গল্প : রাইডিং
ছোটবেলায় খেলনার পোকা ছিলাম। আমার একটা রেলগাড়ির সেট ছিলো। সেটা কলেজে যখন হোস্টেলে থাকতাম তখন চুরি হয়ে যায়। আমি বুঝি না আমার চেয়েও কোন্ বড় খেলনার পোকা বের হলো, যে কলেজে উঠেও রেলগাড়ির সেট দিয়ে খেলতে চায়। তবে আমার সাদা এফওয়ান রেসিং কারটা এখনো আছে। মাঝে মাঝে চারটা পেন্সিল ব্যাটারী লাগিয়ে চালাই। রিমোট টিপে কন্ট্রোল করি।
এখন আর ছোটবেলার মতো খুব মজা করে হয়তো খেলি না, কিন্তু অভ্যাসবশে একটা কাজ করতে ভালোই লাগে। বিশেষতঃ যখন মন খারাপ লাগে, তখন মনটাকে পজ্ করে রাখার জন্য এরকম দু’চারটে অভ্যাস থাকলে মন্দ না।
ছোটবেলার কথা ভাবতে আমার সবসময়ই খুব ভালো লাগে। আমি এক সময় ছোট ছিলাম। যখন দুই হাত সামনের দিকে করে মুখ দিয়ে হুন্ডার মতো ভু ভু শব্দ করতে করতে পাড়াময় দৌড়াতাম। আমার সঙ্গে আরো দুইটা ছেলে দুইটা মেয়ে দৌড়াতো। আমাদের সবার পরনে শুধু লাল, কালো নানা রংয়ের হাফপ্যান্ট।
ওদের নামও মনে আছে। কি আশ্চর্য একটা সময় জীবনের। নিশ্চিন্ত কথাটার অর্থ কি? যখন মাথায় কোনো চিন্তা থাকে না, না কি যখন মাথা চিন্তা করতে পারে না? আমার জীবনে একটা সময় ছিলো যখন এই মাথাটা কোনোকিছু চিন্তা করতে পারতো না। জানতোই না চিন্তা কিভাবে করতে হয়। আমি অবাক হই। এরকম সময়ও মানুষ জীবনে পায়?
সবকিছু আনন্দময় ছিলো সেটা হয়তো বলা ঠিক হবে না। সে সময় মার খাওয়ার ভয় পেতাম। জীবনে এই একটাই ছিলো দুশ্চিন্তা। আব্বু কিংবা আম্মুর হাতে মার খাওয়া। আহা আমার জীবনে কি আর কখনো কোনোদিন সেই সুযোগ আসবে? আমি জানি আসবে না। ছোটবেলায় আব্বু-আম্মু মারতেন বড় আদর করে। আমি বাচ্চা-কাচ্চাদের মারার পক্ষে বলছি না। কিন্তু আমি যে মার না খেলে মানুষ হতে পারতাম না এটা মানি। আব্বু-আম্মুর প্রতি আমি অনেক অনেক কারণে চিরঋণী। তার মধ্যে এটা একটা।
তখন ছোট বলে অনেক কিছুই করতে পারতাম না। যেমন মহল্লার আমার চেয়ে একটু বড়রা ঘুড়ি উড়াতো। আমারও ইচ্ছে করতো, কিন্তু নাটাই নেই, সুতো নেই, ঘুড়ি নেই এবং সর্বোপরি আমি ঘুড়ি ওড়াবার মতোন বড় নই। তবুও বড়দের ঘুড়ি ওড়ানো দেখতাম। ঘুড়ি কাটা গেলে আমি আমার দুই ছেলে বন্ধু আর দুই মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে ভু ভু করে হুন্ডায় চড়ে সেটা ধরতে যেতাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘুড়িগুলো কারেন্টের থামের মাথায়, কিংবা তারের সঙ্গে আটকে যেতো। আর নিচে পড়তো না। খুবই আশাহত হতাম। এই করতে করতে বিকেল কেটে যেত।
বিকেল শেষের সন্ধ্যা ছিলো জীবনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ফিরতে হতো। আব্বু বসে থাকতো, আম্মু রান্না করতো, আমি পড়তাম। পড়াশেষে খাওয়া-দাওয়া, তারপর টিভি দেখা এবং রুটিনের শেষে ছিলো লাইট অফ করে, মশারি খাটিয়ে সবাই একসাথে ঘুমিয়ে পড়া।
ছোটবেলায় আশপাশের পৃথিবীটা এমনই ছিলো। একইরকম কাজগুলো একেক দিন একেক রকম মন, মানসিকতা আর টেনশন নিয়ে করেছি। একদিনও বোরিং লাগে নি। আমি সেই সময়টাকে ভীষণ মিস্ করি।
পুরোনো কথা ভাবছি আর কত অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা মনে পড়ছে। আমি প্রথম সাদা রং চিনেছিলাম একটা বাড়ি দেখে। বাড়িটার গেট সাদা, একতলা ভবনটা সাদা, বাইরের দেয়াল সাদা, বাড়ির দুই বুড়া-বুড়ির সব কাপড় সাদা, ওদের সব চুল সাদা, এমনকি বাড়ির হাসনাহেনা গাছের ঝোপা ঝোপা ফুলও সাদা। সাদা রংটা দেখতে কেমন, সেটার অর্থ কি এবং কেন সেটাকে সাদা বলা হয় তা বোধহয় অবচেতন মনে তখনই ঢুকে গিয়েছিলো। সে সময় যখন দেয়াল টপকে চুপি চুপি বাড়িটায় ঢুকতাম, হাসপাতালের পেছনে যাওয়া-আসার রুট হিসেবে সেটাকে ব্যবহার করতাম, তখন এতকিছু জানতাম না।
হাসপাতালের পেছনে যেতাম ফেলে দেয়া সিরিঞ্জ আর স্যলাইনের বোতল কুড়াতে। সেই বোতলে পানি ভরে কত খেলেছি। ডাক্তার-ডাক্তার খেলা। একজন রোগী থাকতো, যাকে স্যলাইন দেয়া হতো। কেন দেয়া হতো জানি না। যাকে দেয়া হতো সে'ও যে কেন রোগী সেজে স্যলাইন নেয়ার অভিনয় করতো, জানি না। ওরা কেন আমার কাল্পনিক হুন্ডার পেছনে নিজেদের হুন্ডা ছোটাতো তাই বা কে জানে।
ওদের সঙ্গে একবার বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর জীবনে আর কখনো দেখা হয় নি, মোবাইলে কথা হয় নি, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মুখোমুখি হয়ে যাওয়া হয় নি, কোত্থাও পাই নি ওদেরকে আর। কিন্তু নিশ্চিত জানি সাইফুল-খুরশীদ-ভুতু-বিলকিস, ওরা আমার বন্ধু।
হঠাৎ একটু চমকে গেলাম। আমি এসব কি ভাবছি? কাল সকাল নয়টায় আমার পরীক্ষা। ভর্তি হবো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে। আশাটা সেই ছোটবেলা থেকে মনে পুষে পুষে বড় হয়েছি। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে চলে যাবো বিদেশে। পিএইচডি করে ফিরে এসে ইউনিভার্সিটির টিচার হবো। গবেষণার কাজ করবো বিরাট কোনো সংস্থায়। আমার জর্নল বের হবে। মানুষ ইন্টারনেট থেকে পয়সা দিয়ে তাই কিনে কিনে পড়বে। আমার কি সত্যি এখন সেই ছোটবেলার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের মনে করার সময় কিংবা সুযোগ আছে?
---
আর কতো পরে জানাবেন নাদের আলী? বুড়া হইয়া ঐ পারে যাইয়া কি আপনার ডিসক্লেমার জানপো?
লেখা বরাবরের মতোই উমদা
বুড়ো হবে আমার শত্তুর। আপনি কেন? কি যে সব বলেন!

লেখা কি আসলেই ভালো হচ্ছে? নিশ্চিত নই। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
গুষ্টিকিলাই আপনের 'ডিসক্লেইমারের'
....'লেখা বরাবরের মতোই উমদা'
(কপিরাইট তানবীরাদি)
ডিসক্লেইমারের আগের পোস্টগুলায় তো আপনারে দেখি নাই। আন্তাইজ্যা মন্তব্য করার লিগা আপনারে
লেখা কিরাম হৈসে -সেইটাও আরেকজনের কাছ থিকা কপি-পেস্ট করছেন। ধইন্যাপাতা দিলাম না। ভালো থাইকেন।
নারে ভাই আগের একটা পোষ্টেও এই 'ডিসক্লেইমারের' কথা পড়ছিলাম( ঐ যে মানসিকভাবে বেসামাল একজন লোককে সিগারেট কিনে দেবার পর তিনি সেটায় টান দেবার পর কাশি শুরু হয়....ওটায়) আমার মন্তব্য অযাচিত মনে হওয়ায় আন্তরিকভাবেই দুঃখিত

ভালো থাকা হোক।
স্ম্বতিকথা সবসময়ই অন্যরকম আবেগ মাখা হয় বলেই বুঝি "অল টাইম উপাদেয় "
ভাইয়া আপনি কেমন আছেন? এবং আপনার লেখা এখানে পাই না ক্যান?

কমেন্টের জন্য
ওদের সঙ্গে একবার বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর জীবনে আর কখনো দেখা হয় নি, মোবাইলে কথা হয় নি, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মুখোমুখি হয়ে যাওয়া হয় নি, কোত্থাও পাই নি ওদেরকে আর। কিন্তু নিশ্চিত জানি আমরা বন্ধুর সবাই আমার বন্ধু।
শত্রুর মুখে ছাই। ওদের সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হবেনা
আমারও হবে না।
সাইফুল-খুরশীদ-ভুতু-বিলকিস, ওরা আমার বন্ধু।
ডিসক্লেইমার মানি না!
প্লীজ মানেন সাহাদাত ভাই।
ব্লগিং ছেড়ে দিলেও লেখালেখি যেনো না থামে বৎস
রজার্দ্যট্ বস্। আফারমেটিভ টু ইয়।
ওভার এন্ড আউট
'পরে জানাবো' টাইপ কথাবার্তা এই লেখক আগেও লিখছেন, সেই 'পরে' আর আসছে বৈলা দেখি নাই। কাজেই তানবীরার গানের সাথে সারিন্দা বাজায় গেলাম।
বুড়ো হইবো আমার শত্তুর। আপনি কেন আপু? কি যে সব বলেন!
মীরের আর কতোটা ডিসক্লেইমার বাকী থাকবে?
প্রত্যেক ভালো লেখারই একটা ডিসক্লেইমার থাকে?
কৃতজ্ঞ হলুম। বিশেষ কারণে।
লেখাটা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আসলেই, এরকম সময়ও মানুষ জীবনে পায় অথচ ঐ সময় সেটা বুঝতে পারে না কেউ-ই।
একবার যদি ওই সময় ফিরে যেতে পারতাম..........
ঋহান-ও এখন হুন্ডা চালায় আর লুল ফেলে
আপনের নতুন লেখা কই? আর আপনের বন্ধুরেও কয়দিন ধরে দেখি না, ঘটনা কি?
ঋহানের গালটা একটু টিপে দেন।
গাল তো রোজই টিপে দেই
আমার বন্ধু ঢাকার বাইরে।
আমিও হালকা একটু ব্যস্ত আছি। কাল আবার পরীক্ষাও
মন্তব্য করুন