একজন অনন্ত জলিল
সেদিন কি বার ছিল মনে নেই।যেটাই হোক,ভার্সিটি বন্ধ।ঘুম থেকে উঠলাম দুপুর ১২টার দিকে,তাও সুমিতের ফোন পেয়ে।এই ছেলেটা এতই এক্সাইটেড ছিল যে তার কথাগুলো ভুলতে পারিনি।প্রথমবার ফোন রিসিভ করিনি,দ্বিতীয়বারে রিসিভ করে বললাম,“হ্যালোওওও”।ওপাশ থেকে সুমিত বলল,“কিরে ঘুম থেকে উঠিসনি?”বুঝলাম, অনেক বেজে গেছে।“হুম,উঠবনা মানে!ওয়াশরুমে ছিলাম।”“আমি ভাবলাম উঠছিস কিনা!আমিতো চলে আসছি,তুই তাড়াতাড়ি আয়।"
হাতিরঝিল হওয়াতে কার কি সুবিধা হয়েছে জানিনা,আমার কিন্তু বেশ সুবিধা হয়েছে। অনেক রাস্তাই ছোট হয়ে গেছে।এই যেমন সেদিন ওরা ১২টার কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে বসে ছিল,আর আমি ঘুম থেকেই উঠলাম ১২টায়।
ওহ!বেশি বকবক করে যাচ্ছি,আসল কথায় আসি।সেদিন বসুন্ধরা সিটিতে জমায়েত হওয়ার উদ্দেশ্য মুভি দেখা(স্টার সিনেপ্লেক্সে বাংলা চলচ্চিত্র দেখলেও ভাব নিয়ে সেটাকে মুভি বলতে হয়,তাই আমিও একটু ভাব নিলাম)।মুভি/চলচ্চিত্র/ছবির নাম “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা-WHAT IS LOVE”,উদ্যোক্তা মৌমিতা।বোঝাই যাচ্ছে,অনন্ত জলিলের ছবি,এক্সাইটমেণ্ট একটু বেশি থাকাটাই স্বাভাবিক।বলা বাহুল্য,অনন্ত’র কোন ছবি আমি এর আগে হলে গিয়ে দেখিনি।
বসুন্ধরা সিটিতে আমি পৌঁছলাম একটায়, সিনেপ্লেক্সে পৌঁছতে বাজলো একটা পনেরো।সবার গন্তব্য মোটামুটি ওটাই!আমাদের অনেকেই ততক্ষণে সেখানে পৌঁছে গেছে।শো একটা চল্লিশে।
একটা পঁচিশ।
টিকিট কাউণ্টার থেকে ঘোষণা আসল,ঐদিন এবং তার পরদিনের ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’র টিকিট শেষ।আমাদের নিশ্চিন্ত থাকার কারণ আমাদের টিকিট কাটা হয়েছিল দু’দিন আগে।
অবশেষে আসল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ!ভেতরে ঢুকতে বিশাল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হল।যাকে বলে ‘ফুললি হাউজফুল’।শুরু হল ‘ঢাকার পোলা ভেরি ভেরি স্মার্ট’ গান দিয়ে।সেই ১২৪মিনিট ধরে চলল একসাথে দু’টি ছবি।একটা পর্দায়,অন্যটা গ্যালারীতে।পর্দার ছবির কাহিনী মোটামুটি সবারই জানা আর গ্যালারীরটা অনুমেয়।পুরো সময়টা ধরে চলল হাসি-ঠাট্টা-বিদ্রুপ।কাকে নিয়ে?ওই যে,যে মানুষটাকে পর্দায় দেখা যাচ্ছে,যার অভিনীত,পরিচালিত ও প্রযোজিত ছবি দেখতে ২৫০-৩০০ টাকা হাতে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেতে হয়েছে।আর একেকটা গানের সময় তো শুরু হয়েছে গণসঙ্গীত।না,এই গণসঙ্গীত উদ্দীপনার অর্থে না,বিদ্রুপ অর্থে।বিশেষ করে অনন্ত’র একেকটা ইংরেজি শব্দ উচ্চারণের সময় মনে হচ্ছিল গ্যালারীতে উপস্থিত একেকজনের IELTS স্কোর ২০ আউট অফ ১০!!
সাকিব খান বা অন্য কারো ছবি আমি দেখিনি বললে ভুল হবে।পুরটা না দেখলেও কিছু অংশ বা বেশ খানিকটা অংশ হলেও দেখেছি।সুতরাং গতানুগতিক চলচ্চিত্রের সাথে ‘মনসুন ফিল্মস’ এর চলচ্চিত্রের পার্থক্যটা খুব সহজেই ধরা যায়(আমি এই ব্যাপারে নিশ্চিত যে গালারীতে উপস্থিত দর্শকদের শতকরা ৯০ ভাগ বা তারও বেশি অংশ ‘মনসুন ফিল্মস’ সম্পর্কে জানেননা)।চলচ্চিত্র সম্পর্কে আমার ধারনা খুব বেশি নেই।তারপরও এটা বুঝতে পারি অনন্তের কনসেপ্ট,মেকিং,সিনেমাটোগ্রাফি,গ্রাফিক্সের কাজ কতটা উন্নত,বলিউডেও যা অনুপস্থিত!অথচ আমরা বাঙ্গালী হয়ে এই বাঙ্গালী মানুষটিকে নিয়ে ঠাট্টা করি আর ভারতের রজনীকান্ত,শাহরুখ খান বা অন্য কাউকে নিয়ে মেতে থাকি।রজনীকান্ত এক হাত দিয়ে চলন্ত গাড়ি আটকালে হাত তালি দেই,কিন্তু একই কাজ অনন্ত করলে হাসাহাসি করি।রজনীকান্ত দেবতা আর অনন্ত হাসির পাত্র!
এখন আসি ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’র গানে।ছবির বেশ কয়েকটা গানে কণ্ঠ দিয়েছন ভারতের শান,জুবিনগার এবং কৈলাস খের।এই মানুষগুলোর হিন্দি ভাষার গান আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয়।অথচ এরাই যখন আমাদের ভাষায় গান করে তখন টা অশ্রাব্য!যতদূর জানি বিশেষ করে ‘ঢাকার পোলা ভেরি ভেরি স্মার্ট’ গানটা নিয়ে সবার ফানের পরিমাণটা বেশী।আমার ধারনা এর একমাত্র কারন গানটা বাংলাদেশের এবং অনন্ত জলিলের ছবির।কেননা এই নিন্দুকেরাই কলকাতার ‘তুই আমার হিরো,বাকি সব জিরো’ কিংবা বলিউডের ‘লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স’ টাইপের গান নিয়ে মেতে থাকে।গানের কথাই যদি ফানের কারন হয়ে থাকে তবে বলতে হয় ঐ গানগুলোর কথা কি খুবই উন্নত!সাধারণ বিবেকবোধই তা উপলব্ধির জন্য যথেষ্ট।সুরকার বা শিল্পীর ব্যাপারে কিছু বলার অপেক্ষা থাকেনা,অনন্ত জলিল এই জায়গাটা পূরণ করেই দিয়েছেন।
গ্রামীনফোনের বিজ্ঞাপনে অনন্তর একটা ডায়লগ খুব বিখ্যাত হয়েছে,তা অবশ্য শুধু ঠাট্টা করার জন্য। যে যাই বলুক,অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন অনন্ত।বাংলা ছবির নাম শুনলে যারা নাক বাঁকা করে দূরে সরে যেত বাংলাদেশের সেই ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি সিনেমা হলে নিয়ে যাচ্ছেন তথাকথিত ‘বাংলা ছবি’ দেখার জন্য।নিন্দুকেরা যাই বলুক,তারা পকেটের পয়সা খরচ করে অনন্ত জলিলের ছবি দেখে তারপরই তো বলছে!
‘অসম্ভবকে সম্ভব করাই অনন্তর কাজ’
তিনি তা প্রমাণ করেছেন।
আমি অনন্তের কোন ছবি দেখিনি। তাকে নিয়ে মজা করা দেখেছি। আর দেখেছি তার গ্রামীন ফোনের এ্যাড। আজ আসিফ নজরুল স্যারের লেখা পড়লাম। এর আগে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস এ জলিলের জীবনি পড়েছি। তারপর থেকেই আমি তাকে স্যালুট করি।
আসিফ নজরুলের মত একটা অসভ্য কুলাঙ্গারের সার্টিফিকেট লাগে নাকি
অসম্ভবরে সম্ভব করা অনন্ত জলিলের??? দিনকাল সত্যিই খ্রাপ। আরো কত কিই যে দেখতে হয়, শুনতে হয় বাপ!
http://www.nowbdnews.com/2013/10/05/227019.htm
ভাই, মানুষের জীবনে ফানের অনেক অভাব, বুঝেনইতো
এমবিবিএস পাশ করা একজন ডাক্তার রোগী মারলেও তিনি ডাক্তার।এমবিবিএস যেহেতু পাশ করেছেন,কিছু তো অবশ্যই জানেন।মুড়ি খেয়ে তো কেউ ডাক্তার হতে পারেনা!বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ক্ষেত্রেও কথাটা একই।"আমিতো মরে যাব,চলে যাব রেখে যাব সবই"-গানটা কার সেটা সবারই জানা,ওনার পরিচয়টাও।মানুষ যেমনই হোক,তার ক্ষুদ্রতম প্রতিভাকেও সম্মান করা উচিত।কপিরাইটের মূল্য দেয়ার বদ অভ্যাসটা আমার আছে।।
মন্তব্য করুন