পার্ট ওয়ান!!
"মামুন, এই মামুন!"
মামুনের কোন সাড়া শব্দ নেই। মামানি আবার ডাক দেয়,
"ওই নবাবজাদা! তুমি কি বাপের রাজত্ব পাইছো এইখানে। এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাও!"
মামানি মামুনের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘরের দরজা বন্ধ। এই ঘরের দরজা তিনি কোনদিন বন্ধ দেখেননি, আজ প্রথম দেখছেন। এতেই তার মনে সন্দেহ জাগছে। এই মাঘ মাসের তীব্র শীতের মধ্যেও তিনি এতক্ষণ হল এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মত শিশির পড়ছে। গত সপ্তাহেই ইন্ডিয়া থেকে আনা গায়ের শালটা ভিজে একাকার। তারপরও তিনি মামুনের ঘরের সামনে থেকে নড়ছেন না। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তিনি বিরক্ত হয়ে দরজায় ধাক্কা দেয়া শুরু করলেন। মামুন তবু দরজা খুলছেনা। এই শীতে এতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না, তিনি ঘরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। যাওয়ার আগে মামুনের ঘরের দরজার কাছে মুখ লাগিয়ে হুমকি দিয়ে আসলেন,
"কতক্ষণ আর ঘরে বসে থাকবা? বাইরে তো আসতেই হবে নবাবের বাচ্চা! আসো, আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন!"
মামানি চলে গেলেন, তবে তাঁর মনটা পড়ে থাকল মামুনের ঘরে। এর প্রধান কারন এই ঘরটা ঠিক থাকার ঘর না। স্টোর রুম টাইপের একটা চালা ঘর। বাড়ির যাবতীয় বাতিল জিনিসপত্র এই ঘরে রাখা হয়। এর মাঝেই তিনি তাঁর অধিকাংশ সোনা দানা লুকিয়ে রেখেছেন, বাড়িতে ডাকাত পড়লে যেন এগুলো খুঁজে না পায়। ডাকাতরা স্টোর রুমের দিকে কখনও নজর দেয়না। তাদের চোখ সবসময় বেডরুমের বিশাল আলমারির ভেতরে থাকা সিন্দুকের দিকে। কিন্তু এখন যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে তো ডাকাতের চেয়ে মামুনকেই বেশি ভয় হচ্ছে। এই ছোকরা যে কি আকাম করছে! কতক্ষণ ধরে ডাকার পরও কোন সাড়া শব্দ নাই। তাঁর সোনা দানা সব খুঁজে পেল নাকি! এইসব নিয়ে কেটে পড়লে তো মহাবিপদ। বাবুর আব্বাকেও তো বিশ্বাস করানো যাবেনা যে মামুন চুরি করে ভেগেছে। মামুন তাঁর বোনের ছেলে, সেই সাত বছর বয়স থেকে এখানে আছে, আছে প্রায় পাঁচ বছর হবে। এখনও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমান করা সম্ভব হয়নি। চেষ্টাও তিনি কম করেননি। এমন গোবেচারা টাইপ ছোকরা, কোনদিন কোন কুকর্মের করার ধারে কাছেও যায়নি! ভুল করে কিছু করতে গেলেও তো জঞ্জালটাকে বিদায় করা যেত! এই ছেলেকে আগে তাদের ঘরের পাশের ঘরটাতে রাখা হয়েছিল। মা’র সাথে পরামর্শ করে ওকে চালা ঘরে পাঠানো হয়েছে। বাবুর আব্বা অবশ্য এতে রাজি হতে চায়নি। অনেক নাটক করতে হয়েছে তাকে রাজি করাতে। এইটুকু ছেলে যে কিভাবে ওই ঘরে থাকে সেটাই অবাক হওয়ার বিষয়। দিনের বেলা কোন জিনিস পত্র আনতে এই ঘরে ঢুকলেই তো ভয়ে গা ছমছম করে! ঘরে পোকামাকড়, সাপখোপ ভরা! মামানি দুশ্চিন্তায় সকালের রান্না চরানোর কথা ভুলে গেলেন। ভুলে যাওয়াটাই অবশ্য স্বাভাবিক। কত দিন হল তিনি সকালে চুলা জ্বালাননি সেটা তাঁর নিজেরই মনে নেই। ফজরের আজানের পর পর বাবুর আব্বা মসজিদে চলে যান, নামাজ শেষে তাঁর ফিরতে দেরি হয়। ভোরের দিকে মামুন আনুসাঙ্গিক কাজকর্ম শেষ করে, চুলা জ্বালিয়ে মামানি কে ডাক দেয়। তিনি উঠে রান্না বসান। মামুন থাকায় তাঁর ভালোই হয়েছে, বাড়ির কাজের লোককে বিদায় করে দিয়েছেন। মাসে মাসে এই টাকাটা তাঁর ট্যাকেই ঢোকে! বাবুর আব্বা জানেন কাজের লোক সকালে একটু দেরি করে আসে আর বিকালের মধ্যে চলে যায়, ঠিক যে সময়টা তিনি বাসায় থাকেন না।
মামুন ঘরের এক কোণে কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। তার চোখ বন্ধ, ভয়ে সে ঠক ঠক করে কাঁপছে। একটু পর পর চোখ খুলে এদিক ওদিক দেখছে, আবার চোখ বন্ধ করে রাখছে। চালা ঘরটায় জায়গা অনেক কম। এর মাঝেই মামুনকে নিজের জন্য ছোট্ট একটা জায়গা করে নিতে হয়েছে। নানান পোকামাকড়ের সাথে তার বসবাস। এতে সে অনেকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু সাপের প্রতি তার ভয়টা এখনও বিন্দুমাত্র দূর হয়নি। আজ ফরজের আজানের পর যখন মামুন নামাজ পড়তে উঠবে, তখনই পায়ের কাছে ঠাণ্ডা কি যেন অনুভব করে। মাঘ মাসের শীত, বাইরে কনকনে বাতাস। চালা ঘরের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ঘরে বাতাস ঢোকাটা স্বাভাবিক ঘটনা। মামুন প্রথমে তেমনটিই ভেবেছিল। কুপির আলোটা বাড়াতেই তার বুক ধক করে উঠল। গায়ে দেয়া ছোট্ট কাঁথাটার এক ফাঁক দিয়ে চকচকে কি যেন বেরিয়ে আছে, যার অপরপ্রান্ত তার পায়ে জড়ানো, সাথে ঠাণ্ডা আভা। মামুন শুনেছে নড়াচড়া বা শব্দ করলে নাকি সাপ কামড় বসিয়ে দেয়। ও ধৈর্য ধরে কিছুক্ষণ এভাবেই শুয়ে থেকে পা টা আস্তে আস্তে নাড়াতে থাকে। তারপর পায়ের ওপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নেয়। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কাটার পর সাপটা ধীরে ধীরে নিচে নেমে যায়। মামুন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে উঠে পড়তে যায়। ঠিক তখনই সাপটা ওর দিকে ফনা তুলে বসে পড়ে। মামুন ঠাণ্ডায় বসে থাকতে না পেরে কাঁথাটা টেনে নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নেয়। কখন যে ভোর হয়ে গেছে ও খেয়ালও করেনি। এর মাঝেই মামানি এসে তাকে ডাকতে শুরু করে। মামুন ভয়ে কোন উত্তর দেয়নি, পাছে সাপটা তার গায়ে ছোবল বসিয়ে দেয়!
মামুন এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারছে না, একটু পর পর এদিক ওদিক সরে বসতে হচ্ছে। গতকালের বেতের বাড়ির জখমটায় এখনও ব্যাথা করছে। তার ওপর আবার মামানি হুমকি দিয়ে গেল। মামুন সিদ্ধান্ত নিল মামা আসার আগে আজ ও ঘর থেকে বের হবে না।
চলবে....
একটু বলে নেই, গল্প সুন্দর কিন্তু সাপ ভাই শীতে ভুলেও বের হয় না। এই ভুল দিয়ে গল্প হয় না।
আপু, সাপটা সেই ঘর এর ই বাসিন্দা। আমি এটাই বোঝাতে চাচ্ছিলাম। এই বিষয়ে আমি নিজেও বেশ কনফিউসড!! চাইলে সাহায্যও করতে পারেন....
মন্তব্য করুন