যাপিত দহনের গল্প - ৪
"সুখের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শীতের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
অর্ধেক কপাল জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শুধু ঝড় থমকে আছে গাছের মাথায়
আকাশমনির ।
ঝড় মানে ঝোড়ো হাওয়া, বাদ্ লা হাওয়া নয়
ক্রন্দনরঙের মত নয় ফুলগুলি
চন্দ্রমল্লিকার ।
জয়দেবের মেলা থেকে গান ভেসে আসে
সঙ্গে ওড়ে ধুলোবালি, পায়ের নূপুর
সুখের চট্ কা ভাঙে গৈরিক আবাসে
দিন যায় রে বিষাদে, মিছে দিন যায়..."
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের "দিন যায়" কবিতা। কিছু কিছু বিষাদমাখা দিনের জন্য যুতসই একদম একটা কবিতা। কত এমন দিন কাটে যখন বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে হয় না একটুও। সে সময়ের কবিতা।
জীবনে এমন দিন এক-আধবার আসা খারাপ না। সমস্যা হয় যখন এমন দিন স্থায়ী হতে চায়। আর আমাদের মস্তিষ্কটাও যেন কেমন। এমন দিনের প্রতীক্ষায়ই যেন থাকে ওটা। আসলে কোন রকম দিনের প্রতীক্ষতেই থাকে না আমাদের মস্তিষ্ক। ওটা শুধু অলস হয়ে পড়ার সুযোগ খোঁজে।
অমন সময়কে বেশি সুযোগ দিতে নেই। যেকোন বয়সের যেকোন মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে অমন সময়। মানুষের জীবন ক্রমাগত লড়াইয়ের উপলক্ষ। প্রতিটি লড়াইয়ের শেষে হয়তো বিজয় অপেক্ষা করে না। কিন্তু শিক্ষা ঠিকই লুকিয়ে লুকিয়ে পাশে জুটে যায়। সে কারণেই মূলত লড়াই করা। শিক্ষা কাজে লাগিয়ে পরের লড়াইয়ের জন্য রসদ আর সরঞ্জাম জোগাড় করা। বিজয়ের কাজও তাই। তবে বিজয়ের পর যে লড়াই শেষ- তা ধরে নেয়া ভুল। বিজয়ের পর প্রতিবার আরও বড় লড়াই আসবেই। সে লড়াইয়ে বিজয়ের তৃপ্তিও বৃহত্তর। তাই তো এ জীবন এত সুন্দর। অপেক্ষাকৃত ছোট বিজয়ের তৃপ্তি কিংবা পরাজয়ের শিক্ষা আমাদের তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় আরও বড় লড়াইয়ের মাঠের দিকে।
এর থেকে মুক্তি নেই কারোই। তবে স্বেচ্ছানির্বাসনের একটি ব্যাপার বোধহয় আছে। অনেককেই তার আকর্ষণের হাতছানিতে বুদ হয়ে থাকতে দেখতে পাই। লড়াইয়ের ক্লান্তি আমাদের এক সময় পেয়ে বসতে পারে। জীবন থেকে তাই ছোট ছোট সুখও খুঁজে নিতে হয়। যাতে একঘেঁয়ে লড়াই মনকে ধীরলয়ে বিকল করে তুলতে না পারে।
দহনের অন্ত নেই সত্য, তবে দহনের সঙ্গে সহবাসের উপায় আছে। তার জন্য দহনকে যতোটা সম্ভব শীতল করে রাখতে হয়। আমরা নিজেদের যদি বস্তু হিসেবে কল্পনা করি তাহলেই তা সম্ভব। আমাদের তপ্ত হৃদয় যেখানে জুড়ায় সেখানেই আমাদের স্থান। এই এতটুকু সমতা খুঁজে পাওয়ার দুরত্বে বসবাস করে সুখ পাহাড় আর দুখ পাহাড়ের বাসিন্দারা।
---
মন্তব্য করুন