হু ইজ দ্য বাস্টার্ড
"উকিল সাব,স্লামালিকুম"
আশরাফ সাহেব দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিলেন।রাত দুপুরে অচেনা কন্ঠের সালাম তাঁর জন্য নতুন কিছুনা।হয়ত নতুন কোন নাইট গার্ড।তিনি হাঁটতে হাঁটতেই সালামের উত্তর দিলেন।অচেনা কন্ঠ বলে উঠল,"উকিল সাব কি ব্যস্ত?এই রাইত দুপুরে আবার কিসের ব্যস্ততা?"
আশরাফ সাহেব লক্ষ্য করলেন কেউ তাঁর পিছে পিছে আসছে।এত রাতে এই রাস্তায় আর কারো থাকার কথা না।তাছাড়া কোন নাইট গার্ড ডিউটি ছেড়ে তাঁর পিছে আসবেনা।তিনি ভয়ে ভয়ে দাঁড়ালেন।পিছু নেয়া লোকটি তাঁর সামনে এসে দাঁড়ালো।আশরাফ সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।লোকটি এবার বলল,
"উকিল সাব মনেহয় আমারে চিনতে পারেন নাই"
"না,কে তুমি?" আশরাফ সাহেব ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলেন।
"আমি কসাই কাদের।দাড়ি-গোঁফ বড় হয়ে গেছে,তাই হয়তো চিনতে পারেন নাই"
আশরাফ সাহেব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।তিন বছর আগে জোড়া খুনের মামলায় কসাই কাদেরের ফাঁসির আদেশ হয়েছে,তিনি নিজে বাদী পক্ষের উকিল ছিলেন।তাঁর মুখ থেকে কোন শব্দ বের হল না।কসাই কাদের তার কোন অপেক্ষা না করে বলতে লাগল,
"উকিল সাব,ভয় পাইবেন না।আমি আপনারে মারতে আসি নাই।আমি দোষ করছি,শাস্তি হয়েছে।আপনি আমার শাস্তি দেয়ার ওসিলা মাত্র"
আশরাফ সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
"তুমি ছাড়া পেলে কিভাবে?আগামী মাসে না তোমার ফাঁসি হওয়ার কথা?"
কাদের উচ্চস্বরে হাসতে লাগল।
"উকিল সাব,রাজাকারদের শাস্তি দেখছেন? হাজার হাজার মানুষ মাইরাও যদি শাস্তি হয় যাবজ্জীবন!আবার ফাঁসি হইলেও কার্যকর হওনের নাম গন্ধ নাই।ঝুলাইবার ২ ঘণ্টা আগে থেকে শুরু হয় আবার হিন্দি সিরিয়াল।এদের কাছে তো আমি দুধ ভাত।খুন করছি মাত্র ২১টা,তাও সব হারামজাদা,সুদখোর-ঘুষখোর।"
আশরাফ সাহেব বিষটা আগে চিন্তা করেন নি।কাদেরের কথা ঠিক,হাজার হাজার নিরীহ মানুষ হত্যার কাছে ২১ জন কিছুই না।কসাই কাদের কথা বলেই যাচ্ছে,
"ধর্ষনের কথা তো ভুইলাই গেছিলাম।আমি রেপ করছি মাত্র ১১টা।হ্যারা যে কয়টা রেপ করছে তার হিসাব তো ঘাড়ের উপরের ফেরেশতারাও দিতে পারব না।হুনছি এদের মইধ্যে নাকি শিশুও ছিল।শুধু রেপ করলে কথা ছিল,সবাইরে মাইরাও ফালাইছে।এই কামটা আমি করি নাই।তাছাড়া আমার গুলান সব পূর্ণবয়স্ক,এইটটিন প্লাস।"
আশরাফ সাহেব কথা বাড়াতে চাইলেন না।একটা ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীর সাথে নির্জন রাস্তায় বাক্যালাপ করার কোন মানে হয় না।নির্বাচন শেষ,নতুন সরকার এখনও শপথ নেয়নি।এই সময়ে বিনা নোটিশে জেল থেকে আসামীরা বের হয়ে আসছে।কসাই কাদের কিভাবে বের হয়েছে তা জিজ্ঞস করা অবান্তর।আশরাফ সাহেব আবার হাঁটা শুরু করলেন।কসাই কাদের তাঁকে থামাল।
আশরাফ সাহেব অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন কসাই কাদের তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করছে।কোন ধরনের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা না করে বলল,
"উকিল সাব,আমার জন্য দোয়া করবেন।আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা,ফেরেশতা সমান।আপনার দোয়া সাথে থাকলে আল্লাহ আমার সাথে আছেন।"
সেই রাতে আশরাফ সাহেবের ঘুম হলনা।নানান দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকল।টিভি খুলে বেশ মর্মাহত হলেন।ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এক পলাতক রাজাকার দেশে ফিরে এসেছেন,টিভিতে তাঁর শরিয়াতী আলোচনা প্রচার করা হচ্ছে।ভূতের মুখে রাম নাম!
আশ্চর্যজনকভাবে ফজরের নামাজের পর তিনি কসাই কাদেরের জন্য খাস দিলে দোয়া করলেন।
এরপর কয়েক মাস কাদেরের আর দেখা মেলেনি।
সেদিন কোর্ট থেকে ফেরার পথে কাদেরের ছোট ভাইকে রাস্তায় মিষ্টি বিতরণ করতে দেখলেন আশরাফ সাহেব।তার চারপাশে জনতার ভিড়।তারা একটু পর পর 'কাদের ভাই জিন্দাবাদ' টাইপের শ্লোগান দিচ্ছে।
বাসায় ফিরে টিভি অন করলেন তিনি।কসাই কাদের অনেক আয়োজন করে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল।বিভিন্ন চ্যানেলে তা একটু পর পর প্রচার করা হচ্ছে।
সেই রাতের মত উষ্কশুষ্ক চুল দাড়ি নেই কাদেরের।ভাষায় আঞ্চলিকতার টানও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।সে হাসি মুখে কথা বলছে,
"সুপ্রিয় দেশবাসী,আমি মো: কাদের হোসেন,ওরফে কসাই কাদের।জবেহ করে মানুষ হত্যা করি বলে জনগণ ভালোবেসে এই নাম দিয়েছে।সম্প্রতি 'কসাই কাদের' নামের এক রাজাকারকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নামে জবেহ করেছি।আপনারা তাকে সদ্য বিজয়ী সাংসদ হিসেবে জানেন।এই খানকির পুত!(দুঃখিত,আমি সদ্য ভদ্র সমাজে পা দিয়েছি,বাজে কথা বলার অভ্যাসটা এখনও যায়নি।ক্ষমা দিবেন।)আপনারা জানেন সদ্য প্রয়াত এই সাংসদের একবার ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল,তাতে জাতিসংঘ না কার যেন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল।আরে চুদি তোর মানবাধিকার!!৭১ এ তোরা কোন চিপা গলিতে ছিলি!!(দুঃখিত,আবারও বাজে কথা বলে ফেলেছি,আমি ক্ষমাপ্রার্থী)যাই হোক,এই কাপুরুষকে সরিয়ে জনগণের দেয়া নামের তাত্পর্য রক্ষার চেষ্টা করেছি।ইচ্ছা আছে বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল রাজাকারকে জবেহ করার।আশা রাখি আপনারা আমার সাথে থাকবেন।
আল্লাহ হাফেজ।"
কয়েকদিন পর...
মাওলানা আব্দুল কাদের মোল্লা(এম পি)'র হত্যাকারী কসাই রাজাকারকে খুঁজতে তত্পর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।সন্ধানদাতার জন্য কোটি কয়েক টাকার পুরস্কারও ঘোষনা করা হয়েছে।
ন্যায় বিচারের ব্যর্থ অপেক্ষা করার চেয়ে অন্যায়ের পথটাই শ্রেয় না??
ঠিক বুঝলামনা । আপনি কি কাদের মোল্লার দাবিটা সমর্থন করছেন যে, তিনি [কাদের মোল্লা] আর কসাই কাদের এক ব্যাক্তি নন ?
কাদের মোল্লা তো কাদের মোল্লাই!!এখানে আব্দুল কাদের ওরফে কসাই কাদের একজন সিরিয়াল কিলার,কিন্তু দেশপ্রেমিক।।
এখন একটু ভেবে দেখুন
কোন কিলার কখনো দেশ প্রেমিক হতে পারেনা । নেবার !
পড়লাম
মন্তব্য করুন