কোরবানের গরু কিনা থেকে শুরু করে পেটে চালান দেওয়ার আগ পর্যন্ত অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু জরুরী যুগান্তকারী টিপস! (মাসরুর)
আর দুদিন বাদেই কুরবান। মানে কুরবানির ঈদ। এই ঈদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল
একটি হালাল পশু কুরবানী দেওয়া। যে যার সামর্থ্য মত গরু, ছাগু, উট, দুম্বা,
ভেড়া, ষাঁড় ক্রয় করে সেটা কোরবান করে থাকেন। আমার এই পোস্টটি তাদেরই জন্য
যারা এই ক্রয় থেকে শুরু করে এটা পেটে চালান দেওয়া পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়ার
সাথে জড়িত! এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতাও নেহাত কম নয়। একেবারে কমছে কম টানা
১৪ বছর। ১৯৯৪ এ সেই ক্লাস ৬/৭ এ থাকতে শুরু করে এই ২০০৮ পর্যন্ত। কাজেই
পড়ে নিন, জেনে নিন কোন টিপসটি আপনার বেশী উপকারে আসবে।
১). পশু ক্রয়ঃ
জবাইয়ের আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি কোন প্রজাতির পশু ক্রয়
করবেন। ছাগল, দুম্বা, উট হলে আপনি এটা না পড়লেও চলবে, তবে গরু কিনতে চাইলে
মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
প্রথমেই ভেবে নিন আপনি কি বিরিষ কিনবেন না বলদ? বিরিষ মানে হল ষাঁড়।
কোরবানের হাটে এই ষাঁড়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশী থাকে। ষাঁড়ের সাথে বলদের
পার্থক্য একটি মাত্র জায়গায়, সেটা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন? হ্যাঁ আপনি ঠিকি
ধরেছেন, এদের পার্থক্য নির্ণয়কারী একমাত্র উপাদানটি হল "আন্ডু", ষাঁড়ের
এটি থাকে, বলদের থাকে না। মানে আগেই কেটে ফেলা হয়।
ষাঁড় কেন কিনবেন? - কারণ হল এটা তাগড়া, ক্ষ্যাপাটে এবং সুন্দর।
তাছাড়া মাংসও বেশ সুস্বাদু।এদের ভুড়ি কম হয়। কোরবানীর জন্য আমরা সাধারণত
এইসব বৈশিষ্ট্যের পশুই বাছাই করে থাকি। আর ষাঁড়গুলোকে বিশেষভাবে লালন-পালন
করা হয় এই কোরবানের জন্যই। এজন্যই এদের চাহিদা যেমন বেশী, যোগানও বেশী
থাকে।
বলদ কেন কিনবেন? - বলদ মূলত শান্ত প্রকৃতির, চর্বি কম থাকে বিধায়
মাংসের আধিক্যও বেশী। তাছাড়া বলদ দিয়ে হাল চাষ করা হয় বলে এটার শরীর
পেটানো থাকে, গৃহপালিত তাই খাবারের ঝামেলা কম। অনেকের কাছে অবশ্য বলদের
মাংসও সুস্বাদু মনে হয়। মূলত ব্যক্তির উপর নির্ভর করে।
যে কোন গরু বাছাইয়ের আগে দেখে নিন দাঁত আছে কিনা। আমরা জানি যে গরুর নিচের
পাটিতে দাঁত থাকে, উপরের পাটিতে থাকে না। কাজেই উপরের পাটিতে দাঁত খুঁজার
চেষ্টা করলে আপনার আর গরু কিনা লাগবে না। আরও লক্ষ্য করুন গরুটি ঠিকমত
হাঁটতে পারে কিনা। কারণ অনেক দূর থেকে আসে বিধায় গরুগুলো অনেক সময়
আঘাতগ্রস্থ হয়ে পরে। সেক্ষেত্রে সে ঠিকমত নাও হাটতে পারে। আপনি নিশ্চয় কোন
আঘাতপ্রাপ্ত গরু দিয়ে কোরবান দিতে চাইবেন না।
রংয়ের উপরও গরুর দাম নির্ভর করে। লালচে বা গাঢ় বাদামী রংয়ের এবং কালো গরুর
দাম একটু চড়া থাকে। গরুর ক্ষুরও দেখে নিবেন। ভাঙ্গা ক্ষুরওয়ালা গরু না
নেওয়াই ভাল।
হাঁটে যাবার প্রস্তুতি- আপনি যেই হাঁট থেকে গরু কিনবেন, সেখানে ভিড়
যদি বেশী হয়ে থাকে, তাহলে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে নিন। কারণ গরু ও
মানুষের চাপাচাপিতে অনেকসময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের এলাকার এক লোকের
তো এক ফাজিল গরু একেবারে জায়গামত গুতা দিছিল। বেচারার ঈদটাই সেবার মাটি!
কাজেই বেশী নার্ভাস হলে ক্রিকেট খেলার গার্ড পড়ে নিতে পারেন। সব সময় সেইফ
থাকবেন। ভীড়ের মাঝে গরুর পাশে থাকার চেষ্ট করবেন, পিছে বা পাশে না। তবে
গরু কিনে বের হবার সময় অবশ্যই গরুর পিছে থাকবেন! আর এই গরু হাঁক ছেড়ে সামনে এগুবেন। তাহলে রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
২).কসাই নির্বাচনঃ
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক। এটা নিয়ে হেলা ফেলা করবেন না। বুদ্ধিমানরা
অবশ্যই এতদিনে এটা ঠিক করে ফেলেছেন। যারা এখনও করেন নি, তারা আজই করে
ফেলুন। কারণ পরে আর নাও পেতে পারেন। আপনি যদি এবারই প্রথম কোরবান করে
থাকেন এবং একটু ভোদাই টাইপের লোক হন, তাহলে প্রফেশনাল কসাই ভাড়া করুন।
ওদের রেট একটু বেশী, কিন্তু আপনাকে খুব বেশী টেনশন করতে হবে না গরু নিয়ে।
আর যদি চালাক এবং অভিজ্ঞতাপূর্ণ হয়ে থাকেন, তাহলে নন-প্রফেশনাল কসাই ঠিক
করুন। সাধারণত রিক্সাওয়ালারা এইসময় ক্ষ্যাপ মেরে থাকে। এদের সুবিধা হল রেট
কম, প্রফেশনালদের তিন ভাগের একভাগ। তবে তাদেরকে আপনার নিজ দায়িত্বেই
ডিরেকশন দিতে হবে কোনটা কিভাবে কাটবে। কসাই ভাড়া করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন
সে কি কি ছুড়ি, চাকু, দামা (শক্ত হাঁড় কাটার জন্য) সঙ্গে আনবে। একটু
মাঝারি সাইজের গরুর জন্য (আনুমানিক ২০/২২ হাজার টাকা বা তার চেয়েও বেশী) ৪
জন কসাই লাগবে (নন প্রফেশনাল)।
৩). এক্সেসরিজঃ
জবাইয়ের পর থেকে মাংস কেটে ভাগ করা পর্যন্ত অনেক কিছুই লাগবে। যেমনঃ চাটাই,
পিঁড়ি, ছুড়ি, দা-বটি, চালের গুড়া বা আটা (মাংস কাটার জন্য), দড়ি (খুবই
গুরুত্বপূর্ণ), ২ টা বালতি (গরুকে খাবার দেয়ার জন্য), কোদাল (জবাইয়ের পর
রক্ত পরিষ্কার করার জন্য), এবং অন্যান্য (মনে আসলে লিখবো)।
দড়ির ব্যপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ জবাইয়ের আগে এই দড়ি দিয়েই গরুকে বেঁধে মাটিতে ফেলতে হবে। ভুলেও নাইলনের দড়ি ব্যবহার করবেন না! কারণ এটা পিছলা এবং গরু লাফালাফি করে সহজেই খুলে ফেলতে পারে। সাধারণত যেই দড়ি দিয়ে গরুর লাগাম ধরা হয়, সেটা দিয়েই কাজ চালানো যায়।
ছুড়ি অবশ্যই ধারালো হতে হবে। তা না হলে চামড়া ঠিকমত খালানো বা ছিলা যাবে
না। কিছু বালি আর এক টুকরো চকচকে পাথর সাথে রাখতে পারেন, তাহলে কাজের
ফাঁকে ধার করা সম্ভব হবে।
৪). গরুর খাদ্যঃ
ঈদের আগের দিন কিনলে এটার খুব একটা দরকার নেই। দিনের বেলা কিনলে শুধু
শুকনো খড় খাওয়ালেই হবে। সন্ধ্যার পর থেকে বেশী করে পানি খাওয়াতে হবে। তবে
আপনি যদি ২ দিন বা তার চেয়েও আগে কিনে থাকেন, তাহলে খৈল এবং ভুষি কিনে
খাওয়াতে হবে। সাথে খড় তো আছেই। খৈল ও ভুষি কুসুম গরম পানিতে ভাতের মাড়ের
সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। সাথে পর্যাপ্ত লবণ দিতে ভুলবেন না। মিশ্রণটি
যেন বেশী তরল না হয়। আবার একেবারে ঘন করে ফেললেও গরু খেতে পারবেনা।
মাঝামাঝি রাখতে হবে। চোরাবালিতে বালি ও পানির মিশ্রণ যেরকম থাকে, সেরকম
হলে পারফেক্ট হয়।
৫). গরুর যত্নঃ
যে পশুটি মাত্র ২ দিনের জন্য আপনার অতিথী হয়ে এসেছে, তার যত্ন তো নেয়াই
উচিৎ। এখন শীতের মৌসুম, রাতে ঠান্ডা পরে। সে যেন ঠান্ডায় কষ্ট না পায় মে
জন্য ছালার বস্তা কেটে চারকোণায় চারটি সুতলি লাগিয়ে গায়ে পড়িয়ে দিন। আরাম
পাবে। রাখার স্থানটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। তাকে গলার নিচে এবং মাথায়
হাত দিয়ে আদর করে দিন। দেখবেন সে ঠিকই আপনার ভাষা বুঝতে পারবে। ঈদের জামাত
পড়তে যাবার আগে হালকা গরম পানি দিয়ে তাকে গোসল করান ভাল করে। শুকনো খড়
দিয়ে ভাল করে সারা গা ডলে তাকে গোসল করিয়ে নিন।
৬). জবাইয়ের পূর্ব মুহুর্তেঃ
আর জবাইয়ের পূর্ব মুহুর্তে প্রথমেই গরুর পিছনের পা বেঁধে ফেলুন, এরপর
সামনের পায়ের সাথে ঐ দড়িটি প্যাঁচ দিয়ে হ্যাঁচকা টানে মাটিতে ফেলে মাথা
ধরে রাখতে হবে। মাথা অবশ্যই পশ্চিমমুখি হতে হবে এবং গলা টান টান করে রাখতে
হবে।
একটি সাদা কাগজে যাদের নামে জবাই হবে তাদের নাম এবং বাবা বা স্বামীর নাম
লিখে রাখুন। আপনি নিজেও জবাই করতে পারেন। অথবা অন্য কেউ বা হুজুরকে দিয়েও
জবাই করাতে পারেন।
৭). চামড়া ছিলানোঃ
খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজের ক্ষিপ্রতা এবং সৌন্দর্য্যের উপর নির্ভর
করছে কসাইয়ের দক্ষতা। একজন ভাল কসাই খুবই দ্রুততার সাথে নিখুঁত ভাবে
পিছনের পা থেকে চামড়া খালানো শুরু করে। পর্যায়ক্রমে সামনের পা এবং অশেষে
পেটের অংশ থেকে সে চামড়া ছিলে। এসময় লক্ষ্য রাখতে হবে চামড়ার যেন কোন
ক্ষতি বা ছিদ্র না হয়। কারণ এ চামড়া ফকির মিসকিনের হক। এর টাকা তাদেরকেই
বন্টন করে দেওয়া উচিৎ। ভুড়ির অংশ ছিলানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন সেটা
ছিদ্র হয়ে কোন আবর্জনা নির্গমন না হতে পারে।
৮). মাংস কাটাঃ
এটাতো সবাই করে, এবং পারে। বিস্তারিত লেখার দরকার নেই। তবে কারও কোন প্রশ্ন থাকলে উত্তর দেয়ার চেষ্ট করবো।
৯). ভাগ-বাটোয়ারাঃ
আপনি একলা কোরবান দিয়ে থাকলেও ভাগ বাটোয়ারা করতে হবে। কারণ এখানে তিন
ভাগের এক ভাগ ফকির মিসকিনদের জন্য। যারা সারাবছর মাংস খেতে পারে না। এই
দিনটির জন্যই তারা অপেক্ষা করে থাকে। তাদের অংশ তাদেরকে দিয়ে দিন। কারণ তা
না হলে এটা আপনার জন্য হালাল হবে না।আর বাকি ২ ভাগের একভাগ আপনার আত্মীয়
স্বজন এবং পাড়া প্রতিবেশীর জন্য। তাদেরকে আপনি চাইলে কাঁচা মাংস দিতে
পারেন, অথবা রান্না করেও দিতে পারেন। পুরোটাই আপনার ইচ্ছা!
(আর আমার মত যারা এই কোরবানে মুসাফির থাকবে, তাদেরকে নিজ দায়িত্বে বাসায়
দাওয়াত করে খঅওয়াতে পারেন। বিশেষ কারণবশত এইবার এই প্রথম ঢাকায় একলা সবার
থেকে আলাদা হয়ে ঈদ করতে হচ্ছে! )
এই টিপসগুলা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা লব্ধ! গত ১৪ বছর ধরে সুচারুরুপে
পালন করে আসছি! এইবারই শুধু ব্যতিক্রম! আপনাদের সামন্যতম উপকারে লাগলেও
ভাল লাগবে।
ঈদ মোবারক
ঈদ মোবারক দাদা
ঈদ মোবারক সুমন ভাই! কেমন আছেন?
ব্যাপক
হ!
এট্টু দেরি হৈয়া গেছে... ! পরের ঈদের লাইগা তুইলা রাখলাম। কামে লাগবো...
আহারে! ইয়াজাদ ভাই, দেরী করার জন্য দুঃখিত! নেক্সট টাইম ইনশাল্লাহ! :)
কোরবানের গরু পেটে চালান দেওয়ার পরে কি কি হইতে পারে ...সেইটার জন্য পার্ট ২ টিপস হিসাবে দিতে পারেন... :D
~
হুমম.... আইডিয়া খারাপ না। সেইটা নিয়া আরেকটা পোস্ট দেওয়া যায়! :)
বড় পোস্টে ১
বড় পোস্টে ১
মন্তব্য করুন