দিন যায় রে বিষাদে, মিছে দিন যায়
১.
আমাদের বালকবেলা ছিল অন্যরকম। অনেক ছোট ছোট ঘটনা, অনেক বড় বড় বিস্ময় নিয়ে বড় হয়েছি আমরা। আমরা চার ভাইবোন, আমাদের অনেক অনেক খালাতো-মামাতো-চাচাতো-ফুফাতো ভাই বোন নিয়ে আমরা বড় হয়েছি হেসে-খেলে।
নিশ্চই সবার বালকবেলা একরকম হয় না। প্রত্যেকেরই বালকবেলার আলাদা আলাদা গল্প থাকে। সেই গল্প কি রকম? আর বালকবেলা নিয়ে যদি সিনেমা হয় কেমন হবে সেটা? একটা কাজ করলে কেমন হতো? একটা ভিডিও ক্যামেরা যদি সবসময় আমাদের চারপাশে থাকতো তাহলে নিশ্চই গল্পটা জানা যেতো?
আমাদের জীবনের একমাত্র জীবন্ত ছবি সম্ভবত বিয়ের ভিডিও। তবে বিয়ের অনেক অনেক বছর পর কতজন সেটি আনন্দ নিয়ে দেখেন কে জানে?
এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমি আজই একটি সিনেমা দেখা শেষ করলাম, সেটি নিয়ে কিছু বলা। সিনেমাপ্রেমীদের বড় অংশ এরইমধ্যে সিনেমাটি হয়তো দেখে ফেলেছেন। সময়ের কারণে এতোদিন দেখতে পারি নি, আজ পারলাম। বয়হুড-এর কথা বলছি। আমার পরিচিতি কেউ কেউ বয়হুডকে ওভাররেটেড বলেছেন। আমি কিন্তু পুরো কনসেপ্টটাতে মুগ্ধ।
পরিচালক রিচার্ড লিনক্লেটার ১২ বছর ধরে সিনেমাটি বানিয়েছেন। মূল চরিত্র ম্যাসন জুনিয়র। ম্যাসন যখন ৬ বছরের, তখন থেকে সিনেমা শুরু। ম্যাসন যখন ১৮ বছর, তখন সিনেমা শেষে। ম্যাসন, তার বড় বোন, ডিভোর্সি মা আর বাবা। এই চারজন ১২ বছর ধরে অভিনয় করেছে সিনেমাটিতে। মূল চরিত্রগুলো ক্যামেরার সামনে বড় হয়েছে। অভিনব আইডিয়া।
আমাদের বালকবেলা আর ম্যাসনেদের বালকবেলা এক না। ম্যাসনের বাবা-মা আলাদা থাকে। মা বিয়ে করে একজনকে। তাঁরও আছে দুই ছেলে মেয়ে। সেই সম্পর্কও টেকে না। মা আবার বিয়ে করে। সেখানেও সমস্যা। বাবাও আরেকটি বিয়ে করে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে ম্যাসনেকে আমরাও অনুসরণ করছি এবং গল্পটা সাদামাটা। বাস্তবে তা না। সম্পর্কের নানা জটিলতার মধ্যেই বড় হতে থাকে ম্যাসন। যে মা ছেলে-মেয়ের জন্য একটার পর একটা সম্পর্ক ভেঙ্গেছে সেই মাকেও ছেড়ে যাওয়ার দিন আসে ম্যাসনের, যেদিন তার বয়স ১৮ হয়ে যায়।
ম্যাসন–৬ থেকে ১৮ বছর
বয়হুড এবারের অস্কারের তুমুল আলোচিত ছবি। ভিন্ন ধারার এই ছবিটি দেখতেই পারেন।
২.
এবার কিছু অন্যরকম বালকদের কথা বলি। নানা কারণে বেশ কিছু পরীক্ষার খাতা আমি দেখে ফেলি। কিছু কিছু ছেলে-মেয়ের হাতের লেখা বেশ সুন্দর, বেশ গুছিয়েও লেখে। কারো কারো লেখা সেরকম না। আবার কেউ কেউ এমন কিছু লেখে যা আপনাকে ভাবাবেই।
এখন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এ থেকে তাদের সৃজনশীলতার একটা পরিচয় আমরা পাই। সেরকম কিছু নমুনা দেখবেন?
তাও ভাল যে দ্বিপাক্ষিক বা ছেলেটার বাবা ও মা– এই দুই পক্ষে যেভাবে ছেলেটাকে জন্ম দিল তাকেই দ্বিপাক্ষিক বলে নাই
আরেকটা নমুনা
এতো সহজ ভাষায় মুক্তবাজার অর্থনীতির সংজ্ঞা মনে হয় অমর্ত্য সেনও দিতে পারবেন না।
আপাতত শেষ নমুনা:
মানব সম্পদের এই সংজ্ঞা পাঠ্য পুস্তকে লিপিবদ্ধ হোক–এই দাবী জানিয়ে রাখলাম।
৩.
এবার একটু বড় বেলার কথা বলি-
বইয়ের চেয়ে বড় বিস্ময় আর কি আছে? নতুন একটা বই হাতে পেয়ে অদ্ভুত রোমাঞ্চ হয়। মনে হয় না জানি কি আছে এর মধ্যে। তারপর অজানা জগতে ডুব দেই। ভাল একই বই পড়ার পর মনে হয়, কেন শেষ হল। কত ধরণের লেখাই তো আছে। ব্যতিক্রম কিছু পড়লে মনে হয় সবাইকে ডেকে ডেতে পড়তে বলি।
এখন পড়ছি ‘দিনপঞ্জি-মনপঞ্জি-ডাকঘর’। দুজনের লেখা, মুনীর চৌধুরী ও লিলি চৌধুরী। তখন মুনীর চৌধুরী ২৪ বছরের, আর লিলি চৌধুরী ২১ বছরের। দুই তুমুল প্রেমিক-প্রেমিকা। মুনীর চৌধুরী ছিল বড় বোনের বান্ধবীর বড় ভাই। সমস্যাটি হয় প্রেমিককে নিয়ে। রাজনীতি করার কারণে মুনীর চৌধুরী জেলে যান ১৯৪৯ সালে। জেলে বসে প্রেমিকার উদ্দেশ্যে চিঠির মতো করে ডায়েরি লিখতেন। সেটি হল দিনপঞ্জি। একসময় নিজেদের নিয়ে একটি গল্পও লিখলেন জেলে বসে-সেটি মনপঞ্জি। আর লিলি চৌধুরী একই সময়ে লিখতেন যে ডায়েরি-তার নাম ডাকঘর।
অসাধারণ এক পাঠ-অভিজ্ঞতা হবে তিনটি লেখা পড়লে। ভাবা যায়, সেই যুগে, আজ থেকে ৬৫ বছর আগে, প্রেমিকা লিখতেন, ‘তুই সম্বোধন করে। বলে রাখি ডায়েরি যেহেতু, সব কথাই ছিল একান্ত নিজেদের, গোপন। সেই গোপন লেখা পড়রে অনেকেই অবাক হবেন, অনেকে বিস্মিত হবেন, কারো কারো কপালও কুচকে যেতে পরে। প্রেমিক-প্রেমিকার সেই গোপন কথাবার্তা ছিল একন্তই তাদের। সেই গোপন লেখা প্রকাশ করার সাহস লাগে। সেই সাহসটি দেখিয়েছেন লিলি চৌধুরী।
একটা অংশ শুনাই তাহলে–
লিলি চৌধুরী লিখলেন, ‘তোকে বুনো আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কাছে পেলে তোকে পিষে ফেলতাম, গুঁড়ো করে ফেলতাম আমার বুকের মাঝে। আদর রে, আর পারি না সইতে, আর পারি না। বড্ড কষ্ট। খুউ-ব কষ্ট রে। জেলখানার গেট ভেঙে তছনছ করে ফেলতে পারতাম যদি।…আমি কাঁদছি, তাতে কী? তুই কাঁদলে আমার আরও কষ্ট হবে যে। চুমু চুমু চুমু চুমু আদর আর চুমু। তোর তোর তোরই আমি।’
সুতরাং বলা যায়, আজ হোক বা ৬৫ বছর আগে–প্রেমের ভাষা কিন্তু একই
নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন ধরণের সংযোজন ‘দিনপঞ্জি-মনপঞ্জি-ডাকঘর’।
৪.
সুখের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শীতের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
অর্ধেক কপাল জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শুধু ঝড় থমকে আছে গাছের মাথায়
আকাশমনির ।
ঝড় মানে ঝোড়ো হাওয়া, বাদ্ লা হাওয়া নয়
ক্রন্দনরঙের মত নয় ফুলগুলি
চন্দ্রমল্লিকার ।
জয়দেবের মেলা থেকে গান ভেসে আসে
সঙ্গে ওড়ে ধুলোবালি, পায়ের নূপুর
সুখের চট্ কা ভাঙে গৈরিক আবাসে
দিন যায় রে বিষাদে, মিছে দিন যায়
শক্তির এই কবিতা দিয়েই শেষ হোক এই লেখা
অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার সুবাদে মুক্তবাজার অর্থনীতির এই সংগা আপনে জানেন না?
২ নম্বরটাই দারুন। ব্যাপক সৃজনশীলতা দেখাইছে!
বয়হুড দেখছি মোটামুটি লাগছে।
বইটা দারুন, নিজে তো পড়েছি এক বন্ধুকে গিফটও করেছি!
সহমত।
১। সিনেমাটা দেখার খুবই আগ্রহ হচ্ছে। শীঘ্রই দেখব আশা করি।
২। আমি তো সুজনশীলতা দেখে মুগ্ধ। এমন চিন্তা তো মাথায়ই আসবে না। পুরাই পাত্থর! মানব সম্পদ আরি দ্বিপাক্ষিক নিয়ে যা লিখলো, পুরাই লা জওয়াব
৩। বইটা পড়তেই হবে। মাঝে মাঝে এমন যাক দিয়ে বলে যাইয়েন, তাইলে তো সিনেমা দেখার, বই পড়ার একটু খোঁজ খবর পাইতে পারি। গরীবের জীবনের এইটুকু বিনোদন তো অনেক।
৪। কবিতার শেষ লাইন কারো জীবন থেকেই নেয়া
মাসুম ভাই ইজ মাসুম ভাই ----- কোন প্রতিদ্বদন্দ্বী নেই যার।
মানবসম্পদ এর সংজ্ঞা মুগ্ধ কর। মুভি আর বই দুইটাই নোটেড
কবিতায় মন খারাপ হলো
মন্তব্য করুন