অবাকই হয়েছিলাম।প্রশ্ন আসতেই পারে ১৬-১৭ বছরের একটা ছেলে কিভাবে এই বিভ্রান্তিতে বিশ্বাস রাখতে পারে?দায়ী কে?দাখিল পাশ করা সেই অবিবেচক ছেলেটি যে মোটা চালের ভাত আর কদাচিৎ খিচুরির স্বাদে তার স্কুল জীবন পার করেছে,ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে দিনাতিপাত করেও যার মুখের হাসিটা এক মুহূর্তের জন্যও ম্লান হয়নি;বরং বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাদিয়ার নামে ভিক্ষা করেছে,সমাজের তাচ্ছিল্য বহন করেছে,লাঠি হাতে পথে নেমে মার খেয়েছে;তারপরও শিক্ষকের প্রতি আনুগত্য হারায়নি,তাঁর কথা বিবেচনা না করেই বিশ্বাস করে ফেলেছে।নাকি এসএসসি পাশ করা সেই সুবিবেচক ছেলেটি যে পরম সুখে বড় হয়ে,শিক্ষকের কাছে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ পেয়েও শিক্ষককে চ্যালেঞ্জ করতে পিছপা হয়না।স্বাধীনতার দাবিদার প্রত্যেকটা মানুষ এর জন্য দায়ী।কেন আমরা স্বাধীনতা ভোগ করব একটি গোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে আর কেনই বা সমাজ একটি স্বাধীন দেশের বুলি আওড়াবে যেখানে একটি গোষ্ঠী গড়ে উঠছে বিভ্রান্তির ভীতের ওপর।একুশের শোকে আমাদের চোখ ভিজে ওঠে,আবার গরজে ওঠে স্বাধীনতার ডাকে,আমরা মাতি বৈশাখের রঙ্গে,খুঁজে ফিরি বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলটি,হারিয়ে যাই বিজয়ের লাল সবুজ আল্পনায়।আর ওরা আজও রয়ে গেছে স্থিমিত সূর্যের আড়ালে, হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি হয়তো ওদের ভিজিয়ে দেয়,কিন্তু এরপরের রংধনুটা ওরা গায়ে মাখেনা।আর আমরা উপহাস করে সহযাত্রীর দায়িত্ব পালন করি।আমরা তো সবাই একই পথের পথিক,পথহারাদের পথ দেখানোর কাজটা আমাদেরই।।
ভাইয়া,আপনি দাখিল পাশ ছেলেটির অজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন আমি তার সাথে শত ভাগ একমত। কিন্তু আমাদের দেশে কিছু জ্ঞান পাপি আছে যারা নিয়মিত ফেস বুকে লেখে, তাদের নিজস্ব ব্লগেও লেখে (উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত) তারা বলে নাস্তিক বা অন্য ধর্মাবলীদের সাথে যারা মিশে বা আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় তারাও নাস্তিক। অথচ তারা আমেরিকা, কানাডা বা ইউরুপের বিভিন্ন দেশে বাস করে। তারা নিজেরা নিজেদের উপরেই কি থুতু ফেলছে না। এক অয়াক্ত নামাজ না পড়েও তারা ইসলামের ধারক বাহক। এদের আপনি কি বলবেন। এ সবই অজ্ঞতা ও ক্ষমতা লাভের ভেল্কিবাজি। আপনার ঈমান আপনার কাছে। সাড়া পৃথিবীর লোক বললেও আপনি নাস্তিক হবেন না,আবার সাড়া পৃথিবীর লোক বললেও আপনি আস্তিক হবেন না।
আমি আমার ব্লগে লেখা আরম্ভ করার প্রথম দিকে আস্তিক না নাস্তিক একটা লেখা লিখেছিলাম।দুটি পর্ব লেখার পর আর লিখতে পারিনি।
যাক ভাল থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
হুম
মন্তব্য করুন