স্বজাতি কুকুর ও সেই সব যুদ্ধবন্দী
‘একাত্তরের সংকটের জন্য কিছু লোক সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে, আবার কেউ কেউ দায়ী করছে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক নেতাও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। এমনকি বাংলাদেশের মানুষ এখনো বিশ্বাস করে যে আমরা সঠিক ছিলাম। গোলাম আজম সাহেবসহ সাধারণ মানুষ এখনো মনে করেন না আমরা ভুল করেছি।’
১৯৮৮ সালে ইসলামাবাদে জেনারেল টিক্কা খানের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন মুসা সাদিক। মুসা সাদিক মুজিবনগর সরকারের যুদ্ধ সংবাদদাতা ছিলেন। আর এই সাক্ষাৎকারটি পেলাম তাঁর বই ‘বাংলাদেশ উইনস ফ্রিডম’-এ।
এটুকু পড়তে পড়তেই মনে পড়ে গেল যতীন সরকারের ‘পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু-দর্শন’ বইটির কথা। মুক্তিযুদ্ধের সময় রুকন উদ্দিন মুন্সী নামের এক ধর্মপ্রাণ মানুষের সঙ্গের কথোপকথন তিনি তুলে দিয়েছিলেন।
‘......কুকুর মানুষের এতো উপকার করে, তবু কুকুরের ছোঁয়া লাগলে অজু নষ্ট হয়ে যায় কেন বলতে পারেন?’
‘তা আমি কি করে বলবো? এর জবাব তো আপনিই ভাল জানেন’।
‘তা হলে শুনুন। কুকুর মানুষের উপকার করে ঠিকই, কিন্তু তার স্বজাতিকে সে দু’চোখে দেখতে পারে না। পরজাতি মানুষের জন্য কুকুর জান দেয়, কিন্তু স্বজাতির কাউকে দেখলেই তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, কামড়াকামড়ি করে। কুকুর তার স্বজাতিকে অর্থাৎ অন্য কুকুরকে ভালবাসে-এরকম আপনি কোখাও দেখতে পাবেন না। স্বজাতিকে এমন হিংসা করে বলেই কুকুর প্রাণীটা একেবারে না-পাক।’
একটু থেমে আবার সেই মহাকুমা শহরের শান্তি কমিটির চাঁইদের কথা তুললেন রুকন উদ্দিন মুন্সী। বললেন,‘ওরাও ওই কুকুরের মতো। ওরা পরজাতি পাকিস্তানিদের জন্যে জান কোরবান করতে নেমেছে স্বজাতি বাঙালিদের সর্বনাশ করে। ওরাও না-পাক। যতো বড়ো আলেমই হোক এরা, এদের পিছনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়লে তা কবুল হবে না কিছুতেই।’
এই কুকুরগুলোর কর্মকান্ড কমবেশি সকলেরই জানা। এ নিয়ে অসংখ্য লেখা আছে। পাকিস্তানিরাও কিন্তু অল্প হলেও কিছু লিখেছেন। এরকম একটি বই হচ্ছে সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার।’ সিদ্দিক সালিক ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে টিক্কা খান ও পরে নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা ছিলেন।
তিনি লিখেছেন, ‘.....‘দেশপ্রেমিক’ পাকিস্তানিদের খবরের ওপর ভিত্তি করে তারা প্রায়শই ‘সন্ধান উচ্ছেদকরণ অপারেশন’ চালাতে লাগলো। খবর সরবরাহকারীদের মধ্যে কেউ কেউ পাকিস্তানের সংহতির ব্যাপারে সত্যিকার অর্থেই আগ্রহী ছিল এবং সেনাবাহিনীকে সহযোগিতার জন্য জীবনের ঝুঁকিও নিত। কিছু অবশ্য আওয়ামী লীগপন্থীদের নিজেদের পুরানো ক্ষত মীমাংশার জন্য সেনাবাহিনীর সাথে নিজেদের যোগাযোগকে ব্যবহার করতো। দৃষ্টান্তস্বরূপ, একদিন একজন দক্ষিনপন্থী রাজনীতিক একটি তরুণকে সঙ্গে নিয়ে সামরিক আইন সদর দফতরে আসে। বারান্দাতে হঠাৎ করেই তার সাথে আমার দেখা। আস্থাভরে ফিসফিসিয়ে সে বললো, ‘বিদ্রোহীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু খবর তার কাছে আছে।’ আমি তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে গেলাম। সেখানে গিয়ে সে বললো, ‘বালকটি তার ভাইয়ের ছেলে। সে বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পার কেরানীগঞ্জের বিদ্রোহীদের বন্দী শিবির থেকে পালিয়ে এসেছে।’ বালকটি আরো বললো, ‘বিদ্রোহীরা শুধু স্থানীয় লোকজনদের হয়রানিই করছে না-রাতে শহর আক্রমনের পরিকল্পনা নিয়েছে।’
তৎক্ষনাৎ উচ্ছেদকরণ অপারেশনের আদেশ দেওয়া হয়। আক্রমণকারী সৈন্যদের কমান্ডারকে ব্রিফ করা হলো। ভোর হবার আগেই ল্যকে নমনীয় করার উদ্দেশ্যে গোলাবর্ষনের জন্য ফিল্ডগান, মর্টার ও রিকয়েললেস রাইফেলস প্রস্তুত করা হলো। স্থানটি সকাল হবার আগেই দখল করবার জন্যে সৈন্যরা সাঁড়াশি অভিযান চালাবে।
যে অফিসার হামলা পরিচালনা করে, সন্ধ্যায় তার সাথে দেখা করলাম। সে যা বললো, তাতে আমার রক্ত হিম হয়ে গেল। দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সে বললো, ‘ওখানে কোনো বিদ্রোহী ছিল না। ছিল না অস্ত্রও। শুধু গ্রামের গরিব লোকেরা-অধিকাংশ নারী এবং বৃদ্ধ। গোলার আগুনের মাঝে পুড়ে দগ্ধ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক এই যে, গোয়েন্দা মারফত সঠিক সংবাদ সংগ্রহ না করেই এই হামলা পরিচালিত হয়েছে। আমার বিবেকের ওপর এ ভার আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বয়ে বেড়াবো।’
তারপরেও দেশ স্বাধীন হল। ১৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরলেন দেশে। দেশ চালানোর ভার নিলেন। ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশে গঠিত হয় বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭২।
১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর সরকারি প্রেসনোটের মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কথা জানানো হয়। একইসঙ্গে দালাল আইনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়। (১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বরের আগে পর্যন্ত দালাল আইনের মামলাগুলোয় ৩৭ হাজার ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে এদের ২৬ হাজার ছাড়া পেয়ে যায়। আর ১১ হাজার দালাল বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি ভোগ করেছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এএসএম সায়েম ও জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকার পুরোপুরি দালাল আইন বাতিল করার পর ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই আপিল করে এরা সব ছাড়া পেয়ে যায়। ছাড়া পাওয়া দালালদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী হত্যার আসামিরাও ছিল।)
প্রশ্ন হচ্ছে কেন বঙ্গবন্ধু এতখানি নমনীয় হয়েছিলেন দালালদের প্রতি। কেনই বা ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীদের বিচার করতে পারলেন না।
‘ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে সোজা গেলাম গণভবণে। তাঁর প্রেস সেক্রেটারি তোয়াব খান আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁর অফিস কক্ষে। কয়েকজন মন্ত্রী তখন সেখানে উপস্থিত। তিনি আমাকে একান্তে ডেকে নিলেন। বললেন, এখনি একটা সরকারি ঘোষণার খসড়া তোমাকে লিখতে হবে। পাকিস্তানীদের মধ্যে কোলাবরেটর হিসেবে যারা দন্ডিত ও অভিযুক্ত হয়েছেন, সকলের জন্যও ঢালাও ক্ষমা (জেনারেল এ্যামনেষ্টি) ঘোষণা করতে যাচ্ছি।
বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, পালের গোদাদেরও ছেড়ে দেবেন?
তিনি বললেন, হ্যাঁ। সকলকে। কেবল যাদের বিরুদ্ধে খুন, রাহাজানি, ঘরে আগুন দেয়া, নারী-হরণ বা ধর্ষণ প্রভৃতির অভিযোগ রয়েছে, তারা ছাড়া পাবেন না। কেন, ঢালাও ক্ষমা ঘোষণায় তোমার মত নেই?
বললাম, না, নেই। পাকিস্তানীদের অত্যাচারে সাহায্য যোগানের অভিযোগে যে হাজার হাজার লোক বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে, তাদের প্রতি আপনি ক্ষমা প্রদর্শন করুন। আপত্তি নেই। তাদের অনেকেই নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের সাহায্য জোগাতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু পালের গোদাদের আপনি ক্ষমা করবেন না। এরা বাংলাদেশের শত্রু। এদের বিচার ও দন্ড হওয়া দরকার।
মুজিব হেসে বললেন, না তা হয় না। সকলকেই ছেড়ে দিতে হবে। আমার এ আসনে বসলে তোমাকেও তাই করতে হত। আমিতো চেয়েছিলাম নব্বই হাজার পাকিস্তানী সৈন্যদের ছেড়ে দিয়ে অন্তত ১৯২ জন যুদ্ধাপরাধী অফিসারের বিচার করতে। তাও পেরেছি কী? আমি একটা ছোট্ট অনুন্নত দেশের নেতা। চারিদিকে উন্নত ও বড় শক্তির চাপ। ইচ্ছা থাকলেই কি আর সব কাজ করা যায়?’ (ইতিহাসের রক্তপলাশ: পনের আগস্ট পঁচাত্তর, আবদুল গাফফার চৌধুরী।)
আসলে কি হচ্ছিল তখন?
১৫ এপ্রিল, ১৯৭২। মার্কিণ প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে একটি গোপন চিঠি লেখেন ভুট্টো। চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘ভারতীয় মদদে শেখ মুজিবুর রহমান এক হাজার ৫০০ যুদ্ধবন্দীর ‘যুদ্ধাপরাধের’ জন্য বিচারের ব্যাপারে বন্ধপরিকর বলে মনে হয়। যদি বাংলাদেশ সত্যি সত্যি তেমন পথে এগোয়, তাহলে তার মারাত্বক প্রতিক্রিয়া হবে পশ্চিম পাকিস্তানে। পশ্চিম পাকিস্তানে লাখ খানেক বাঙালি রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো রকম খারাপ ব্যবহার যাতে না হয় আমরা তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। কিন্তু এই পরিকল্পিত বিচার যদি সত্যি সত্যি শুরু হয়, তার ফলে যে তিক্ততার সৃষ্টি হকে তাতে ভারত ও ‘বাংলাদেশের’ সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি অসম্ভব হয়ে পড়বে।’ (দ্য আমেরিকান পেপারস, পৃষ্ঠা-৮৪২)।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পনের পরপরই পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের ওপর হামলা ও হয়রানি শুরু হয়ে যায়। বাড়ি লুট, ছুড়িকাঘাত ও অন্যান্য ঘটনা মার্চের গোড়ার দিকে এতোটা বেড়ে যায় যে শেখ মুজিব জাতিসংঘের মহাসচিব ওয়াল্ডহাইমের কাছে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ জানিয়ে আবেদন পত্র লিখতে বাধ্য হন।
সে সময় আফগানিস্তানের ভেতর দিয়ে ভারত হয়ে বাংলাদেশে আসার চেষ্টায় অনেক আটকে পড়া বাঙালি বিপদের সম্মুখীন হচ্ছিলেন। কেউ ডাকাতের হাতে পড়ে সবকিছু খোয়াচ্ছিলেন, কেউ কেউ মারাও গেলেন। যাতে বাঙালিরা দেশত্যাগ করতে না পারে, সেজন্য এ সময় পাকিস্তান প্রতিটি পলায়নরত বাঙালিকে ধরিয়ে দিতে পারলে এক হার রুপি পুরস্কার ঘোষণা করে। (নিউইয়র্ক টাইমস, ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৭২)।
শুরুতে ৯০ হাজার যুদ্ধবন্দী থাকলেও বাংলাদেশ প্রথমে বিচারের জন্য ১৫০০ অফিসার ও সৈন্যকে আটকে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে তা ছাঁটাই করে ১৯৫-এ নামিয়ে আনা হয়।
বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত প্রচার করার কিছু পরেই ভুট্টো ২০৩ জন বাঙালিকে ‘গুপ্তচর’ উল্লেখ করে জানান যে, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে না, বরং নিজ দেশের আইন অনুযায়ী বিচার করবেন।
‘আমরা পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দীদের বিচারের কোনো চেষ্টাকে মেনে নেব না। সে চেষ্টা হলে পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং আমাদের সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে। যুদ্ধবন্দীদের বিচার হলে আমাদের এখানে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে, তার বিরুদ্ধে শ্রমিক, ছাত্র ও সাধারণ জনতার বিক্ষোভ হবে, সেনাবাহিনীতেও প্রতিক্রিয়া হবে। আমাদের নাকে এভাবে খত দেওয়ার চেষ্টা করলে আমরা তা মেনে নেবো না। জনমত এখানেও বিচারের দাবি করবে। আরও জানি, বাঙালিরা যুদ্ধের সময় তথ্য পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হবে।’ (নিউইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ভুট্টো। ২৮ মে ১৯৭৩।)
এ গেলো একটি দিক। আরেকটি দিক হচ্ছে পাকিস্তানের স্বীকৃতি পাওয়া। নানা কারণে সে সময় সরকার এই স্বীকৃতি অর্জনকে অত্যন্ত বড় করে দেখছিলেন। এ নিয়ে অনেক বিস্তারিত জানা যায় হাসান ফেরদৌসের ‘১৯৭১: বন্ধুর মুখ শত্রুর ছায়া’ বইটিতে।
তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরী ছিল একাধিক কারণে। নব্য স্বাধীন দেশটি কাগজে কলমে স্বাধীনতা অর্জন করলেও টিকে থাকার এক মরণপন সংগ্রাম তার মাত্র শুরু হয়েছে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলে তার অবকাঠামো বিধ্বস্ত, অধিকাংশ বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে রয়েছে, শোনা যাচ্ছে দুর্ভিক্ষের অশনিসংকেত। সে সময়ে তার একমাত্র বন্ধু বলতে প্রতিবেশী ভারত ও তারই সূত্রে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন। বাংলাদেশকে সাহায্য করার ক্ষমতা কারোই অফুরন্ত নয়। তেলসম্মৃদ্ধ আরব দেশগুলো সাহায্যের হাত বাড়ালে অবস্থা খানিকটা বদলায়। কিন্তু পাকিস্তানকে নারাজ করে তাদের কেউ সে পথে পা বাড়াবে না।’
কতগুলো ঘটনার কথা এসময় মনে রাখতে হবে।
১. জাতিসংঘের সদস্যপদ বাংলাদেশ পাচ্ছিলো না চীনের ভেটোর কারণে।
২. ভুট্টো ঘোষণা দেন যে, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে পাকিস্তান তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
৩. আরব দেশগুলো ছিল বৈরি। বাংলাদেশ যাতে স্বীকৃতি না পায় এজন্য ভুট্টো আরবদেশগুলোতে ব্যাপক সফরও করেছিলেন।
৪. বিশ্বব্যাংক এসময় সাহায্য দেওয়া নিয়ে নানা সমস্যা তৈরি করছিল। (এ নিয়ে বিস্তারিত জানা যায় অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বইটিতে।)
৫. ভুট্টো এমন অবস্থা তৈরি করেছিলেন যাতে চীন ও আরব দেশগুলো তাকে ছাড়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়।
৬. যুক্তরাষ্ট্রও তখনও বাংলাদেশের প্রতি নমনীয় না।
৭. আবার ৭৪ এর দিকে এসে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আগের মতো ভাল ছিল না।
৮. যুদ্ধবন্দীদের বিচার করলে পাকিস্তান স্বীকৃতি দেবে না এটা পাকিস্তান স্পষ্টই জানিয়ে দেয়। আর বাংলাদেশ বলতে শুরু করে স্বীকৃতি না দিলে এ নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো বৈঠক হতে পারে না। অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী ও স্বীকৃতি একে অপরের পরিপূরক হয়ে পরে।
এর পরের ঘটনা এরকম। ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ইসলামি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন যে যুদ্ধাপরাধের জন্য যে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনাসদস্যকে বাংলাদেশ চিহ্নিত করেছে তাদের ব্যাপারে একটি সমঝোতায় আসতে তিনি প্রস্তুত। এরপরই ৯ এপ্রিল ভারতে তিনপরে একটি চুক্তি হয়, যাকে বলা হয় দিল্লী চুক্তি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যপারে সব দাবি তুলে নেয়।
হাসান ফেরদৌস যেমনটি লিখেছেন, ‘যেভাবেই হোক, পাকিস্তানের সঙ্গে একধরণের সমঝোতায় আসার জন্য যে ক্রমবর্ধিত চাপ, তা সহ্য করার ক্ষমতা সে মুহূর্তে বাংলাদেশের ছিল না।’
ফলে শেষ পর্যন্ত সমঝোতা করতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। তারপরেও ভবিতব্য ঠেকাতে পারেননি তিনি। এই ৭৪ সালেই বড় ধরণের দুর্ভিক্ষ হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানা টালবাহানা করে কথা না শোনার প্রতিশোধ নিয়েছে। আরব দেশগুলোও এগিয়ে আসেনি। আর ৭৫-এ তো জীবনই দিতে হল।
বঙ্গবন্ধুর আরও একটি বড় দোষ ছিল। দিল্লীর ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পর লন্ডনের গার্ডিয়ার পত্রিকা এ নিয়ে একটি সম্পাদকীয় লিখেছিল। পত্রিকাটি লেখে, ‘মুজিব ঠকেছেন, কারণ দেশের ভেতরে নেতা হিসেবে তাঁর দক্ষতা সত্বেও তিনি আসলে একজন নেহায়তই ভালো ও সৎ মানুষ। ভুট্টো প্রতিটি পদেক্ষেপে মুজিবের কোমল প্রকৃতিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারে সক্ষম হন।’
জরুরি লেখা । সরাসরি প্রিয়তে ।
বঙ্গবন্ধুর একটা বিরাট কলিজা ছিল। আবার দেশের শত্রুদের বিপজ্জনক মনে করতেন না। জীবন দিয়ে এর ফল তিনি পেয়েছেন। তাঁর মেয়ে অনেক কিছু দেখেছেন গত কয়েকবছরে। তাই অন্তত এ ব্যাপারে তিনি শত্রু চিনবেন এই আশাই করি। আর বিচার করার মধ্য দিয়েই কেবল তা সম্ভব।
হ । বংগবন্ধুর বাবার চল্লিশায় অনেকের মধ্যে যশোরে কর্মরত ৯ (সম্ভবত) ই বেংগলের অধিনায়ক (মুক্তি যোদ্ধা ও খেতাব প্রাপ্ত) ও উপস্থিত ছিলেন। ঠোঁট কাটা হিসেবে পরিচিত এই অফিসার খাবারের সময় বংগবন্ধুর পাশে বসেছিলেন (বংগ বন্ধু নিজেই বসতে বলেছিলেন)। পুরো খাবারের সময় জুড়ে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন বঙ্গবন্ধুকে যে তিনি নিজেই নিজেকে জল্লাদদের দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছেন। বংগ বন্ধু তাঁর কথা হেসে ঊড়িয়ে দেন।( ত্রিশোনকু )
ঠোঁট কাটা হিসেবে পরিচিত ঐ অফিসার খাবারের সময় বঙ্গবন্ধুকে যা বলেন অনুরুপ কথা বলে বঙ্গবন্ধুকে সাবধান করেছিলেন কিউবার ফিডেল কাষ্ট্রো আর বঙ্গবন্ধুর জবাব ছিল -এজন্যই ওদের কাছে রেখেছি যেন নজর রাখতে পারি ।নির্মম পরিহাস হল, সিআইএ এজেন্ট সামরিক-বেসামরিক আমলারাই আসলে বঙ্গবন্ধুর উপর নজর রাখছিল ।
অধিকন্তু রাজনীতিকদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু যাদের বিশ্বস্ত বন্ধু ভেবে কাছে টেনে নেন পরিক্ষিত বন্ধু তাজউদ্দিনকে দূরে ফেলে সেই মোশতাক গংই তার কবর খুড়ছিল ।
সিরাজউদ্দৌলাও ভূল করেছিলেন । বঙ্গবন্ধুও সেই ভূলের পুনারবৃত্তি করলেন । অনুরুপ ভূল জিয়াও করেন এরশাদকে বিশ্বাস করে । এই তিনজনকেই তাদের ভূলের খেসারত দিতে হয় নিজের জীবন দিয়ে ।
একমত পুরাই।
অতিরিক্ত জরুরী লেখা। প্রিয়তে এবং ফেবুতে শেয়ার করলাম।
১৫ আগস্ট এই লেখাটা তৈরি করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সময় পাই নাই। ভাবলাম এখন লিখেই ফেলি।
যতীন সরকারের পুরা বইটাই অসাধারন।
লেখাটা কোরামিন হইছে!
এই সারসংক্ষেপ বটিকাটা খুব দরকার তাদের জন্য, যারা যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিষয়ে 'নিরপেক্ষতা' ও 'মানবতা' রোগে ভুগছেন।
কী পরিমান চাপের মধ্যে যে ছিলেন বঙ্গবন্ধু, তা বোঝার সাধ্য আমাদের হবে না। কিন্তু উদারতার প্রতিদান তিনি পাননি।
Sir,
A leader needs to be tactful and strict sometimes when needed, not only soft and generous. Even a silly mistake by him can make the whole nation suffer.
There could be some indirect ways out there to punish those culprits... Also, having control on country's internal security and economy was important....
Anyways, Bangabondhu led us in freedom war and lastly gave his life. We were not fortunate enough to get a generous leader for a long time.
পোষ্টটি ষ্টিকি হওয়া উচিত!
স্টিকি হইছে। তবে এই ব্লগে একটা পোস্ট ফ্রন্ট পেজে দীর্ঘসময় থাকে বলে স্টিকির প্রয়োজন পড়ে না। তারপরেও মডুরে ধইন্যা।
খুবই জরুরী লেখা । স্টিকি করার দাবী জানাই।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
পোস্ট স্টিকি করা হোক।অসাধারন এক লেখা-একটা দলিল
অনেক ধন্যবাদ।
হ্যাটস্ অফ টু মাসুম ভাই। এরকম একটা লেখাকে কিভাবে প্রশংসা করতে হয় জানা নেই।
স্টিকি করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখাটা মাথায় ছিল। কিন্তু আপনার পোস্টটা পড়ে মনে হল এখনই লিখে ফেলি। তারপর লিখলাম।
অসাধারণ একটা লেখা। এই পোষ্টের জন্য মাসুম ভাইকে স্যালুট।
পোষ্ট স্টিকি করা হউক।
তোমারে ধইন্যা
মাসুম ভাই পোস্ট দিবে আর সেটা অসাধারণ হবে না এটাতো ভাবাই যায় না।
বরাবরের মতো অসাধারণ পোস্ট।তয় এটা বোধহয় সেরার মধ্যে সেরা হয়েছে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ রাসেল
ফেইসবুকে শেয়ার করলাম...
ধইন্যা
জোশ একটা পোষ্ট! মাস্ট রিড।
শেয়ার করলাম
(মাসুম্ভাই এই পোষ্টটা দেখবেন আমাদের মত পিচ্চিরা রেগুলার কোট করবে সামনে, কিছু বইয়ের লিঙ্ক/নাম ফুটনোট আকারে/অন্য লেখার লিঙ্ক দিলে আরেকটু ভালো হত, আর মুক্তিযুদ্ধের/ এবং তার পরবর্তীকালীন সময়ের উপর নিয়ে লেখা বইগুলার উপর একটা আলোচনা/রিভিউ পোষ্ট চাই)
আমার এই লেখায় বেশ কয়েকটি বইয়ের নাম দেয়া আছে। আর অন্যান্য বইগুলো নিয়ে (আমি যতটুকু জানি) আলোচনা করার ইচ্ছা তৈরি হলো।
একটি অতি মূল্যবান দলিল।
প্রিয়তে।
ধন্যবাদ আপা।
চরম পোষ্ট, স্যালুট মাসুম ভাই।
মাসুমভাইকে অভিবাদন।
পোস্টটি স্টিকি করা হোক।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ
যেই শ্লারা চেঁচায় বঙ্গবন্ধু কেন যুদ্ধাপরাধীগো মাফ কৈরা দিসে, তাদের লাইগা মোক্ষম জবাব...
হ্যাটস অফ মাসুম ভাই...
দুর্দান্ত। অরপির কথা মনে করায় দিলেন।
খুব প্রয়োজনীয় একটি লেখা, অনেক কিছু জানা গেলো।
ধন্যবাদ মাসুম ভাই আর সাথে পোস্টটি স্টিকি করার আবেদন রইল
ধন্যবাদ রন। (আমার সব মনে আছে।)
সত্যি এটা যে কত জরুরী একটা লেখা, তা বলে বোঝানো যাবে না।
ছোট বেলা থাকে শুনে আসছি, শেখ মুজিব কেন গণক্ষমা ঘোষনা করলেন? সাধারণ মানুষের কাছে এটি হল এখন পর্যন্ত আওয়ামীলীগ সরকারের অনেক পরাজয়ের মাঝে মস্ত এক পরাজয় এবং অনেক গুলো খারাপ বদনামের মধ্যে বিশেষ একটা বদনাম। অথচ আমার এই বয়স পর্যন্ত আমি দেখেছি যে, স্বয়ং আওয়ামীলীগের কেউ এখনও জনগনের কাছে কেন মুজিব এই কাজটি করেছিলেন? তার পরিস্কার কোন ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারেনি, জনগণকে কনভিন্স করতে পারেনি। তাই প্রশ্নটা আজও মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেরায়।
অল্প কথায় দূর্দান্ত লিখছেন বস। লেখাটা তরুন প্রজন্মকে অনেক কিছু জানতে সাহায্য করবে।
আপনাকে স্যালুট
এতো কিছু করেও কিন্তু শেখ মুজিব লাভবান হতে পারেননি। বলা যায় ঠকেছিলেন। সুতরাং বলা যায় কাজটা শেষ পর্যন্ত তারঁ পক্ষে যায় নি।
বস, যতীন সরকারের বইটা কই পাবো?
বইটা যে কোনো ভাল বইয়ের দোকানে পাবেন। অসাধারণ একটা বই। অবশ্য পাঠ্য।
থ্যাংকু ভাইয়া।
আজিজে পাবো তো?
মুজিব হেসে বললেন, না তা হয় না। সকলকেই ছেড়ে দিতে হবে। আমার এ আসনে বসলে তোমাকেও তাই করতে হত। আমিতো চেয়েছিলাম নব্বই হাজার পাকিস্তানী সৈন্যদের ছেড়ে দিয়ে অন্তত ১৯২ জন যুদ্ধাপরাধী অফিসারের বিচার করতে। তাও পেরেছি কী? আমি একটা ছোট্ট অনুন্নত দেশের নেতা। চারিদিকে উন্নত ও বড় শক্তির চাপ। ইচ্ছা থাকলেই কি আর সব কাজ করা যায়?’
উপরের লেখাগুলো পড়ে মনে হল, সত্যিই তো ! ছোট দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শেখ মুজিব কতটা অসহায় ছিলেন। তাঁর স্বদিচ্ছা থাকা স্বত্বেও বিচার করে যেতে পারেন নি তিনি। সাধারন ক্ষমার নামে যারা মানুষদের ভুল বুঝায়, তাদের জন্য এই লেখা একটা চপেটাঘাত, প্রামান্য দলিল।
কী বলবো মাসুম ভাই, স্যালুট আপনাকে...
সব দিকের চাপ সামলাতে তিনি যোগ্য লোকদের কাছে পাননি, নেনও নি। এটাও তাঁর একটা বড় ব্যর্থতা।
৭৩ এর সাধারন ক্ষমার নামে যারা এখনকার যুদ্ধাপরাধের বিচারকে নাকচ করে দেয় তাদের জন্য লেখাটা একটা চমৎকার জবাব। একই সাথে পিয়াল ভাইয়ের একটা পোস্টের কথা বলতে চাই যেটা কিছুদিন আগে আমারব্লগে পড়েছিলাম। ৭৩ এর সাধারণ ক্ষমার প্রামাণ্য দলিল।
তবে বঙ্গবন্ধুর করা "ক্ষমা"র ব্যাপারে আমার কিছু আপত্তি আছে। এক অর্থে ঘাতক-দালালদের পুনর্বাসনের কাজ তিনিই শুরু করে দিয়ে গেছেন।
খেয়াল করুন, যুদ্ধাপরাধী বলতে আমরা বুঝি নেতা বা মূল যুদ্ধপরিকল্পনার প্রণেতাদের, যাদের নিষ্ঠুর পরিকল্পনা আর আদেশকে সৈন্যরা বাস্তবায়ন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলেন বা পরবর্তী অন্যান্য যুদ্ধ (বসনিয়া, কম্বোডিয়া, যেগুলোতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে) বলেন, সবখানেই এই পালের গোদাদেরই যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বিচার হয়েছে।
সেই হিসেবে ৭১ এর যুদ্ধে বাংলাদেশী পালের গোদাদের মধ্যে খান সবুর, শাহ আজিজ, খাজা খয়ের, গোলাম আজম, আব্বাস আলী, ইউসুফ -- এরাই পড়ে। আমার মতে সবার আগে এই শয়তানগুলার ফাঁসি হওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সাধারণ ক্ষমার আওতায় এরা (গোলাম আযম পালিয়ে ছিলো বলে পড়ে নাই) পড়ায়, আমি ঐ ক্ষমাটাকে মেনে নিতে পারছিনা।
এমনকি পিয়াল ভাইয়ের সেই পোস্টে দেখলাম যে ছাড়া পাওয়া কোলাবরেটরদের নিয়ে বলা হয়েছে, "তারা দেশ গড়ার কাজে অংশ নেবেন টাইপের কিছু।" ওটা পড়ে আমি জাস্ট উচ্ছারণ করেছি, "হোয়াট দ্য .... "।
পাকি শয়তানগুলার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অসহায়তা মেনে নিলাম, কোনদিন বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হইলে তখন এটার তেল উসুল করা হবে আশা করি। কিন্তু দেশী মূল যুদ্ধাপরাধীদেরকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় ছেড়ে দেয়ার দায় থেকে বঙ্গবন্ধুকে আমি ছাড় দিতে পারছিনা। স্যরি।
পাকিস্তানিদের কেন ছেড়ে দিতে হয়েছিল তা নিয়ে বেশ কিছু লেখা অনেকেই লিখেছেন। কিন্তু দেশীয় দালালদের কেন ছাড়া হল, কি সেই বাধ্যবাধকতা তা নিয়ে খুব একটা লেখা পাওয়া যায় না।গাফফার চৌধুরীর বইটায় দেখবেন অনেক জায়গায় আছে যে, বঙ্গবন্ধু বলতেন, তিনি ডাক দিলেই সবাই দেশ গঠনে আবার ছুটে আসবে।এই বিশ্বাস তার কেন হয়েছিল সেটা আমাদের পক্ষে আর জানা সম্ভব না।
উদারতার সুনির্দিষ্ট দুইটা উদাহরণ দেই। মাহমুদ আলী ভুট্টোর মন্ত্রী হয়েছিলেন। এই বাঙালি লোকটি জাতিসংঘে শাহ আজিজের সঙ্গে বাঙলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় ছিলেন। এমনকি মাহমুদ আলীর বড় মেয়ে ঢাকায় থেকে রেডিও টেলিভিশনে নিয়মিত বাংলাদেশ বিরোধী অনুষ্ঠান করেছে। ডিসেম্বরের ঠিক আগে মাহমুদ আলী পাকিস্তান পালিয়ে যায়। মেয়ে-বউ আটকা পড়ে। বঙ্গবন্ধু ২০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট বানিয়ে দিয়ে তাদের পাকিস্তান পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
সবুর খানকে জেল থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে আবদুল গাফফার চৌধুরী নিজে তদ্বির করেছিলেন।
শাসক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অনেকগুলো ভুল ছিল। এর মধ্যে প্রধান ভুল দালালদের ক্ষমা করা। জিয়াকে এর জন্য অনেকে দায়ী করলেও পথ দেখিয়েছিলেন তিনিই। জীবন দিয়ে তিনি এর প্রতিদান পেয়েছেন।
তাঁর আরও ভুল, অস্থায়ী সরকারের থাকা কালে মুশতাক-চাষী-ঠাকুরকে মাফ করা। পাকিস্তান ফেরত আর্মিদের আবার চাকরিতে ফেরত নেয়া, তাজউদ্দিনকে বের করে দেওয়া, শেখ মনিকে বেশি প্রশ্রয় দেওয়া-----ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাঁর মেয়ে সেই সব ভুলের যতটা সম্ভব শুধরাক-এটাই এখন চাই।
সেইটাই মাসুম ভাই, আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধু ব্যাক্তি-পরিচয়ের ক্ষেত্রে নরম মানুষ ছিলেন, যেখানে তাঁকে আরো অনেক কঠোর হওয়া উচিত ছিলো।
প্রথম আলোতে পড়েছিলাম, সম্ভবতঃ সবুর খানই তাঁকে চিঠিতে লিখেছিলো, মুজিব তুমি দেশের প্রধানমন্ত্রী আর আমি জেলে -- এটা কিভাবে হয়?
মুজিবের বলা উচিত ছিলো, "দাদাভাই, আমার ত্রিশ লাখ লোক মরছে, আর আপনে ঢোলে বাড়ি দিছিলেন" টাইপের কিছু।
তবে জিয়ার কেইস অনেক ডেলিবারেট। তার এজেন্ডাই ছিলো দালালদের উপরে তুইলা ধরা, যাকে বলে পাকাপোক্ত পুনর্বাসন। কারণ তার টার্গেট ছিলো দেশের "ইসলাম-পসন্দ" লোকজনের মন জয় করা। প্লাস পাকিস্তানের উস্কানি, কারণ "বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘাতক-দালালদের বিচার বলে কিছু নাই"-- এরকম একটা ব্যাপার পাকিদের জন্য স্বস্তিজনক হয়।
কিন্তু বস্, শেখ হাসিনা যদি নিজামি/কামরুদের সাথে সাথে মীর কাশমকে কিছু না করে তাইলে ভুল শুধরাবেনা।
সাবেক এরশাদ আর এখনকার জিয়া সৈনিক মওদুদের বইটা যদি পড়েন দেখবেন লেখা আছে, জিয়া নিজের রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে বেছে নিয়েছিলেন দক্ষিণ পন্থী ও পিকিং পন্থীদের। কারণ এরাই ছিল তার বড় সমর্থক। বঙ্গবন্ধুর সময় এরা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারছিল না, স্বাধীনতায় বিরোধতিার কারনে। ফলে এরা সবাই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে জিয়ার উপর ভর করে। ।উভয় উভয়কে বেছে নেয় বলা যায। ফলে দালালদের জন্য সব কিছু খুলে দেয় এই জিয়াই।
কেউ কেউ মনে করেন ভারতকে চাপে রাখতে পাকিস্তানকে সাথে নিয়ে জিয়া সার্ক-এর ধারণা সামনে নিয়ে এসেছিলেন। জিয়ার সময়ই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সবচেয়ে ভাল ছিল।
দুর্দান্ত.... দুর্দান্ত একটা লেখা মাসুম ভাই...
অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানতে পারলাম আপনার লেখার মাধ্যমে। ধন্যবাদ...
-------------------------------------
কেউ যাহা জানে নাই- কোনো এক বাণী-
আমি বহে আনি;
ধন্যবাদ আপনাকেও
আচ্ছা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখি পাকিস্তানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার তারিখ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫,ঠিক বংগবন্ধুর মৃত্যুদিনে।ভারতীয় কলামীস্ট কূলদীপ নায়ারের একটা কলামেও এই গত সপ্তাহেই এটা পড়লাম।কিন্তু এই চমৎকার লেখাটিতে দেখছি বলা হয়েছে পাকিস্তান বাংলাদেশকে ১৯৭৪ সালে স্বীকৃতি দিয়েছে।কেউ দয়া করে একটু পরিষ্কার করবেন কি?
পাকিস্তান বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিত স্বীকৃতি দেয় ১৯৭৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। আর ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট পাকিস্তান সবার আগে এবং দ্রুততম সময়ে স্বীকৃতি দিয়েছিল মোসতাক সরকারকে।
সঙ্গে আরও একটা তথ্য জানাই, বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৪তম সদস্য হয়েছিল ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর।
ফেইসবুকে শেয়ার করলাম বস??...
পাকি শয়তানগুলার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অসহায়তা মেনে নিলাম, কোনদিন বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হইলে তখন এটার তেল উসুল করা হবে আশা করি। কিন্তু দেশী মূল যুদ্ধাপরাধীদেরকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় ছেড়ে দেয়ার দায় থেকে বঙ্গবন্ধুকে আমি ছাড় দিতে পারছিনা। স্যরি।
একমত। এটা ছিল তঁর অনেকগুলা বড় ভুলের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বড় ভুলের একটা। এমনকি এখন তো কেউ কেউ বলেন, পাকিস্তানের স্বীকৃতি পেতে এতো মরিয়া হওয়ারও প্রয়োজন ছিল না।
শাষক হিসেবে ব্যর্থতার শুরুটা ছিলো "ক্ষমা" প্রদর্শন করার মতো "ভুল" । যখন সামারি ট্রায়াল করে ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠানো উচিৎ ছিলো ঠিক তখন নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আগানো ও ক্ষমা প্রদর্শন করাটাকে আমি মেনে নিতে পারি না। ৭২ - ৭৫ , এই ৩ বছরে কয় জনের বিচার হয়েছিলো ? ! দালাল আইনের মাঝেই অনেক ফাঁক ছিলো সে সময়ে। যারা দালাল আইন নিয়ে জানেন তাদের কাছে মূল দালাল আইনটা নিয়ে পোস্ট আশা করছি।
সেই আইনে অনেক ফাঁক ফোকর ছিল। আবার যারা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন তাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। তদ্বিরের কারণে অনেকেই নিজেদের নাম প্রত্যাহার করাতে পেরেছিল। তার উপর প্রথম বার ক্ষমা করায় বিচারের প্রক্রিয়াটাই পথমকে যায় বলা যায়। ২০১০ সালে এসে আমরা জোড়ালো গলায় বলতে পারছি ক্ষমা করা তাঁর জীবনের অন্যতম বড় ভুল।
মুজিব ঠকেছেন, কারণ দেশের ভেতরে নেতা হিসেবে তাঁর দক্ষতা সত্বেও তিনি আসলে একজন নেহায়তই ভালো ও সৎ মানুষ। ভুট্টো প্রতিটি পদেক্ষেপে মুজিবের কোমল প্রকৃতিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারে সক্ষম হন।’
ভালো মানুষ হলেও দেখি জ্বালা।
অনেক চমৎকার লেখা মাসুম ভাই। একটা দলিল । প্রিয়তে নিলাম।
ধন্যবাদ
অসাধারণ একটা লেখা। পোস্টদাতাকে স্যালুট।
অসাধারন মাসুম ভাই। সত্য ইতিহাস একদিন না একদিন প্রকাশ হবেই। এরকম আরও পোস্ট চাই....
ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ হলেও, শাসকের জায়গা থেকে ক্ষমার উদারতা কতো ভয়ঙ্কর হতে পারে, তার জীবন্ত উদাহরণ তৈরী হয়েছে,
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিয়ে । উদারতা ভালো মানুষের লক্ষণ হলেও, উদারতা ভালো সরকারের লক্ষণ না বোধহয় ।
যার জন্য, মুজাহীদের মতো শূকরগুলো এখনও 'বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নাই" বলার স্পধা দেখায় !
ভীষণ প্রয়োজনয় পোস্ট । প্রিয়তে ।
প্রিয়তে।
ভালো এবং প্রয়োজনীয় লেখা।
ধন্যবাদ মাসুম ভাই।
অদ্ভূদ ভালো একটা পোষ্ট। অনেক অজানা তথ্য জানলাম। সরাসরি প্রিয়তে
মন্তব্য করুন