গান-গল্প-সিনেমা
১.
কি বই পড়বো? এটা নিয়ে মাঝে মাঝেই মুশকিলে পড়ি। কারণ এখনও আমার কাছে পড়া হয়নি বা অল্প পড়েছি এমন বইয়েরও সংখ্যাও অনেক। মন এখন কেমন আছে এর উপরও নির্ভর করে কি বই পড়বো?
বইমেলা থেকে কিনেছিলাম মহাদেব সাহার আত্মস্মৃতি-১৯৭৫ : সেই অন্ধকার, সেই বিভীষিকা-বইটি। পড়তে শুরু করেছিলাম। ইত্তেফাকে আমার সহকর্মী ছিলেন। কিন্তু কখনো তেমন কথা হয়নি। দূর থেকে দেখতাম। আর বাসায় তাঁর কবিতা পড়তাম। কিন্তু বইটি পড়তে গিয়ে প্রচণ্ড হতাস হলাম। কারণ আত্মস্মৃতি বলতে তেমন কিছু পেলাম না। অথচ ৭৫ এর সেইসব দিনগুলো নিয়ে প্রচন্ড আগ্রহ আছে। এই বইটি মূলত বন্দনা সমগ্র। মহাদেব সাহা সেই সময়ের বাংলাদেশ নিয়ে যতটা লিখেছেন তারচেয়ে বেশি আছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা বন্দনা।
২.
কোলকাতার বাংলা সিনেমার বড় একটা পরিবতর্ন হয়েছে। একঝাক নতুন নতুন পরিচালক এসেছেন। ভাল ভাল অনেক সিনেমা হচ্ছে। আমি এসব সিনেমার আগ্রহী দর্শক। সত্যজিত-মৃনাল-ঋত্বিক পরবর্তী সময়ে বদল এনেছিলেন গৌতম ঘোষ-অপর্ন সেন-ঋতুপর্ণ ঘোষ-বুদ্ধদেব। এরপর আরেকটা বদল আনছেন নতুন একঝাক পরিচালক।
তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন একটু বেশি ভাল। গৌতম ঘোষ দেখা সিনেমাটার মাধ্যমে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন। অপর্ণা সেনের অন্যরকম সিনেমা ছিল পারমিতার একদিন। ঋতুপর্ণের সেরা আবহমান। বলে রাখি এগুলো আমার ব্যক্তিগত মতামত।
আমার কাছে মনে হয়, অন্তহীন সিনেমা থেকে সিনেমার গানের একটা বড় পালাবদল এসেছে। এরপর বড় একটা পরিবর্তন আনলেন অনীক দত্ত ভূতের ভবিষ্যৎ নিয়ে। তার পরের ছবি আশ্চর্য প্রদীপ ভাল হলেও ভূতের ভবিষ্যৎ-এর ছায়া থেকে বের হতে পারেনি। কৌশিক গাঙ্গুলির ছবিগুলোর বিষয়বস্তু একটু অন্যরকম। সমকাম নিয়ে করেছিলেন টেলিফিল্ম উঞ্চতার জন্যে। বিষয়বস্তু ছিল 'ফ্লাট ব্রেস্ট'। আর এ নিয়ে সিনেমাটার যে নামটি তিনি বেছে নেন সেটি ছিল চমৎকার। 'শূন্য এ বুকে'। তবে কৌশিক চমকে দিয়েছেন শব্দ সিনেমাটি দিয়ে।
৩.
আমার আরেকটি ব্যক্তিগত মত হচ্ছে এ সময়ের কোলকাতার বাংলা সিনেমার সেরা পরিচালক সৃজিত মুখার্জি। পেশায় অর্থনীতিবিদ ছিলেন। অর্থনীতি ছেড়ে নেমেছেন সিনেমায়। এখণ পর্যন্ত ৫টি সেনেমা করেছেন। অটোগ্রাফ, বাইশে শ্রাবন, হেমলক সোসাইটি, মিশর রহস্য এবং জাতিস্মর।
একইসঙ্গে সমালোচকদের প্রশংসা আর বক্স অফিস সাফল্য খুব কম পরিচালকেরই ভাগ্যে জোটে। সৃজিতের ৫টি সিনেমাই প্রশংসিত এবং ব্যাপকভাবে বক্স অফিস সফল। তবে এই ৫টি সিনেমার মধ্যে অবশ্যই সেরা জাতিস্মর।
জাতিস্মর সৃজিতের একা সিনেমা বললে ভুল হবে, এটি আসলে সৃজিত আর কবির সুমনের সিনেমা। সিনেমাটি দেখলে পরিচালকের ইন্টেলেকচুয়াল হাইটের একটা ধারণা পাওয়া যায়।
গান, অভিনয়, পরিচালনা-সব দিক থেকেই বাংলা সিনেমা জগতের অন্যতম সেরা এটি। আর এ তুমি কেমন তুমি গানটি অবশ্যই বাংলা গানের জগতে সেরা একটি গান হয়ে থাকবে।
এ তুমি কেমন তুমি চোখের তারায় আয়না ধরো,
এ কেমন কান্না তুমি আমায় যখন আদর করো।
জন্মের আগেও, জন্ম পরেও জন্ম তুমি এমন,
সুরেরও গভীর সুরে পদাবলীর ধরন যেমন।
কথা নয়, নীরবতায় সজলতার আখর ধরো,
এ কেমন কান্না তুমি আমায় যখন আদর করো।
এসেছি আগেও আমি যখন তুমি পদ্মাবতী,
কবেকার পুঁথির শোলক তোমার মতই অশ্রুমতী।
অশ্রুর একটি ফোঁটায় জন্ম আমার,আমার মরণ,
নীরবে জাতিস্মরের গল্প বলা তোমার ধরন।
ঝরেছো আগেও তুমি বৃষ্টি হয়ে, আবার ঝরো-
এ কেমন কান্না তুমি আমায় যখন আদর করো !!
আমার মতে তোর মতো কেউ নেই আর এ তুমি কেমন তুমি গানটির জন্য রূপঙ্করও স্থায়ী জায়গা করে নিল আমার কাছে।
৪.
আবহওয়া উত্তপ্ত। প্রচন্ড গরম। এই গরমে একটা গরম সিনেমার কথা বলি। এই ছবিটার কথা আগেও লিখেছি। গরম ছবি অনেকেই করেন। কিন্তু সেগুলো নিতান্তই গরম সিনেমা। আজ আমি বিখ্যাত পরিচালকদের কথাই লিখবো বলে ঠিক করেছি। বিখ্যাতরা যখন গরম সিনেমা বানান, সেটি অন্যরকম হয়।
লুই বুনুয়েল একজন বহু বহু বিখ্যাত পরিচালক। তাঁর একটা সিনেমা আছে, নাম হল Belle de Jour, ফরাসী ছবি। ক্যাথারিন দানিয়ুব নায়িকা।
দেখতে পারেন।
৫.
গরমের কথায় মনে হয় আমরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশের মতো হয়ে যাচ্ছি। নানা কারণে আমি চার-পাঁচটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে গিয়েছি। সেখানকার গরম নিয়ে আমার ধারণা আছে। গা পুড়ে যায়। এখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশও সেরকম হয়ে যাচ্ছে।
সৌদি আরবের একটা খবর পড়লাম আজ। মনে হল এদিক থেকেও আমরা ওদের কাছাকাছি যাচ্ছি।
মানহানিকর টুইটের দায়ে সৌদি
সাংবাদিককে দোররা, জেল
রিয়াদ: সৌদি আরবের দু’টি ফুটবল ক্লাবের প্রেসিডেন্টের মানহানির দায়ে দেশটির অপরাধ কোর্ট একজন ক্রীড়া সাংবাদিককে তিন মাসের জেল, ৫০ দোররা, পাঁচ হাজার রিয়াল জরিমানা ও তিন মাস টুইটার ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত তার প্রাথমিক রায়ে বলেন, মোহাম্মদ শেনওয়ান আল ইনাইজি তার টুইটার অ্যাকাউন্টে আল-হেলাল ও আল শাবাব ক্লাবকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন বলে আদালত প্রমাণ পেয়েছে।
আল ইনাইজি ক্লাব দু’টির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির অভিযোগ করেন বলেও আদালত প্রমাণ পায়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল শাবাব ক্লাবের প্রেসিডেন্ট খালিদ আল বলতান আল ইনাইজির নামে মানহানি মামলা দায়ের করেন। সূত্র: আরব নিউজ
গরমে আর কর্মে সৌদি আরবের কাছাকাছি গেলেও একটাই পার্থক্য। ওদের তেল আছে আমাদের নেই।
৬.
গরম, মন খারাপ ভাব, ক্লান্তি, ঘুম পাওয়া-এসব কিছু হলেই আমার আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের এই চারটি লাইন খুব মনে পড়ে-
ক্লান্ত চোখে ক্লান্ত চোখের পাতা
তারো চেয়ে ক্লান্ত আমার পা,
যেথায় দেখি সাধের আসন পাতা
'একটু বসি?' জবাব আসে 'না।'
৭.
সবশেষে একটা ফালতু গল্প বলি-
ভোলা মিঞাকে ফোন করেছে তার প্রেমিকা। শুরুতেই ধমক দিয়ে প্রেমিকা বলল, এই! মোবাইল থাকতে তুমি আমাকে চিঠি পাঠিয়েছ কেন? যদি বাবার হাতে পড়ে যেত?
ভোলা মিঞা: তোমাকে ফোন করেছিলাম তো! একটা মহিলা কণ্ঠ বলল, ‘প্লিজ, ট্রাই লেটার’। তাই লেটার পাঠানোর ট্রাই করলাম!
১। ভাগ্যিস বইটা কিনি নাই।
২। শব্দ সিনেমাটা আজই দেখব যদি গরম টা সহ্য করে দেখতে পারি আর কি!
৩।
আহা! দারুণ একটা গান।
৪। যে গরম পড়ছে! গরমের কথা আর বলেন কেন!
আপনার এসব লেখা ব্যপক ভালু পাই।
ইয়ে জীবনে পাওয়া লেটারগুলি নিয়েও তো লেখতে পারেন।
মহাদেব সাহারে সুবিধাবাদি মনে হয়
বরাবরের মতই দুর্দান্তিস।
এখনও না চেখে থাকলে দুইটা জিনিস ট্রাই করে দেইখেন -
ইন্ডিয়ান বাংলা মুভি
ছায়ামানুষ এর গানগুলি আর
গত বছরের একটা ইংরেজি মুভি এবাউট টাইম।
১] নির্মোহ বা নির্পেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে '৭৫ বা '৭১ এর অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে লেখার সৎ সাহস আজো কোন বাংলাদেশী লেখক বা ইতিহাসবিদের মাঝে দেখা যায়নি । এটা আমাদের দূর্ভাগ্য বটে ! '৭১ এর ১৬ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত গণমানুষের মতের বিপরীতে [মানুষ তখন আলোচনা নয় স্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিল ] কেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা নাদিয়ে ইয়াহিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং পরে মধ্যরাতে নিজেকে পাকি জান্তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন তা আজো এক অনন্ত অন্ধকার । স্বাধীনতার পরে তিনি বা তার পক্ষের লোকেরা যা'ই কৈয়ফিয়ত দেননা কেন মানুষের কাছে তা গ্রহণযোগ্য কখনো হয়নি । যুদ্ধ করে যে সব জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছ, যেমন ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া, কম্বোডিয়া,ইতালী এমনতরো আরো অনেক দেশ, তাদের মহান নেতারা কিন্তু কখনো আত্মসমর্পণ করেননি, আত্মগোপণে গিয়ে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন । কিন্তু বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য যে যুদ্ধের পুরো সময়টায় ছিল প্রধান নেতার অনুপস্থিতি এবং পরে দেশে ফিরেও যুদ্ধকালীন সময়ের ঘটনাবলী সম্বন্ধে জানার চরম অনিহা ছিল তার ! [ সুত্র ঃ শরমিন আহমদ " তাজ উদ্দীন আহমদ - নেতা ও পিতা " ] কান আগেই ভরে দেয়া হয়েছিল সম্ভবত ।
২] আমরা এমন এক আবেগী জাতি যে নেতৃত্বের বড় বড় ত্রুটিও আমরা দেখতে পাইনা । আবার এমন আইনও এদেশে গৃহিত হতে দেখা যায় যার বলে নেতার কোন সমালোচনাই করা যাবেনা । অথচ মানুষ হিসাবে কেউ ভুলত্রুটির ঊর্ধে নয় ! ,'৭২ এর শুরু থেকে '৭৫ এর আগষ্ট পর্যন্ত এ স্বল্প সময়ের ট্যানুরে বঙ্গবন্ধুর অনেক পদক্ষেপ সঠিক ছিলনা । কিন্তু এগুলো বলার বুকের পাটা কার ! ছড়াকার নেয়ামত আলীর ভাষায়, " ধরা যাবেনা ছোঁয়া যাবেনা বলা যাবেনা কথা,
রক্ত দিয়ে কিনলাম শালার এমন স্বাধীনতা !"
৩] তবে ইতিহাসকে কখনো দীর্ঘদিন ধামা চাপা দিয়ে রাখা যায়না । একদিন সব কিছু উগড়ে দেয় ইতিহাস ! আর তখনি চূনকালী পড়ে ক্লাইভের গর্ধদের মুখে এবং উজ্জ্বল গৌরবদীপ্ত সিরাজদৌল্লা উঠে আসে মিথ্যা ইতিহাসের অন্ধকূপ থেকে । বাংলাদেশের ইতিহাসও একদিন মুক্তি পাবে । আঁধার সময়ের অনেক রতীমহারতী এখনো বেঁচে আছেন, তারা জ্বীব নাড়লেই হয়, বিশেষ করে ডঃ কামাল হোসেন সাহেবরা । পঁচিশের কালো রাত্রির উপর তিনি এখনো খুব একটা বলেননি !
'রথী মহারথী' বানানটি অনিচ্ছাকৃত ভুল । সতর্ক নাহয়ে ছাপিয়ে দেয়ার জন্য দূঃখিতঃ ! ক্ষমাপ্রার্থী ।
মহাদেব সাহার বইটার পাতা উল্টিয়ে আর কেনা হয় নাই, কেন জানি মনে হয়েছিল যুতের হবে না। আপনার মুখে শুনে শান্তি পাইলাম।
আমার মাটি আমার দেশ
হবে না সোউদি, হবে না বিদেশ
আপনার এসব লেখা ব্যপক ভালু পাই
ইয়ে জীবনে পাওয়া লেটারগুলি নিয়েও তো লেখতে পারেন।
এই গানটাও হেভী লাগে, শুনে দেখেন
http://www.youtube.com/watch?v=QSmMSJ6l2eo
মন্তব্য করুন