অর্থনীতি, অর্থমন্ত্রী ও আমরা
১.
আমাদের অর্থমন্ত্রী লোকটা একটু অন্যরকম। উদাহরণ দিই, গত ১৮ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রণালয়ে বৈঠক হলো। বিষয় ছিল পাঁচ টাকাকে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর করা। আগে তা ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোট। আলোচনা হল আইন সংশোধন করা হবে। ফলে এর পর থেকে পাঁচ টাকার নোট ছাপাবে অর্থ বিভাগ।
অর্থমন্ত্রীর জন্য সব পত্রিকা বা টেলিভিশনেই নির্ধারিত রিপোর্টার থাকেন। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী কথা বলেন। সেদিন অর্থমন্ত্রী কি বলেছিলেন জানেন তো? বলেছিলেন দেশে আর এক টাকা বা দুই টাকার নোট থাকবে না। সর্বনিম্ন নোট হবে পাঁচ টাকার। সরকার এক টাকা ও দুই টাকার নোট তুলে নেবে।
অর্থমন্ত্রী সেদিন যা বলেছিলেন হুবহু পত্রিকা থেকে তুলে দেই–
‘পুরোনো এক ও দুই টাকার নোটগুলো বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংস করা হবে। এগুলো ধ্বংস করতে ৩০০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে।
এতে সরকারের কী লাভ হবে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সরকারের চেয়ে বেশি লাভ হবে মানুষের। অপ্রয়োজনীয় (ইউজলেস) টাকা নিয়ে মানুষকে ঘুরতে হয়।
এক টাকা দিয়ে যে চকলেট পাওয়া যায়, তাহলে কি সেটি পাওয়া যাবে না; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক টাকা-দুই টাকা দিয়ে চকলেট পাওয়া যায় নাকি?’
পৃথিবীর আর কোনো অর্থমন্ত্রী বা অর্থনীতি নিয়ে সামান্য জ্ঞান আছে এমন কেউ কখনোই এ কথা বলবেন না। ওই বৈঠকের কার্যপত্রটি আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে। সেটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, অর্থমন্ত্রী ওইদিনকার বৈঠকের একটি কথাও বোঝেননি বা শোনেননি। পৃথিবীর কেউ কি বিশ্বাস করবে বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র্য দেশে সর্বনিম্ন নোট হবে পাঁচ টাকার। কেউ কি কখনো শুনেছে সরকার অর্থ খরচ করে এক টাকা ও দুই টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নেয়?
আরেকটি উদাহরণ দিই। ১ জুলাই বিশ্বব্যাংক তাদের ওয়েব সাইটে জানিয়ে দিল যে বাংলাদেশ এখন থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। আমরা জানি কেবল মাথাপিছু জাতীয় আয়ের ভিত্তিতে নিম্ন, মধ্যম বা উচ্চ আয়ের দেশের এরকম তালিকা করে কেবল বিশ্বব্যাংক।আর একটি দেশ স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীর না কি উন্নত দেশ তা ঠিক করে জাতিসংঘের ইউএন অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইসিওএসওসি) কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা সিডিপি।
এবার দেখা যাক আমাদের অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের কি বললেন।কথাগুলো তিনি বলেছিলেন ২ জুলাই, আর পত্রিকায় ছাপা হয়েছে পরের দিন।
‘মধ্যম আয়ের দেশ হতে বাংলাদেশকে আরো তিন-চার বছর অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত । তিনি বলেছেন, চূড়ান্তভাবে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশের আরো তিন-চার বছর সময় লাগবে। আর এ চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেবে জাতিসঙ্ঘ। তত দিন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধাগুলো পাবে।
মুহিত বলেন, ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসাটা এক ধরনের প্রমোশন ও সন্তুষ্টির বিষয়। এ ধরনের স্বীকৃতিতে আত্মগরিমা বাড়ে।
বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো এখন আর পাবে কি না– জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা করলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেবে জাতিসঙ্ঘ । জাতিসঙ্ঘের বোর্ড সভায় এটি অনুমোদিত হতে হবে। আর এ জন্য আরো তিন-চার বছর সময় লাগবে। তত দিন বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধাগুলো পাবে।’
বিষ্ময়কর হচ্ছে আমাদের অর্থমন্ত্রী জানেনই না মধ্যম আয়ের দেশ ও এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যকার পার্থক্যের কথা। মজার কথা হলো অর্থমন্ত্রীর এই কথাটিকে আবার বেদবাক্য ধরে নিয়ে পরের দিন দেশের প্রধান দুটি জাতীয় দৈনিক লিড নিউজ করলো। যেমন মন্ত্রী, তেমনই আমরা, সাংবাদিকেরা।
মার্কিন জিএসপি নিয়েও আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী ও কিছু সাংবাদিকেরা একই কাহিনী করলো। কেবল গওহর রিজভী শেষ সময়ে এসে আসল কথাটি বললেন । এখন দেখা যাক, আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী জার্মানি থেকে ফিরে কি বলেন।
আগেরবার তোফায়েল আহমেদ যখন বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন তখন আমি ছিলাম পুরোই মাঠের রিপোর্টার। ডব্লিউটিও–এর সিঙ্গাপুর মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক আর জাল জিএসপি সার্টিফিকেট বাতিল করা নিয়ে তাঁর বক্তৃতা আমাদের প্রায় সকলের মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল।আমরা বক্তৃতা শোনার আগেই লিখে ফেলার কৃতিত্ব অর্জন করেছিলাম।
আমাদের অনেক মন্ত্রীই আছেন–দিনের পর দিন একই বক্তৃতা দিয়ে যান। মজার ব্যাপার হলো শ্রোতাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই হয়তো একই।
তবে অস্বীকার করবো না, বক্তৃতা শুনতে মজা পেতাম আরেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের। একবার এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে উঠে মঞ্চে বসে থাকা অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবুল হোসেনের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমার নাম যেন কি, তুমারে আগে কোথায় দেখেছি বলো তো’। আবুল হোসেন এক সময়ে এনবিআরের সদস্য ছিলেন।
আমার ধারণা সাইফুর রহমান এসব ইচ্ছা করে করতেন। একবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘গভর্ণর, তুমার নাম যেন কি?’
২.
কলকাতা থেকে প্রকাশিত ড. দিলীপ কুমার মিত্র–এর একটি বই আছে। নাম উদ্ধৃতি–অভিধান। ছোটবেলায় বাসায় দেখছি বাণী চিরন্তনী। সেরকমই একটি বই। পড়তে গিয়ে হঠাৎ চোখ আটকে গেলো একটা উদ্ধৃতিতে।
‘আমার অর্থমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে ছিল। কারণ অর্থমন্ত্রী হতে হলে যত কম লেখাপড়া জানা যায় তত ভাল। সেদিক থেকে আমি যোগ্য ছিলাম। কিন্তু আমার থেকেও কম লেখাপড়া জানা একজনকে পাওয়া গেল। তাকেই অর্থমন্ত্রী করা হল।’ –রমানাথ রায়, মূখ্যমন্ত্রী, কর্ণাটক।
এর সঙ্গে কিন্তু আমার লেখা ওপরের কথাগুলোর কোনো যোগসূত্র নেই। আপনার মনে হলে দায়–দায়িত্ব আপনারই।
৩.
অর্থনীতির মধ্যেই থাকি। একবার এক অর্থনীতিবিদকে প্রশ্ন করা হলো দুই বিয়ে নিয়ে। তিনি চমৎকার দুটি তত্ত্ব দিলেন।
ক. মনোপলি বা একচেটিয়া পদ্ধতি অবশ্যই বাতিল বা ভেঙ্গে দেওয়া উচিৎ
খ. প্রতিযোগিতা সেবার মান বাড়ায়
৪.
একবার এক অর্থনীতিবিদের স্ত্রী স্বামীর কাছে জানতে চাইলো–আচ্ছা, হ্যাগো, ইনফ্লেশন বা মূল্যস্ফীতি কি জিনিষ?
অর্থনীতিবিদ বললো–বিয়ের পর পর তুমি ছিলে ৩৬–২৪–৩৬। এখন তুমি ৪০–৪০–৪৪। এখন তোমার সবকিছু আগে চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু তোমার ভ্যালূ বা মূল্যমান এখন কম। এর নামই মূল্যস্ফীতি বা ইনফ্লেশন।
চার নম্বরটা জট্টিল
অনেক দিন পর আপনের লেখা, ভাল লাগলো ভাই।
৪ নম্বরটা লা-জবাব
৪ নং টা .....
৪ নম্বরে সুপার লাইক
পত্রিকায় হয়তো সব কিছু লেখা যায় না... ব্লগে ফিরেন (৫৭ ধারা মাথায় রাইখা)
চুপচাপ পড়ে গেলাম।
মন্তব্য করুন