ইদানীং ছোট হয়ে এসেছে জীবনের গণ্ডিটা
আজকাল খুব সীমিত পরিসরে জীবন যাপন করছি। সবসময় চেষ্টা করছি যতো কম শ্রম ও সময়ে একটা কাজ সম্পন্ন করা যায়। জীবনের এমন একটা পরিসর যখন শুধুই বেঁচে থাকাটা দরকারি হয়ে দাঁড়ায়, আর কিছু না। চুপচাপ মটকা মেরে পড়ে থাকা, যাতে করে নিজের এবং আর সবার বাঁচার পথে সাহায্য করা। এমনকি ঘুমের পরিমাণও এখন বেড়ে গেছে আগের চেয়ে অন্তত ৪৯ ভাগ। আর গান শোনা হচ্ছে প্রচুর।
কোনো অভিযোগ করছি না মোটেও। খুব ভাল আছি বলতে গেলে। অনেকটা ভাল কপাল থাকলে এই প্রখর সময়ে আঁকড়ে ধরার মতো একটা জায়গা মেলে। সেটাকে মনে-প্রাণে আকড়ে ধরে বসে আছি। শুধু এই সময়টার পার হয়ে যাওয়ার আশায়। তারপরও হয়তো সবকিছু আগের মতোই রয়ে যাবে। শুধু এই সময়টা পার করতে পারার অভিজ্ঞতা মনের ভেতর একটা চিরস্থায়ী ছাপ রেখে যাবে। সেই ছাপ নির্ধারণ করবে অনেককিছুর পথপরিক্রমা। কোনো একটা কাজ আমরা ছয় মাস আগে যেভাবে করতাম, সেভাবে আর কখনও করবো না।
মন ভার হয়ে থাকার মতো কোনোকিছুও যে ঘটে, তাও আসলে না। মনে হয় এইভাবে কেটে যাক না যদি যায় একটা জীবন। ক্ষতি কি? খুব খারাপ মতো লাগতে পারে চিন্তাটা হয়তো, কিন্তু সত্যি বলতে কি আদ্যিকালে যখন একটা কাল্পনিক শেষ দৃশ্যের চিত্রায়ন করতাম, গল্পর বা যেকোন কিছুর, তখন কিন্তু এধরনের কিছু একটা বার্তাই থাকতো সেইসব দৃশ্যে। বগুড়ার কোনো জমির বাঁধানো আইলের মধ্য দিয়ে ইয়ামাহা এন্টিকা মোটরবাইক নিয়ে ঘন্টায় ৪৫ কিংবা ৫০ কিলোমিটার বেগে চালানোর সাথে এই সময়ের পার্থক্য কোথায়? অন্তিমে কি আমরা এমন একটা 'কোজি' ব্যাপারের মধ্য দিয়ে প্রস্থানেই সায় দিতে চাইবো না?
প্যারানয়েড এইসব চিন্তা-ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে কিন্তু তারপরও মন মোটামুটি একটা মুড ধরে রেখে চলে সারাদিন। খুব কমই খারাপ করে। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে নেয়া বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা শুধু শরীরেই নয়, মনেও কাজ করে। মন কোথাও কখনও একটু খারাপ করতে চাইলে, ভাল ভাল অ্যান্টিবডিগুলি এসে মনে করায় দেয়, পৃথিবীর অনেক অনেক জায়গায় নাম না জানা অসংখ্য মানুষ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে, শুধুমাত্র সৌভাগ্যবান বলে তাদের দলে এখন এই মুহূর্তে অবস্থিত নও তুমি। মন খারাপ করার কোনো মানে নেই।
'চাংকিং এক্সপ্রেস' মুভিটায় ছেলেটা দৌড়াতে যেতো। দৌড়ালে শরীরের অতিরিক্ত পানি ঘাম হয়ে বের হয়। ছেলেটা মনে করতো, এই পানি দিয়ে গঠিত হয় কান্না। সে দৌড়াতে যেতো প্রতিদিন যাতে সেইদিনের জন্য কোনো পানি অবশিষ্ট না থাকে। পানি না থাকলে কান্না পাবে না। এই ছিল ছেলেটার ভাবনা।
অনেক অনেক মুভি দেখা হচ্ছে এই সময়ে। লর্ড অফ দি রিংস্, হবিট, হ্যারি পটার, মার্ভেল, ডিসি ইত্যাদি বেশি। এছাড়া আছে অস্কার। আর কমেডি। গান শুনি আগের চেয়ে র্যান্ডম। দেড় বছর আগেও শুধু ইংরেজি ছিল তালিকায়। এখন বাংলা গান অনেক বেশি, এবং 'ভারতীয়' বেশ খানিকটা- দখল নিয়েছে। শোর্মারেলার কাণ্ড!
আর রান্না হচ্ছে অনেক মজার মজার খাবার। বিশেষ করে মাছ। বিভিন্ন রকম রুই *(স্যামন ধরনের মাছ) রাধুঁনী মাছের মশলা আর বেড়ে লংকা দিয়ে কষিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আছে নানা জাতের ফোরেলে, সাইবলিং, মাকরেলে, কালামারি এবং সার্ডিন। আর টিনজাত টুনা দিয়ে পাস্তা-তো আছেই পাশাপাশি।
লেখালেখি আজকাল বেশ কঠিন হয়ে গেছে। অন্তহীন এ শুয়ে-বসে থাকার কালে আমার গায়ে গতরে ধরে গেছে বাঁত! বেঁচে থাকলে কখনও হয়তো এ বাঁতের চিকিৎসা করবো। তবে এই কালে এমনই চলতে থাকবে খুব বুঝতে পারছি। জীবনটা সুন্দর। করোনার কালেও বেঁচে থাকাই জীবনের চূড়ান্ত স্বার্থকতা। এখন তো এটা আরও বেশি পরিস্কার।
আজকাল যেসব গান শোনা হয় কিংবা হয় না সেগুলোর কোনোটিই মিথ্যা না। খুব পরিস্কারভাবে তারা সবাই মিলে এক জায়গায় একই সুর তুলছে। জানি, শুধু কান পেতে শোনা হয় না।
---
মন্তব্য করুন