অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যপট অতঃপর মায়াময় গোধূলি
সেদিন স্কুল থেকে বের হয়ে দেখি বড় মামা দাঁড়িয়ে। উনি থাকেন চিটাগাং। সকালে যখন স্কুলে আসলাম তখনও উনি ছিলেন না। এর আগেও তো ঢাকায় আসার কোন খবর দেননি। বন্ধুদের কাছে সারপ্রাইজ নামে একটা শব্দ শুনেছি। কেউ হঠাৎ করে না জানিয়ে বেড়াতে আসলে বা উপহার দিলে তাকে সারপ্রাইজ বলে। আমি কোনদিন কোন সারপ্রাইজ পাইনি, কাউকে না জানিয়ে বড় মামার বেড়াতে আসাটাই হয়তো আমার জীবনের প্রথম সারপ্রাইজ। আমি দৌড়ে মামার কাছে যেতে ধরে হোঁচট খেলাম, কিন্তু পরলাম না। মামা খপ করে ধরে আমাকে কোলে তুলে নিলেন, আমি যখন আরো ছোট, তখন মামা আমাকে এভাবে কোলে তুলে আকাশে ছুড়ে দিতেন। আমি তখন আনন্দ ধরে রাখতে পারতাম না। প্রাণচঞ্চল হাসির সাথে হাত পা ছোড়াছুড়ি করতাম। তারপর মামা আবার ক্রিকেট বলের মত আমাকে ধরে ফেলতেন। তবে মামার সেই হাস্যোজ্জ্বল মুখটা কেমন যেন মলিন হয়ে আছে, চোখ লাল হয়ে আছে। মামা আমাকে কোলে নিয়ে মৃদু হাসি দিলেন, যা ঠিক হাসি মনে হল না।
রিক্সা ঠিক করে উনি রিক্সায় উঠে পরলেন। রিক্সা চলছে। মামা রিক্সাওয়ালার সাথে কোন কথা বলছেন না। অথচ এটাই তার প্রিয় কাজ। রিক্সাওয়ালার বাড়ির লোকজনের খবর নেয়া, বাড়ির ঠিকানা নেয়া, সিগারেট খাওয়ানো। অতঃপর ফলমূল নিয়ে তার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া। এর ফলে অবশ্য অনেকে মামার কাছে ভাড়া নেয়না!
আমাকে নিয়ে যাওয়া হল মীনা ফুপির বাসায়। ইনি বাবার চাচাতো বোন। শুনেছি বড় মামার সাথে নাকি মীনা ফুপির প্রেম ছিল। ফুপির বিয়ের পর মামা লেখাপড়া শেষ না করেই চিটাগাং চলে যান। কিন্তু মামা আমাকে বাসায় না নিয়ে মীনা ফুপির বাসায় আনলেন কেন বুঝলাম না। অবশ্য রোজ রোজ বাসায় যেতেও ভালো লাগেনা। তাছাড়া ফুপি আমাকে বেশ আদর যত্ন করেন। মামা আমাকে ফুপির কোলে তুলে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
অন্যদিন ফুপি আমাকে কোলে তুলে গাল ধরে টানাটানি করেন। আজ করলেন না। বরং আমাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলেন। ফুপিকে ‘কাঁদছ কেন’ জিজ্ঞেস করলে উনি বললেন, “পেঁয়াজ কেটেছি তো, তাই চোখ দিয়ে পানি পরছে।” ফুপি আমাকে গোসল করিয়ে কাপড় বদলে দিলেন। এখানে আমার কোন কাপড় থাকার কথা না, কিন্তু তিনি কোথায় পেলেন বুঝলাম না। ফুপি আমাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। আর পুরো সময়টা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে থাকলেন।
ঘুম ভাঙল সিগারেটের গন্ধে। এমনিতে আমার ঘুম অনেক পাতলা। তার উপর ঘ্রাণশক্তি প্রবল। আমি ঘুমিয়ে থাকলে বাবা তাই বাড়ির ভেতরেই সিগারেট খান না। আমি বিছানা থেকে উঠে বেলকুনিতে গেলাম। ফুপা আর বড় মামা মুখোমুখি চেয়ারে বসে সিগারেট টানছেন। তাদের মুখে কোন কথা নেই। আজ শুক্রবার না, তারপরও তাঁরা পাঞ্জাবী পায়জামা পরে আছেন। আমাকে দেখে দু’জনই সিগারেট ফেলে দিলেন। বড় মামা আমাকে বাথরুমে নিয়ে হাত মুখ ধুয়ে দিলেন। বাসায় ফুপি নেই। আমি খেয়াল করলাম এই গরমের দিনে আমাকে ফুল প্যান্ট পরানো হয়েছে। মা এই কাজ কখনই করেননা। হালকা গরম পরলেই হাফ প্যান্ট পরান। যাক, অনেকদিন পর মা’র কাছে ফুপির নামে বিচার দেয়া যাবে!
বাথরুম থেকে বের হতেই ফুপা ঘরে ঢুকলেন। কিছু একটা বলতে গিয়েই রুমাল দিয়ে চোখ ঢেকে আবার বেলকুনিতে চলে গেলেন। রাগান্বিত স্বরে ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললেন। অথচ এই কণ্ঠে বিন্দুমাত্র রাগ ছিলনা।
বাড়ির বাইরে অনেকগুলো গাড়ি দাঁড় করানো। প্রায় প্রতিটা গাড়ির সামনে দু-চার জন লোক দাঁড়িয়ে কথা বলছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে বাড়িতে ঢুকলাম। বাড়িতে প্রচুর লোক, কেমন যেন উৎসব উৎসব আমেজ। আমি দৌড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকছি আর সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অ্যানুয়াল স্পোর্টস ডে তে হেডস্যার মাঠে ঢুকলে সবাই এভাবে তাকিয়ে থাকে। শুধু পার্থক্যটা, ওখানে সবাই হাসিমুখে থাকে আর এখানে সবাই চুপচাপ।
মেইন গেট দিয়ে ঢুকতেই কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। কাঁদছে রোজিনা খালা, আমাদের বাড়িতে কাজ করে। এই মহিলা প্রায়ই এভাবে কান্নাকাটি করে। স্বভাব অনুযায়ী আমি প্রথমেই বাবার রুমে গেলাম। আমি যখন স্কুল থেকে আসি তখন বাবা বাসায় ফেরেন না। কিন্তু এখন প্রায় বিকাল। এর মধ্যে তো চলে আসার কথা! বাবাকে না পেয়ে গেলাম বেডরুমে, সেখানে নিশ্চয়ই মা থাকবেন। সারা বাড়িতে লোকজনের কারণে খুব বিরক্ত লাগছিল। বেডরুমে অনেক অচেনা মহিলা এখানে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে চিনলাম মীনা ফুপি, ছোট খালা আর নানীকে। আমি ঢুকে দেখি মা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছেন। তাঁর চোখ মুখ ফুলে আছে, চোখ লাল হয়ে আছে। একটু পর পর ওড়না দিয়ে চোখ মুছছেন। আমাকে দেখে তিনি কোলে নিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন, সাথে আরও কিছু মহিলাও। আমার ময়লা স্যান্ডেল বিছানার উপর, চাদর নোংরা হয়ে যাচ্ছে। অথচ মা কিছু বলছেন না। তাছাড়া কান্নার কারণটাও স্পষ্ট হচ্ছেনা।
বাবাকে পেলাম গ্যারেজের সামনের বারান্দায়। কাঠের বাক্সের ভেতর শুয়ে আছেন। তাঁর গায়ে সাদা কাপড় পেঁচানো, কাপড় সরিয়ে শুধু মুখটা বের করে রাখা হয়েছে। চারপাশে আগরবাতির গন্ধ। এই গন্ধ বাবার অনেক অপছন্দের। অথচ বাবা কিছু বলছেন না। নাকে তুলা দিয়ে রেখেছেন। আমি বাবাকে অনেক ডাকাডাকি করলাম, তিনি উঠলেন না। বাবার দু’পাশে পাঞ্জাবী-টুপি পরা বেশ কয়েকটা ছেলে উচ্চস্বরে কোরআন তিলাওয়াত করছে। তারপরও বাবার ঘুম ভাঙছেনা। ঘুমানোর সময় বাবাকে কাতুকুতি দিলে তিনি দ্রুত উঠে পরেন। বাবার বুকের ওপর পর্যন্ত কাঠের ঢাকনা দিয়ে ঢাকা। আমি অনেক টানাটানি করেও সরাতে পারলাম না। মসজিদের মাওলানা সাহেব আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “আল্লাহকে ডাকেন বাবা, আল্লাহকে ডাকেন। ” ছোট চাচা তখনই এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। বাবা এভাবে ঘুমাচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি আমাকে নিয়ে বাইরে চলে গেলেন।
শুক্রবার ছাড়া ওইদিন প্রথম মসজিদে গেলাম। আসরের নামাজের পর দাঁড়িয়ে থেকে আবার নামাজ পড়ানো হল। সামনে বাবা শুয়ে থাকলেন। মসজিদ থেকে বাবাকে নিয়ে যাওয়া হল কবরস্থানে। এখানে আমি আগেও এসেছি, দাদা-দাদী নাকি এখানে থাকেন। আমি বুঝিনা আমাদের এত বড় একটা বাড়ি থাকতে দাদা-দাদী খোলা মাঠে থাকবেন কেন? বাবা আবার প্রতি শুক্রবার এখানে এসে বিড় বিড় করে তাদের সাথে কথা বলেন।
আমাকে কবরস্থানের ভেতরে নেয়া হল না। আমি বড় মামার কোলে বসে থাকলাম। দাদা-দাদী যেখানে থাকেন, বাবা তার পাশে শুয়ে পড়লেন। আমার সাথে একবার কথাও বললেন না। এরপর আর বাবার সাথে আমার দেখা হয়নি।
আজ বাবার ঊনিশতম মৃত্যুবার্ষিকী।
এই দিনে মা কোনরকম অনুষ্ঠান করেন না। তিনি এখনও বিশ্বাস করতে পারেননা বাবা নেই। মা চান এইদিন আমি বাড়িতে থাকি। কিন্তু গতরাতে আমি বাড়িতে ফিরিনি। মা অনেকবার ফোন দিয়েছিলেন, রিসিভ করা হয়নি। রাতে মনেহয় একবার ফোন করে বলেছিলাম ফিরতে দেরি হবে। মা নিশ্চয়ই টেনশানে রাতে ঘুমাতে পারেননি!
ভোরের দিকে বাড়ি ফিরে অনেক্ষণ দরজা নক করলাম, কেউ খুলল না। মা শুনতে না পেলেও তো রোজিনা খালার শোনার কথা, ওনার রুম তো মেইন দরজার কাছেই! ডাকাডাকি করতে করতে সকাল হয়ে গেল, কারো কোন সাড়া-শব্দ পেলাম না। রাগ করে বেরিয়ে গেলাম। ঢোকার সময় দেখেছিলাম দারোয়ান চাচা চোখ বন্ধ রেখে টর্চলাইট এদিক ওদিক ঘোরাচ্ছেন। বেড়োনোর সময়ও একই দৃশ্য দেখলাম। তার মানে তিনি ঘুমাচ্ছেন, দেখেননি আমি বাড়িতে ঢুকেছি।
সামনের মোড়ের চায়ের দোকানের মামা দোকান খুলে ঝিম ধরে বসে আছেন। আমি সামনে রাখা বেঞ্চটাতে বসে চা দিতে বললাম, উনি এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার ঝিম মেরে থাকলেন। শুনেছি ওনার চোখের সমস্যা আছে। আমি আবার আস্তে কথা বলি। মনেহয় চায়ের কথা উনি শুনতে পাননি। আর কোন কথা বলতে ইচ্ছা করলনা। বিরক্ত হয়ে উঠে পড়লাম। কি করব ভাবছি। রাস্তার রাস্তায় হাঁটা ছাড়া করার কিছুই নেই। অনন্যাকে ফোন দেয়া যায়, ওর সকালে ওঠার অভ্যাস আছে। আমার এর ঠিক বিপরীত অভ্যাসটা থাকার জন্য সবসময় ওর কাছে কথা শুনতে হয়। সাত সকালে আমার ফোন পেলে ও খুশি হয়ে যাবে।
পকেটে ফোন নেই। বাইক চালানোর সময় ফোনটা পান্থকে দিয়েছিলাম। আর নেয়া হয়নি। বাইকটাতো ওর কাছেই আছে, যেকোনো সময় বাসায় দিয়ে যেতে পারবে।
সারারাত ঘুমাইনি। তার ওপর সকাল থেকে হাঁটছি। কিন্তু আমার কোন ক্লান্তিবোধ হচ্ছেনা। এখন কয়টা বাজে জানলে হয়তো একটা কৃত্রিম ক্লান্তির সৃষ্টি করা যেত। কিন্তু আমার ঘড়ি পরার অভ্যাস নেই। কোন দোকানে ঢুকে সময় দেখার ইচ্ছা হচ্ছেনা।
আমি এখন দাঁড়িয়ে আছি অনন্যার বাড়ির সামনে। এই বাড়িতে ঢোকার সাহস আমার কোনদিনই হয়নি, যদিও আংকেল-আন্টি অনেকবার যেতে বলেছেন। আমি অপেক্ষা করছি অনন্যার জন্য। আমি আসব ওকে জানানো হয়নি, তবু মনে হচ্ছে একটু পরই ও বের হবে। ওকে নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে যাব। গত কয়েকবছর হল বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে অনন্যাকে নিয়েই কবরস্থানে যাই। ওকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়না। তবু ও একটুও বিরক্ত হয়না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আমার বেড়নোর অপেক্ষা করতে থাকে।
অনন্যা আজ আকাশী রঙের কামিজ পরেছে। সাথে সাদা সালোয়ার আর সাদা ওড়না। মনে হচ্ছে এক জোড়া মেঘদল শরতের নীলাকাশ পাহারা দিচ্ছে। আমি মুগ্ধ হয়ে অনন্যাকে দেখছি। এর মাঝেই ও রিক্সা নিয়ে রওনা দিল। আমি ঠিক গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, অথচ ও আমাকে দেখলনা।! অনেক ডাকাডাকি করলাম ওকে, শুনলনা। হয়তো অনেক ব্যস্ত। অনন্যার উপর আবার আমি অভিমান করতে পারিনা, এমন আচরনে তাই কিছু মনেও করলাম না।
অনেক বছর পর আজ বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে একাই কবরস্থানে গেলাম। বাবার কবরের পাশে আরেকটা কবর খোঁড়া হচ্ছে। কেন জানি খুব রাগ লাগল। বাবার কবরের পাশে অন্য কেউ কেন থাকবে! সেখানে বেশিক্ষণ থাকলাম না। বাড়ির দিকে রওনা হলাম।
সেদিনের মত আজও বাড়ির সামনে বেশ কিছু গাড়ি দাঁড়ানো। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে লোকজন কথা বলছে। এদের অনেককেই আমি চিনি। তাদের কাছে না গিয়ে আমি সোজা বাড়িতে ঢুকলাম। বাড়িতে অনেক লোক। তবে সেদিনের মত কেউ আজ আমার দিকে দেখছেনা। বাবা মারা যাবার পর থেকে বাড়িতে ঢুকেই আগে আমি মা’র রুমে যাই। ভেতরে ঢুকতেই রোজিনা খালার কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। এই মহিলার যে মাঝে মধ্যে কী হয় বুঝিনা! আমি বেডরুমের দিকে গেলাম, মা’র ওখানেই থাকার কথা।
বেডরুমে অজানা অচেনা অনেক মহিলা। এদের মধ্যে কয়েকজন বন্ধুর মা আছেন। বান্ধবীদের কয়েকজনও দেখি আছে। এরা আমার বাড়িতে কেন এসেছে বুঝতে পারছিনা। মা’কে খুঁজতে লাগলাম। বিছানার এক কোণে গুটিসুটি মেরে মা বসে আছেন। আমি তাঁর পাশে গিয়ে বসলাম। সেদিনের মত ওনার চোখ মুখ ফুলে নেই, তবে চোখ লাল হয়ে আছে। চোখ খটখটে শুকনা, দৃষ্টি স্থির। মা’র হাত ধরে মীনা ফুপি বসে আছেন। ওনার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে, মোছার বিন্দুমাত্র চেষ্টাও তিনি করছেননা। আমি মাকে ডাকলাম, তিনি কোন সাড়া দিলেন না। সেদিনের মত আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন না। মা’র মত আরেকজন স্থির দৃষ্টি নিয়ে বসে আছে। অনন্যা। অভিমান হল, কাউকে আর ডাকাডাকি করলাম না।
পান্থকে পেলাম গ্যারেজের বারান্দায়। ক্র্যাচে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ব্যান্ডেজ। বাইক থেকে পরে যাওয়ার পর যখন ও রাস্তায় পড়ে ছিল, আমি অনেক টানাটানি করেছি ওকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য। ও কোন ভ্রুক্ষেপই করেনি। আমি তাই রাগ করা চলে এসেছি। আমি ওর কাছে গেলাম। ও একটু সেনসিটিভ টাইপের, সরি বলা দরকার। পান্থ ওখানে একা নেই। আমার স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির অনেক বন্ধুও আছে ওখানে। সবাই একদৃষ্টিতে বারান্দার মাঝামাঝি জায়গায় তাকিয়ে আছে। জায়গাটি ঘিরে মাদ্রাসার একদল ছেলে কোরআন তিলাওয়াত করছে। তাদের পাশে আগরবাতি জ্বলছে, অথচ আগরবাতির গন্ধ আমার নাকে আসছেনা।
কফিনে আমি শুয়ে আছি। আমাকে ঘিরেই এতকিছুর আয়োজন। রঙিন মানুষটা আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি, অথচ সবাই তাকিয়ে আছে সাদা কাফনে ঢাকা আমার শরীরটার দিকে। আমার জন্যই সবাই এত কান্নাকাটি করছে। কিন্তু আমার ডাকে কেউ সাড়া দিচ্ছেনা।
বাবার পাশের কবরটা আমার জন্যই খোঁড়া হচ্ছিল। আমাকে ওখানে রেখে সন্ধ্যা নাগাদ ওরা সবাই চলে গেল। আমি চেষ্টা করলাম ওদের সাথে যেতে, পারলাম না। এই দ্বিতীয়দিন আমার কষ্টে বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। কিন্তু আমি ভয়ে কাঁদতে পারছিনা।
ঠিক তখনই বাবা পেছন থেকে আমার ঘাড়ে হাত রাখলেন।
খুব ছোটবেলায় একবার জুম্মার নামাজ শেষে বের হয়ে লোকজনের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। সেদিনও আমার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছিল, কিন্তু ভয়ে কাঁদতে পারছিলাম না। তখনই বাবা এসে পেছন থেকে ঘাড়ে হাত রেখেছিলেন। সেদিন মনে হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে মমতাময় স্পর্শটি আমার শরীরে, সবচেয়ে নিরাপদ ছায়াটি আমার মাথার ওপর।
আজও তেমনটিই মনে হচ্ছে ।
প্রচন্ড মন খারাপ করা গল্প।
কিন্তু লেখাটা অসাধারণ।
ধন্যবাদ
(
চোখে পানি চোলে এলো । ধন্যবাদ ।
বন্ধু তোমার গল্পটা পড়ে ভাল লাগল আবার কান্নাও আসল তোমার বর্ননায়।খুব সুন্দর অসাধারন।।
মন্তব্য করুন