ইউজার লগইন

গল্প: ঠিক সেই ঘটনাটিই সেদিন স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে ঘটেছিল

তোমার সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার ক্ষণটির কথা আজও আমার মনে আছে। টিএসসি এলাকায় ডাস-এর ঠিক পেছনটায়, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যটির সামনে; বেদির নিচের যে ছোট্ট সবুজ ঘাসটুকু- ওই খানটায় একটা ঠান্ডা লাচ্ছির গ্লাস নিয়ে বসে ছিলে তুমি। আমি বোধহয় সেদিন তোমায় খানিকটা সময় অপেক্ষা করিয়েছিলাম, তাই না?

সেদিন হয়েছিল আমাদের প্রথম দেখা। আর তার আগে যে কত শত শত টেক্সট মেসেজ চালাচালি! নামি, বেনামি কত অসংখ্য মাধ্যমে। মেসেজ আদানপ্রদান করে-করেই নিজেদের সব কথা বলা হয়ে গিয়েছিল আমাদের, তাই না? যেন বলার ছিল না কোনকিছু, যেবার আমরা প্রথমবারের মতো নিজেদের সামনাসামনি দেখেছিলাম।

দেখা হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কি করেছিলে তুমি? বরফ ঠান্ডা লাচ্ছি মুখে নিয়ে বিষম খেয়েছিলে, ঠিক না? আমাকে যেমনটি ভেবেছিলে একদমই তেমনটি ছিলাম না আমি, ঠিক কিনা? ডিজিটাল এই যুগে আমরা কজনই বা নিজেদের সারাদিন কেমন দেখায়, সেটা পৃথিবীকে দেখাই?

আমার যে ছবিটি তুমি দেখেছিলে, সেটি ছিল অনেক দিনের পুরোনো। তারপর বহুদিন ছবি তোলার মতো কোন উপলক্ষ আমার হয়নি। ছবি তোলার কোন প্রয়োজনই পড়েনি। তাই আমায় সামনাসামনি দেখার পূর্বে, আমি দেখতে কেমন- সে ব্যপারে, ওই ছবিখানিই ছিল সবেধন নীলমনি।

কিন্তু একে অপরকে না দেখেই তো আমরা ছুটিয়ে দিয়েছিলাম কল্পনার রঙিন ঘোড়াকে নীল দিগন্তের পানে। রংধনুর সব রং সেই ঘোড়া দিগন্তের আকাশে ছিটিয়েও দিয়ে এসেছে। আজ কি আর হায়, সবকিছু ভুলে গিয়ে সেই প্রথমদিনের মতো সরাসরি আলাপ করার সুযোগ আছে?

আমাদের প্রথম ইন্টারনেটে দেখা হওয়ার দিনের সেই অভিজ্ঞতাও কিন্তু ভুলে যাওয়ার মতো না। তোমায় কত জেরা করেছিলাম, তাই না? তুমি কোথা থেকে যে ঘুরতে ঘুরতে ইন্টারনেটে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছিলে! তবে জেরার পর্ব পেরুনোর পর যখন আমরা বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম , তখন সবকিছু অনেক আনন্দের হয়ে উঠেছিল, ঠিক কিনা?

দুজন মানুষ, দুজন মানুষের ভেতর কি করে ডুবে যায়- সেটি দেখেছিলাম দুজনে আমরা ফোনের দুই প্রান্তে বসে বসে। পাশে হয়তো ছোটভাইটি চার্জার লাইট জ্বালিয়ে ফাইনাল পরীক্ষার পড়া পড়ছিল। মা-বাবা আর অন্যরা জরুরি কথা বলছিল। আর ঠিক সবকিছুর মধ্যে আমি আর তুমি দুইজন দুইজনকে মেসেজ পাঠিয়ে যাচ্ছিলাম। একের পর এক। ক্রমাগত। মানুষ বিরক্ত হলেও তাতে কিছু যাচ্ছিল বা আসছিল না আমাদের কারো।

সেই অপেক্ষার প্রলম্বিত প্রহরের হাহাকারে ভরে ওঠা দিনগুলো নিয়ে পরে আমরা ঠাট্টা তামাশা করবো- এমনই ভেবে রেখেছিলাম দুইজন। অপেক্ষায় ছিলাম সে মাহেন্দ্রক্ষণের। মফস্বলের কলেজ থেকে যতটুকু প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব নিয়েছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য। হয়েও গিয়েছিলাম ভর্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কিন্তু তোমার হালকা বোঝা যায় না এমন নীল রংয়ের শিফনের শাড়ির সামনে, আমার যে গেরুয়া ফতুয়া, ভয়েল কাপড়ের প্যান্ট আর ছেড়া বাটার স্যান্ডেল! বিশ্বাস করো আর নাই করো, তোমার ‌ছবিটাও একদম ইন্টারনেটে যেমন দেখেছি, তুমি দেখতেও ঠিক তেমনি! বরং আরও বেশিই সুন্দর মনে হয়েছিল। নেটের ছবিটায় তো চোখের কোনা দিয়ে আবার কাজল খানিকটা টেনে দুই চোখেই বাইরের দিকে টানা-টানা একধরনের ভাব আনা হয়েছে। দেখলে কেন যেন মনে হয়, মেকি ওটুকু! সামান্য ওই খামতিটুকুই বরং আরো বেশি ফুটিয়ে তুলতো তোমার মুখটাকে। আর ঠিক সেই ঘটনাটিই ঘটেছিল সেদিন স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে।

সেদিন তোমায় আমি কাজলের ওই শেষ টানটুকু ছাড়া দেখেছিলাম। দেখে মনে মনে ভেবেছিলাম, এই যাহ! এ মেয়ের পাশে আমায় দেখলে যে মনে হয় ময়ুরের পাশে উটপাখির ছানা!

অনেকক্ষণ ভেবেছিলাম তোমার পেছনে দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে, সামনে যাবো কি যাবো না। তারপর ঠাকুরকে খুব করে ডেকে-টেকে কোনমতে নিজেকে ঠেলে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিলাম তোমার সামনে। তারপর তো তোমার বিষম খাওয়া, সে গল্প আগেই বলেছি খানিকটা।

সত্যি বলতে কি, সেদিন যদি তুমি আমায় ফিরিয়ে দিতে, তাহলে বোধহয় এ পৃথিবীর ভাল মানুষদের ওপর থেকে আমার বিশ্বাসই হারিয়ে যেতো। তারপর নিজেকে সবসময় ছোট ভাবতে ভাবতে এক সময় নিজের ওপর থেকেও বিশ্বাস হারিয়ে যেতো। তারপর যে আরও কতো কিছু হতে পারতো কে জানে!

কিচ্ছুটি তার হয় নি কারণ, ভিমড়ি খেয়ে সব সামলে টামলে নিয়ে তুমি যখন জানতে চেয়েছিলে, মাথার চুলে তেল দিয়েছি কেন; তখনই বুঝেছি পৃথিবীটা এমন এক জায়গা যার সম্পর্কে আগে থেকে বলা যায় না কোন কিছুই। আর জায়গাটা সুন্দরও ভীষণ!

---

পোস্টটি ২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

মীর's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বাগতম। আমার নাম মীর রাকীব-উন-নবী। জীবিকার তাগিদে পরবাসী। মাঝে মাঝে টুকটাক গল্প-কবিতা-আত্মজীবনী ইত্যাদি লিখি। সেসব প্রধানত এই ব্লগেই প্রকাশ করে থাকি। এই ব্লগে আমার সব লেখার কপিরাইট আমার নিজেরই। অনুগ্রহ করে সূ্ত্র উল্লেখ না করে লেখাগুলো কেউ ব্যবহার করবেন না। যেকোন যোগাযোগের জন্য ই-মেইল করুন: bd.mir13@gmail.com.
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং!