ইউজার লগইন

বিপ্লবের ভেতর-বাহির: শেষ পর্ব

বিপ্লবের ভেতর-বাহির ১, বিপ্লবের ভেতর-বাহির: ২, বিপ্লবের ভেতর-বাহির: ৩, বিপ্লবের ভেতর-বাহির: ৪, বিপ্লবের ভেতর-বাহির: ৫

সিরাজ সিকদার নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন শেখ কামালও। বলা যায় তিনি গুলি খেয়ে মরতে বসেছিলেন। মরেন নাই শেষ পর্যন্ত, তবে ব্যাংক ডাকাতের একটা তকমা দীর্ঘদিন ধরে শেখ কামালের নামের সঙ্গে জুড়েছিল। এখনও হয়তো কেউ কেউ তা বিশ্বাসও করেন। অনেকের জানা সেই গল্পটা আগে বলি।
সময়টা ছিল ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবসের দিবাগত রাতে। সারা শহরে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, সিরাজ সিকদারের দল ঢাকায় সরকারি বিরোধী লিফলেট প্রচার ও হামলা করবে। এই আশঙ্কায় সাদা পোশাকে পুলিশ রাতে সিরাজ সিকদারের দলবলের খোঁজে টহল দিতে থাকে। ওই রাতেই সিরাজ সিকদারকে ধরতে বন্ধুদের নিয়ে একটি সাদা মাইক্রোবাসে বের হন বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল। বলা ভাল পুলিশ টহল দিলেও তারা সিরাজ সিকদার বাহিনীকে ভয় পেতো। সাদা পোশাকের পুলিশ সাদা রঙের মাইক্রোবাসটি দেখতে পায়। আতঙ্কিত পুলিশ কোনো ধরণের সংকেত না দিয়েই মাইক্রোবাস লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিতে আহন হন কামালসহ ছয়জন। শেষ কামালকে সেই রাতেই পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শেখ কামালের কাধে গুলি লেগেছিল। সার্জেন্ট কিবরিয়া গুলি করেছিলেন। আর ঘটনাস্থল ছিল মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে।
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব) বীরবিক্রম লিখেছেন,

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব কামালের ওই রাতের অবাঞ্ছিত ঘোরাফেরায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও মনঃক্ষুন্ন হন। প্রথমে তিনি তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানান। পরে অবশ্য গিয়েছিলেন।

আরও জানায় যায়, অল্পের জন্য শেখ কামালের শ্বাসনালীতে গুলি লাগেনি। তবে এই ঘটনার জন্য বঙ্গবন্ধু পুলিশ বাহিনীকে কোনোরকম দোষারোপ করেননি। বরং ক্ষুব্ধ হয়ে শেখ কামালের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,

‘তাকে মরতে দাও।’

কিন্তু চালু মিথ হচ্ছে শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের গুলি খেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এটা মানুষকে বলা হয়েছে। এখনও হয়তো অনেককে বিশ্বাস করেন।
অনেক মিথ আছে সিরাজ সিকদারকে নিয়ে। এটা ঠিক যে, স্বাধীনতার পর যে দুটি দল মুজিব সরকারকে চরম বিপাকে ফেলছিলে তার মধ্যে সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি অন্যতম। আরেকটি দল হচ্ছে জাসদ। তবে সরকারের দমন নীতি জাসদের তুলনায় সর্বহারা দলের উপরই ছিল বেশি তীব্র। ১৯৭৩ সালই হচ্ছে পার্টির স্বর্ণসময় আর ৭৪ ছিল ব্যাপক বিকাশের সময়। সদস্য সংখ্যাও ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। এতে পার্টির লাভ-ক্ষতি দুটোই হয়। কারণ বিকাশের সুযোগে নানা ধরণের অবাঞ্ছিত মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটে। এর ফলাফল পরবর্তীতে ভাল হয়নি।
সিরাজ সিকদার ছাড়াও আরেকজন ছিলেন সরকারের ত্রাস। তিনি হলেন, লে. কর্ণেল জিয়াউদ্দিন। এনায়েতউল্লাহ খানের হলিডে পত্রিকায় তিনি ১৯৭২ সালের আগস্টে সরকারের ব্যাপক সমালোচনা করে একটি লেখা লিখেছিলেন। একজন কর্মরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা হয়েও লেখাটি তিনি নিজের নামেই লিখেছিলেন। সেই লেখার সবচেয়ে কঠোর লাইনটি ছিল, ‘শেখ মুজিবকে ছাড়াই আমরা যুদ্ধ করেছি এবং যুদ্ধে জয়ী হয়েছি।’ এরপরেও জিয়াউদ্দিনকে তেমন কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়নি। বরং তিনিই চাকরি ছেড়ে দিয়ে যোগ দিয়েছিলেন সিরাজ সিকদারের দলে। দলে তাঁর নাম ছিল হাসান। এই জিয়াউদ্দিন সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর দলে কর্তৃত্ব বজায় রাখতে দলের মধ্যেই ব্যাপক খুনোখুনি করেছিলেন। পরে এরশাদের সময় প্রকাশ্য রাজনীতির ঘোষণা দেওয়ার পর তাকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বানানো হয়। সে আরেক ইতিহাস।
সিরাজ সিকদারের উত্থানের পেছনে সে সময়ে রক্ষী বাহিনীর অত্যাচার বড় ভূমিকা পালন করেছিল। রক্ষী বাহিনীর অত্যাচারের কারণে অনেকেই সর্বহারার সমর্থক হয়েছিলেন। গবেষকরা দেখিয়েছেন, সে সব এলাকায় রক্ষী বা অন্যান্য সরকারি বা কারো কারো ব্যক্তিগত বাহিনীর অত্যাচার বেশি ছিল, সেসব সব স্থানেই সর্বহারা দলের বিকাশ দ্রুত হয়েছে। যেমন, মুন্সিগঞ্জে শাহ মোয়াজ্জেমের এক বিশাল ব্যক্তিগত বাহিনী ছিল, তারা মুন্সিগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করায় এখানে সর্বহারা দলের শক্তিও যথেষ্ট বেড়েছিল। সরকার সে সময় সিরাজ সিকদারকে নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ বিব্রত ছিল।
১৯৭৩ সালের নভেম্বরে ছাত্র ইউনিয়নের বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধনী ভাষনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,

‘যারা রাতের বেলায় গোপনে রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, সাধারণ মানুষকে হত্যা করে তাদের সঙ্গে ডাকাতদের কোন পার্থক্য নেই। রাতের অন্ধকারে গোপন হত্যা করে বিপ্লব করা যায় না। তোমরা যে পথ ও দর্শন বেছে নিয়েছ তা ভুল। আমরা গণতন্ত্র দিয়েছি ঠিক। কিন্তু কেউ যদি রাতের বেলায় নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করতে পারে, তাহলে জনগনের সরকার হিসাবে আমাদেরও তাদের গুলি করে হত্যা করার অধিকার আছে।’

বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সে সময়ে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। বলা হয়েছিল এটি আসলে গুলি করে হত্যার আদেশ।
জানা যায়, সিরাজ সিকদারকে ধরার জন্য আর্মিকে বলা হলেও তারা খুব আগ্রহ দেখায়নি। বরং আমরা জেনেছি যে, একবার সেনাবাহিনী সিরাজ সিকদারকে ধরলেও ছেড়ে দিয়েছিল। তবে সিরাজ সিকদারের প্রতি পুলিশ বা রক্ষী বাহিনীর তেমন কোনো সহানুভূতি ছিল না। কারণ, সর্বহারা দলের অন্যতম টার্গেট ছিল এরাও। ফলে শেষ পর্যন্ত ধরা পরতেই হয় সিরাজ সিকদারকে।
১৯৭৫ সালের প্রথম দিনটি ছিল সর্বহারা পার্টির জন্য বিষাদের একটি দিন। ওই দিনই ধরা পরেন সিরাজ সিরকদার। কিভাবে ধরা পড়েছিলেন তিনি। গল্পকারের দৃষ্টিতে সেই কাহিনী এরকম:

শহরে, গ্রামে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে আগে থেকেই প্রবল চাপের মুখে রেখেছেন সিরাজ শিকদার। জরুরী অবস্থা ঘোষণা করবার পর তার তৎপরতা আরো বাড়িয়ে দেন সিরাজ শিকদার। ‘৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে হরতাল ডাকে সর্বহারা পার্টি। বোমা ফাটিয়ে, লিফলেট বিলি করে আতঙ্ক তৈরি করে তারা। দেশের নানা এলাকায় তাদের ডাকে হরতাল সফলও হয়। রক্ষীবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন খুঁজছে সিরাজ শিকদারকে। সরকারের মোস্ট ওয়ান্টেড মানুষ তিনি। কিন্তু তার নাগাল পাওয়া দুষ্কর। কঠোর গোপনীয়তায়, নানা ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ান। নিরাপত্তার জন্য এমনকি নিজের দলের ভেতর কারো আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
১৬ ডিসেম্বর হরতাল সফল হওয়ার পর আরও ব্যাপক কর্মসূচী নেবার পরিকল্পনা নিয়ে সিরাজ শিকদার তখন তার পার্টি নেতৃবৃন্দের সাথে লাগাতার মিটিং করছেন চট্টগ্রামে। একেক দিন থাকছেন একেক গোপন আস্তানায়। ১৯৭৫ সালের প্রথম দিন, ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে হালিশহরের কাছে এক গোপন শেল্টার থেকে একজন পার্টি কর্মীসহ সিরাজ শিকদার যাচ্ছিলেন আরেকটি শেল্টারে। বেবিট্যাক্সি নিয়েছেন একটি। সিরাজ শিকদার পড়েছেন একটি দামী ঘিয়া প্যান্ট এবং টেট্রনের সাদা ফুল শার্ট, চোখে সান গ্লাস, হাতে ব্রিফকেস। যেন তুখোড় ব্যবসায়ী একজন। বেবি ট্যাক্সিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে একজন অপরিচিত লোক এসে তার কাছে লিফট চায়, বলে তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ্, ডাক্তার ডাকা প্রয়োজন, সে সামনেই নেমে যাবে। শিকদার বেশ কয়েকবার আপত্তি করলেও লোকটির অনুনয় বিনয়ের জন্য তাকে বেবিট্যাক্সিতে তুলে নেন। চট্টগ্রাম নিউমার্কেটের কাছে আসতেই অপরিচিত লোকটি হঠাৎ লাফ দিয়ে বেবিট্যাক্সি থেকে নেমে ড্রাইভারকে পিস্তল ধরে থামতে বলে। কাছেই সাদা পোশাকে বেশ কয়েকজন অপেক্ষমান পুলিশ স্টেনগান উঁচিয়ে ঘিরে ফেলে বেবিট্যাক্সি। স্বাধীন বাংলাদেশের দুর্ধর্ষ বিপ্লবী, যথেষ্ট সতর্কতা সত্ত্বেও তার দলের সদস্যেরই বিশ্বাসঘাতকতায় ধরা পড়ে যান পুলিশের হাতে।
সিরাজ শিকদারকে হাতকড়া পড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ডাবল মুরিং থানায়। সেদিন সন্ধ্যায় একটি বিশেষ ফকার বিমানে তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা। তাকে রাখা হয় মালিবাগের স্পেশাল ব্রাঞ্চ অফিসে। সরকারের ত্রাস, বহুল আলোচিত, রহস্যময় এই মানুষটিকে এক নজর দেখবার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্য, আমলাদের মধ্যে ভিড় জমে যায়।
৩ জানুয়ারি সারা দেশের মানুষ পত্রিকায় পড়ে, ‘বন্দি অবস্থায় পালানোর সময় পুলিশের হাতে নিহত হন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি নামে পরিচিত একটি গুপ্ত চরমপন্থী দলের প্রধান সিরাজুল হক শিকদার ওরফে সিরাজ শিকদার’। ছাপানো হয় সিরাজ শিকদারের মৃতদেহের ছবি।

ধরা পরার পরের দিন সরকার একটি প্রেসনোট জারি করে। সেখানে বলা হয়,

‘পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি নামে পরিচিত আÍগোপনকারী চরমপন্থী দলের নেতা সিরাজুল হক সিকদার ওরফে সিরাজ সিকদারকে পুলিশ গত ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার করে। সেই দিনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকোরোক্তমূলক বিবৃতি দেন এবং তার দলীয় কর্মীদের কিছু গোপন আস্তানা এবং তাদের বেআইনী অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবার“দ দেখিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশের সঙ্গে যেতেও সম্মত হন। তদনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একদল পুলিশ যখন তাকে পুলিশ ভ্যানে করে গোপন আস্তানার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি সাভারের কাছে পুলিশ ভ্যান থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। পুলিশ তার পলায়ন রোধের জন্য গুলীবর্ষণ করে। ফলে সিরাজ সিকদারের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।’

আগ্রহী পাঠকরা নিশ্চই লক্ষ্য করেছেন, সরকারি এই প্রেসনোটের বক্তব্য ও ভাষার সঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে ক্রসফায়ারের পর র‌্যাব ও পুলিশ যে প্রেসনোট দেয়, তার সঙ্গে অনেক মিল আছে। বস্তুত, দেশের প্রথম ক্রসফায়ারের শিকার সিরাজ সিকদার।
৩ তারিখের পত্রিকায় সরকারি তথ্যের বরাত দিয়ে আরও কিছু কথা ছাপা হয়েছিল:

সিরাজ সিকদার তার গোপন দলে একদল ডাকাতের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। এদের দ্বারাই তিনি গুপ্তহত্যা, থানা, বনবিভাগীয় দফতর, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, ইত্যাদির উপর হামলা, ব্যাংকলুট, হাট বাজার, লঞ্চ, ট্রেন ডাকাতি, রেল লাইন উপড়ে ফেলে গুরুতর ট্রেন দূর্ঘটনা সংঘটন এবং জনসাধারণের কাছ থেকে জবরদস্তি টাকা আদায়-এই ধরণের উচ্ছৃঙ্খল অপরাধেল মাধ্যমে দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলাকে বিঘ্নিত করেছিলেন।’

মজার ব্যাপার হল, বলা হয় সিরাজ সিকদারের বুকে গুলি ছিল। অথচ পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলি লাগার কথা পেছনে। এ বিষয়ে মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব) তাঁর বইতে লিখেছেন,

‘ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠানে পুলিশের তৎকালীন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে সিরাজ সিকদার প্রসঙ্গে কথা বললে তিনি হঠাৎ বলে বসেন, ‘কর্ণেল সাহেব, আমাদের এবং আপনাদের যুদ্ধের মধ্যে তফাত এটাই।’

অর্থাৎ পেছন থেকে গুলি করার কথা একপ্রকার স্বীকার করে নিয়েছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তাটি।
সাভারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক আগে, এখন যেখানে রেডিওর অফিস, সেখানেই গুলি করা হয়েছিল সিরাজ সিকদারকে।

‘বাংলাদেশ: আ লিগেসি অব ব্লাড’ গ্রন্থে অ্যান্থনী মাসকেরেনহাস লিখেছেন:

ঘটনাচক্রে মাওপন্থী সিরাজ সিকদার ১৯৭৪ সালে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চট্টগ্রামের কাছাকাছি এক এলাকা থেকে (টেকনাফ) শেষ পর্যন্ত পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হলেন।
জাকারিয়া চৌধুরির (সিরাজ সিকদারের ছোটবোন, ভাস্কর শামীম সিকদারের স্বামী) মতে, তাকে পাহারা দিয়ে ঢাকায় আনা হলো শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করানো জন্য। শেখ মুজিব তাকে তার আয়ত্বে আনতে চাইলেন। কিন্তু সিকদার কোনো রকম আপোষ রফায় রাজী না হলে মুজিব পুলিশকে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণ করতে বলে দিলেন।
জাকারিয়া বললো, সিরাজ সিকদারকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ-বাঁধা অবস্থায় রমনা রেস কোর্সের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসা হয়। তারপর (২ জানুয়ারি ১৯৭৫) গভীর রাতে এক নির্জন রাস্তায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই সময় সরকারি প্রেসনোটে বলা হয় যে, পালানোর চেষ্টাকালে সিরাজ সিকদারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
সিকদারের বোন, জাকারিয়ার স্ত্রী শামীম জানায়, সিরাজের দেহের গুলির চিহ্ন পরিস্কার প্রমাণ করে যে, স্টেনগান দিয়ে তার বুকে ছয়টি গুলি করে তাকে মারা হয়েছিলো।
সিরাজ সিকদারকে, শেখ মুজিবের নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছে বলে সারাদেশে রটে গেলো।
১৯ বছরের যুবতী শামীম তার ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
সে আমাকে বলেছিলো, আমি সর্বহারা পার্টির কাছ থেকে একটা রিভলবার পেয়েছিলাম এবং এই হত্যাকারীকে হত্যা করার সুযোগের সন্ধান করছিলাম।
শামীম বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভাস্করদের একজন। গত বছরই কেবল সে তার ভাস্কর্যের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করে। তার ধারণা, সে নিশ্চয়ই মুজিবকে গুলি করার দূরত্বে পেয়ে যাবে।
শামীম মুজিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য বহুবার আর্জি পেশ করেছে। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। প্রতিবারই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে সে। তারপর সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের কলা বিভাগে তার এক প্রদর্শনীতে শেখ মুজিবকে আমন্ত্রণ জানালো। মুজিব আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সেখানে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলেন।
সে স্মৃতিচারণ করে বললো, আমি ভায়নক বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম। আমি শত চেষ্টা করেও তাঁকে (শেখ মুজিব) আমার গুলির আয়ত্বে আনতে পারলাম না।
ভাগ্যই মুজিবকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলো। শামীম জাকারিয়ার প্রেমে পড়ে যায়। শেষে তাদের বিয়ে হলে স্বামীর সঙ্গে শামীম বিদেশে চলে যায়।

সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশন বসে। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করানোর পর তার দ্বিতীয় বিপ্লব, বাকশাল প্রসঙ্গে শেখ মুজিব অধিবেশনে বলেন,

'স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হওয়ার পর যারা এর বিরোধীতা করেছে, যারা শত্রুর দালালী করেছে, কোনো দেশেই তাদের ক্ষমা করা হয় নাই। কিন্তু আমরা করেছি। আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়ে বলেছি, দেশকে ভালোবাসো। দেশের স্বাধীনতা মেনে নাও। দেশের কাজ করো। কিন্তু তারপরও এদের অনেকে শোধরায়নি। এরা এমনকি বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে বিদেশ থেকে টাকা নিচ্ছে। ওরা ভেবেছে, আমি ওদের কথা জানি না! একজন রাতের আঁধারে মানুষ মেরে যাচ্ছে, আর ভাবছে তাকে কেউ ধরতে পারবে না। কোথায় আজ সিরাজ সিকদার? তাকে যখন ধরা গেছে, তখন তার সহযোগীরাও ধরা পড়বে।'

বলে রাখা ভাল, চট্টগ্রাম থেকে সিরাজ সিকদারকে ধরা হয়েছিল তাঁর একজন সহযোগিসহ। তাঁর নাম ছিল আকবর। ধরা পরার একমাস পরে এই আকবরের লাশ পাওয়া গিয়েছিল বরিশালে, তারই নিজের বাড়ির সামনে।

হয়তো কাকতালীয়। তাও উল্লেখ করা যায়। ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বহারা পার্টি পুরোপুরি এক ব্যক্তি নির্ভর হয়ে পড়ে। ওই সময়ে দলে এক সদস্যের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। এই একমাত্র সদস্য হলেন সিরাজ সিকদার। এই একক নেতৃত্ব নিয়েই দলের মধ্যে গ্রুপিং ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এরই ফলশ্রুতিতে ধরা পড়েন তিনি এবং নির্মমভাবে নিহত হন। তাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার জন্য দায়ী করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। তিনিও নিহত হয়েছিলেন বাকশাল গঠনের পর। এই বাকশালও ছিল এক ব্যক্তি নির্ভর।
সিরাজ সিকদারের হত্যা নিয়ে একটি মামলা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। সিরাজ সিকদার পরিষদের সভাপতি শেখ মাহিউদ্দিন আহমদ মামলাটি করেছিলেন।

মামলার আসামিরা হলেন : ১. সাবেক পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, ২. আবদুর রাজ্জাক এমপি, ৩. তোফায়েল আহমেদ এমপি, ৪. সাবেক আইজিপি ই এ চৌধুরী, ৫. সাবেক রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক কর্নেল (অব.) নূরুজ্জামান, ৭. মোহাম্মদ নাসিম এমপি গং। আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ও ১০৯ নম্বর ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আর্জিতে বলা হয়:

আসামিরা মরহুম শেখ মুজিবের সহচর ও অধীনস্থ কর্মী থেকে শেখ মুজিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও গোপন শলা-পরামর্শে অংশগ্রহণ করতেন এবং ১ নং থেকে ৬ নং আসামি তৎকালীন সময়ে সরকারের উচ্চপদে থেকে অন্য ঘনিষ্ঠ সহচরদের সঙ্গে শেখ মুজিবের সিরাজ সিকদার হত্যার নীলনকশায় অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা এ লক্ষ্যে সর্বহারা পার্টির বিভিন্ন কর্মীকে হত্যা, গুম, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানি করতে থাকেন। সিরাজ সিকদারকে গ্রেপ্তার ও হত্যার বিবরণ দিয়ে আর্জিতে বলা হয়, মরহুম শেখ মুজিব ও উলি্লখিত আসামিরা তাঁদের অন্য সহযোগীদের সাহচর্যে সর্বহারা পার্টির মধ্যে সরকারের চর নিয়োগ করেন। এদের মধ্যে ই এ চৌধুরীর একজন নিকটাত্মীয়কেও চর হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এভাবে ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকা থেকে অন্য একজনসহ সিরাজ সিকদারকে গ্রেপ্তার করে ওই দিনই বিমানে করে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকার পুরনো বিমানবন্দরে নামিয়ে বিশেষ গাড়িতে করে বন্দিদের পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মালিবাগস্থ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিরাজ সিকদারকে আলাদা করে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর বিশেষ স্কোয়াডের অনুগত সদস্যরা গণভবনে মরহুম শেখ মুজিবের কাছে সিরাজ সিকদারকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যায়। সেখানে শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলীসহ আসামিরা, শেখ মুজিবের পুত্র মরহুম শেখ কামাল এবং ভাগ্নে মরহুম শেখ মনি উপস্থিত ছিলেন। আর্জিতে আরো বলা হয়, প্রথম দর্শনেই শেখ মুজিব সিরাজ সিকদারকে গালিগালাজ শুরু করেন। সিরাজ এর প্রতিবাদ করলে শেখ মুজিবসহ উপস্থিত সবাই তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সিরাজ সে অবস্থায়ও শেখ মুজিবের পুত্র কর্তৃক সাধিত ব্যাংক ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপকর্ম, ভারতীয় সেবাদাসত্ব না করার, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শেখ মুজিবের কাছে দাবি জানালে শেখ মুজিব আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সে সময় ১ নং আসামি মাহবুব উদ্দিন তাঁর রিভলবারের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সিরাজ সিকদার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শেখ কামাল রাগের মাথায় গুলি করলে সিরাজ সিকদারের হাতে লাগে। ওই সময় সব আসামি শেখ মুজিবের উপস্থিতিতেই তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে মারতে তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলেন। এর পর শেখ মুজিব, মনসুর আলী এবং ২ থেকে ৭ নং আসামি সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১ নং আসামিকে নির্দেশ দেন। ১ নং আসামি মাহবুব উদ্দিন আহমদ আসামিদের সঙ্গে বন্দি সিরাজ সিকদারকে শেরে বাংলানগর রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তরে নিয়ে যান। এর পর তাঁর ওপর আরো নির্যাতন চালানো হয়। অবশেষে ২ জানুয়ারি আসামিদের উপস্থিতিতে রাত ১১টার দিকে রক্ষীবাহিনীর সদর দপ্তরেই সিরাজ সিকদারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে ১ নং আসামির সঙ্গে বিশেষ স্কোয়াডের সদস্যরা পূর্বপরিকল্পনা মতো বন্দি অবস্থায় নিহত সিরাজ সিকদারের লাশ সাভারের তালবাগ এলাকা হয়ে সাভার থানায় নিয়ে যায় এবং সাভার থানা পুলিশ পরের দিন ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করে।

সিরাজ সিকদারের হত্যা নিয়ে ১৯৭৮ সালের ১৯ মে সংখ্যার বিচিত্রায় একটি অনুসন্ধানি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। সেটির কথা অনেকের লেখায় আছে। কিন্তু প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়নি। কারো কাছে থাকলে হয়তো আরও কিছু জানা যেত।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ধরা পড়লেন সিরাজ সিকদার? সন্দেহ নেই নিজের দলের লোকেরাই ধরিয়ে দিয়েছিল সিরাজ সিকদারকে। এর আগে অনেক চেষ্টা করেও ধরা যায়নি সিরাজ সিকদারকে।
হালিম দাদ খান লিখেছেন,

‘চুয়াত্তরের শেষার্ধে মুজিব সেনাবাহিনীকে নক্সালদের মূলোৎপাটনের নির্দেশ দেন। কিন্তু মেজর ফারুক এ নির্দেশ পালনে উৎসাহী না হয়ে বরং এদের কাউকে ধরতে পারলেও ছেড়ে দিয়েই অধিক আনন্দ পেতেন।’

কেবল সেনাবাহিনীই নয়, আওয়ামী লীগের মধ্যেও কিছু সিরাজ সিকদারের সমর্থক ছিলেন। এ ক্ষেত্রে চমকে যাওয়ার মতো একটি তথ্য দিতে পারি। ফজলুল হক রানা ছিলেন সর্বহারা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর মধ্যে তাদের যোগাযোগ ছিল। অনেক তরুণ অফিসারদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ছিল। তবে পার্টির পহেলা কাতারের সহানুভূতিশীল হিসাবে তিনি নাম বলেছেন বিশেষ একজন ব্যক্তির। সেই ব্যক্তিটি হলেন আবদুর রব সেরনিয়াবাত। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নেতা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট এবং আত্মীয় (বোনের স্বামী)।
ফজলুল হক রানা বলেছেন,

‘আবদুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন মনে-প্রাণে ভারতবিদ্বেষী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে ভারত ৭ দফা গোলামি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করলে তখন থেকেই সেরনিয়াবাদ ভারতের বির“দ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ..........আর এভাবেই জনাব সেরনিয়াবাত আমাদের পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন এবং নানাভাবে আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করেন।’

রানা সবশেষে বলেছেন, সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর এই যোগাযোগগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সেনাবাহিনীর সাথেও। সেনাবাহিনীর অনেক অফিসারদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল দলের।
সর্বহারা পার্টির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা রইসউদ্দিন আরিফসহ দুজনকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল দল থেকেই। আসুন দেখা যাক, তিনি কি বলেছেন:

‘সে সময়কার সিলেট অঞ্চলের পরিচালক পার্টির তৎকালীন নেতৃস্থানীয় ক্যাডার কমরেড মনসুর নানা কারণে পার্টি নেতৃত্বের ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ ক্ষোভকে কেন্দ্র করে পার্টির ভিতরে সংগ্রাম পরিচালনার উদ্দেশ্যে মনসুর কিছু প্রস্তাব এবং পরিকল্পনা প্রনয়ন করেন। তার এ প্রস্তাব ও পরিকল্পনার বিষয়টি অবহিত করার জন্য তিনি তৎকালীন চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক কমরেড ইকরামকে একটি চিঠি পাঠান। কিন্তু ইকরামকে লেখা এ চিঠিখানি ভুলবশত অন্য একটি প্যাকেটে পার্টির নেতার হাতে চলে যায়। ফলে মনসুর বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান। এই বিব্রতকর অবস্থার একপর্যায়ে মনসুর দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সিলেট থেকে অতিদ্রুত চট্টগ্রামে আসেন। চট্টগ্রাম এসেই নাটকীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেন কমরেড সিরাজ সিকদারকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়ার। জানা যায়, একপর্যায়ে কমরেড সিকদারের বৈঠকের স্থান ও যাতায়তের পথের বিবরণ দিয়ে ছোট্ট একখানা চিরকুট লিখে ডবলমুরিং থানায় পাঠান। সেই চিরকুটের সূত্র ধরেই পুলিশ কমরেড সিরাজ সিকদারতে গ্রেফতার পরে।’

এবার আমরা ফিরে যেতে পারি পুরোনো কিছু কথায়। দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছিলেন সিরাজ সিকদার নিজেই। দলে কেউ বিদ্রোহ করলে তাকে বহিস্কার বা অন্য কোনো পথ অবলম্বন না করে খতম করার ধারাটি শুরু করেছিলেন সিরাজ সিকদার নিজেই। ফজলু-সুলতান গ্রুপকে খতম করার মধ্য দিয়ে সেই অধ্যায় শুরু হয়েছিল। আবার স্মরণ করতে পারি রইসউদ্দিনের আরিফের সেই কথাগুলো।

‘পার্টিতে বাহাত্তর সালে ফজলু খতম হয়েছিল আকস্মিকভাবে। পার্টির স্থানীয় কর্মী ও গেরিলারা কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়াই ফজলুকে খতম করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি পরে ফজলু খতমের বিষয়টিকে অনুমোদন করে এবং এহেন কাজকে অভিনন্দিত করে। অথচ আমার মতে সে সময়ে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সঠিক করণীয়টি ছিল একদিকে ফজলু-সুলতান চক্রের পার্টিবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত সংগ্রাম জোরদার করা এবং একই সাথে ফজলু খতমের ঘটনাকে নিন্দা করা। পার্টি যদি সেদিন এই ঐতিহাসিক দায়িত্বটি পালনে সক্ষম হতো, তাহলে সর্বহারা পার্টির ইতিহাস লিখিত হতো ভিন্নভাবে।’

চট্টগ্রামের মনসুর জানতেন দলে বিদ্রোহ বা বিক্ষুব্ধ হওয়ার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ফলে যখন সে জানলো তার চিঠিটি অন্যহাতে পড়েছে তখন তার জন্য আর কোনো বিকল্প ছিল না। নিজে বাঁচার জন্যই যে মনসুর সিরাজ সিকদারকে ধরিয়ে দিয়েছিল তা দলের ভেতর থেকেই স্বীকার করা হয়। ফলে পুরানো কথাটাই আবার বলি, ফজলু-সুলতান গ্রুপকে খতম করা না হলে হয়তো সর্বহারা পার্টির ইতিহাস অন্যরকম হতো, হয়তো বেঁচে থাকতেন সিরাজ সিকদার। হয়তো বেচে থাকতেন কবি হুমায়ুন কবিরসহ আরও অনেকেই।
কথা আরেকটু আছে। মনসুর একাই কি সিরাজ সিকদারকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। না কি দলের আর কেউ ছিলেন। সন্দেহ করার মতো অনেক আলামত কিন্তু আছে। যেমন, সিরাজ সিকদার ধরা পড়েন ১ জানুয়ারি, ১৯৭৫ দুপুর ২টায়। আর সরকারি ভাবে তাঁর মৃত্যুর কথা জানানো হয় পরের দিন রাতে। এই সময়ের মধ্যে সর্বহারা দলের কোনো তৎপরতাই ছিল না। দলের মূল নেতা ধরা পড়েছেন জেনেও সেই তথ্য দলের মধ্যে জানানো হয়নি। নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। অথচ যে কোনো ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষমতা দলটির ছিল। এ ক্ষেত্রে স্মরণ করি, কর্ণেল তাহের ধরা পরার পর জাসদ কর্তৃক ভারতের হাই কমিশনার সমর সেনকে জিম্মি করার চেষ্টার কথা। কেউ কেউ বলেন, পুলিশের সঙ্গে একটা সমঝোতা হয়েছিল দলের কারো কারো সঙ্গে। পুলিশকে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানো পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে সবাইকে জানানো হবে না।
পার্টির চট্টগ্রাম অংশের এসব ভূমিকার কারণে দলের মধ্যে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ হয় পরে। চট্টগ্রামের নেতাদের খতম করা হয়েছিল ব্যাপকভাবে। অনেক নিরীহ পার্টিকর্মীও খতম হন। তাদের অপরাধ ছিল সিরাজ সিকদার ধরা পড়েছিলেন চট্টগ্রামে। সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলেছিল অনেকদিন। এমনকি মনসুরকেও কিছুদিনের মধ্যেই খতম করা হয়েছিল।
লেখাটা শুরু করেছিলাম সিরাজ সিকদারের প্রথম বিয়ে ও বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে। এর পরের পর্ব ছিল জাহানারা হাকিমের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক, একসঙ্গে থাকা ও বিয়ে নিয়ে। আগেই বলেছি সিরাজ সিকদারের বিবাহ বিচ্ছেদ ও আবার বিয়ে করার ফল পার্টির জন্য মোটেই ভাল হয়নি। এর একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। সেই প্রভাবটি সবশেষে বলি। পুরো লেখার শেষ টুইস্ট।

‘পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছিল, সিরাজ সিকদারের ঐদিনের মিটিং ও পথ-নির্দেশিকা তারা পায় পুণিশের কাছে মেয়েলি হাতের লেখা একটি চিঠির মাধ্যমে। ধারণা করা হয়, এই মহিলাটি সিরাজ সিকদারের স্ত্রীও হতে পারেন। দলের ভেতরে তখন তার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা ছিল।’

সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর জাহানারা হাকিমের আর কোনো তৎপরতা দলে ছিল না।

বলেছিলাম শেষ পর্বে সব রেফারেন্স দেবো। ফেসবুকে কেউ কেউ রেফারেন্সগুলো জানতে চেয়েছেন।

১. এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক, মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব) বীরবিক্রম, মাওলা ব্রাদার্স
২. কথামালার রাজনীতি ১৯৭২-৭৯, রেজোয়ান সিদ্দিকী, প্রতীক
৩. বাংলাদেশের রাজনীতি, ১৯৭২-৭৫, হালিম দাদ খান, আগামী প্রকাশনী
৪. কুসুমিত ইস্পাত, হুমায়ুন কবির, বইপড়ুয়া
৫. বাংলাদেশে বামপন্থী রাজনীতির গতিধারা, ১৯৪৮-৮৯, জগলুল আলম, প্রতীক
৬. বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও নারী মুক্তিযোদ্ধারা, মেহেরুন্নেসা মেরী, ন্যাশনাল পাবলিকেশন্স
৭. বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিকথা, অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ-রাজনীতি হত্যা-ধর্ম সাম্প্রদায়িকতা, রইসউদ্দিন আরিফ, পাঠক সমাবেশ
৮. আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন সমগ্র: বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিতর্কিত অধ্যায়, রইসউদ্দিন আরিফ, পাঠক সমাবেশ
৯. বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, আশরাফ কায়সার, মাওলা ব্রাদার্স
১০. সিরাজ সিকদার রচনা সমগ্র, শ্রাবণ প্রকাশনী
১১. বাংলাদেশ ১৯৭১, তৃতীয় খন্ড, মাওলা ব্রাদার্স
১২. সিরাজ সিকদার: ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা, অমি রহমান পিয়ালের ব্লগপোস্ট, সামওয়ারইন ব্লগ ও আমার ব্লগ
১২. সিরাজ সিকদার: অন্য আলোয় দেখা, বিপ্লব রহমানের ব্লগপোস্ট, উন্মোচন
১৩. সিরাজ সিকদার ও তাঁর সর্বহারা পার্টি, কালের কণ্ঠ, আরিফুজ্জামান তুহিনের একাধিক লেখা
১৪. কথ্য ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র
১৫. ভালবাসার সাম্পান, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, মাওলা ব্রাদার্স
১৬. নৃশংসতায় দুই কবি-শিক্ষক, জাফর ওয়াজেদ, নতুন দেশ
১৭. ক্রাচের কর্ণেল, শাহাদুজ্জামান, মাওলা ব্রাদার্স
১৮. আহমদ ছফার ডায়েরি, সম্পাদনা-নুরুল আনোয়ার, খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি
১৯. রুহুল ও রাহেলা, সূর্য রোকন (এটি অনলাইনে পাওয়া যায়)
২০. গণতন্ত্রের বিপন্ন ধারায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, মেজর নাসির উদ্দিন, আগামি প্রকাশনী

পোস্টটি ২৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


অবশেষে.. Smile

শওকত মাসুম's picture


সময়ের বড়ই সমস্যা

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


শেষের টুইস্টটা মারাত্মক!

চমৎকার একটা সিরিজের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

শওকত মাসুম's picture


সিরাজ সিকদারের দলের মধ্যেই বিশ্বাসঘাতক ছিল সেটা পরিস্কার। কে কে সেটাই প্রশ্ন

জ্যোতি's picture


ব্যপক আগ্রহ নিয়ে পড়ছিলাম সিরিজটা । এক কথায় গ্রেট । অনেক ধন্যবাদ মাসুম ভাই । এই কাহিনীগুলি পড়ার আগ্রহ সবসবময়ই থাকবে সবার । এমন আরো বিষয় নিয়ে আরো লিখুন ।

শওকত মাসুম's picture


লিখতে তো ইচ্ছা করে। কিন্তু সময় একটা সমস্যা। চেষ্টা চলবে, যদি ব্লগে থাকি Smile

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


যদির কথা নদীতে!
ব্লগ ফালায় চইলা গেলে আপনের খপর আছে..হুহু..!

টুটুল's picture


এক নিমিষে পড়ে ফেলা... উফ...

শওকত মাসুম's picture


বেশি বড় হয়ে গেলো?

১০

টুটুল's picture


বড় হওয়াটা বোরিং করে নাই... বরং পড়ার তৃষ্ণা মিটাইছে

১১

মানুষ's picture


সিরিজ জিনিসটা আমার অসহ্য লাগে। একটা পর্ব পড়ার পর পরেরটার জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা জিনিসটা মোটেও পছন্দ না। শেষ পর্ব দেখে সবকটা একসাথে পড়ে ফেললাম। তারপরেও কেমন যেন অসম্পূর্ণ আর অসমাপ্ত মনে হচ্ছে।

১২

শওকত মাসুম's picture


আমি শুরুতেই বলেছি, এটা পুর্ণাঙ্গ সিরাজ সিকদার নিয়ে নয়। বরং ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে কি প্রভাব পড়েছে সেটাই দেখাতে চেয়েছি।
অসম্পূর্ণ কি কি মনে হল?

১৩

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


একটানে পড়ে ফেললাম। দারুণ সিরিজ!
প্রিয়তে রাখলাম। আবার পড়ব

১৪

শওকত মাসুম's picture


ধন্যবাদ

১৫

অদিতি's picture


নিঃসন্দেহে আমরা বন্ধুর সেরা সিরিজ ব্লগ। এই ব্লগসূত্রে কত নতুন তথ্য যে পেলাম। স্যলুট মাসুম ভাই।

১৬

শওকত মাসুম's picture


নিতান্তই নিজের আগ্রহ থেকে লেখা। বাড়তি কিছু জেনেছেন বলে ভাল লাগছে। তবে আপনার সহযোগিতা না পেলে এতো কিছু লেখা হতো না।

১৭

লীনা দিলরুবা's picture


সিরাজ সিকদার এবং সর্বহারা পার্টির উত্থান আর তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে হয়তো ভবিষ্যতে আপনার এই সিরিজও রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে।
গল্পের মত করে পড়লাম। অসাধারণ নিঃসন্দেহে।

১৮

শওকত মাসুম's picture


চেষ্টা করেছি সিরাজ সিকদার ও সেই সময়ের একটা দিক তুলে আনতে। মোটেই এটা সর্বহারা পার্টি বা সিরাজ সিকদারের ইতিহাস না।

১৯

আরাফাত শান্ত's picture


দারুন একটা সিরিজ ছিলো!

২০

শওকত মাসুম's picture


ধন্যবাদ

২১

জেবীন's picture


এই দারুন সিরিজটা থেকে কত কথা জানলাম!

ডাকাতির কথাটা তো অন্য অনেকের মতোই বিশ্বাস করতাম! কি আন্দোলন কিসে গিয়ে মিলিয়ে গেলো। ক্ষমতার দাপট দেখানোতেই শেষ হয়ে গেল তাদের আদর্শ!
শেষের টুইস্ট তো পুরা সিনেমার মতোন কত মিস্ট্রি মনে এনে দেয়!

২২

শওকত মাসুম's picture


ঐ সময়টাই ছিল চরম অস্থির, কেবল বাংলাদেনে নয়, সারা দুনিয়ায়। তার প্রভাব পড়েছে সর্বত্র

২৩

স্বপ্নের ফেরীওয়ালা's picture


নির্মোহ লেখনীতে অসাধারণ সিরিজটা খুব ভাল লাগলো। এইরকম আরো চাই..

কিন্তু

যদি ব্লগে থাকি

এই টুইস্ট ভাল লাগে নাই..

২৪

শওকত মাসুম's picture


সবাই ব্লগে থাকলে তো আর টুইস্ট দিতে হয় না

২৫

সাঈদ's picture


অসাধারণ ।

২৬

শওকত মাসুম's picture


ধন্যবাদ পড়ার জন্য

২৭

টোকাই's picture


দারুন ভাল লাগসে, অনেক কিছু অজানা ছিল। কোন কারণ ছাড়াই সিরাজ শিকদারকে ভাল লাগত। কিন্তু বেশি কিছু জানতাম না। আপনার লেখায় অনেক জানলাম। অনেক ধন্যবাদ এত দারুন লেখার জন্য, পুরাই আসল ঘটনা বর্ননা করেছেন।

২৮

শওকত মাসুম's picture


সিরাজ সিকদারকে ভাল লাগার মতো অনেক উপাদান আছে তো অবশ্যই। তিনি চাইলে শান্তির একটা জীবন পেতেন। কিন্তু তিনি দেশের কথা ভেবে বদলাতে চেয়েছিলেন। এই চাওটা নিয়ে কোনো সংশয় নাই

২৯

রায়েহাত শুভ's picture


শেষমেষ শেষ হ'লো সিরিজটা। কিন্তু আমারতো আরো জানার ইচ্ছা বেড়ে গেলো এটা পড়ে...

৩০

শওকত মাসুম's picture


হ, শেষমেষ শেষ হল Smile

৩১

মাহবুব সুমন's picture


এই সিরিজ থেকে যা পাইলামঃ
১) অজানা কিছু তথ্য
২) আরো অজানা কিছু জানার আগ্রহ
৩) প্রয়োজনীয় রেফারেন্স।

৩২

শওকত মাসুম's picture


জানার আগ্রহের তো কখনো শেষ হওয়ার নয়

৩৩

এ টি এম কাদের's picture


"শেষ হয়ে নাহি হল শেষ " আরো জানার আগ্রহ থেকে গেল ।

'৭২ থে '৭৫ মাত্র ক'টা বছর । অথচ কত কিছু ঘটে গেল এরই মাঝে । এক সময়

৩৪

শওকত মাসুম's picture


Smile

৩৫

এ টি এম কাদের's picture


"শষহে হয়ে নাহি হল শেষ " আরো জানার আগ্রহ থেকে গেল ।

'৭২ থেকে '৭৫ মাত্র ক'টা বছর । অথচ কত কিছু ঘটে গেল এরই মাঝে । এক সময়ের বিপুল জনপ্রিয় নেতা রাতারাতি বনে গেলেন একনায়ক । স্বপক্ষের অনেক চলে গেলেন বিরোধী শিবিরে । নিষ্টুর বিধান সব জারি হল । মারা পড়লেন অনেকে । নিজেও ঝাড়ে বংশে উজার হলেন । কেমন নিয়তি !

এত কিছুর পরও জাতির হুঁশ হলোনা কিন্তু । একই গোলক ধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছি আমরা ।

একটা কথা মাথায় আসেনা মাসুম ভাই ! মানুষ মেরে কার জন্য এরা ইজম প্রতিষ্টা করতে চেয়েছিলেন ? মুজিব বা সিরাজ শিকদার ।

৩৬

শওকত মাসুম's picture


সময়টা কেবল বাংলাদেশের জন্যই নয়, সারা দুনিয়ার মধ্যেই কঠিন ছিল। এর প্রভাব পড়েছিল বাংলাদেশেও। বাংলাদেশ আস্তর্জানিক ষড়যন্ত্রের শিকার ছিল। আর ছিল কিছু ভুল সিদ্ধান্ত

৩৭

রাফি's picture


অনেকদিন পর একটা সিরিজ মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।

বাংলাদেশে বামরা বরাবরই হঠকারী। সিরাজ সিকদার এক কাঠি সরেস। সিরাজ সিকদারের মত আরও দু'জন কর্নেল তাহের আর বেচে থাকা মেজর জিয়াউদ্দিন। এদের সবার জন্মের সময় গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান কি ছিলো সেটা জানতে পারলে হতো, বুঝা যেত কোন গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে মানুষ এমন বাস্তবতা বিবর্জিত দিবাস্বাপ্নিক হয়।

তবে সিরাজ সিকদারের দুর্ভাগ্য যে তার প্রতিপক্ষ ছিলো শেখ মুজিব। তাহের-জিয়াউদ্দিন মুজিব বিরোধী হলেও তাদের প্রতিপক্ষ জিয়া হওয়াই হালে পানি পাচ্ছেন। না হলে সেটাও হত না।

৩৮

শওকত মাসুম's picture


অতি সরলীকরণ হয়ে গেল

৩৯

তানবীরা's picture


ব্যপক আগ্রহ নিয়ে পড়ছিলাম সিরিজটা । এক কথায় গ্রেট । অনেক ধন্যবাদ মাসুম ভাই । এই কাহিনীগুলি পড়ার আগ্রহ সবসবময়ই থাকবে সবার । এমন আরো বিষয় নিয়ে আরো লিখুন ।

৪০

শওকত মাসুম's picture


সময় বড় সমস্যা বাজি

৪১

আহমাদ মোস্তফা কামাল's picture


সবগুলো পর্বই পড়েছি এবং বেশ দীর্ঘ একটা মন্তব্য লেখার জন্য তাড়না বোধ করছি। প্রচুর পরিশ্রম করেছেন, এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা দিক থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির ওপর আলো ফেলেছেন। এটার প্রয়োজন ছিল। আশা করছি, পরে আরেকবার এসে বিস্তারিত কথা বলে যেতে পারবো।

৪২

শওকত মাসুম's picture


বিস্তারিত মন্তব্য চাচ্ছি। অপেক্ষায় থাকলাম। সমালোচনা হলেও সমস্যা নাই।

৪৩

অদিতি's picture


১৯ বছরের যুবতী শামীম তার ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
সে আমাকে বলেছিলো, আমি সর্বহারা পার্টির কাছ থেকে একটা রিভলবার পেয়েছিলাম এবং এই হত্যাকারীকে হত্যা করার সুযোগের সন্ধান করছিলাম।
শামীম বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভাস্করদের একজন। গত বছরই কেবল সে তার ভাস্কর্যের প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করে। তার ধারণা, সে নিশ্চয়ই মুজিবকে গুলি করার দূরত্বে পেয়ে যাবে।

মন্তব্য করব ভেবেও করা হচ্ছিল না। উপরের কোটেশনটা দিলাম আমার মন্তব্যটা বোঝার জন্য। কতদূর প্রাসঙ্গিক তা জানি না। যা বলছিলাম- শামীমের কথাটা ডাহা মিথ্যা। শুনেছি সে সময় এই মহিলা বরং শেখ মুজিবের সাথে সাথে ঘুরে বেড়াতো।

পলাশীর দিক থেকে যে ওয়াই রাস্তাটা আছে, সেখানে আছে কতগুলো ভাস্কর্য, যার মধ্যমণি শেখ মুজিবের একটি ভাস্কর্য। মজার ব্যপার হল ঐ ভাস্কর্যটির সবচাইতে উপরে যে মুজিবকে দেখা যাচ্ছে, সেটা প্রথমে ছিলনা। বর্তমান উপ-উপাচার্য ভবনের স্থানে যে লাল বাড়িটা ছিলো সেখানে এই ভাস্কর্যটির মহা ধুমধামে উদ্বোধন হয় আহমেদ শরীফ স্যারকে দিয়ে। পরে শেখ মুজিবকে যোগ করে শেখ হাসিনাকে দিয়ে উদ্বধন করানো হয়। এসময় তাকে আগের উদ্বোধনের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। উনি যদি মুজিবের উপরে প্রতিশোধ নিতেই চাইতেন তাহলে এই পল্টি নামক ভণ্ডামীর মানে কি?
আপনাদের কি মনে আছে মুস্তাফা জব্বারের নিপুণ পত্রিকায় একবার উঠেছিল যে এইচ এম এরশাদ (মতান্তরে লেজে হোমো এরশাদ)-এর 'পুত্র' হবার পরে শামীম সিকদার তার বাসায় গিয়ে ভাবী ভাবী করে কথা বলেছিল?

এই মহিলা মিছে কথা বললে তা বিচিত্র হবে না।

৪৪

শওকত মাসুম's picture


অ্যান্থনী মাসকেরেনহাস লোকটাই গোলমেলে। একজন ভাড়াটে লেখক হিসাবে তিনি এখন গণ্য হন। যদিও তার বইয়ের রেফারেন্স সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয়।

৪৫

আহমাদ মোস্তফা কামাল's picture


শামীম সিকদারকে আমারও ঠিক সুবিধার বলে মনে হয় না!

৪৬

শওকত মাসুম's picture


আমারও না। এমনিতেই ব্যক্তির প্রতি অন্ধমোহ আমার অনেক অনেক কম

৪৭

আহমাদ মোস্তফা কামাল's picture


বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেল, কারণ দীর্ঘ একটা মন্তব্য করার মতো সময় করে উঠতে পারছিলাম না। আজকে দেখা যাক - পারি কী না।

১. সিরাজ শিকদার আর তাঁর সর্বহারা রাজনীতির মডেল এমন এক জটিল ব্যাপার যে যেদিক থেকেই বোঝার চেষ্টা করা হোক না কেন, অনেক ব্যাপারই ধোঁয়াশা রয়ে যায়। আপনি নতুন একটা দিক থেকে ব্যাপারটার ওপর আলো ফেললেন, এবং এ থেকে ভিন্ন একটা দৃষ্টি দিয়ে তাঁর দিকে তাকানোর সুযোগ হলো। অনেকেই হয়তো তাদের স্মৃতিকথায় রেখেঢেকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেছেন কিন্তু যাকে বলে ফোকাস করা সেটি বোধ হয় আপনিই প্রথম করলেন। এই অর্থে কাজটি গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে।

২. সিরাজ শিকদারকে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় কারণ তিনি যে ধরনের রাজনীতির সূচনা করেছিলেন, সেটি আমাদের দেশে অপরিচিত ছিল। যতটা নয় মাওয়ের আদর্শে তারচেয়ে বেশি চারু মজুমদারের নকশালবাড়ি আন্দোলনের আদর্শেই তিনি অধিকতর উজ্জীবিত হয়েছিলেন বলেই মনে হয়। অবশ্য নকশালরা চীনের চেয়ারম্যানকে তাদের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই অর্থে চারু মজুমদারের আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া আর মাওয়ের আদর্শের অনুসারী হওয়ার ব্যাপারটাকে একই মনে হতে পারে। কিন্তু কর্মপদ্ধতি এবং কৌশলগত দিক থেকে তাঁদের অবস্থানে ছিল বিস্তর ফারাক। মাও তাঁর বিপ্লব সফল করার জন্য কতজনকে হত্যা করেছিলেন আর নকশাল বা সর্বহারা-রা কতজনকে করেছিল তার একটা তুলনামূলক বিচার করলেই মাওয়ের আদর্শের সঙ্গে তারা কতটা নৈকট্য বোধ করতেন সেটি বোঝা যাবে। একদিকে সর্বহারার রাজত্ব প্রতিষ্ঠার ডাক অন্যিদকে এই হত্যাযজ্ঞ তাদেরকে দুর্বোধ্য করে তুলেছিল। সিরাজ শিকদার বা চারু মজুমদার কেন যে বুঝতে পারেননি যে - একজন অত্যাচারি লোকও যদি খুন হয় তাহলে এ অঞ্চলের মানুষের মনে তার জন্যই সহানুভূতি জেগে ওঠে, খুনিদের জন্য নয়। 'শ্রেণীশত্রু খতম'-এর এই উদ্ভট ধারণা তাঁরা কোথায় পেলেন, ভেবে পাই না।

৩. সিরাজ শিকদার মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় একটা নতুন ধরনের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার কথা ভেবেছিলেন বলে মনে হয়। যুদ্ধের সময় চীনের বিরুদ্ধে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দেয় - আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট রাজনীতির বাইরে গিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তাঁর আছে। যুদ্ধের পর তাঁর দলের দ্রুত বিকাশ এবং সর্বহারার রাজনীতিতে দ্রোহী তরুণদের বিপুল হারে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারটি তাঁর যুদ্ধকালীন কর্মপদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দেয়। কিন্তু তারপরও কেন এমন করুণ পরিণতি হলো তাঁর এবং তাদের রাজনীতির, সেটি নিয়ে অনেক বিশ্লষণ হলেও এবং নানা পক্ষের ওপর দোষ চাপানো হলেও যে দিকটি সবসময় উপেক্ষিতি থেকেছে, সেটি এই ব্যক্তি-মানুষের জীবন ও সীমাবদ্ধতা। আপনি ঠিক সেখানটাতেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন! খুবই ইউনিক একটা ব্যাপার।

৩. কোনো মানুষই চব্বিশঘণ্টা বিপ্লবী থাকতে পারেন না, নিজের ব্যক্তিসত্তাও পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারেন না। বিপ্লবের জন্য ব্যক্তিজীবন বিসর্জন দেয়ার চিন্তাকে নিছক একটা ইউটোপিয়া বলে মনে হয় আমার। তাঁরা সেটিই করতে চেয়েছিলেন। ব্যক্তিসত্তাকে, ব্যক্তিসাতন্ত্র্যকে, ব্যক্তির আবেগ-অনুভূতিকে বুর্জোয়া-পেটিবুর্জোয়া ইত্যাকার অভিধায় অভিহিত করে তাঁরা ঠিক কী অর্জন করতে চেয়েছিলেন বোঝা মুশকিল। ব্যক্তিই যদি না থাকে তাহলে বিপ্লবের কী প্রয়োজন তাও বুঝি না।

৪. সিরাজ শিকদার কতটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন সেটি বোঝা যায় ওই এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করার ঘটনার ভেতর দিয়ে। একজন বিপ্লবী, যাঁর প্রয়োজন একটি বিপুল প্রশিক্ষিত-বিশ্বস্ত কর্মীবাহিনী এবং পার্টির বিভিন্ন স্তরে বিশ্বস্ত-পরিক্ষীত নেতা, সেখানে ক্রমাগত তিনি নেতা-কর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে হতে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ একা হয়ে গেলেন! আর তখনই বিপ্লবী রাজনীতিক হিসেবে তাঁর পরাজয় ঘটে গেল। বিস্ময়কর লাগে ভাবতে। মেধাবী-প্রতিভাবান মানুষ, নিশ্চিত-নিরাপদ-জৌলুশপূর্ণ জীবনের ডাক ফিরিয়ে দিয়ে তিনি পা বাড়িয়েছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ-অনিশ্চিত জীবনের দিকে - মানুষের মুক্তির স্বপ্ন নিয়ে। তার স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা-সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই আমার, প্রশ্ন আছে কর্মপদ্ধতি নিয়ে। দুঃখও আছে। যদি ‘ভুল’ পদ্ধতি বেছে না নিতেন তাহলে সম্ভবত তিনিই হতে পারতেন এ অঞ্চলের অনুসরণযোগ্য বিপ্লবী নেতা। হয়তো মার্কসবাদ, লেলিনবাদ, মাওবাদের মতো 'সিরাজবাদ' নামে একটা টার্ম যুক্ত হতো বিপ্লবী রাজনীতিতে।

৫. তাঁর এই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া, নিঃসঙ্গ হয়ে পড়া, নেতা-কর্মীদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলার ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভেবেছি আমি। বাঙালি চরিত্রের মধ্যে এমন কি কোনো একটা ব্যাপার আছে যে ক্ষমতা-চর্চার একটা পর্যায়ে তারা এক নায়ক হয়ে ওঠে? এটা শুধু সিরাজ শিকদার সম্পর্কে নয়, অন্যান্য জাতীয় নেতা সম্পর্কেও মনে হয়।

এখন, এই বর্তমানের রাজনীতির দিকে তাকালেও যখন দেখি - বিভিন্ন দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীরা ক্রমাগতই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন, নেতা-কর্মীদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন না, সব ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত নিতে চান, তখন মনে হয় - অসুখটা আমাদের জাতীয় চরিত্রের মধ্যেই আছে এবং সেটি খুব গভীরে প্রোথিত। সিরাজ শিকদারের ওপর আমাদের নজর পড়ে, কারণ তাঁর এক নায়ক হয়ে ওঠার ব্যাপারটি খুব দৃশ্যমান, কিন্তু মূল ধারার রাজনীতিতেও তো ওই একই ব্যাপার!

৬. আপনার এই লেখার সূত্র ধরে আরো অনেক দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ তৈরি হতো। আমি নিজেই দেরি করে ফেললাম, আর একথা তো জানাই - সময় গেলে সাধন হয় না।

পরিশেষে - এই লেখাটি পরবর্তী কোনো একটি বইতে অবশ্যই যুক্ত করবেন। সম্ভব হলে এখনই ঠিকঠাক করে ফেলুন। প্রয়োজনে আরেকটু ডিটেইল লিখুন। যেহেতু কিছুদিন আগেই সব আবার ফিরে পড়েছেন, এখন লিখতে সুবিধা হবে। এবং সময় গেলে সাধন হবে না।

৪৮

শওকত মাসুম's picture


১. সিরিজটা নিয়ে আমি অনেক দ্বিধায় ছিলাম। কারণ আমার সব জানা অন্যের কাছ থেকে ধার করা। বই পড়ে। আমি নিজে এ ধরণের রাজনীতিতে কখনো সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমি রাজনীতির মানুষও না। তবে রাজনীতির একজন পাঠক বলা যায়।
সিরাজ সিকদারের অসংখ্য সমর্থক আছে এই দেশে। অন্ধভক্তের সংখ্যাও কম নয়। বুঝতে পারে তাদের অনেকেই এই লেখা পছন্দ করের নাই। সেটা আকারে ইঙ্গিতে বলেছেনও। অনেক সময় মনে হয়েছে ব্লগ পোস্ট হিসাবে হয়তো চলতে পারে, কিন্তু আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। গ্রহণযোগ্যও হবে না। কারণ আমি তার বিপ্লবকে মূল্যায়ন না করে ব্যক্তি মানুষকে ধরার চেষ্টা করেছি। যদিও আমি মনে করি ব্যক্তির সীমাবন্ধতার কারণে বিপ্লব দ্রুত অসফল হয়ে গিয়েছিল।

২. সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর চীনেও বিরুদ্ধবাদীদের বুর্জোয়া বলে প্রকাশ্যে বিচার করা হয়েছিল। তবে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনির এরকম উদাহরণ সম্ভবত বাংলাদেশেই বেশি। সামান্য সন্দেহ, সমালোচনার কারণে সরাসরি খতম করা হয়েছে নিজে দলের অনেককেই।

৩. সর্বহারা পার্টির সুসময়ে ঝাঁকের কৈ এর মতো নতুন নতুন কর্মী ঢুকেছিল, যাদের বড় অংশই জানতো না বিপ্লব কি। তারা এসেছিল নানা কারণে। এদের মধ্যে যে অনুপ্রবেশকারীরা ছিল তা পার্টিই পড়ে স্বীকার করেছিল। এটাও পতনের বড় কারণ।

৪. স্বৈরাচার হওয়া নিয়ে যা বললেন সেই প্রবণতা তো এখনও আছে। ঠিকই বলেছেন এটা বাঙালির মধ্যে রয়ে গেছে। এখনও বড় দলগুলোর কাছের নেতারাই বলেন নেত্রী বা ম্যাডাম কাউকে বিশ্বাস করেন না।

৫. অনেক ধন্যবাদ কামাল ভাই। আপনার এই দীর্ঘ মন্তব্য সিরিজটা নিয়ে আমার অনেক দ্বিধা কাটিয়ে দিয়েছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

শওকত মাসুম's picture

নিজের সম্পর্কে

লেখালেখি ছাড়া এই জীবনে আর কিছুই শিখি নাই।